সিজন রিভিউঃ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ২০২০-২১
পোস্টটি ১৮৬৫ বার পঠিত হয়েছেইউরোপিয়ান ফুটবলের আরেক মৌসুম শেষ। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের বিদায়ের পর আরো এক মৌসুম শিরোপা বিহীন কাটলো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের। লিগে হয়েছে দ্বিতীয়, ইউরোপা লিগে সাডেন ডেথে হেরে রানার্সআপ, আর ইএফএল কাপে খেলেছে সেমিতে। আর এফএ কাপের কোয়ার্টার ফাইনাল এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রথম রাউন্ড থেকেই নিতে হয়েছে বিদায়। মরিনহোই তো এর আগে রেড ডেভিলদের লিগে দ্বিতীয় বানিয়েছিলেন একবার, জিতেছিলেন ইউরোপা লিগ শিরোপাও। তবে মরিনহোর বাস পার্ক আর একঘেয়ে খেলা দেখে যারা বিরক্ত ছিলেন, তারা এখন সোলশার এর দলের খেলা দেখে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাচ্ছেন। ভালো একটা ট্রান্সফার উইন্ডো গেলে ইউনাইটেড চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াইয়ে টেক্কা দিতে পারবে আগামী মৌসুমে এটাই অনেকের বিশ্বাস। সব মিলিয়ে আসলে কেমন গেলো ইউনাইটেডের এই মৌসুম তা একটু রিভিউ করে দেখা যাক।
ট্রান্সফার উইন্ডোর হতাশাঃ
গত গ্রীষ্মের ট্রান্সফার উইন্ডো শেষে ইউনাইটেড সমর্থকেরা চরমভাবে হতাশ ছিলেন। বোর্ডের কাছে সোলশার একজন লেফট ফুটেড সেন্টারব্যাক আর সানচোকে চেয়েছিলেন। কিন্তু ডিফেন্স এর প্রথম পছন্দ নাথান অ্যাকে গিয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার সিটিতে। আর পুরো ট্রান্সফার উইন্ডো সানচোর আশা দেখিয়েও তাকে দলে টানতে পারেনি রেড ডেভিলরা। সানচো নিজ দেশে ফিরে আসতে এক পায়ে খাড়া ছিলেন, কিন্তু ডর্টমুন্ড বোর্ডের চাহিদা ১২০ মিলিয়ন দিতে ম্যান ইউনাইটেড বোর্ড রাজী না হওয়াতে ডিলটা আর হয়নি। সমর্থকদেরও আর ফ্যাব্রিজিও রোমানোর বহুল প্রতীক্ষিত "হিয়ার উই গো" টুইট দেখা হয়নি। শুধুমাত্র ডনি ভ্যান ডি বিক আর ফাকুন্দো পেলিস্ত্রিকে কিনেই শেষ দিন পর্যন্ত কাটিয়ে দেওয়া ইউনাইটেড ডেডলাইন ডে তে দলে ভিড়িয়েছে ব্রাজিলিয়ান অ্যালেক্স টেলেস আর ফ্রি তে এডিনসন কাভানিকে। সাথে আটালান্টার টিনএজ সেনসেশন রাইট উইঙ্গার আমাদ দিয়ালো কে কিনেছে।
তবে ডি বিক মৌসুমজুড়ে বেঞ্চই গরম করেছেন বেশীরভাগ সময়, পেলিস্ত্রি গেছেন লোনে, টেলেসও ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। তবে কাভানি দেখিয়েছেন বুড়ো হাড়ের ভেলকি। ইউরোপা লিগের সেমিফাইনাল আর ফাইনাল মিলিয়ে করেছেন ৫ গোল। সিজনে ১৭ গোল করে রোনালদো যাওয়ার পর ইউনাইটেডে যে "নাম্বার সেভেন কার্স" শুরু হয়েছিলো তা কাটানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। অনেকের কাছেই সিজনের বেস্ট ফ্রি ট্রান্সফার ছিলেন কাভানি। আর দলের সাথে মৌসুমের দ্বিতীয়ার্ধে যোগ দেওয়া আমাদও যখনি সুযোগ পেয়েছেন, জানান দিয়েছেন তাকে কিনে ভুল করেনি ইউনাইটেড।
দূর্দান্ত অ্যাওয়ে ফর্মঃ
মৌসুমের শুরুটা ছিলো বাজে। প্রথম ম্যাচেই ঘরের মাঠে ক্রিস্টাল প্যালেসের কাছে ৩-১ গোলে পরাজয়। আর স্পার্সদের সাথে তো রীতিমত বিভীষিকা। হোম ম্যাচে হেরেছে ৬-১ গোলে। তবে সময়ের সাথে সোলশার দলকে গুছিয়ে এনেছেন। বিশেষ করে অ্যাওয়ে ম্যাচে দল ছিলো দূর্দান্ত। ফলস্বরূপ পুরো লিগ জুড়েই প্রতিপক্ষের মাঠে অপরাজিত ছিলো দল। এর আগে ইংলিশ ফুটবলের টপ টায়ারে ১৮৮৮-৮৯ মৌসুমে প্রেস্টন নর্থ এন্ড, ২০০১-০২ এবং ২০০৩-০৪ মৌসুমে আর্সেনালই পেরেছিলো মৌসুমজুড়ে অ্যাওয়ে ম্যাচে অপরাজেয় থাকতে। ২০২০ এর ফেব্রুয়ারি থেকেই প্রিমিয়ার লিগে অ্যাওয়ে ম্যাচে অপরাজিত রেড ডেভিলরা। আর এক ম্যাচ জিতলেই ইংলিশ ফুটবলের শীর্ষ পর্যায়ে টানা অ্যাওয়ে ম্যাচে অপরাজিত থাকার আর্সেনালের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলবে।
প্রথমে গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়া, এরপর ফিরে আসা আর শেষ মুহুর্তের গোলে জয়, ইউনাইটেড এর বেশীরভাগ অ্যাওয়ে ম্যাচের চিত্রপট ছিলো এমনই। পিটার ড্রুরির ভাষায় বলতে গেলে, "They travel, they fall behind, they come around, they win!!" সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ইউনাইটেড অ্যাওয়ে ম্যাচ হেরেছে চারটা। এফএ কাপে লেস্টারের সাথে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ইস্তাম্বুল বেসিকশাহির ও আরবি লাইপজিগ আর ইউরোপায় রোমার কাছে।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ব্যর্থতাঃ
পিএসজি আর লাইপজিগের সাথে যখন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড গ্রুপ অব ডেথে পড়লো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ড্র এর পর, সবাই গ্রুপ স্টেজে বিদায়কেই ভবিতব্য মেনে নিয়েছিলো। কিন্তু তাদের শুরুটা হয়েছিলো দূর্দান্ত। প্যারিস দূর্গ জয়ের পর "মিনি মরিনহো" নাগেলসমান এর দলের জালে গুণে গুণে ৫ গোল। আকাশে উড়তে থাকা ইউনাইটেডকে মাটিতে নামিয়ে আনে টার্কিশ ক্লাব ইস্তাম্বুল বেসিকশাহির। এরপর দিশা হারিয়ে পিএসজি আর মহা গুরুত্বপূর্ণ শেষ ম্যাচে লাইপজিগের সাথে হার ইউনাইটেডকে পাঠায় ইউরোপা খেলতে। সেখানে একে একে রিয়াল সোসিয়েদাদ, এসি মিলান, গ্রানাডা, রোমাকে হারিয়ে ফাইনালে। কিন্তু অবশেষে কোনো সেমিফাইনালের বৈতরণী পার করেও তীরে এসে তরী ডোবালেন সোলশার। সাডেন ডেথে ডি গিয়ার পেনাল্টি মিসে শিরোপা হাতছাড়া হলো। রেড ডেভিলদের ম্যানেজার হিসেবে প্রথম শিরোপা জেতার অপেক্ষাটাও তাই বাড়লো ওলের।
তালিসমান ব্রুনো, সারপ্রাইজ প্যাকেজ লুক শ আর পগবার ফেরাঃ
গত উইন্টার ট্রান্সফারে যোদ দিয়েই ইউনাইটেডের রূপ বদলে দিয়েছেন ব্রুনো ফার্নান্দেস। গোল, এসিস্ট, চান্স ক্রিয়েশন সবকিছুতেই তিনিই মূল ভূমিকায়। মৌসুমে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ২৮ গোল করেছেন, সর্বোচ্চ এসিস্টও তার। ভঙ্গুর ডিফেন্স এর জন্যে ম্যাক-ফ্রেড জুটিকে খেলাতে বাধ্য হচ্ছেন সোলশার। ফলে মিডফিল্ডে ক্রিয়েটিভিটির দায়িত্বটা অনেকটা ব্রুনোর একার ঘাড়েই বর্তেছে। তিনিও সেই দায়িত্ব দূর্দান্তভাবে সামলেছেন। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পরে তাই আবারো এক পর্তুগিজকে নিজেদের তালিসমান হিসেবে মেনে নিয়েছে ইউনাইটেড সমর্থকেরা।
তবে সারপ্রাইজ ছিলো লুক শ এর পারফরম্যান্স। অনেক আশা জাগিয়েই ৭ বছর আগে ওল্ড ট্রাফোর্ডে এসেছিলেন। কিন্তু কখনো ইনজুরি, কখনো বাজে ফর্ম এর কারনে প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফরম্যান্স এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেননি। তবে এবার ছিলেন অসাধারণ। ডিফেন্সে ছিলেন স্টেবল সাথে অ্যাটাকে উন্নতি লক্ষণীয়। তার ক্রসিং নিয়ে সমালোচনা হতো, সেখানে করেছেন অভাবনীয় উন্নতি। ট্র্যাকব্যাক করার ক্ষেত্রেও আগের চেয়ে ভালো করছেন। অ্যালেক্স টেলেস দলে আসাতে কম্পিটিশন বেড়ে যাওয়াতেই কি এই উন্নতি? হতেও পারে।
প্রতিবারের মত পল পগবার ইউনাইটেডে থাকা নিয়ে এবারো নাটক হয়েছে। বিশেষ করে লাইপজিগের সাথে বাঁচামরার ম্যাচের ঠিক আগে তার এজেন্ট মিনো রায়োলার বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারের কারণে তো সমর্থকদের রীতিমত চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছিলেন। তবে মৌসুমের দ্বিতীয়ার্ধে দেখা মিলেছে দুরন্ত ফর্মের। এসি মিলানের সাথে ম্যাচ জিতিয়েছেন, রোমা আর স্পার্স এর সাথে মিডে ছড়ি ঘুরিয়েছেন। ব্রুনো আর পগবা একসাথে কতটা কার্যকর হবেন সেটা নিয়ে অনেকেই সংশয়ে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত ব্রুনোই কি তাহলে পগবাকে "আনলক" করতে পারলেন?
অন্যদের পারফরম্যান্সঃ
নতুন ট্রান্সফার আর সেরা কয়েকজন পারফরমারের কথা তো বলা হলো। এবার অন্যদের দিকেও একটু নজর দেওয়া যাক। গোলকিপিং এ ডি গিয়া ছিলেন ভরসা হয়ে। বিশেষ করে মাঝে দুই সিজনে মাঝে মাঝেই শিশুতোষ ভুল করে দলকে যে বিপদে ফেলতেন, সেসবের দেখা এবার কমই মিলেছে। আর শেফিল্ড থেকে লোন শেষ করে ফেরা ডিন হেন্ডারসনও গত সিজনের ফর্ম ধরে রেখেছেন। দুজনকেই রোটেট করে খেলিয়েছেন কোচ। তবে বিগ ম্যাচের জন্যে ডিনো এখনো কিছুটা অপ্রস্তুত বলেই মনে হয়েছে। ডিফেন্সে রাইটব্যাক একাই সামলেছেন ওয়ান-বিসাকা। ডিফেন্সিভ প্লে তে সমস্যা না থাকলেও অফেন্সিভ প্লে তে তার দুর্বলতা রয়েই গেছে। সেন্টারব্যাকের মূল ভরসা ও দলের ক্যাপ্টেন হ্যারি ম্যাগুয়ার প্রথম দিকে কিছু ম্যাচে দলকে ডোবালেও নিজেকে ফিরে পেয়েছেন দ্রুতই। ৮০ মিলিয়ন প্রাইস ট্যাগের কারণে অনেক ট্রলের শিকার হলেও ইনজুরির কারণে শেষ চার ম্যাচে তার অনুপস্থিতি সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছে দলে তার উপস্থিতির প্রভাব কতটা। তার রক্ষণসঙ্গী লিন্ডেলফ অবশ্য ছিলেন নড়বড়ে। বেশ কিছু ম্যাচেই ভুল করে দলকে বিপদে ফেলেছেন। বাইয়ি কিংবা টুয়ানজেবে সুযোগ পেলেও লিন্ডেলফকে রিপ্লেস করার মত পারফরম্যান্স দিতে পারেননি। মিডে মাতিচ যখনই খেলেছেন, ছিলেন ভরসা হয়ে। কিন্তু বয়সের কারণে তাকে নিয়মিত খেলানোর উপায় ছিলো না। ফলে বেশীরভাগ ম্যাচেই ম্যাকটোমিনে আর ফ্রেড জুটির উপর ভরসা রাখতে হয়েছে সোলশারকে। তারা ভালোই করেছেন, কিন্তু তাদের একসাথে খেলানোর ফলে মিড থেকে ওপরে বল যোগানোর জন্যে ব্রুনো আর পগবার উপর চাপ যায় বেড়ে।
ফরোয়ার্ডে রাশফোর্ড গত মৌসুমের ফর্ম টেনে এনেছেন। ব্রুনোর পরে দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনিই। আর মৌসুমের প্রথমার্ধে নারী কেলেংকারীতে ফেঁসে যাওয়া তরুণ ম্যাসন গ্রিনউড ছিলেন বাজে ফর্মে। তবে দ্বিতীয়ার্ধে নিজেকে ফিরে পেয়েছেন, মানুষকে আবারো তাকে ভ্যান পার্সির সাথে তুলনা করতে বাধ্য করেছেন। ড্যানিয়েল জেমস ছিলেন অ্যাভারেজ। তবে হতাশ করেছেন অ্যান্থনি মারশিয়াল। গত সিজনে রাশফোর্ডের সাথে চমৎকার জুটি গড়ে তুলেছিলেন, করেছিলেন ২৩ গোল। সমর্থকেরা আশা করেছিলেন, এই মৌসুমে "নাম্বার নাইন" হিসেবে আরো পরিপক্ব হবেন। কিন্তু পুরো সিজনে করলেন মাত্র ৭ গোল। সাথে দৃষ্টিকটু সব মিস, মাঠে হেলেদুলে বিচরণ সব মিলিয়ে কোচ, সমর্থক সবারই আস্থা হারিয়েছেন।
সুপার লিগের নাটক ও "গ্লেজার আউট" ক্যাম্পেইনঃ
ফুটবল বিশ্বকে নাড়িয়ে দেওয়া ইউরোপিয়ান সুপার লিগের এলিট-১২ দলের এক দল ছিলো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। প্রিমিয়ার লিগের দলগুলোর মধ্যে গ্লেজারদের আগ্রহই ছিলো নাকি সবচেয়ে বেশী। তবে সমর্থকদের প্রতিবাদে ভেস্তে গেছে এই পরিকল্পনা। সুপার লিগ থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছে তারা। আর এর মাধ্যমে আগে থেকেই চলে আসা "গ্লেজার আউট" ক্যাম্পেইনের পালে রীতিমত ঝড়ো হাওয়া লেগেছে। সমর্থকেরা ফুঁসে উঠেছেন। গ্লেজার আউটের পাশাপাশি বুন্দেসলিগার দলগুলোর মত ক্লাবের মালিকানার ক্ষেত্রে "৫০+১ রুলস" করার দাবী জানিয়েছে সমর্থকগোষ্ঠী। লিভারপুলের সাথে হোম ম্যাচের আগে ক্যারিংটনে হোম গ্রাউন্ড ওল্ড ট্রাফোর্ডের পিচ দখল করে নেয় তারা। বাধ্য হয়ে ম্যাচটি সেদিনের মত স্থগিত ঘোষণা করতে বাধ্য হয় প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষ।
এর মধ্যে ইউরোপিয়ান সুপার লিগ থেকে সরে আসার ঘোষনার পর পরই এড উডওয়ার্ড জানিয়ে দিয়েছেন এই বছর শেষে তিনি আর এক্সিকিউটিভ ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে থাকছেন না। এটাকেও অনেক ইউনাইটেড সাপোর্টার বিজয় হিসাবে দেখছেন। কারণ ট্রান্সফার মৌসুমে সানচো সহ পছন্দের খেলোয়াড়দের না পাওয়ার পিছনে অনেকেই উডওয়ার্ড এর হিসেবি খরচের ভূমিকা দেখেন।
আগামী মৌসুমের সম্ভাবনাঃ
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে এবার দ্বিতীয় পূর্নাঙ্গ মৌসুম কাটালেন ওলে গানার সোলশার। এর মধ্যে তার ট্যাকটিকস, লেট সাবস্টিটিউশন নিয়ে অনেক প্রশ্নই উঠেছে। তবে সোলশার প্রতিনিয়তই নিজের ভুল থেকে শিখছেন। সমর্থকদের মনে অন্তত এই বিশ্বাস এনে দিয়েছেন যে দলকে রিবিল্ড করার যে প্রোসেস, তাতে সঠিক ট্র্যাকেই আছেন। তবে শেষ পর্যন্ত ট্র্যাকে থাকতে হলে আসন্ন ট্রান্সফার উইন্ডোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। এই মুহুর্তে একজন বল প্লেয়িং সেন্টারব্যাক, একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ও একজন রাইট উইঙ্গার সোলশারের মূল চাহিদা। ডিফেন্সে ম্যাগুয়ারের পার্টনার হিসেবে ইউরোপা ফাইনাল প্রতিপক্ষ ভিয়ারিয়ালের পাউ টোরেস এর দিকে বোর্ডের আগ্রহ বলে শোনা যাচ্ছে। সাথে রাফায়েল ভারানের সাথে রিয়াল মাদ্রিদের নতুন চুক্তি না হলে তার দিকেও হাত বাড়াতে পারে বলে কানাঘুষা চলছে। ডিফেন্সিভ মিডের শূণ্যতা পূরণে ডেক্লান রাইস এর মত কাউকে দরকার। আর রাইট উইং এর জন্যে আবারো সানচোকে আনার চেষ্টা করবে। গুজব আছে ডর্টমুন্ডও জেন্টলম্যানস এগ্রিমেন্ট দেখিয়ে কিছুটা কমেই ছেড়ে দেবে তাকে। তাছাড়া রাইটব্যাকে ওয়ান-বিসাকার একজন ব্যাকআপ দরকার যে স্কোয়াড রোটেশনাল প্লেয়ার হিসেবে খেলবে। আর গত মৌসুম থেকেই ওয়াচ লিস্টে থাকা জ্যাক গ্রিলিশকে এবারো দলে টানার চেষ্টা থাকবে বলে খবর রটেছে।
এর মধ্যে হ্যারি কেইন এর স্পার্স ছাড়তে চাওয়ার ঘোষনায় অনেক সমর্থকই আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। তবে কাভানির সাথে নতুন এক বছরের চুক্তি আর গ্রিনউডের নাম্বার নাইনে খেলার যোগ্যতা ইঙ্গিত দিচ্ছে কেইন আসার সম্ভাবনা খুব একটা নেই। তাছাড়া এই কোভিড যুগে একই সাথে কেইন আর সানচোকে দলে টানার মত অর্থনৈতিক অবস্থাও এই মুহুর্তে ইউনাইটেড বোর্ডের নেই।
যদি সোলশার শেষ পর্যন্ত তার পছন্দের খেলোয়াড়দের পেয়েই যান তবে আগামী মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের লড়াইটা আরো জমজমাট হয়ে ওঠার কথা। প্রিমিয়ার লিগ বা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে যাবে সেটা একটু অতি আশাবাদ হয়ে যায় অবশ্য। বিশেষ করে ক্রুশাল ম্যাচগুলোতে ওলে গানার সোলশারের দলের পারফরম্যান্স অ্যালার্মিংলি পুওর। গত দুই মৌসুম মিলিয়ে হেরেছেন চারটা সেমিফাইনাল আর একটা ফাইনাল। এমনকি এবার লিগে শীর্ষে থাকা অবস্থায় শেফিল্ড এর কাছে হেরে শীর্ষস্থান খোয়ানো, ডু অর ডাই ম্যাচে লাইপজিগের সাথে হার এসব ইঙ্গিত দিচ্ছে ওলে কে নিজের ট্যাকটিকস, ফর্মেশন, মিড গেমে প্রতিপক্ষের দুর্বলতা বুঝে খেলার টেম্পো ও ট্যাকটিকস পরিবর্তন এসব নিয়ে আরো অনেক কাজ করতে হবে। সাথে সেটপিসের সময় অ্যাটাক ও ডিফেন্স দুই ক্ষেত্রেই উন্নতি করতে হবে। তাও এত কম স্কোয়াড ডেপথ নিয়ে এবারের মৌসুমে যতটুকু করেছেন সোলশার, সেটাও আশাতীত ছিলো। ইউরোপা লিগ জিততে পারলে দশে বোধহয় আট দেওয়াই যেতো দলের পারফরম্যান্সকে। শেষ পর্যন্ত আগামী মৌসুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড যদি বড় কোনো শিরোপা জিতেই যায়, রেড ডেভিলের পাঁড় সমর্থক হিসেবে আপনিও কি গান ধরবেন না,
"ওলে অ্যাট দ্যা হুইল,
টেল মি হাও গুড ডাজ ইট ফীল।"
- 0 মন্তব্য