• ক্রিকেট

ক্রিকেটোপিডিয়াঃ জানা ক্রিকেটের অজানা শব্দ!

পোস্টটি ১৬৪৬ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

ক্রিকেটটা তো আমরা সবাই দেখি! ক্রিকেটে খায়, ক্রিকেটে ঘুমায় এমন মানুষও পাওয়া যাবে অনেক। কিন্তু এনসাইক্লোপিডিয়ার মত না হোক, ক্রিকেটেও যে আছে ভারী ভারী অনেক শব্দ- সেটা আমরা কজন জানি? শব্দ না বলে অবশ্য এগুলোকে টার্ম হিসাবে বলাই বেশি জরুরী। তবে মজার ব্যাপার হল, এই টার্মগুলো দেখে আমরা সবাই অভ্যস্ত। কিন্তু সেগুলোকেই যে ক্রিকেটে এক শব্দে ডাকা হয়, সেটা না জানলে ক্রিকেট দেখাটা অপূর্ণ হয়ে যাবেনা? 

চাকার

'চাকিং' এখন ক্রিকেটের সবচাইতে পরিচিত টার্মের মধ্যে একটা। প্রশ্নবিদ্ধ বোলিং অ্যাকশনের জন্যে অনেক বোলারই এখন চাকিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত হচ্ছেন। 'চাকিং' বলতে মূলত বোঝায় বল ডেলিভারির বদলে একেবারে বলটা ছুঁড়ে দেওয়া। মূলত বল ডেলিভারি করার ক্ষেত্রে কনুইয়ের ভাঁজের একটা নির্দিষ্ট কোণ আছে। সেই কোণের বাইরে ওভারআর্ম ডেলিভারিতে বোলারকে চাকিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। চাকিং নিয়ে বিতর্ক আর সেই বিতর্কের নির্যাস চলে আসছে বহু বছর ধরেই। অস্ট্রেলিয়ান পেসার ফ্রেড স্পফোর্থ যেমন ক্রীড়া ম্যাগাজিন স্পোর্টিং লাইফের ১৮৭৭ সংখ্যাতে বলেছিলেন, 

"এমন একটা কাউন্টি দল খুঁজে পাওয়া কঠিন যেখানে অন্তত একজন ক্রিকেটার ছুঁড়ে বল করেনা। তাঁরা জানে তাঁরা ভুল করছে, তবুও তাঁরা সেটা করবে, তাঁদের একমাত্র যুক্তিও এটা যে - "অন্যরাও তো করে"

চাকিং ধরাতে আম্পায়ার জিম ফিলিপ্সকে অগ্রগণ্য মনে করা হয়। এমনটা ভাবা হয়ে থাকে যে চাকিং ধরাতে অন্য সব আম্পায়ার মূলত জিম ফিলিপসেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করেছিলেন। ওভারআর্ম ডেলিভারিতে এই অবৈধ ডেলিভারি ধরার প্রচলন শুরুর পরও কিন্তু চাকিং ক্রিকেট থেকে একেবারে দূরে চলে গেছে তা কিন্তু বলা যাবেনা। জিম ফিলিপসের সময়েই ১৯৬০ থেকে ১৯৬৪ সময়কালে ১৬ জন বোলারকে চাকিং এর দায় মাথায় নিতে হয়েছিল। এমনকি চাকিং এর দায় মাথায় নিতে হয়েছে আধুনিক ক্রিকেটের অনেক রথী-মহারথীকেও। উদাহরণ হিসেবে শোয়েব আখতার আর মুত্তিয়া মুরালিধরণের নাম বলা যেতে পারে। খেলোয়াড়ি জীবনী দুজনই অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। পরে অবশ্য বায়ো মেকানিক্স পরীক্ষায় উতরে গিয়ে আবারও বোলিংয়ে ফিরতে পেরেছিলেন ক্রিকেটের এই দুই কিংবদন্তী।

চাকিং এর কালো থাবা পড়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ওপরও। আরাফাত সানি আর সোহাগ গাজীর মত সম্ভাবনাময় বোলারকে সর্বোচ্চ স্তরের ক্রিকেট থেকে ছিটকেই পড়তে হয়েছে এই চাকিংয়ের জন্যেই। তাসকিন আহমেদ অবশ্য ফিরে এসেছেন। তবে কারো গায়ে চাকিং এর অভিযোগ একবার লাগলে মানুষ সেটা যে খুব সহজে ভুলে যায় এমনটা বলা যাবেনা। 

 

কার্ট হর্স

কার্ট হর্স বলতে মূলত বোঝায় এমন শক্তপোক্ত ঘোড়াকে যে কিনা অনেক বেশি ভার বহন করতে পারে। তবে ঘোড়ার এই টার্ম কিন্তু ক্রিকেটেও আছে।  ক্রিকেটে কার্ট হর্স বলতে মূলত বোঝায় একজন বোলারকে। কেমন বোলার? এমন বোলার যিনি কিনা ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সব চাপ নিজের ঘাড়ে নিয়ে নেন কিন্তু ...... খুব বেশি সুবিধে করতে পারেন না। ক্রিকেটে কার্ট হর্সের উদাহরণ খুঁজতে কি দেশের বাইরে যাওয়া লাগবে?

চিরাপ/ চির্প

চির্প শব্দটা যদি আপনি শুনে নাও থাকেন, তবুও নিখাদ ক্রিকেটপ্রেমী হলে 'চির্প' আপনার দেখে থাকার কথা। ক্রিকেটে চির্প বলতে মূলত বোঝায় বিশেষ ধরণের স্লেজিংকে। তা স্লেজিং আবার বিশেষ ধরণের হয় কিভাবে? মূলত উইকেটকিপার আর স্লিপ কর্ডনে দাঁড়ানো ফিল্ডার ব্যাটসম্যানকে যে স্লেজিং করেন সেটাকেই বলা হয় চির্প। চির্পিংয়ের একটা মজার ঘটনা বলা যাক। 

২০১০/১১ অ্যাশেজের ঘটনা। ক্রিজে থাকা মিচেল জনসন স্লিপে দাঁড়ানো অ্যান্ডারসনকে বলেন,

"Why are you chirping now mate?! Not getting any wickets?"

মূলত স্লিপে দাঁড়ানো অ্যান্ডারসনের স্লেজিং এর জবাবেই এটা বলেছিলেন জনসন। অ্যান্ডারসনও অবশ্য জবাব দিতে পিছপা হননি। পরের ওভারেই বল করতে এসে রায়ান হ্যারিসের স্ট্যাম্প উপড়ে ফেলে নন-স্ট্রাইকে দাঁড়ানো জনসনকে ঠোঁটে আঙুল দিয়ে যেন চুপ করতে বলেন অ্যান্ডারসন। 

চিন মিউজিক

চিন মিউজিক? নাহ কোন গান নয়! 

ক্রিকেটে চিন মিউজিক বলতে বোঝায় মূলত বোলারের এক বিশেষ ডেলিভারিকে। পেসার যদি ব্যাটসম্যানের চিন (থুতনি) বরাবর একের পর এক বাউন্সার ছুঁড়তে থাকেন , তাহলে সেটাকে ক্রিকেটে বলা হয় চিন মিউজিক। তবে আজকাল থুতনির জায়গাতে মুখ, কপাল, নাক বরাবর টানা বাউন্সার ছোঁড়াকেও চিন মিউজিকই বলা হয়। বোঝাই যাচ্ছে, এই 'মিউজিক' আর যাই হোক অন্তত ব্যাটসম্যানের জন্যে সুখকর কিছু নয়। 

কাউ কর্নার

লং অন আর ডিপ মিড উইকেটের মাঝ বরাবর যে জায়গা আছে লেগ সাইডে, ক্রিকেটে ওটাকেই বলে কাউ কর্নার। ক্রিকেটে কাউ কর্নার নামের আমদানি অবশ্য আজকের ঘটনা নয়, সে বহুকাল আগের কথা। ঘটনার সূত্রপাত লন্ডনের ডালউইচ কলেজে। সেই কলেজের ক্রিকেট মাঠে এখনকার কাউ কর্নার জায়গাটা ফিল্ডারদের জন্যে এতই নিরাপদ ছিল যে ওখানে গবাদী পশুও চরানো যেত। কেউ কেউ গবাদী পশু চরাতও। মূলত নিরাপদ বলা কারণ, ব্যাটসম্যান ঐ জায়গাতে বল পাঠাতে পারত না। সেই থেকে ঐ জায়গার নাম হয়ে গেছে কাউ কর্নার। এখন অবশ্য কাউ কর্নার ফিল্ডারদের জন্যে সবচাইতে অনিরাপদ জায়গা। টি-টোয়েন্টির এই রমরমা যুগে ব্যাটসম্যানেরা কাউ কর্নার দিয়ে উড়িয়ে মারতেই সবচাইতে বেশি পছন্দ করেন। 

ক্যাসলড

'ক্যাসলড' শব্দটা দাবার আমদানি, এ তো আমরা সবাই জানি। কিন্তু ক্রিকেটেও আছে আরেক ধরণের ক্যাসলড। মূলত ব্যাটসম্যানের তিনটে স্ট্যাম্পই যদি বোলারের ডেলিভারিতে নড়ে যায়, তাহলে বলা হয় ব্যাটসম্যান 'ক্যাসলড' হয়েছেন। বোঝাই যাচ্ছে, ক্যাসলড করা চাট্টিখানি কথা নয়। এক-দুটো স্ট্যাম্প তো নয়, তিনটে স্ট্যাম্পই নাড়িয়ে দিতে হবে! 

কল্যাপ্স

'কল্যাপ্স' শব্দটা অবশ্য ক্রিকেটে একেবারে অপরিচিত কোন শব্দ নয়। বরং আমরা বলতে পারি ক্রিকেটে এখন সবচাইতে পরিচিত শব্দ হল 'কল্যাপ্স' । মূলত ব্যাটিং দলের ব্যাটসম্যানেরা যদি যাওয়া আসার মধ্যে থাকেন, তাহলে সেটাকে বলে কল্যাপ্স। পরিষ্কার বোঝা যায়, কল্যাপ্সের মাধ্যমে ফিল্ডিং দলের বোলিং শক্তিই প্রতীয়মান হয়, প্রতিপক্ষ দলকে ব্যাটিং কল্যাপ্সে ফেলানো যেকোন ফিল্ডিং দলের জন্যেই বড় পরিকল্পনা হয়ে থাকে!  

 

তথ্যসূত্রঃ

1/ Wisden Crickipedia

2/ Wisden Cricket Monthly: Issue 42