বিপিএলে অধিনায়ক যায়, অধিনায়ক আসে
বিপিএলের প্রথম ম্যাচ শুরুর আগেরদিন অধিনায়কদের ফটোসেশন হয়তো একটা ইঙ্গিতই দিয়ে রেখেছিল। সেদিন ঢাকা প্লাটুনের হয়ে ফটোসেশনে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুমিনুল হক, আর রংপুরের অধিনায়ক মোহাম্মদ নবি জ্যামে আটকা পড়ে উপস্থিতই হতে পারেননি। ৯ রাউন্ড শেষে নবির জায়গায় রংপুরের অধিনায়কত্ব করেছেন আরও ২ জন, থেমে নেই অন্য দলগুলিও। গ্রুপপর্বে ৩-৪ রাউন্ড বাকি থাকতে বিপিএলের অন্যান্য দলেও অধিনায়ক নিয়ে চলেছে বেশ একটা মিউজিক্যাল চেয়ার খেলা। ২ জানুয়ারি দ্বিতীয় ম্যাচ পর্যন্ত ঢাকা ও খুলনা বাদে ৫ দলের অধিনায়ক মোট বদল হয়েছে ৯ বার!
শুরুটা হয়েছিল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে দিয়ে। মাহমুদউল্লাহকে অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করা হলেও চোটের কারণে শুরুতে ছিলেন না তিনি। তবে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের গতবারের অধিনায়ক ইমরুল কায়েসকে দায়িত্ব না দিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক করা হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ অলরাউন্ডার রায়াদ এমরিতকে। ২ ম্যাচ পর মাহমুদউল্লাহ ফিরলেন, এমরিত বাদ পড়লেন দল থেকেই।
মাহমুদউল্লাহ ৩ ম্যাচ খেলে আবার চোটে পড়েছেন, এবার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইমরুল কায়েসকে। সেই ইমরুল আবার চট্টগ্রামের শেষ ম্যাচে চোটে পড়ে খেলেননি কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের সঙ্গে নখ-কামড়ানো ম্যাচে, সেখানে অধিনায়কত্ব করেছেন উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহান। শেষদিকে ড্রেসিংরুমের বাইরে মাহমুদউল্লাহ, ডাগ-আউটে ইমরুল, মাঠের মাঝে নুরুলের কথিত যোগাযোগ ছিল আলোচনায়।
চোটের প্রভাবে অধিনায়ক বদলাতে হয়েছে রাজশাহী রয়্যালস ও সিলেট থান্ডারকেও। আন্দ্রে রাসেলকে নিয়ে চোটের শঙ্কা রাজশাহীর ছিলই, তবে ২ তারিখ পর্যন্ত টেবিলের শীর্ষে থাকা এই দলের প্রথম ৮ ম্যাচই খেলেছেন এই ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার। সিলেট পর্বের প্রথম ম্যাচে রংপুরের বিপক্ষে খেলতে পারেননি, তার বদলে টস করতে নেমেছিলেন শোয়েব মালিক, পেয়েছেন জয়ও।
বিপিএলে অধিনায়কদের এই ছবি এখন যেন সুদূর অতীত! /বিসিবি
টেবিলে রাজশাহীর ঠিক বিপরীত অবস্থান সিলেট থান্ডারের, তবে তাদেরও অধিনায়ক বদলাতে হয়েছে চোটের কারণে। বিপিএলে প্রথমবারের মতো নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা পাওয়া মোসাদ্দেক হোসেনের জায়গায় নেতৃত্বের ভার দেওয়া হয়েছে আন্দ্রে ফ্লেচারকে। মোসাদ্দেকের অধিনায়কত্ব যে খুব একটা সুখকর ছিল, বলা যাবে না সেটি। আবার ফিল্ডিংয়ে দারুণ এক ক্যাচ নেওয়ার পর প্রথম ইনিংসের ৫ম ওভারে মাঠ ছেড়েছেন এ ম্যাচের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ফ্লেচার। সে চোট পরের ম্যাচে আবারও অধিনায়কত্বে বদল আনবে কিনা তাদের- সে প্রশ্নের উত্তর অবশ্য এখনই দেওয়া যাচ্ছে না।
রংপুরের অবশ্য চোটের ব্যাপার ছিল না। টানা ৬ ম্যাচের হারের ব্যর্থতায় নবিকে সরিয়ে অধিনায়ক করা হয়েছিল টম অ্যাবেলকে। তার নেতৃত্বেই প্রথম জয় পেয়েছিল রংপুর। তবে ঠিক পরের ম্যাচেই অধিনায়ক বদলে ফেলল রংপুর। আগেরদিন রাতে ঢাকায় এসে পৌঁছানো শেন ওয়াটসন পরদিন শুধু রংপুরের হয়ে খেলতেই নামলেন না, করলেন অধিনায়কত্বও। সে ম্যাচে রংপুর হারলেও পরের দুই ম্যাচে অবশ্য তারা জিতেছিল ওয়াটসনের নেতৃত্বে। সিলেট পর্বে রাজশাহী রয়্যালসের কাছে হেরে আবারও খাদের কিনারে চলে গেছে তারা। রংপুরের অধিনায়ক কি বদলাবে আবার?
তবে কুমিল্লার চোট বা ফর্মের ব্যাপার নেই। তাদের অধিনায়কই তাদের ছেড়ে চলে গেছেন! বিপিএল শুরুর আগেরদিন অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল শ্রীলঙ্কার দাসুন শানাকাকে, পাকিস্তানের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি সিরিজে বেশ কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটারের অনুপস্থিতিতে জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়ে যিনি ৩-০ ব্যবধানে জিতিয়েছিলেন সিরিজ। ৬ ম্যাচ পর জাতীয় দলের ডাকে চলে গেছেন তিনি, তার জায়গায় কুমিল্লাকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ইংল্যান্ডের ডাভিড মালান। এক ম্যাচ হারের পর বাঁচামরার লড়াইয়ে মালান ম্যাচসেরা হয়ে জিতিয়েছেন কুমিল্লাকে, ২ ম্যাচ পর সিলেট পর্বের শুরুতে চলে গেছেন মালানও, এবার টস করতে নেমেছেন সৌম্য সরকার। অবশ্য শানাকার আর বিপিএলে ফেরার সম্ভাবনা না থাকলেও ফিরে আসতে পারেন মালান।
রাজশাহী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রংপুর, সিলেটে যখন অধিনায়ক বদলের ঝড় উঠেছে, তখন শান্ত ঢাকা প্লাটুন ও খুলনা টাইগার্স। বিপিএলে সবার আগে অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফিকে নিশ্চিত করেছিল ঢাকা, এখন পর্যন্ত অধিনায়ক আছেন তিনিই। ৭ ম্যাচে মুশফিকুর রহিমের হাতেও অধিনায়কত্বের দায়িত্ব দিয়ে ঠিকঠাকই চলছে খুলনা।