• ক্রিকেট

নামিবিয়ার লঙ্কা বধ

পোস্টটি ৮৩৬ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

"বর্তমান এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা কে ৫৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপের শুরুর ম্যাচেই বড় 'অঘটন' ঘটিয়েছে নামিবিয়া!" কিংবা "টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম আসরের প্রথম ম্যাচে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নদের 'আনএক্সপেক্টেড' হার!" এমন শিরোনাম নামিবিয়ার অসাধারণ, ঐতিহাসিক জয়কে ছোট করবে নিঃসন্দেহে। তারা শ্রীলঙ্কাকে কোনো প্রকার সুযোগ না দিয়ে পূর্ণ ডমিনেট করেই নিজেদের ক্রিকেটীয় ইতিহাসের সেরা জয়টি পেয়েছে, তাও ক্রিকেটের বিশ্ব মঞ্চে। প্রথমেই টুপি খোলা অভিনন্দন নামিবিয়াকে। বোলিং, ব্যাটিং এবং ফিল্ডিং তিন বিভাগেই অসাধারণ পারফর্ম করে জয়টা তুলে নিয়েছে তারা।

 

প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ওপেনার আর টপ অর্ডারের হতশ্রী ব্যাটিং ব্যর্থতায় প্রথমেই খেই হারিয়ে ফেলার পরেও দলটা শ্রীলঙ্কার মতো ক্রিকেট পরাশক্তির বিপক্ষে একটা লড়াকু ইনিংস দাঁড় করাতে পেরেছে মিডল আর লেট মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের ফিনিশিংয়ে দারুণ দৃঢ়তায়। ১৫ ওভারে ৯৫/৬ থেকে ২০ ওভার শেষে ১৬৩/৭-এ স্কোর নেওয়ার মূল কারিগর ফ্রাইলিং আর স্মিটের মনোমুগ্ধকর ৩৪ বলের ৭০  রানের ঝড়ো পার্টনারশিপ। শেষ ৫ ওভারে নামিবিয়ার ব্যাটসম্যানরা ৬৮ রান তুলেছে। স্লগ ওভারে কিভাবে ব্যাটিং করতে হয়, সেটা বাংলাদেশের মতো দলকে যেন তারা চোখে আঙুল দিয়েই দেখিয়ে দিল।

 

ভালো ব্যাটিং করেই তারা ম্যাচের রাশ কিন্তু ছেড়ে দেয়নি এক মুহূর্তের জন্যও। বোলিং আর ফিল্ডিংয়ে নিজেদের কারিশমা বিশ্ব ক্রিকেটকে দেখানো যে তখনো বাকি!

অভিজ্ঞ ডেভিড ভিসার সাথে তরুণ বেন শিকঙ্গোর দারুণ বোলিং, সে সাথে ম্যাচজয়ী পারফর্মার, দুই অলরাউন্ডার স্মিট আর ফ্রাইলিংয়ের অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্স আর ম্যাচ জুড়ে ফিল্ডারদের বিন্দুমাত্র ছাড় না দেওয়া মনোভাব নামিবিয়াকে এনে দিয়েছে হিস্টোরিক ম্যাচ জয়। ভাবা যায়, এই শ্রীলঙ্কাই মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে ভারত পাকিস্তানকে হারিয়ে এশিয়া চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, তাদেরকেই কিনা মাটিতে নামিয়ে আনলো নামিবিয়ার মতো বিশ্ব ক্রিকেটে নবীন এই দেশটি। না, তাদের ঠিক নবীনও বলা যাবে না। ২০০৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে তারা প্রথম অংশগ্রহণ করেছিল, তবে ২০২১ টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকেই মূলত ক্রিকেটবিশ্বে তাদের লাইমলাইটে আসা, বিশ্বমঞ্চে আইরিশদের হারানোর মধ্য দিয়ে। 

 

নামিবিয়ার মতো অ্যাসোসিয়েট নেশনের জন্য একটি ফুল নেশন ক্রিকেট দল, সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, বর্তমান এশিয়ান চ্যাম্পিয়নদের হারানোটা তাদের ক্রিকেটের জন্য বিশাল ব্যাপারই বটে। শুধু তাদের ক্রিকেট কেন, এটি বিশ্ব ক্রিকেটের জন্যও বড় বিজয়। ক্রিকেটের বিশ্বায়নের জন্য বড় অর্জন।

 

২৮ লাখ মানুষের বসতি, আফ্রিকার প্রতিনিধি নামিবিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা রাগবি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেটটাও সেখানে বেশ চর্চা হচ্ছে। আর বিশ্ব মঞ্চে এমন অবিস্মরণীয় জয় তাদের ক্রিকেট অগ্রযাত্রাকে বহুদূর বেগবান করবে নিঃসন্দেহে। বর্তমান নামিবিয়া দলের অধিকাংশ ক্রিকেটারই তরুণ খেলোয়াড়, যেটা তাদের ক্রিকেটের জন্য প্লাস পয়েন্ট। তাদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় যেতে পারবে ক্রিকেট নামিবিয়া।

২০১৪-১৫ সালের দিকে আফগানিস্তান ক্রিকেটের উত্থানও কিন্তু এভাবেই হয়েছিল, হঠাৎ হঠাৎ বড় দলগুলোর বিপক্ষে 'আকস্মিক' বা 'অঘটন' ঘটানো জয়ই কিন্তু তাদের ক্রিকেটকে আজকে এ যায়গায় নিয়ে এসেছে। সাড়া জাগানিয়া কিছু করতে না পারলেও ক্রিকেটে আফগানরা এখন সব দলের জন্য বড় প্রতিপক্ষই বটে। বিশ্ব ক্রিকেটে আফগানিস্তান থেকে  একের পর এক বিশ্ব মানের খেলোয়াড় তৈরি হয়ে উঠে আসছে।

 

অ্যাসোসিয়েট কান্ট্রিগুলো বিশ্বকাপ ছাড়া বড় দল গুলোর বিপক্ষে তেমন খেলার সুযোগ পায় না। যদি বছরে অন্তত ২-৩টা সিরিজ প্রথম সাড়ির দল গুলোর সাথে খেলতে পারতো, তাহলে সেটা তাদের ক্রিকেট ডেভলপমেন্টকে বহুগুণ তরান্বিত করতো, এটা বলাই যায়।

ক্রিকেটের বিশ্বায়নেও সেটি প্রভাবক হতো। বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা, আইসিসি আশা করছি এই ব্যাপারগুলোতে আরো বেশি মনোযোগী হবে।

নামিবিয়ার মতো দলগুলো, ক্রিকেট বিশ্বের বড় দলগুলোর বিপক্ষে আরো বেশি বেশি ম্যাচ খেলুক, জিতুক সেই প্রত্যাশা থাকলো।