সেমিফাইনালে আবাহনীর প্রতিপক্ষ এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভ কতোটা শক্তিশালী?
এএফসি কাপে বাংলাদেশের হয়ে প্রথমবার প্রতিনিধিত্ব করেছিল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। সেটা ২০০৪ সালে। মাঝে আরও তিনবার বাংলাদেশের ক্লাব খেলেছে এই টুর্নামেন্টে। আবাহনী টানা তৃতীয়বারের মতো এএফসি কাপে খেলতে গিয়ে অবশেষে পার করেছে গ্রুপপর্ব। এশিয়ার ফুটবলের দ্বিতীয় সেরা ক্লাব টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের কোনো ক্লাবের এটাই সর্বোচ্চ সাফল্য। গ্রুপপর্বে ভারতের চেন্নাইন এফসি, মিনার্ভা পাঞ্জাব ও নেপালের মানাং মার্সিয়াংদিদের টপকে প্রথমবারের মতো ইন্টার জোনাল সেমিফাইনাল প্লে অফে পা রেখেছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের সবচেয়ে সফল দলটি।
এবার লড়াইটা ফাইনালে যাওয়ার। তবে এর আগে আরেকবার ইতিহাস গড়তে হবে আবাহনীকে। প্রতিপক্ষ উত্তর কোরিয়ার ক্লাব এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভ। উত্তর কোরিয়া দেশটাই এমনিতে অপরিচিত বাংলাদেশের কাছে, আর সেখানকার ফুটবল তো আরও বেশি অচেনা।
কেমন দল এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভ?
শুরুতে নাম শুনে আসলে খটকা লাগার কথা। ক্লাবের এমন অদ্ভুত নামকরণের পেছনে কারণটা অবশ্য ঐতিহাসিক। উত্তর কোরিয়ার প্রথম নেতা কিম-ইল সুং প্রথম জাপান বিরোধী গেরিলা আর্মির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ১৯৩২ সালের এদিনে। তাই সেদিনটা স্মরণীয় করে রাখতেই ক্লাবের এমন নামকরণ।
এপ্রিল টুয়েন্টিফাইভের পুরো স্কোয়াডই উত্তর কোরিয়ার খেলোয়াড়দের দিয়ে তৈরি। দলের সবাই উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা হিসেবে বিবেচিত হন। উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে সফল দলও তারা। মোট ১৮ বার লিগ চ্যাম্পিয়ন এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভ। এ মৌসুমেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৌড়ে ভালোভাবেই টিকে আছে তারা।
এএফসি কাপের ইতিহাস কী বলছে?
আবাহনীর মতো এটিও এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভের তৃতীয়বার অংশগ্রহণ এই টুর্নামেন্টে। তবে সাফল্যের দিক দিয়ে ঢের এগিয়ে তারা। গতবার এএফসি কাপের ইন্টার জোনাল ফাইনালেও উঠেছিল ক্লাবটি। দশ ম্যাচ খেলে একবারও হারেনি তারা। তবে ফাইনালে অ্যাওয়ে গোলের নিয়মে বাদ পড়ে আর এএফসি কাপের মূল ফাইনালে খেলা হয়নি তাদের।
এর আগের দুইবার এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভ বাদ পড়েছিল ইন্টার জোনাল সেমিফাইনাল থেকেই। ২০১৭ সালে বেঙ্গালুরু এফসির কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল তারা। সেই ইতিহাস থেকেই আপাতত আবাহনী অনুপ্রেরণা পেতে পারে।
আবার ইতিহাসে ভয়ের কারণও আছে আবাহনীর। এএফসি কাপের নক আউট পর্বে সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ডটিও এপ্রিল টুয়েন্টিফাইভের। গতবার এই পর্বেই সিঙ্গাপুরের হোম ইউনাইটেডকে দুই লেগ মিলিয়ে ১১-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে উঠেছিল এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভ।
এবারের এএফসি কাপে এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভের সাম্প্রতিক ফর্ম
এএফসি কাপে ৬ ম্যাচ খেলে ৪টিতেই ক্লিনশিট রেখেছে উত্তর কোরিয়ার চ্যাম্পিয়নরা। আর গোল হজম করেছে মাত্র দুইটি। আর পিয়ংইয়ংয়ে ঘরের মাঠে এখনও তাদের বিপক্ষে কোনো দল গোলই করতে পারেনি। আবাহনী তাই ভেবে রাখতে পারে প্রথম লেগে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই যা করার করে রাখতে হবে তাদের।
গোল করার রেকর্ডটাও দারুণ এপ্রিল টুয়েন্টিফাইভের। ভিয়েতনামের হানই এফসি এবারের টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গোল করেছে। তবে নক আউট পর্বে উঠতে তাদের ম্যাচ খেলতে হয়েছে আরও বেশি। তাই গোলগড়ে সবচেয়ে এগিয়ে এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভই। ম্যাচ প্রতি ২.৮ টি গোল করে তাদের এই টুর্নামেন্টে।
কেমন ফুটবল খেলে এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভ?
উত্তর কোরিয়ার ক্লাব হওয়ায় উচ্চতায় কিছুটা পিছিয়ে থাকে তারা স্বাভাবিকভাবেই। সেক্ষত্রে দীর্ঘদেহী ফরোয়ার্ডরা গোল তাদের বিপক্ষে গোল করার সুযোগ পায় তুলনামূলক একটু বেশি। এ ছাড়া এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভের দুর্বলতা আদতে কমই।
উইং নির্ভর ফুটবল তাদের আক্রমণের প্রাণ ও গোলেরও মূল উৎস। উইং ধরে ফুলব্যাকদের সঙ্গে ফরোয়ার্ডদের কম্বিনেশন প্লেও চোখ ধাঁধানো। আবাহনীকে তাই দুই উইংয়েই হতে হবে সমান মনযোগী।
মূল তারকা
কিম ইউ সং
বয়স ২৪
দলের মূল স্ট্রাইকার। ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন সুইজারল্যান্ডের ক্লাব এফসি জুরিখের অনূর্ধ্ব-২১ দলে। ২০১৬ সালে এসেছিলেন এপ্রিল টুয়েন্টি ফাইভে। গত তিন বছরে এএফসি কাপে তাঁর গোলস্কোরিং রেকর্ড অবিশ্বাস্য। ১৬ ম্যাচ খেলে গোল ২১। এবারও চার ম্যাচে গোল করে ফেলেছেন ৬টি।
উইং ধরে এপ্রিল টুয়েন্টিফাইভের আক্রমণে ওঠার কারণ কিম ইউ সং। প্রায় ছয় ফুটের কাছাকাছি উচ্চতা। ক্রসগুলোর শেষ প্রান্তে বেশিরভাগ সময়ই থাকেন তিনি। তাই গোল পেতেও অসুবিধা হয়না খুব একটা।
ট্রাম্পকার্ড
ফিয়ং ইল-সন
বয়স ২৩
লেফট উইঙ্গার হিসেবে খেলেন দলে। পায়ে দারুণ জাদু। চোখ ধাঁধানো ড্রিবলিংয়েও পাকাপোক্ত তিনি। গোলের জন্য কিম ইউ সংয়ের ওপর নির্ভর করলেও দলের মূল প্লে মেকারের ভূমিকা পালন করেন সন। লেফট উইঙ্গার হলেও লেফট মিডফিল্ডে বা দুই স্ট্রাইকারের পেছনেও খেলেছেন এএফসি কাপের বেশ কয়েকটি ম্যাচে। ৬ ম্যাচে দুই গোল তার, আছে দুই অ্যাসিস্টও।