• বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফর ২০২১
  • " />

     

    'একটা খেলোয়াড়ের পেছনে কম বিনিয়োগ করি না'- সাকিবের সিদ্ধান্তে 'মন খারাপ' পাপনের

    'একটা খেলোয়াড়ের পেছনে কম বিনিয়োগ করি না'- সাকিবের সিদ্ধান্তে 'মন খারাপ' পাপনের    

    শ্রীলঙ্কা সফরের টেস্ট সিরিজ থেকে সাকিব আল হাসান ছুটি নেওয়ার কারণে বোর্ড বিব্রত হয়নি, বরং ‘মন খারাপ’ হয়েছে বিসিবি প্রেসিডেন্টের। জাতীয় দলে কেউই অপরিহার্য নয়, এমন মনে করিয়ে দিয়ে নাজমুল হাসান পাপন বলেছেন, সামনের কেন্দ্রীয় চুক্তি করা হবে কে কোন ফরম্যাটে খেলতে চান, সেটার ওপর নির্ভর করেই। সঙ্গে ক্রিকেটারদের পেছনে বোর্ডের বিনিয়োগের কথাও মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেছেন, কাউকে জোর করে তারা আর খেলাতে চান না। সাকিবের ক্ষেত্রে এর আগে 'জোর করা হয়েছে' বলেও জানিয়েছেন তিনি। 

    পারিবারিক কারণে নিউজিল্যান্ড সফর থেকে ছুটিতে থাকা সাকিব শ্রীলঙ্কা সফরের টেস্ট সিরিজে খেলতে চান না বলে ছুটি নিয়েছেন বিসিবির কাছ থেকে। মূলত সে সময় আইপিএল খেলবেন সাকিব, ২০২১ সালের আসরের জন্য নিলামে কলকাতা নাইট রাইডার্স কিনে নিয়েছে তাকে। 

    তবে সাকিব এর আগেও টেস্ট খেলতে অনীহা জানিয়েছেন, এবং ভবিষ্যতে অন্য কেউ খেলতে না চাইলেও বোর্ডের আপত্তি নেই, এমন বার্তা দিয়েছেন পাপন, “...এটা এর আগেও যে হয়নি তা না। তবে এখন একটা ব্যাপারে আমাদের মানসিকতা পরিষ্কার। আমরা কাউকে জোর করে কোথাও পাঠাবো না, যারা খেলতে চায় না তারা খেলবে না। আমরা চাই সবাই খেলুক। তবে কারো যদি জাতীয় দলের চেয়ে অন্য কোথাও খেলতে ভাল লাগে তাহলে তারা যেতে পারে, কোন বাধা নেই। এই বার্তাটা সবার জন্য, কেবল সাকিব আল হাসানের জন্য না।”

    “যারা (শুধু) ওয়ানডে খেলবে, টি-টোয়েন্টি খেলবে তারা বলে দেবে আমরা টেস্ট খেলবেনা। কোথায় কোথায় টুর্নামেন্ট হবে, ফ্র্যাঞ্চাইজি হবে ওগুলো খেললে আমরা টেস্ট খেলবোনা বলে দিক। আমরা তো লিখিত নিয়ে নিচ্ছি। কিন্তু জাতীয় দলের খেলা, যে বলবে খেলবে তাকে খেলতেই হবে। এগুলো আসলে কথার কথা, মূল জিনিস একটা-- সাকিবকে কি খেলানো যাবেনা জোর করে? ওকে ছুটি না দিলে কি করতো? হয়তো খেলতো। কিন্তু আমরা এটা চাইনা। আমরা চাই যারা খেলাটাকে ভালোবাসে (তারাই) খেলুক। জোর করে আমি খেলাতে চাইনা। 

    “সাকিব তো আরও তিন বছর আগেই খেলতে চায়নি টেস্টে। না না, ও তো এমনিতেই টেস্টের প্রতি অত আগ্রহ দেখায়নি। চাচ্ছিল না খেলতে। তখন তো ওকে টেস্ট অধিনায়ক করে দেওয়া হল। জোর করে তো চেষ্টা করলাম। কিন্তু আসলে জোর করে খেলানোর মানে হয়না। আমার মনে হয় তাতে করে আমরা ভবিষ্যতে এগুতে পারছিনা। পেছনের দিকে যাচ্ছি। এখন সবার জন্য যদি ফ্রি থাকে ওপেন থাকে, কাউকে জোর করবো না। আমরা যখন জানবো এই কয়জন ক্রিকেটার চায় না টেস্ট খেলতে, তখন তো তাদের বিকল্প নিয়ে চিন্তা করতে হবে আমাদের। হয়তো এক বছর বা দেড় বছর সময় লাগবে, লাগুক। কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য আমরা পাবো।”
     

    "ও তো এমনিতেই টেস্টের প্রতি অত আগ্রহ দেখায়নি। চাচ্ছিল না খেলতে। তখন তো ওকে টেস্ট অধিনায়ক করে দেওয়া হল। জোর করে তো চেষ্টা করলাম। কিন্তু আসলে জোর করে খেলানোর মানে হয়না।"


    সাকিবের মতো এবারের আইপিএলে ডাক পাওয়া মোস্তাফিজুর রহমান ছুটি চাইলে তাকেও দেবে বিসিবি, “মোস্তাফিজ আজকে এসেছিল আমার সাথে দেখা করতে। আমাকে বলেছে আইপিএলের ব্যাপারে যে সে যাবে কিনা জানতে চায়। আমি বলেছি দেখো এখানে আমার কিছুই বলার নাই। তুমি যদি (জাতীয় দলে) খেলতে না চাও, তুমি যদি ওখানে যেতে চাও আমাদেরকে একটা চিঠি দিয়ে দাও, আমরা তোমাকে আটকাবোনা। বার্তাটা সবার জন্য, একদম পরিষ্কার। এটা কোন বিশেষ ব্যক্তির জন্য না, এটা সাকিবের জন্য কোন সিদ্ধান্ত নিচ্ছিনা। এটা সবার জন্যই সমান।”

    জাতীয় দলের ওপরে কোনো ক্রিকেটারের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ বেছে নেওয়ার কারণে বোর্ড অপ্রস্তুত বা বিব্রত নয় বলেও জানিয়েছেন তিনি, “না না, এখানে ব্রিবত বলাটা ইস্যু না। ব্রিবত ঠিক না, মন খারাপ। আমাকে যদি বলেন মন খারাপ।” 


    সম্পর্কিত: সাকিব-বিতর্কের টাইমলাইন: অরেঞ্জ-জুস, অনাপত্তিপত্র-ভজকট, টেস্ট খেলতে অনীহা

    আর্কাইভ: ও আমার 'সাকিব'পঙ্খীরে....


    “মনটা খারাপ কেন? দেখেন একটা খেলোয়াড়ের পেছনে কম বিনিয়োগ করি না। বোর্ড ১০-১৫ বছরে ধরে যে বিনিয়োগ করে এটা আপনাদের সবকিছু জানা আছে কিনা তাও জানি না। একটা তো হচ্ছে খেলাধুলার ক্ষেত্রে যে ‘লিমিটেড চুক্তি’ বা চুক্তির বাইরে চোট হলো (মিলিয়ে) সবকিছু নিয়ে আমরা ওদের যে সুযোগটা এখন দেই সেটা আগে কখনও চিন্তাই করা যেত না। এই জায়গায় দল এরকম দুইটা টেস্ট ম্যাচ হারার পর-- আমাকে যদি বলেন-- এই দুইটা টেস্ট ম্যাচ না। আমরা টেস্ট ম্যাচ হেরে এসেছি আফগানিস্তানের সঙ্গে, পাকিস্তানের সঙ্গে, ভারতের সঙ্গে। আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে নিজেদের মাটিতে পর পর দুই টেস্টে হারলাম । এরপরও কেউ যদি বলে, ‘আমি পরবর্তী টেস্টটা না খেলি’! আমার ধারণা ছিল সবাই উঠেপড়ে লাগবে টেস্টটা আমাদের জিততেই হবে।  সেই জায়গায় কেউ যদি মনে করে এটা খেলবে না অন্য একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলবে, এরপর আর কিছু বলার থাকে না। ফলে এটা এখন অনিবার্য, আমাদের মনোভাবও পরিষ্কার।কাউকে আমরা আর জোর করে রাখবো না।”

    বোর্ডের সামনের কেন্দ্রীয় চুক্তিতেও ক্রিকেটারদের এ ইচ্ছার প্রতিফলন দেখা যাবে বলে জানিয়েছেন পাপন, “আমরা আজ এই ব্যাপারেও আলোচনা করেছি, আমরা ওদের (জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সাথে) সঙ্গে একটা চুক্তি তৈরি করব। আমরা এখনো এবার কোনো চুক্তি করিনি তো। (আগের) চুক্তি (শেষ হয়ে গেলে) আমরা নতুন চুক্তিতে যাইনি (যাই)। এই চুক্তিতে আরো নতুন কিছু জিনিস যুক্ত হবে। ওখানে পরিষ্কারভাবে লেখা থাকবে, যে কে কোন ফরম্যাট খেলতে চায়, তাদেরকে বলতে হবে। এবং এটাও জানতে হবে তাদের যদি ওই সময়ে অন্য কোন খেলা থাকে তাহলে সেখানে খেলবে নাকি দেশের হয়ে খেলবে। এই চুক্তিতে যারা সই করবে তাদের তো আমরা তখন যেতে দিব না। এখন ব্যাপারটা উন্মুক্ত। আগে এটা ছিল প্রত্যেকের জন্য আলাদা, এখন এখন আমরা কাগজে কলমে লিখিত নিয়ে নিব। কারো বলার কিছু থাকবে না, যে দিল না, জোর করে যাচ্ছে-- এসব বলার কিছু থাকবে না। ‘ইটস অবভিয়াস’, যে খেলবে না, সে খেলবে না।”