• এএফসি কাপ
  • " />

     

    কিক অফের আগে : উত্তর কোরিয়ায় চলবে আবাহনীর স্বপ্নযাত্রা?

    কিক অফের আগে : উত্তর কোরিয়ায় চলবে আবাহনীর স্বপ্নযাত্রা?    

    কবে, কখন
    এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভ-আবাহনী
    বুধবার, দুপুর ৩টা, কিম ইল-সুং স্টেডিয়াম, উত্তর কোরিয়া  


    এএফসি কাপে চলছে আবাহনীর স্বপ্নযাত্রা। এক ম্যাচ, আর একটা ম্যাচ অন্তত ড্র করলেই বাংলাদেশের ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসটা নতুন করে লিখবে ঢাকা আবাহনী। তা না হলেও এই যাত্রার কদর কমে যাবে তেমনটিও নয়। সেমিফাইনালে নাম লিখিয়েই তো ইতিহাস গড়া হয়ে গিয়েছিল আবাহনীর। আর প্রথম লেগে শক্তিশালী এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভের বিপক্ষে ৪-৩ গোলের জয়টা অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে নতুন স্বপ্ন দেখার।

    বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আবাহনী হজম করেছিল তিনটি অ্যাওয়ে গোল। দুই লেগের খেলায় সেটা বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা। আর সঙ্গে যখন ঘরের মাঠে এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভের অবিশ্বাস্য রেকর্ড যোগ হচ্ছে তখন পিয়ং ইয়ংয়ে জয়টা আবাহনীর জন্য অসাধ্য সাধনের মতোই। গত দুই বছর নিজেদের মাঠে এএফসি কাপে কোনো ম্যাচ হারেনি এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভ। আর এবার ঘরের মাঠে কোনো প্রতিপক্ষই তাদের বিরুদ্ধে পারেনি গোল করতে।

    এর চেয়েও বড় কথা এই টুর্নামেন্টের জোনাল ফাইনালে খেলার অভিজ্ঞতা আছে দলটির। গতবার তুর্কমিনিস্তানের  আসারের সঙ্গে অ্যাওয়ে গোলের ব্যবধানে হেরে জোনাল ফাইনাল শিরোপা জেতা হয়নি উত্তর কোরিয়ার চ্যাম্পিয়নদের। এসব কিছুর বিপরীতে আবাহনী বড্ড সাদাকালো।


    আরও পড়ুনঃ দল হিসেবে কতোটা শক্তিশালী এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভ?


    কিন্তু এএফসি কাপে এবার আবাহনীর যাত্রাটা অনেক বেশি রঙিন, আলো ঝলমলে আর আশাজাগানিয়া। ঘরের মাঠে চেন্নাইন এফসিকে ৩-২ গোলে হারানো, গ্রুপের শেষ ম্যাচে মিনার্ভা পাঞ্জাবে ইনজুরি সময়ের গোলে জয় আর সেমিফাইনাল নিশ্চিত করা, প্রথম লেগে চোটজর্জর এক দল নিয়ে এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভকে হারিয়ে দেওয়া- আবাহনীর জন্য গল্পটা শুধুই সাফল্যের। আর সব সাফল্যের কারিগর দলের পর্তুগিজ কোচ থমাস মারিয়া লেমোস।


     

    এমনিতে দারুণ আত্মবিশ্বাসী মাত্র ৩৩ বছর বয়সী লেমোস। নিজের আত্মবিশ্বাসটাই দলের ভেতর সঞ্চারণ করেছেন তিনি। স্ট্রাইকারদের সঙ্গে মিডফিল্ডারদের নিয়মিত গোল পাওয়া আর বারবার পেছন থেকে ফিরে আসার লড়াই চালিয়ে যাওয়া স্বাক্ষ্য দিচ্ছে সেটার। লেমোস আগের ম্যাচে প্রমাণ করেছেন দলের মানসিকতা পরিবর্তনের সঙ্গে ট্যাকটিক্যালিও দুর্দান্ত তিনি। তার পাঁচজনের ডিফেন্সই আবাহনীর জয়ে ছিল সবচেয়ে বড় টোটকা। যে এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভ পুরো টুর্নামেন্টে হজম করেছিল মাত্র দুই গোল, তাদেরকেই পরে আবাহনী দিয়েছে চার গোল।

    প্রথম লেগে এক গোলে এগিয়ে থাকার সঙ্গে লেমোস মনে আরেকটু জোর পেতে পারেন ডিফেন্ডার আলাএলদিন নাসের ইসার ফেরায়। প্রথম লেগে নিষেধাজ্ঞার কারণে খেলতে পারেননি তিনি। মিশরীয় ডিফেন্ডার পিয়ং ইয়ংয়ে থাকার কথা শুরু থেকেই। আবাহনীর জার্সিতে তিনি খেলবেন প্রথম ম্যাচ। লি তায়েমিনের  অভিষেক হয়েছে প্রথম লেগে, সঙ্গে টুটুল হোসেন বাদশাদের নিয়ে আরেকটি জমাট রক্ষণের আশা করতেই পারেন লেমোস। মিডফিল্ডেও ইনজুরি থেকে ফেরার কথা রয়েছে মামুনুল ইসলামের। সেক্ষেত্রে সৃজনশীলতার সঙ্গে নির্ভরযোগ্যতাও বাড়ছে আবাহনীর মিডফিল্ডে।   



    লিডটা এক গোলের হলেও লেমোস ঝুঁকি নিতে চাইছেন না দ্বিতীয় লেগে, "ইসা নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরবে। এটা আমাদের রক্ষণে বড় প্রভাব ফেলবে, একইসঙ্গে আমাদের রক্ষণে স্ট্যাবিলিটিও বাড়াবে। আমরা ওকে সেটপিসের জন্য ব্যবহার করব। আবাহনীর জার্সিতে ওর প্রথম ম্যাচের জন্য আমি আগ্রহ নিয়েই অপেক্ষা করছি।"

    "আমরা অল্প ব্যবধানে হলেও এগিয়ে আছি। তাই ঝুঁকি নেব না। শুরুতে আমরা ওদেরকেই ঝুঁকি নিতে দিব। আমরা বুঝতে পারছি শুধু ডিফেন্ড করে ম্যাচ জেতা যাবে না। আগের ম্যাচে আমরা পাঁচজন নিয়ে ডিফেন্ড করেছি, আবার কাউন্টার অ্যাটাকেও গোল করতে চেয়েছি। আশা করি ওরা এবার ঝুঁকি নেবে আর তাতে আমাদের জন্য গোলের সুযোগ তৈরি হবে। আমাদের আসল লক্ষ্য পিয়ং ইয়ংয়ে একটা গোল পাওয়া। সেটা যদি পেতে পারি তাহলে ফাইনালে যাওয়ার ভালো সুযোগ আছে আমাদের।"- প্রথম লেগে জয়ের পর বলেছিলেন আবাহনী কোচ।

    রক্ষণে যেমন খেলোয়াড় ফিরেছে আবাহনীতে এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভও আক্রমণে শক্তি বাড়াচ্ছে নিশ্চিতভাবেই। আগের ম্যাচে দলের মূল দুই তারকা কিম ইউ সং ও আন ইল বুম- দুইজনের কেউই ছিলেন না একাদশে। বদলি হয়ে পরে নেমে আবাহনীর ওপর চাপ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন দুইজনই। দ্বিতীয়ার্ধে আবাহনীর আরও দুই গোল হজমের পেছনে এই দুইজনের অবদানও ছিল অনেকখানি।  স্ট্রাইকার কিম ইউ সং ১৭ ম্যাচে এএফসি কাপে করেছেন ২১ গোল। গতবারের গোল্ডেন বুট জয়ী তিনি। আন ইল বুমের মতো তিনিও উত্তর কোরিয়ার জাতীয় দলে খেলেন নিয়মিত।

    খেলোয়াড় ফেরত পেলেও লেমোসের তাই খুব একটা স্বস্তিতে থাকার জো নেই। তবে ইতিহাস থেকে খানিকটা স্বস্তি মিলতে পারে আবাহনীর। গত দুইবার জোনাল সেমিফাইনালে ঘরের মাঠে জিততে পারেনি এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভ। প্রথমবার তাদের মাঠে গোলশূন্য ড্র করে ফিরেছিল ভারতের বেঙ্গালুরু এফসি, পরেরবার সিঙ্গাপুরের হোম ইউনাইটেডও ড্র নিয়ে ফিরেছিল সেখান থেকে। আপাতত এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভের এই ধারাটা ভাঙতে চাইবে না আবাহনী।

    তবে সেই কাজটা উত্তর কোরিয়ার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার মতোই কঠিন। আবাহনী কোচ লেমোস তাই একটি গোলের ওপর জোর দিচ্ছেন বেশি। এই টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত গোল পেতে খুব একটা ভুগতে হয়নি আবাহনীকে। সানডে চিজোবা, নাবিব নেওয়াজ মিলে মোট সাত গোল করেছেন এখন পর্যন্ত। ক্রেভেন্স বেলফোর্টের শারীরিক দক্ষতাও বড় অনুষঙ্গ আবাহনীর কাউন্টার অ্যাটাক ভিত্তিক আক্রমণে।

    ফাইনালে ভিয়েতনামের হানোই এফসির বিপক্ষে খেলতে হলে তাই আবাহনীকে সেরাটা দিলেই হচ্ছে না শুধু, হয়ত তার চেয়েও বেশি কিছু করতে হবে পিয়ং ইয়ংয়ে।

    দলের খবর
    নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার সানডে সংশয় পেরিয়ে দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন উত্তর কোরিয়ায়। মিডফিল্ডার মামুনুল ইসলাম ফিরছেন কী না সেটা অবশ্য নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে ডিফেন্সে আলাএলদিন ফিরছেন নিশ্চিতভাবেই।

    এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভের স্ট্রাইকার কিম ইউ সং ম্যাচ ফিটনেসের অভাবে ভুগছিলেন। প্রথম লেগে তাকে না নামিয়ে কোচ কিছুটা ঝুঁকি নিলেও এবার তাকে শুরু থেকেই খেলানোর কথা।

    সম্ভাব্য একাদশ
    এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভ

    আন তে সং, জিন মিয়ং, চুং হিওক, পাক সং রক,  আন সং ইল, ও হিওক চল, সন ফিয়ল ইল, ঙ্গান ইল বুম, চো জং হিওক, কিম ইউ সং, রিম চল মিন
    আবাহনী
    শহীদুল আলম, টুটুল হোসেন, লি, আলাএলদিন, সাদ, ওয়ালি, মামুনুল, রায়হান, বেলফোর্ট, জীবন, সানডে