শারজায় দেজা ভু, অস্ট্রেলিয়া আরও ভয়ঙ্কর
পাকিস্তান ২৮৪/৭, ৫০ ওভার (রিজওয়ান ১১৫, মালিক ৬০, রিচার্ডসন ২/১৬, কোল্টার-নাইল ২ /৫২)
অস্ট্রেলিয়া ২৮৫/২, ৪৭.৫ ওভার (ফিঞ্চ ১৫৩*, খাওয়াজা ৮৮, ইয়াসির ১/৬০)
অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটে জয়ী
শুক্রবারের পর একদিন পেরিয়ে গেছে। নতুন দিন, অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তানের নতুন একটা ওয়ানডে। ভেন্যুটা পুরোনোই। তবে শারজায় যেন ফিরে ফিরে এলো প্রথম ম্যাচটিই।
টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুর দিককার একজন পাকিস্তানী ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি (ক্যারিয়ারের প্রথম), শুরুতেই উইকেট হারিয়ে ফেলে চাপে পড়ে যাওয়া পাকিস্তানের মাঝপথে ঠিকঠাকই চলে শেষদিকে একটু উড়ানে ২৮০-এর আশেপাশে সংগ্রহ। মাঝবিরতিতে যেটা মনে হচ্ছিল চ্যালেঞ্জিং। তবে ব্যাটিংয়ে নেমে সে চ্যালেঞ্জকে ফুৎকারে উড়িয়ে দেওয়া অস্ট্রেলিয়ার, অ্যারন ফিঞ্চের সেঞ্চুরিতে ভর করে। তার আগে উসমান খাওয়াজার সঙ্গে দারুণ ওপেনিং জুটি ফিঞ্চের। এ পর্যন্ত পড়ে ধন্দে পড়ে যেতে পারেন আপনি, আদতে এটা কোন ম্যাচের বর্ণনা। কী করার, অস্ট্রেলিয়া যে পাকিস্তানকে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে হারিয়েছে ওই একইভাবেই! ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার এটি টানা পঞ্চম জয়, অস্ট্রেলিয়া উড়ছে। ওই যে, বিশ্বকাপ আসছে!
এবার পাকিস্তানের হয়ে সেঞ্চুরি করেছেন রিজওয়ান হাসান। ইমাম অবশ্য আগেরদিনের চেয়ে অনেক আগেই ফিরেছেন, শূন্যতেই বোল্ড তিনি জাই রিচার্ডসনের বলে। ১৫ বলে ১৯ রান করা শান মাসুদ রিচার্ডসনের দ্বিতীয় শিকার দিনের। প্রথম ধাপে রিচার্ডসন ছিলেন দুর্দান্ত, ৫-২-১৬-২। তবে পরের ধাপটা আর করা হলো না তার, ফিল্ডিংয়ে ডাইভ দিয়ে কাঁধের চোটে মাঠ ছেড়েছিলেন তিনি। পরে জানা গেছে, কাঁধ নড়ে গেছে তার। অবশ্য তার অভাবটা টের পেতে দেননি ফিঞ্চ, তার কোটা পূর্ণ করতে এসে অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক ১০ ওভারই করে ফেলেছেন, দিয়েছেন ৪১ রান, নিয়েছেন হারিস সোহেলের উইকেট।
যেন আগের দিনেরই ম্যাচটা!
পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ের এটিও আরেক চিত্র, আগের দিনের মতোই। আপাত মনে হওয়া সুযোগগুলোকে ঠিক কাজে লাগাতে পারেনি যেন তারা। অবশ্য ২৮৪ পর্যন্ত তাদের যাওয়ার পেছনে মূল অবদান রিজওয়ান ও অধিনায়ক শোয়েব মালিকের ৫ম উইকেটে ১২৭ রানের জুটি। হারিস ও উমর আকমল শুরুটা করলেও ফিরে গেছেন ইনিংস বড় করতে না পেরেই, মালিক ও রিজওয়ানই টেনেছেন এরপর পাকিস্তানকে। ৬১ বলে ৬০ করে ফিরেছেন মালিক, আর রিজওয়ান তাকে অনুসরণ করেছেন ১২৬ বলে ১১৫ রান করে। ১১৪ বলে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছিলেন তিনি। বিশ্বকাপের আগে এ সেঞ্চুরিতে একটা জায়গার দাবিও জানিয়ে গেলেন তাই।
এরপর পাকিস্তানের ছোট দুইটি ক্যামিওর ‘পালা’। ইমাদ ওয়াসিম করলেন ১০ বলে ১৯, আর সমানসংখ্যক বলে ১৪ রান ফাহিম আশরাফের। পাকিস্তানের স্কোর গিয়ে ঠেকলো প্রথম ওয়ানডের চেয়ে ৪ রান বেশিতে।
এবার পালা ফিঞ্চের। অবশ্য আজ কম গেলেন না খাওয়াজাও। ওপেনিং জুটিতেই উঠলো ২০৯ রান, পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার যা দ্বিতীয় দুইশ পেরুনো ওপেনিং জুটি। ৩৭তম ওভারে গিয়ে ভেঙেছে তাদের সে জুটি, ইয়াসিরকে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন খাওয়াজা। তবে তার আগেই করেছেন ৮৮ রান, ১০৯ বলে ৮ চারে।
মাঝে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে রান-আউট করল পাকিস্তান, তবে টলাতে পারলো না ফিঞ্চকে। আগেরদিন ক্যারিয়ারের ১২তম সেঞ্চুরির সংখ্যাকে এক বাড়িয়ে নিলেন ফিঞ্চ, এদিন সেঞ্চুরি পূর্ণ করতে খেলেছেন মাত্র ৯৭ বল। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ১৪৩ বলে ১৫৩ রানে, ১১ চারের সঙ্গে মেরেছেন ৬টি ছয়। অর্ধেকের বেশি রান তিনি করেছেন বাউন্ডারি থেকেই। আগের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৪৮ রানের ইনিংসকেও তাই ছাড়িয়ে গেছেন এদিন ফিঞ্চ।
অস্ট্রেলিয়ার জয়টা অনেক্ষণ থেকেই হয়ে ছিল সময়ের অপেক্ষা। ১৮ বলে প্রয়োজন ছিল ১৪, ফাহিম আশরাফের পরের পাঁচ বলেই সেটা মার্শকে সঙ্গে নিয়ে সেরে ফেলেছেন ফিঞ্চ। নিশ্চিত করেছেন অস্ট্রেলিয়ার আরেকটি দাপুটে জয়। আর আরও একবার ঘোষণা করেছেন যেন, বিশ্বকাপ আসছে!