• ক্রিকেট

এমিলিয়ানো মার্টিনেজঃ ৩১ বছর আগের গয়কোচিয়াকে ফিরিয়ে আনা বাজপাখি!

পোস্টটি ১০০৩ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

সার্জিও গয়কোচিয়াকে মনে আছে? ১৯৯০ এর সেই বিশ্বকাপে যখন ইতালীর সব রঙ কেড়ে নিচ্ছেন দিয়েগো মারাদোনা, নিয়মিত গোলরক্ষক নেরি পাম্পপিডো যখন গ্রুপপর্বেই বাদ পড়ে গেল, ঠিক তখন গোলবারের নিচে আশার দূত হয়ে হাজির হয়েছিলেন এই অখ্যাত আর্জেন্টাইন! 

 

নিয়মিত গোলরক্ষকের অনুপস্থিতিতে সুযোগ পেলেও, নেরির উপস্থিতির অভাব কখনওই বুঝতে দেননি সার্জিও গয়কোচিয়া। বরং বলা যায় দ্বিতীয় গোলরক্ষক হিসেবে আর্জেন্টিনাকে একটু বেশিই দিয়েছিলেন তিনি।  কোয়ার্টার ফাইনালে যুগোশ্লাভিয়া আর সেমিফাইনালে ইতালির বিপক্ষে পেনাল্টি সেভের ঐ হিরোইকসই তো শেষ অব্দি ফাইনালে তুলেছিল আর্জেন্টিনাকে। আর এখানেই সার্জিও গয়কোচিয়ার সাথে এক বিন্দুতে মিলে যান এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। 

 

নিয়মিত গোলরক্ষক ফ্রাংকো আরমানির অনুপস্থিতিই আর্জেন্টিনার গোলবারের নিচে তাকে সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিল। আর গয়কোচিয়ার মতই পেনাল্টি সেভের ঐ হিরোইকসই তো আর্জেন্টিনাকে তুলেছে কোপা আমেরিকার ফাইনালে। ফাইনালটাতে অবশ্য গয়কোচিয়াকে ছাড়িয়েই গেছেন মার্টিনেজ। গয়কোচিয়ার আর্জেন্টিনা ফাইনালে জার্মান শিবির জয় করতে পারেনি, এমির আর্জেন্টিনা শিরোপা জিতে এসেছে খোদ মারাকানার মাটিতে ব্রাজিলের বিপক্ষে। 

 

তবে এমিলিয়ানোও কিন্তু এতটা আলোয় ছিলেন না কখনওই। এই গত বছর আর্সেনালের বার্ন্ড লেনোর ইনজুরিতে ব্রাইটনের বিপক্ষে আলোয় এসেছিলেন। প্যনাডেমিক পরবর্তী ফুটবলে এমির এমন আলোয় আগমন হলেও এর আগের দশটা বছর কিন্তু এমির জন্যে ছিল স্রেফ ছুটে বেড়ানোর মত। নানা সময়ে নানা ক্লাবে তিনি খেলে বেড়িয়েছেন লোনে যাওয়া খেলোয়াড় হিসেবে। অবস্থা এমন ছিল, কোপা আমেরিকা জেতার পর  টাইমস অফ ইন্ডিয়া নিজেদের ফিচারে আগের  এমিকে উল্লেখ করেছে “ভ্রাম্যমান গোলরক্ষক” হিসেবে। সেই এমির হঠাৎ আর্সেনাল দর্শন হয়ে যায় ২০১৯-২০ সিজনেই, গানার্স শিবিরে।  

 

এমি কিন্তু গানার্সদের হতাশ করেননি। চেলসির বিপক্ষে গোলবারের নিচে দাঁড়িয়ে এফএ কাপ জিতেছেন, কমিউনিটি শিল্ডের টাইব্রেকারে লিভারপুলের বিপক্ষে শিরোপা জিতিয়েছেন দলকে। কিন্তু ঐ যে, ‘জার্নিম্যান’ নামটা যে লেগেই আছে নিজের গায়ে। আর তাই লেনো যখন ইনজুরি থেকে ফিরে আসলেন, আর্সেনাল তাকে প্রথম একাদশের সুযোগের নিশ্চয়তা দিতে পারল না। অগত্যা আবার প্রস্থান,২০২০-২১ মৌসুমে তাঁর ঠিকানা ছিল তাই অ্যাস্টন ভিলা। তবে আর্সেনাল যদি এবারের কোপা আমেরিকা দেখে থাকে, নিশ্চিতভাবেই কপাল চাপড়াবে এমন সোনার হরিণকে দলছাড়ার করার কারণে।

 

অ্যাস্টন ভিলার হয়েও কিন্তু দুর্দান্ত একটা মৌসুম কাটিয়েছেন এমি আর তাই জন্যেই লিওনেল স্কালোনির নজরে পড়তে সময় লাগেনি। নিজের সহজাত রিফ্লেক্স আর দুর্দান্ত পেনাল্টি সেভের ক্ষমতা দিয়ে অচিরেই তিনি অ্যাস্টন ভিলার গোলবারের সামনে হাজির হন গেম-চেঞ্জারের ভূমিকায়। আর সেটাই ২০২১ এর জুনের স্কালোনির আর্জেন্টিনাতে প্রথম একাদশে এমির আগমনের জন্যে ছিল যথেষ্ট।

 

আর এরপরের গল্পটা তো সবার জানা। কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের কথাই ধরা যাক, এমির স্লেজিংয়ের ইউনিক স্টাইলটাই তো কলম্বিয়ানদের একরকম ঘাবড়ে দিয়েছিল। আর পেনাল্টি শ্যুটআউটে তো তিনি আগে থেকেই সিদ্ধহস্ত। তবে তিনি যখন বায়ে লাফ দিয়ে শেষ পেনাল্টিটা ঠেকিয়ে আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তুলে ফেললেন, এমি যদি গয়কোচিয়াকে চিনে থাকেন তাহলে তাঁর মানসপটে গয়কোচিয়া আসতে বাধ্য। আজ থেকে ৩১ বছর আগে এভাবেই ইতালিয়ানদের পেনাল্টি ঠেকিয়ে আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তুলেছিলেন সার্জিও গয়কোচিয়া! 

 

গয়কোচিয়ার গল্পটার সাথে এমির গল্পের এতটুকু মিল আছে, তবে ব্যার্থ গয়কোচিয়ার জায়গায় এমি এখন ফাইনাল ম্যাচের পর টুর্নামেন্টের সেরা গোলকিপার। তবে এও জানিয়ে রাখি, ১৯৯০ এর পর গয়কোচিয়া আর্জেন্টিনার সাথে ছিলেন ১৯৯১ আর ১৯৯৩ এর কোপা আমেরিকাতেও। এর মধ্যে শেষেরটিতে তো তিনি জয়ী দলেরই সদস্য। এমিও গয়কোচিয়ার মত এতদূর যাবেন কিনা সেটা অবশ্য সময়ই বলে দেবে!