'অ্যাংসাইটি বা উদ্বেগ' না থাকলে বিশ্বকাপই জেতা হতো না প্লাঙ্কেটের
নিজের ‘উদ্বেগ, উৎকন্ঠা’কে জীবনের উপহার হিসেবে দেখেন ইংলিশ পেসার লিয়াম প্লাঙ্কেট। তার মতে, এসব না থাকলে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা বা বিশ্বকাপ জেতাই হতো না তার! দীর্ঘদিন ধরেই এই সমস্যায় ভুগছেন তিনি, এর সঙ্গে লড়াইও চলে তার। তবে পেছন ফিরে একসময় উপলব্ধি করেছেন, সামনে এগুতে বরং সাহায্য করেছে এসব।
একসময় ক্রিকেট থেকে দূরে সরে যেতে ধরেছিলেন প্লাঙ্কেট। প্রথমবার টেস্ট দল থেকে বাদ পড়ার পর নিজের অ্যাকশন বদলাতে চেয়েছিলেন, এ ব্যাপারে কারও সঙ্গে কোনো ধরনের কথা না বলেই। ধীরে ধীরে অবস্থা শুধু খারাপই হচ্ছিল। তবে অবস্থার উন্নতি হয়েছে এরপর।
২০১৯ বিশ্বকাপ জয়ে ইংল্যান্ডের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন প্লাঙ্কেট, ফাইনালে ৩টি উইকেটও নিয়েছিলেন। তবে এরপর আর ইংল্যান্ডের হয়ে খেলা হয়নি তার। সতীর্থরা যখন অ্যাশেজ ও অন্য সিরিজ খেলতে ব্যস্ত, তখন নিজের মানসিক দুরাবস্থার কথা এর আগেও বলেছিলেন তিনি। এবার বলেছেন আরেকটু বিস্তারিত, দ্য ব্রোকেন ট্রফি নামের এক পডকাস্টে।
“আশা করি কোনোদিন আমি এটিকে ভালভাবে বর্ণনা করতে পারবো, তবে সেই ২০১০ সাল থেকেই আমার বেশ বাজে ধরনের উদ্বেগ কাজ করে। বিমানে চড়লে ‘প্যানিক অ্যাটাক’, কোনও মিটিংয়ে যেতে না পারা, এমনকি ট্যাক্সিতে পর্যন্ত উঠতে না পারার মতো সমস্যা হতো আমার। অস্ট্রেলিয়ায় ক্লাব ক্রিকেট খেলতে গিয়ে বেশ বাজে অবস্থা দাঁড়িয়েছিল, আট দিন আমি ঘরের বাইরেই বেরুতে পারিনি। ঘরে আটকে থেকে শুধু উদ্বিগ্নই থেকেছিলাম”, বলেছেন তিনি।
বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে লিয়াম প্লাঙ্কেট, লর্ডসে ২০১৯ ফাইনালে জেতার পর
তবে এরকম অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে তাকে সহায়তা করেছে একটা বই-- শেরিয়ানা বয়েলের ‘দ্য ফোর গিফটস অফ অ্যাংসাইটি’। “এখন ফিরে তাকালে মনে হয়, উদ্বেগ আমার জীবনে সেরা উপহারগুলির একটি। আমি এটিকে নিজের পক্ষে ব্যবহার করা শুরু করেছি, আমার মনে হয় এটি না থাকলে আমি ইংল্যান্ডের হয়ে খেলতে বা বিশ্বকাপ জেতাতে সহায়তা করতে পারতাম না। এটি আমাকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলির দিকে ঠেলে দিয়েছে। আমি মাত্র একজনের মুখোমুখি হতে হয়তো উদ্বিগ্ন হবো, তবে ৩০ হাজার মানুষের সামনে খেলতে আমার সমস্যা নেই। আমি বরং কৃতজ্ঞ, আমার এই ব্যাপারটি আছে।”
অবশ্য এসব ব্যাপারে তিনি সচেতন এখন বেশ, “আমি এখন জানি, আমাকে কীসে আলোড়িত করে। ১০ বছর ধরে এগুলো বুঝার চেষ্টা করেছি আমি-- কীসে আমার উদ্বেগ বাড়ে, এর সঙ্গে কীভাবে লড়াই করবো, এমন হলে কী করব। যখনই বুঝেছি আমার এমন হচ্ছে, এবং ‘প্যানিক অ্যাটাক’ ধরনের কিছু ঘটছে, তখনই আমি এটিকে নিজের একটা অংশ বলে মনে করি। তখন অবস্থার উন্নতি হয়।”
অবশ্য ক্যারিয়ারের শুরুতে এসব বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা করার উপায় ছিল না তার। মার্কাস ট্রেসকোথিক তার বিষণ্ণতার ব্যাপারে মুখ খোলার পর এসব ব্যাপার সহজ হয়ে গেছে বলে ধারণা প্লাঙ্কেটের, “আমি এর আগে ড্রেসিংরুমে এসব ব্যাপারে কিছু শুনিনি। তখন কেউ এসব কিছু বললে সবাই শুধু বলতো, ‘কোনো ব্যাপার না, ঠিক হয়ে যাবে’। তবে এখন ব্যাপারগুলি বদলে গেছে। ড্রেসিংরুমে এখন এ ব্যাপারে সবাই খোলাখুলি আলাপ করতে পারে।”
“আমরা এখন জানি কোনটা উদ্বেগ, কোনটা অবসাদ। এসব কতোটা বাজে হতে পারে সেটা জানি আমরা এখন। আপনি যখন এ ব্যাপারে খোলাখুলি কথা বলতে পারবেন কোনো ধরনের লজ্জা ছাড়াই, আপনি বুঝবেন ঠিক জায়গাতেই আছেন আপনি। এবং এসব ব্যাপারে খোলাখুলিই কথা বলা উচিৎ।”
“প্রায় অনেকের সাথেই এটা হয়, তারা মনে করেন শুধু তাদের সাথেই এমন হচ্ছে। তবে এ নিয়ে আলোচনা করলেই দেখবেন অনেকেই বলছেন, তারা কীভাবে এটা থেকে বের হয়ে এসেছেন। ফলে আরও মানুষের সাথে কথা বলবেন আপনি। এটা ক্রিকেটের মতোই, একেকজনের কাছ থেকে একেকরকমের সহায়তা পাবেন আপনি। হয়তো একটু মেডিটেশন করলাম, বা অন্য কেউ অন্য কিছু করলো। এমন ব্যাপারগুলি।”
ইংল্যান্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ পড়লেও সম্প্রতি প্লাঙ্কেট জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে খেলার সুযোগ আসলে আগ্রহী তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগে প্রাথমিক অনুশীলনের জন্য যাদের ডাকা হয়েছিল, প্লাঙ্কেট ছিলেন না তাদের মাঝেও।