• পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ
  • " />

     

    ২৭৮ রানের লক্ষ্যে পাকিস্তানের দুই সেঞ্চুরি, তবুও জিতল অস্ট্রেলিয়া

    ২৭৮ রানের লক্ষ্যে পাকিস্তানের দুই সেঞ্চুরি, তবুও জিতল অস্ট্রেলিয়া    


    চতুর্থ ওয়ানডে, দুবাই
    অস্ট্রেলিয়া ২৭৭/৭, ৫০ ওভার (ম্যাক্সওয়েল ৯৮, খাওয়াজা ৬২, ক্যারি ৫৫, ইয়াসির ২/৫৭, হাসনাইন ২/৫২)  
    পাকিস্তান ২৭১/৮, ৫০ ওভার (আবিদ ১১২, রিজওয়ান ১০৪, কোল্টার-নাইল ৩/৫৩, স্টোইনিস ২/২০)
    অস্ট্রেলিয়া ৬ রানে জয়ী 


    ২৭৮ রানের লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের, অভিষিক্ত আবিদ আলির পর সেঞ্চুরি করলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। শেষ ৫৪ বলে প্রয়োজন ছিল ৬০ রান, বাকি ছিল ৮ উইকেট। এরপরও ম্যাচ হারার প্রায় অসম্ভব কাজটা সম্ভব করে তুললো পাকিস্তান। আবিদের উইকেটেই বদলে গেল চিত্রটা, এ ম্যাচটাই অস্ট্রেলিয়া জিতল ৬ রানে, সিরিজের ব্যবধান করে ফেললো ৪-০। ইতিহাসে মাত্র ৪র্থ দল হিসেবে রানতাড়ায় দুই সেঞ্চুরির পরও ম্যাচ হারলো পাকিস্তান, এর চেয়ে কম রানের লক্ষ্যে দুই সেঞ্চুরির পরও হারের রেকর্ড আছে শুধু জিম্বাবুয়ের।  

    শেষটা বাদ দিলে সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে ব্যাটিং-বোলিং দুই দিক দিয়েই প্রথমবারের মতো এগিয়ে ছিল পাকিস্তান। প্রথম দুই ওয়ানডের মতো এবারও তৃতীয় ওয়ানডের সঙ্গে চতুর্থ ওয়ানডের প্রথম ইনিংসে ছিল দারুণ মিল। দুই ওপেনারের একজনের দারুণ শুরুর পর দ্রুতই গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ক্রিজে আসা, এরপর জীবন পাওয়া, এরপর পাকিস্তানকে বাধ্য করা তার মাশুল গুণতে। অবশ্য সে চিত্রটা পুরো বদলে যাওয়ার সব আয়োজন করে ফেলেছিল পাকিস্তান, তবে মিডল অর্ডার নিতে পারলো না চাপ। সে তুলনায় ডেথ ওভারে দারুণ বোলিং করলো অস্ট্রেলিয়ার মোটামুটি ‘অনভিজ্ঞ’ বোলিং লাইন-আপ। 

    আগের ম্যাচের মতো এবারও দ্রুতই ফিরেছিলেন ওপেনার শান মাসুদ, কোল্টার-নাইলের বেরিয়ে যাওয়া বলে শরীর থেকে দূরে খেলতে গিয়ে স্টাম্পে বল ডেকে এনে। আবিদের সঙ্গে ৭৩ রানের জুটির পর ফিরেছেন হারিস সোহেল, ন্যাথান লায়নের বলে ক্যাচ দিয়ে। এরপরই আবিদ-রিজওয়ানের জুটি। দুজন মিলে তুললেন ১৪৪ রান, তৃতীয় পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেকে সেঞ্চুরি করলেন আবিদ, ১১১ বলে পূর্ণ করলেন সেটা। ৩১ বছর বয়সে অভিষেকের পর সেঞ্চুরি, দিনটা তখন পর্যন্ত স্বপ্নালুই ছিল তার। জ্যামপাকে স্লগ করে ফিঞ্চের হাতে ধরা পড়ার আগে করেছেন ১১৯ বলে ১১২ রান, অভিষেকে তার দেশের হয়ে যা সর্বোচ্চ ইনিংস। 

     

     

    পাকিস্তান তখনও ঠিকপথেই ছিল। তবে অনেক খরার পর এক পশলা বৃষ্টি হয়ে অস্ট্রেলিয়ার কাছে যেন এলো সে উইকেট, তারা পেল সম্ভাব্য ফসলের কড়া গন্ধ। আর তাতেই উন্মাতাল হয়ে চড়াও হলো তারা পাকিস্তানের ওপর। উমর আকমল পরিণত হলেন দ্বিতীয় ব্যাটসম্যানে, কোল্টার-নাইলের বল যিনি ডেকে আনলেন স্টাম্পে। আরেক অভিষিক্ত সাদ আলি কোল্টার-নাইলের তৃতীয় শিকার। সে ওভারে এই পেসার দিলেন ৩ রান, পাকিস্তানের প্রয়োজনীয় রান আর  হাতে থাকা বলের পার্থক্যটা ততক্ষণে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১০-এ। 

    পাকিস্তানের বড় শট দরকার ছিল, ইমাদ ওয়াসিম সেটায় সফল হলেন না। তার আগেই সিঙ্গেল নিয়ে সিরিজ ও ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন রিজওয়ান, পাকিস্তানের শেষ আশা হয়ে ছিলেন তিনিই। ৪৯তম ওভারের শেষ বলে কেন রিচার্ডসনকে একটা চারও মারলেন। তবে সে পর্যন্তই, শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে মার্কাস স্টোইনিসকে তুলে মারতে গিয়ে ধরা পড়লেন ডিপ স্কয়ার লেগে। ৪র্থ বলে ছয় মেরেছিলেন উসমান শিনওয়ারি, তবে পরের বলেই তাকে আউট করে মিরাকলের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন স্টোইনিস। 

    অবশ্য ম্যাচের প্রথম অর্ধের পর মনে হয়নি, অন্তত এই ম্যাচ জিততে মিরাকল দরকার পড়তে পারে পাকিস্তানের শেষে গিয়ে! সিরিজ হারলেও বেঞ্চ বাজিয়ে দেখার পরীক্ষাটা পাকিস্তান চালিয়েছে এ ম্যাচেও, বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে আগের তিন ম্যাচে অধিনায়কত্ব করা শোয়েব মালিককে। সঙ্গে অভিষেক হলো দুজনের। 

    উসমান খাওয়াজার সঙ্গে অ্যারন ফিঞ্চের জুটি ৫৬ রানের, ফিঞ্চ ফর্মটা টানতে পারলেন না এ ম্যাচে, ফিরলেন ৩৯ রান করেই। তবে আগের ম্যাচে শূন্যতে ফেরা খাওয়াজা এদিন করলেন ৬২। তার ও স্টোইনিসের উইকেট নিয়েছিলেন ইয়াসির শাহ, আর শন মার্শ ও পিটার হ্যান্ডসকম্বকে ফিরিয়েছিলেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ইমাদ ওয়াসিম। ১৪০ রানেই ৫ উইকেট হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। 

    কিন্তু তার আগেই এসে গেছেন ম্যাক্সওয়েল। ১০ রানে তাকে উইকেটের পেছনে জীবনটা দিলেন রিজওয়ান। ইয়াসির শাহর বলে কাট করতে গিয়ে এজড হয়েছিলেন তিনি, তবে বলের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নেওয়া রিজওয়ানের গ্লাভস গলে বেরিয়ে গেছেন ম্যাক্সওয়েল। দ্বিতীয় জীবনে তিনি যোগ করলেন ৭৪ বলে ৮৮ রান। শেষ ওভারে গিয়ে হয়েছেন রান-আউট, সেঞ্চুরি মিস করেছেন মাত্র ২ বলের জন্য। তবে তার আগেই অ্যালেক্স ক্যারির সঙ্গে গড়েছেন ১৩৪ রানের জুটি। ক্যারি পেয়েছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি, শেষ বলে গিয়ে মোহাম্মদ হাসনাইনের দ্বিতীয় ওয়ানডে শিকারে পরিণত হয়েছেন তিনি। 

     

     

    সেই ক্যারি-ম্যাক্সওয়েলরাই শেষ হাসিটা এভাবে হাসবেন, তখন কে জানতো!