• অন্যান্য

দুই রেসারের গল্প

পোস্টটি ১১৫৬ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

গল্প বলা যায় অনেক ভাবেই। খেলার মোড়কে জীবনের গল্প বলে যাওয়ার ঘটনাও খুব দুষ্প্রাপ্য নয়। কেউ সেটা করেছেন কলমে, কেউ করেছেন ক্যামেরার পেছনে দাঁড়িয়ে। ক্রিকেটের সাথে জীবন মিশিয়ে আশুতোষ গোয়াড়িকার যেমনটা করে গেছেন ‘লগান’এ, ক্লিন্ট ইস্টউড যেমন রিংয়ের গন্ডিতে মানুষের সাথে জীবনের প্রতিঘাতের উদাহরণ দেখিয়েছেন ‘মিলিয়ন ডলার বেবি’তে, একটি জাতির ইতিহাস পালটে দেয়া যুগের সূচনা যেমনটা ঐ ইস্টউডই দেখিয়েছেন ‘ইনভিকটাস’এ।

দুই রেসারের গল্পটা বলেছেন রন হাওয়ার্ড। বাস্তবকে উপজীব্য করে ‘ফ্রস্ট-নিক্সন’ বা ‘আ বিউটিফুল মাইন্ড’ এর মতো সিনেমা বানিয়ে আগেও দর্শকদের চমকে দিয়েছেন হাওয়ার্ড,  আর এবার বিপরীত মেরুর দুইজনের জীবনের ট্র্যাক তুলে ধরতে দর্শককে তিনি বসিয়েছেন গতির খেলা ফর্মূলা ওয়ানের ড্রাইভিং সিটে। ‘রাশ’ সিনেমা তাই দিনশেষে একজোড়া মানুষের জীবনের গল্প।

*** * ***

প্রথম জন এক অস্ট্রিয়ান। নিকি লাউডা’কে এক কথায় বর্ণনা করতে গেলে বলতে হবে পেশাদার। ইঞ্জিন আর গতির বোঝাপড়ার বিজ্ঞানে নিকির মাথাটা কাজ করে দুর্দান্ত। এরচেয়েও বড় সম্পদ, কাঠখোট্টা নিকি লাউডার পরিশ্রম আর ধৈর্য্য। রেসের দৈর্ঘ্য যত বেশি, প্রথমে থেকে ফিনিশিং লাইন ছোঁবার সম্ভাবনা তত যাবে নিকি লাউডার পক্ষেই।

গুগল বলবে ফর্মূলা ওয়ানের তিনবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন নিকি লাউডা এখনো বর্তমান বহাল তবিয়তে, ইঞ্জিনের প্রতি ভালোবাসার টানেই হোক অথবা পেশাদারিত্বের টানে- লাউডা এখন ট্র্যাকের বদলে আকাশের রাজা। এক জোড়া এয়ারলাইন্সের গর্বিত মালিক তিনি।

গল্পের আরেক নায়ক জেমস হান্ট। প্রাণখোলা, আমুদে এই ব্রিটনের ভীষণভাবে অপছন্দ স্থবিরতা। দারুণ রকম রমনীমোহন হান্ট এককথায় মিডিয়ার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। লম্বা পাল্লার হিসেবের চাইতে মুহুর্তের মহিমায় হান্টের বিশ্বাস বেশি, ট্র্যাকে যে কোনো মাপের ঝুঁকি নিতে পারেন খেয়ালের বশে।

ইতিহাস পরে বলবে, বেহিসেবী জীবনের দাম মিটিয়ে জেমস হান্ট গত হয়েছেন বছর বিশেক আগেই। স্বল্প দিনের রেসিং ড্রাইভার জীবনের ইতি টেনে হয়েছিলেন হান্ট হয়েছিলেন ব্যবসায়ী, তবে ওই অল্প সময়েই জাত চিনিয়ে একবার হয়েছিলেন বিশ্বসেরা।

জেমস হান্ট আর নিকি লাউডার মঝের রেষারেষিটা স্বাভাবিক নয় একদম। সেই যৌবনের শুরু থেকেই কেনো যেন দুইজনের বৈপরীত্য ঠিক করে দিলো, তাদের মাঝে প্রতিযোগিতা কেবল গতিতেই থেমে থাকবে না- লড়াইটা চলে যাবে পারষ্পরিক অহমে। গাড়ি থেকে সঙ্গিনী, কোন জায়গাতেই একই সমতলে হবে না দুইজনের স্থান। লাউডা যদি জায়গা করেন যে কোনো ফর্মূলা ওয়ান ড্রাইভারের স্বপ্নের ফেরারি’ দলে, জেমস হান্ট তবে দখল করবেন ম্যাকলারেনের সিট।

ফর্মূলা ওয়ানের ইতিহাসে এই দুইজনের লড়াই ভিন্ন মাত্রা পাবে ১৯৭৬ সালের মৌসুমে। আর রন হাওয়ার্ড বলেছেন সেই গল্পটিই।

rush movie quote

গতি, টানটান উত্তেজনা, ঘটন-অঘটনে সত্যিকারের জমাট এক মৌসুম ছিলো ঐ ১৯৭৬; সেই লড়াইয়ের কোন ট্র্যাকে ফিনিশিং লাইন সবার আগে দেখবে নিকি লাউডার ফেরারিকে, কখনো জেমস হান্টের উদ্দাম গতি পেছনে ফেলবে রেকর্ড বইয়ের পাতাকেও। কাহিনীতে হতবুদ্ধি করে দেয়া মোচড় দেখা যাবে আগস্ট মাসের জার্মান গ্রঁ প্রি’তে। সেই ঘটনা পালটে দেবে দুই রেসারের জীবন, তাদের দর্শন, তাদের পারষ্পরিক বোঝাপড়া। সেই গল্প আর না বলি, কেবল জানাই রন হাওয়ার্ডের নিপুণতায় ঐ কাহিনীও দর্শক দেখবে নখ কামড়ানো উত্তেজনায়।

এই হলো ‘রাশ’ সিনেমা। যারা ভালোবাসেন গতি, পছন্দ করেন খেলাধূলা- আর অবশ্যই যারা ফ্যান ফর্মূলা ওয়ান রেসিঙের- রাশ না দেখে উপায় নেই তাদের। এস ফর স্পোর্টস, এস ফর স্পিরিট। ঐ স্পিরিটটাই যে জীবনের ট্র্যাকে সবচেয়ে দরকারী ইঞ্জিন, সেই সত্যটা আরেকবার বলে দেয় রাশ।

নিকি লাউডা আর জেমস হান্টের এই চমৎকার গল্প দেখেও আক্ষেপ থেকে যায় একটা। বছরের পর বছর ধরে নিরলস পরিশ্রম করে যাওয়া আমাদের ক্রীড়াবিদেরা, চল্লিশ পেরিয়েও সাইকেলের প্যাডাল মেরে যাওয়া আকাশী সুলতানা অথবা কুর্মিটোলার মাঠে বল কুড়িয়ে শৈশব কাটানো সিদ্দিকুর- তাদের গল্পটা বলবে কে ?

কোথায় আমাদের মতি নন্দী ? ক্যামেরা হাতে কোথায় ঘুরছেন বাংলাদেশের রন হাওয়ার্ড ?