• ক্রিকেট

কেস স্টাডিঃ টি-টোয়েন্টিতে পাওয়ার হিটারদের ব্যাটিং দুর্বলতা

পোস্টটি ১৪৮৪ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ধুন্ধুমার খেলায় একজন ব্যাটার একাই ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য রাখে। তবে এসব ব্যাটারদের মধ্যে কিছু ব্যাটার আছেন, যাদের খেলার মূল বিশেষত্ব পাওয়ার হিটিং। এই পাওয়ার হিটিং থামাতে হলে প্রতিপক্ষ বোলারদের ঘাম ছুটে যায়। সেইসব পাওয়ার হিটারদের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ব্যাটিংয়ে এমন একক আধিপত্বের কারণটাই বা কি? কিংবা যদি প্রশ্ন করি, সেইসব পাওয়ার হিটারদের যদি আমরা আটকাতে চাই, তাহলে করণীয় কি? এই লেখায় এই প্রশ্নগুলির উত্তরই আমরা জানার চেষ্টা করব, সেই চেষ্টায় নজর দেব বর্তমান বিশ্বের সেরা কয়েকজন টি-টোয়েন্টির পাওয়ার হিটারদের দিকে!  

কে.এল রাহুল

যদি ইতিবাচক ব্যাটিংয়ের উদাহরণ খুঁজতে হয়, তাহলে এই গ্রহের ব্যাটারদের তালিকায় রাহুল সম্ভবত উপরের দিকেই থাকবেন। বোলারদের মধ্যে রাহুলের সবচেয়ে কম গড় আর স্ট্রাইক রেট লেগ স্পিনারদের বিপক্ষে, সেটাও আবার যথাক্রমে ৩৫ ও ১২৬! পেস বোলারদের হিসেবে নিলে ইয়োর্কার ছাড়া প্রত্যেক লেংথের ডেলিভারিতে রাহুলের ব্যাটিং গড় ৪৫ এর উপরে। ইয়োর্কার ডেলিভারিতে অবশ্য রাহুল একটু দুর্বল, তবে এটাই তো প্রমাণ করে- সব ব্যাটারদেরই কোন না কোন দুর্বলতা থাকে। তবে রাহুলকে আউট করতে হলে ইয়োর্কার ছাড়াও আপনি আরো যা যা কাজে লাগাতে পারেন তা হল গুগলি আর আর্মার। গুগলিতে রাহুলের স্ট্রাইক রেট ১২৩, গড় মাত্র ২৩। সেই গড় আবার আর্মারদের বিপক্ষে মাত্র ২০! ইয়োর্কারের কথা তো একটু আগেই বললাম, এবার সেটার পরিসংখ্যান দিই- ১৪০ গতির উপরে কোন বল গুড লেংথের উপরে দিলেই রাহুলের গড় কমে চলে আসে মাত্র ১৫ তে!

20211026_131234 

ছবিতে পাওয়ারপ্লে তে রাহুলের বিভিন্ন জায়গার ডেলিভারি মুখোমুখি হওয়ার স্ট্রাইক রেট দেওয়া হল। এবার নিজেই বিচার করুন- রহুলকে আউট করতে আপনি কোন লাইন আর লেংথটা বেছে নেবেন!

কুইন্টন ডি কক

পেস বোলারদের বিপক্ষে কুইন্টন ডি কক একজন সর্বগ্রাসী ব্যাটসম্যান। এখানে তাঁর স্ট্রাইক রেট ১৪২ আর গড় ৫৩! এমনকি উচ্চগতির ডেলিভারিতেও কুইন্টন ডি কক দারুণ স্বচ্ছন্দ্য, এ ধরণের ডেলিভারিতে তাঁর স্ট্রাইক রেট ১৪৬, গড় ৪০! তবে ডি কক-কে যদি আউট করতে চান, গুড লেংথে দারুণ কোন ডেলিভারি আপনি চাইলে চেষ্টা করতে পারেন। এই ধরণের বলে ডি কক-এর স্ট্রাইক রেট ও গড় যথাক্রমে ১৩৬ ও ২৮! তবে এ বাদে অন্য লেংথে চেষ্টা করতে হলে আপনার আশাহত হওয়ার সম্ভাবনা খানিকটা বেশিই। ফুল লেংথ(স্ট্রাইক রেট-১৫৭, গড়-৪৮) ও শর্ট লেংথ(স্ট্রাইক রেট-১৬০, গড়-৪০) ডেলিভারিতে তিনি যে আরো বেশি ভয়ানক। তবে পাওয়ারপ্লের সময়গুলিতে ডি ককের মাঝে স্ট্যাম্পের ক্রস করে শর্ট ফাইন লেগ দিয়ে উড়িয়ে মারার প্রবণতা প্রবল। যেকোন দল ডি কক-এর এই একটা শটের জন্যই ঐ জায়গায় একটা ফিল্ডার দাঁড় করাতেই পারে। তবে ডি কক-কে থামাতে চাইলে সবচেয়ে কার্যকরী অস্ত্র হল স্পিন।

পিচে পড়ে ব্যাটসম্যান থেকে দূরে যায় এমন ধরণের টার্নে ডি কক ভীষণ দুর্বল। এ ধরণের স্পিনে ডি কক-এর স্ট্রাইক রেট ১১৭। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই কাজটা একটা দল ডি-ককের জন্যে করে থাকে একজন অফ স্পিনার দিয়ে। তবে আগে মনে করা হত ডি কক বুঝি লেগ স্পিনে ভীষণ দুর্বল। এই মনে করার পেছনে অবশ্যি কারণ আছে। ২০১৯ সালে লেগ স্পিনের বিপক্ষে তিনি ৯১ স্ট্রাইক রেটে রান করেছিলেন মাত্র ২৩ গড়ে। তবে ডি কক কিন্তু লেগ স্পিনে নিজের এই দুর্বলতা কাটিয়ে ফেলেছেন। এ বছর তিনি লেগ স্পিনের বিপক্ষে রান করেছেন ৩৯ গড়ে, স্ট্রাইক রেটও দৃষ্টিনন্দন- ১৩৫!

20211026_131314 

ছবিতে ২০১৬ সালের বিশ্বকাপের পর থেকে টি-টোয়েন্টিতে বিভিন্ন বোলিং ডিপার্টমেন্টের বিপক্ষে ডি কক-এর স্ট্রাইক রেট দেওয়া হল। ডি কক-এর দুর্বলতা এতে আরেকটু দৃশ্যমান হবে।

জস বাটলার

জস বাটলারের সবচাইতে বড় দুর্বলতা লেগ স্পিনে। এমনকি শুধু লেগ স্পিনেই জস বাটলারের গড় ৩০ ও পার হয়নি। ২০১৮ এর শুরু থেকেই জস বাটলার এই দুর্বলতা নিজের মধ্যে বয়ে চলেছেন। আরেকটু নির্দিষ্ট করে বললে- ৮৮ কিলোমিটার/ঘন্টার গতির নিচে যেকোন লেগ স্পিনই বাটলার খেলতে পারেন না। গুগলির বিপক্ষে তাঁর স্ট্রাইক রেট মাত্র ১১৯, গড়ের অবস্থা তথৈবচ- মাত্র ১১! গুগলির কথা ছাড়ুন, যেসব লেগ স্পিন একদম সোজাসুজি যায়, সেসব লেগ স্পিনেও বাটলার দুর্বল। খুব সম্ভবত বাটলার লেগ স্পিনকে পড়তেই পারেন না। তবে লেগ স্পিনে দুর্বল হলে কি হবে, পেস বোলারদের বিপক্ষে বাটলার এক কথায় ভয়ানক। গতির বিপক্ষে তাঁর গড় ও স্ট্রাইক রেট ৪০ ও ১৬৫, নির্দিষ্ট করে শর্ট বলের বিপক্ষে যেটা কিনা ১৪৭ ও ৫৮!

বাটলার স্কুপ খেলতে পারেন দুর্দান্ত। পেস বোলিং দিয়ে তাই বাটলারকে ঘায়েল করতে হলে আপনি ওয়াইডিশ ইয়োর্কার চেষ্টা করে দেখতে পারেন(স্ট্রাইক রেট ৭৯)। তবে হার্ড লেংথে বল ফেললেও আপনার খুব একটা আশাহত হওয়ার সুযোগ নেই(স্ট্রাইক রেট ১১৮)

20211026_131336 

ছবিতে লেগ স্পিনের বিভিন্ন গতির ভ্যারাইটির বিপক্ষে বাটলারের ব্যাটিং গড় দেওয়া হল। এটা দেখলেই বুঝতে পারবেন, লেগ স্পিন বিষে বাটলার কতটা নীল!

জনি বেয়ারস্টো

বেয়ারস্টো যখন ওপেনার ছিলেন, তখন স্পিনের বিপক্ষে তাঁর কিছুটা দুর্বলতা ছিল। তবে মিডল অর্ডারে নেমে যাওয়ার পর থেকে সেই দুর্বলতা কিছুটা কমে এসেছে। অবশ্য লো-স্কোরিং ম্যাচগুলিতে বেয়ারস্টো এখনও ভীষণ দুর্বলই বটে।  মজার ব্যাপার হল, ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে লেগ স্পিনের বিপক্ষে বেয়ারস্টোর কিছুটা দুর্বলতা থাকা উচিত ছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে বেয়ারস্টোর সেটা নেই। লেগ স্পিনের বিপক্ষে তাঁর স্ট্রাইক রেট ১৬০, রান করেছেন গড়ে ৩২ এ। তবে বেয়ারস্টোর বড় দুর্বলতার জায়গা বাঁহাতি স্পিনাররা। অফ স্পিন, লেগ স্পিনে অনায়াসে বলকে মাঠছাড়া করতে পারলেও বাঁহাতি স্পিনারদের বিপক্ষে তাঁর স্ট্রাইক রেট মাত্র ১২১, গড় ২৪!

তবে বাঁহাতি স্পিনে যদি আপনি বেয়ারস্টোকে প্যাভিলিয়নে ফেরাতে চান, তাহলে আরেকটু বলে রাখি। বাঁহাতি স্পিনাররা যখন গতি বাড়িয়ে নিচের লেংথে করা শুরু করেন, বেয়ারস্টো যেন স্পিনার না- দেখতে পান সাক্ষাৎ যমদূতকেই!

বাঁহাতি স্পিন ছাড়াও বেয়ারস্টোর আরেকটি দুর্বলতা গতিময় ফাস্ট বোলিং। ১৪০ গতির উপরে ছোঁড়া ডেলিভারিতে বেয়ারস্টোর স্ট্রাইক রেট মাত্র ১১৫, গড়ও বেশ কম- ২৬!

 20211026_131358

ছবিতে ২০১৬ বিশ্বকাপের পর থেকে বাঁহাতি স্পিনারদের বিপক্ষে বেয়ারস্টোর আউট হওয়া ডেলিভারিগুলি দেওয়া হল। খেয়াল করলেই বুঝবেন, খাটো লেংথের লাফিয়ে ওঠা বলগুলিই বেয়ারস্টোর দুর্বলতা!

গ্লেন ম্যাক্সওয়েল

পেস, স্পিন, লেগ স্পিন, স্লো লেফট আর্ম ইত্যাদি- কোন বিশেষ ধরণের বোলিংয়ের বিপক্ষে গ্লেন মায়ক্সওয়েলের বিশেষ কোন দুর্বলতা নেই। সব ধরণের বোলিংয়েই তাঁর ন্যূনতম গড় ২৫, স্ট্রাইক রেট ১৩০ এর উপরে। তবে এর মধ্যে যে ফোঁকরটা আপনি খুঁজে পাবেন, তা হল গতিময় ফাস্ট বোলিং। ১৪০ কিলোমিটার/ঘন্টার উপরের ডেলিভারিতে ম্যাক্সওয়েলের গড় ২৩, স্ট্রাইক রেটও নিতান্তই সাধারণ। মাত্র ১২৪!

এই গতিময় বোলিংই হল ম্যাক্সওয়েলকে ফেরানোর একমাত্র মওকা। স্পিন বোলিং কিংবা শর্ট লেংথের পেস বল- তিনি স্বচ্ছন্দ্য সবকিছুতেই। তবে এই গতিময় পেস বোলিংয়ের সামনেই ম্যাক্সওয়েল কিছুটা অসহায়।

এ তো গেল পেস বোলিংয়ে ম্যাক্সওয়েলের দুর্বলতা। স্পিন দিয়ে ম্যাক্সওয়েলের উইকেট কিভাবে নেওয়া যায়? স্পিনে ম্যাক্সওয়েলের উইকেট নেওয়ার উপায় এমন ডেলিভারিতে বল করা যেটা পিচের পড়ার পর ম্যাক্সওয়েল থেকে দূরে সরে যায়। তবে এমন টার্নেও তাঁর স্ট্রাইক রেট ১৩০। তবে একটু বেশি গতির স্পিনে আবার ম্যাক্সওয়েলের স্ট্রাইক রেট মাত্র ১০৯!

 20211026_131445

ছবিতে ২০১৬ বিশ্বকাপের পর থেকে ১৩৫ কিমি/ঘন্টার উপরের গতির বলগুলিতে ম্যাক্সওয়েলের আউট হওয়া বলগুলি দেখানো হল । এতে গতির বিপক্ষে ম্যাক্সওয়েলের দুর্বলতা আরেকটু দৃশ্যমান হবে।

নিকোলাস পুরান

নিকোলাস পুরানের দুটো দুর্বলতা প্রকান্ডভাবে দৃশ্যমান। প্রথমত, বেশি গতির বলে শর্ট লেংথ ডেলিভারি আর দ্বিতীয়ত, অ্যাওয়ে স্পিন। ১৪০ কিমি/ঘন্টার উপরে যেকোন ডেলিভারিতে পুরানের গড় মাত্র ১৪, স্ট্রাইক রেট ১৩০! জেনুইন কোন বাউন্সারের বিপক্ষেও পুরানের গড় ঐ ১৪ ই! তবে সোজা আসা আর ভেতরে ঢুকে যাওয়া স্পিনে পুরান একজন দুর্দান্ত খেলোয়াড়(স্ট্রাইক রেট ১৬৮)। কিন্তু বেরিয়ে যাওয়া স্পিন ডেলিভারিতে পুরানের স্ট্রাইক রেট আর ডেলিভারি মাত্র ১১৯ ও ২৭! তবে পুরানের সবচাইতে বড় দুর্বলতা এখনও বলাই হয়নি- বাঁহাতি লেগ স্পিনার! ক্রিকেটের এই বিরল প্রজাতির বোলিংয়ে পুরানের স্ট্রাইক রেট মাত্র ১০১, গড়টাও নিতান্তই ফেলনা- ১৫!

20211026_131513 

ছবিতে ২০১৬ বিশ্বকাপের পর থেকে বিভিন্ন গতির বিপরীতে পুরানের ব্যাটিং গড় দেখানো হল।

হার্দিক পান্ডিয়া

হার্দিক পান্ডিয়ার সবচাইতে বড় দুর্বলতা লেগ স্পিনে। লেগ স্পিনের বিপক্ষে তাঁর স্ট্রাইক রেট ১০৭, গড় মাত্র ২০। তবে এছাড়া অন্যান্য স্পিনের বিপক্ষে তাঁর স্ট্রাইক রেট আবার ১৪২। এমনিতে হার্দিককে ফেরাতে চাইলে আপনার সবচাইতে বড় অস্ত্র হতে পারে গুগলি। গুগলির বিপক্ষে হার্দিকের স্ট্রাইক রেট মাত্র ৯৭। তবে স্লোয়ার বলগুলিতে হার্দিকের স্ট্রাইক রেট আবার চোখ কপালে তুলে ফেলার মত, ১৬৭!

আর পেস বোলিংয়ের মধ্যে বাঁহাতি পেসারদের বিপক্ষেও হার্দিক সীমানা ছাড়া করতে পটু। এ ধরণের বলে হার্দিকের স্ট্রাইক রেট প্রায় ১৬৭!  তবে পেস বোলিংয়ে হার্দিকের সবচেয়ে দুর্বল জায়গা হল বডিলাইন বরাবর ছোঁড়া হার্ড-লেংথের ডেলিভারিগুলি। এই ধরণের ডেলিভারিতে হার্দিকের স্ট্রাইক রেট মাত্র ১১৬!

20211026_131532

ছবিতে বিভিন জায়গায় মুখোমুখি হওয়া বলে হার্দিকের স্ট্রাইক রেট দেওয়া হয়েছে। এখান থেকেই উপরের কথাটুকুর কিছুটা দৃশ্যমান উদাহরণ পাওয়া যায়।

কাইরন পোলার্ড

টাইট বডি লাইন, শর্ট লেংথ আর হাই পেসে করা বলে কাইরন পোলার্ড কিছুটা ভিরমি খেয়ে যান। ১৪০ কিমি/ঘন্টা গতির উপরের ডেলিভারিতে পোলার্ডের স্ট্রাইক রেট মাত্র ১১৬। যদিও এমন নিম্নগামী স্ট্রাইক রেটের পরেও এই ধরণের ডেলিভারিতে পোলার্ডের গড় মোটামুটি বেশ ভালই আছে, অন্তত ৩৫ গড়কে তো আর খারাপ বলা যায়না। তবে পোলার্ডের আসল দুর্বলতা হল শর্ট বলে।

স্ট্যাম্প থেকে ৮ মিটার দূরে পিচ করে এমন ডেলিভারিতে পোলার্ডের স্ট্রাইক রেট মাত্র ১২৫, সংখ্যাটা ৮-১০ মিটার হলে অবশ্য পোলার্ডের স্ট্রাইক রেটের দশা আরো খারাপ হয়ে যায়, নেমে যায় ১১২ তে! এই ধরণের ডেলিভারিতে আবার পোলার্ডের গড়টাও নেমে যায় ২১ এর কাছাকাছিতে। তবে পোলার্ডকে প্যাভিলিয়নে ফেরাতে হলে পেস বোলিংয়ে আপনি আরো যা যা করতে পারেন তা হল-  প্রচুর গতিতে টাইট বডি লাইন বরাবর একের পর এক ডেলিভারি ছোঁড়া।

স্পিনের বিপক্ষে কাইরন পোলার্ড বিধ্বংসী একজন ব্যাটসম্যান। তবে স্পিনের মধ্যেও তাঁর কিঞ্চিৎ দুর্বলতা আছে আর সেটা হল লেগ স্পিনে। এমনিতে লেগ স্পিনে পোলার্ডের স্ট্রাইক রেট ১৩৭ হলেও গুগলিতে পোলার্ডের স্ট্রাইক রেট নেমে যায় ৮৮ তে!

20211026_131618 

ছবিতে ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকে হাই পেসে বিভিন্ন লাইন বরাবর পোলার্ডের স্ট্রাইক রেট দেওয়া হল। এই ধরণের পেসে টাইট বডি লাইনে পোলার্ডের দুর্বলতা বুঝতে এতে আরো সুবিধা হবে।

আন্দ্রে রাসেল

অন্যান্য সব পাওয়ার হিটার টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যানের মধ্যে আন্দ্রে রাসেলের দুর্বলতা একটু কমই। তবে সাদা চোখে পেস আর স্পিন বিবেচনায় নিলে রাসেলকে ফেরাতে হলে অবশ্যই দলের সেরা স্পিনারের এক ওভার আপনাকে রাসেলের জন্যে রাখতেই হবে। শেষ বাক্যটির প্রমাণ দিচ্ছে রাসেলের স্ট্রাইক রেট। পেস বোলিংয়ের বিপক্ষে রাসেলের স্ট্রাইক রেট ১৮৭ হলেও স্পিনে কিন্তু সেটা ১৪০। এই স্পিনের মধ্যে আবার টার্ন করে ভিতরে ঢোকা বলে রাসেলের স্ট্রাইক রেট ১৩৪ আর বাইরে যাওয়া বলে স্ট্রাইক রেট ১৪৩। তবে রাসেল সবচেয়ে বেশি পরাস্ত হন গুগলিতে। গুগলিতে রাসেলের স্ট্রাইক রেট নেমে যায় ১০৭ এ!

পেস বোলিংয়ে আন্দ্রে রাসেল ভীষণ স্বচ্ছন্দ্য। তবে পেস বোলিংয়ে অন্তত তাকে কিছুটা থামিয়ে রাখতে চাইলে সবচেয়ে নিরাপদ হতে পারে হার্ড লেংথে বাউন্সার ছোঁড়া। এই  ধরণের ডেলিভারিতে রাসেলের স্ট্রাইক রেট ১৫০-১৮০ এর মধ্যে ঘোরাফেরা করে। বুঝতেই পারছেন, খুব একটা সুবিধা আপনি করতে পারবেন না। তাহলে কি পেস বোলিংয়ে রাসেলের কোন দুর্বলতা নেই? আছে। ইয়োর্কার ডেলিভারিতে রাসেলের স্ট্রাইক রেট মাত্র ১২০।

কিন্তু রাসেল যদি নিজেকে পিচে সেট করে নেন তাহলে ফুল লেংথের বলেও খুব একটা কাজে আসবেনা। এ ধরণের ডেলিভারিতে রাসেলের স্ট্রাইক রেট ২৯০, ফুল টসে যেটা ১৮১।

20211026_131647 

ছবিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০১৬ এর পর থেকে টি-টোয়েন্টিতে বিভিন্ন  লাইনে রাসেলের স্ট্রাইক রেট দেখানো হল। এবার নিজেই বিবেচনা করুন- রাসেলকে কিভাবে থামাবেন!

তথ্যসূত্রঃ ক্রিকভিজ
তথ্যের ব্যাপ্তিকালঃ ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকে ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরুর আগ অব্দি।