• ইউরো বাছাইপর্ব
  • " />

     

    বর্ণবাদের ইস্যুতে এবার পদত্যাগ করলেন বুলগেরিয়া কোচও

    বর্ণবাদের ইস্যুতে এবার পদত্যাগ করলেন বুলগেরিয়া কোচও    

    ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ইউরো ২০২০ বাছাইপর্বের ম্যাচে বুলগেরিয়ান সমর্থকদের বিরুদ্ধে আনা বর্ণবাদের অভিযোগে প্রথমার্ধে দু'বার খেলা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিলেন রেফারি। কিন্তু বিস্ময়করভাবে বুলগেরিয়া কোচ ক্রাসিমির বালাকভ বলেছিলেন, দর্শকদের থেকে বর্ণবাদী কোনো স্লোগান বা মন্তব্য শোনেননি তিনি। অবশ্য প্রমাণ মিললে ইংল্যান্ড দলের কাছে ক্ষমা চাওয়ার কথাও বলেছিলেন তিনি; গত সপ্তাহে গ্যারেথ সাউথগেটের দলের উদ্দেশ্যে ক্ষমা চেয়ে এক বিবৃতিও দিয়েছিলেন বালাকভ। সেই বিবৃতির দিন তিনেক পার না হতেই নিজ পদ থেকেও সরে গেলেন তিনি। কয়েকদিন আগে নিজ ফেডারেশনের প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের পর এবার কোচকেও হারাল বুলগেরিয়া।

    বর্ণবাদী স্লোগান না শোনার কারণও অবশ্য ম্যাচের পরপরই জানিয়েছিলেন বালাকভ, "আমি আসলে এরকম কিছুই শুনিনি কারণ পুরোটা সময়ই কেবল ম্যাচের দিকেই মনযোগ ছিল আমার। তবে আমি ম্যাচ শেষে ইংলিশ মিডিয়ার সাথে কথা বলার সময়ও বলেছি, যদি এরকম কিছু আসলেই হয়ে থাকে; তাহলে বুলগেরিয়ার সবার লজ্জা হওয়া উচিত এবং তখন আমরা ইংলিশ দলের কাছে আনুষ্ঠানিভাবে ক্ষমা চাইবো। তবে আগে প্রমাণ পেতে হবে বর্ণবাদের।" নিজের কথা ঠিকই রেখেছেন বালাকভ। তবে বুলগেরিয়ার বর্ণবাদের চলমান সমস্যার কারণেই নিজ পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বলে জানান বালাকভ, "এভাবে কোনও ফুটবল দল চলতে পারে না। গুটিকয়েক সমর্থকের জন্য পুরো দেশের ভুক্তভোগী হতে হচ্ছে। ব্যাপারটি নিয়ে আমি খুবই লজ্জিত, এজন্যই আমি পদত্যাগ করছি।"

     

     

    কোচের মত সমর্থকদের ব্যবহারে চরম হতাশ অধিনায়ক ইভেলিন পোপোভ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের সময়ই বর্ণবাদী সমর্থকদের সাথে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ে জড়িয়েছিলেন তিনি। ম্যাচ শেষে ইংলিশ ফুটবলাররা টুইটারে বুলগেরিয়ার সমর্থকদের কড়া সমালোচনা করলেও পোপোভের প্রশংসা করেছিলেন মার্কাস রাশফোর্ডরা। পোপোভের মতই হতাশ দেশটির সর্বকালের সেরা ফুটবলার রিস্টো স্টইচকভ। মেক্সিকান টিভি চ্যানেল টিইউডিএন-এর যুক্তরাষ্ট্রের স্টুডিওর এক টকশোতে আমন্ত্রিত স্টইচকভকে বুলগেরিয়া-ইংল্যান্ড ম্যাচের ব্যাপারে প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, "এ ধরনের সমর্থকদের কোনো স্টেডিয়ামেই খেলা দেখতে যেতে দেওয়া উচিত না। বা এর চেয়েও কড়া শাস্তি দেওয়া উচিত তাদের।"

    "ইংল্যান্ডে যেমন বর্ণবাদের প্রমাণ পাওয়া গেলে ঐ সমর্থকদের মাঠে এসে খেলা দেখা থেকে অন্তত পাঁচ বছর নিষিদ্ধ করা হয়। বুলগেরিয়ান বর্ণবাদী সমর্থকদেরও এরকম শাস্তি দেওয়া উচিত।তাদের ব্যবহারের জন্য অন্যদের ভুক্তভোগী হচ্ছে- এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।" কথা বলার সময় আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি স্টইচকভ, টকশোতেই কেঁদে ফেলেন তিনি। বুলগেরিয়া অবশ্য কঠোর ব্যবস্থাই নিয়েছে বর্ণবাদীদের বিরুদ্ধে, এখন পর্যন্ত ১৬জনকে গ্রেফতার করেছে তারা।"

     

     

    বালাকভের আগে গত সপ্তাহেই প্রধানমন্ত্রী বয়কো বরিসভের আহবানে বুলগেরিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে দাঁড়ান বরিস্লাভ মিহায়লোভ। তবে প্রধানমন্ত্রীর আহবানে নয়, নিজ ইচ্ছাতেই পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মিহায়লোভ, "আসলে আমার পদত্যাগের কারণ প্রধানমন্ত্রীর আহবান নয়। বুলগেরিয়ার সমর্থকদের নিয়ে আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। বুলগেরিয়া বর্ণবাদী দেশ নয়। আমরা নিরাপত্তার জন্য সম্ভাব্য সব পদক্ষেপই নিয়েছিলাম। কিন্তু তারপরও সমস্যাটি দূর করতে পারিনি। এজন্যই আমি সরে যাচ্ছি।"

    বালাকভ এবং মিহায়লোভের পথেই হেঁটেছেন বুলগেরিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির সবাই। একসাথে পদত্যাগ করেছে পুরো কমিটি, নিশ্চিত করেছে স্কাই স্পোর্টস। এক ম্যাচ দিয়েই রীতিমত টালমাটাল হয়ে গেল পুরো বুলগেরিয়ান ফুটবল। বর্ণবাদের কারণে এক সপ্তাহের মাঝে দেশটির ফেডারেশনের সবাই করলেন পদত্যাগ।