• আইপিএল ২০২২
  • " />

     

    দুই নবাগতর লড়াইয়ে শেষ হাসি হাসল 'ছোট পান্ডিয়া'

    দুই নবাগতর লড়াইয়ে শেষ হাসি হাসল 'ছোট পান্ডিয়া'    

    গুজরাট-লখনৌ, ওয়াঙ্খেড়ে (টস-গুজরাট/ফিল্ডিং)
    লখনৌ সুপার জায়ান্টস- ১৫৮/৬, ২০ ওভার (হুডা ৫৫, বাদোনি ৫৪, ক্রুনাল ২১, শামি ৩/২৫, অ্যারন ২/৪৫, রশিদ ১/২৭)
    গুজরাট টাইটান্স- ১৬১/৫, ১৯.৪ ওভার (তেওয়াতিয়া ৪০*, হার্দিক ৩৩, মিলার ৩০, চামিরা ২/২২, ক্রুনাল ১/১৭, হুডা ১/৩১)
    ফলাফল: গুজরাট ৫ উইকেটে জয়ী

     

    সাবেক সতীর্থদের মোকাবেলা, পান্ডিয়া ভাইদের মহারণ, দুই নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজির দুই নতুন অধিনায়ক-দেখার মত বেশ কিছু মুখরোচক লড়াইয়ের রসদ নিয়ে শুরু হওয়া ম্যাচ হতাশ করেনি। পান্ডিয়া ভাইরা ব্যাটে-বলে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ রেখেছেন, রেখেছেন বড় পান্ডিয়ার রোষানলে পড়া সতীর্থ দীপক হুডা। টানটান উত্তেজনার ম্যাচে জয়ের হাসি নিয়ে অবশ্য মাঠ ছেড়েছে ছোট পান্ডিয়া।

    পাওয়ারপ্লে পেসে কাবু লখনৌ

    দুই সাবেক সতীর্থ মোহাম্মদ শামি ও লোকেশ রাহুলের লড়াইটা হতে পারত রোমাঞ্চকর। তবে সেসবের সুযোগ না দিয়ে প্রথম ওভারেই দারুণ এক বলে লখনৌ অধিনায়ক রাহুলকে ফেরান শামি। পরের ওভারেই আরেকটি দারুণ বলে কুইন্টন ডি ককের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন শামি। পাওয়ারপ্লেতে নিজের তৃতীয় ওভার করতে এসে আরও এক দুর্দান্ত ডেলিভারিতে মানিশ পান্ডের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন শামি। মাটিতে তাঁর বদৌলতে তিন বার স্টাম্প লুটোপুটি খেয়েছে; আর একটার চেয়ে যেন আরেকটা বল ভাল! মাঝে শুভমান গিলের দুর্দান্ত ক্যাচে বরুন অ্যারনের শিকার হয়ে এভিন লুইস ফিরলে পাওয়ারপ্লেতে ৩২ রান তুলতেই ৪ উইকেট খুইয়ে বসে লখনৌ।

    হুডা-বাদোনির ঠাণ্ডাগরম জুটি

    বিপদ সামাল দিতে উইকেটে নবাগত দীপক হুডা-আয়ুশ বাদোনি মাটি কামড়ে পড়েছিলেন। তবে এরপর দুজনই দেখিয়েছেন ইনিংস লম্বা করার আদর্শ উদাহরণ। ১০ম ওভারে লখনৌ তুলতে পেরেছিল মোটে ৪৭ রান, যখন হুডার রান ছিল ২২ বলে ১৫ ও বাদোনির ছিল ১৪ বলে ৬! তবে হার্দিকের পরের ওভারে দুই চারে হাত খোলার ইঙ্গিত দেন হুডা। সেই প্রতিশ্রুতিকে বাস্তবে পরিণত করে এক ওভার পরে বরুন অ্যারনকে মারেন ২ চার, ১ ছয়। পরের ওভারে রশিদ খানকে দারুণ এক ছয় মেরে এরপর ৩৬ বলেই ফিফটি পূর্ণ করেন হুডা। অন্য প্রান্তে তখনও নোঙর পুতে বসে থাকা বাদোনিও রানের চাকা সচল করতে বেছে নেন হার্দিককেই; মারেন দুই চার ও ১ ছয়। রশিদের কাছে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে হুডার ৪১ বলে ৫৫ রানের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটলেও  নিজের কাজ চালিয়ে যান বাদোনি। ৮৭ রানের জুটি ভাঙার পর দারুণ শুরু করা শামিকেও এরপর নেন একহাত। পরে লকি ফার্গুসনকে দুর্দান্ত এক ছয় মেরে ৩৮ বলে পূর্ণ করেন ফিফটি। শেষ ওভারে অ্যারনের শিকার হয়ে ৪১ বলে ৫৪ রানে থামলেও বাদোনি রেখেছিলেন নিজের প্রতিভার ছাপ।

    নায়ক তেওয়াতিয়া; পার্শ্ব নায়ক ওয়েড, হার্দিক ও মিলার

    শামির মত দ্বিতীয় ইনিংসে ঝড় তোলেন আরেক পেসার দুশমন্থ চামিরা। প্রথম ওভারেই গিলকে ফেরানোর পর নিজের দ্বিতীয় ওভারে নিখুঁত এক ইয়র্কারে খাবি খাওয়ান বিজয় শঙ্করকে। এরপর অবশ্য উইকেটে এসেই প্রতি আক্রমণে যান হার্দিক, অন্য প্রান্তে ১১ বছর পর আইপিএলে ফেরা ওয়েড ছিলেন ধীরস্থির। দুই সহোদরের ক্ষুদ্র লড়াইয়ে অবশ্য হার মানতে হয় ছোট পান্ডিয়াকে, ২৮ বলে ৩৩ রান করে ফিরতে হয় পান্ডের ক্যাচে। পরের ওভারে ৩০ রানে থাকা ওয়েডকে ফিরিয়ে গুজরাটকে বল হাতেও এবার চেপে ধরেন হুডা।

    তবে ব্যাটিং লাইনআপে তখনও ছিল এবার চড়া মূল্যে দলে ভেড়ানো রাহুল তেওয়াতিয়া; সাথে ছিলেন এবারে প্রথম ডাকে অবিক্রিত থাকা ডেভিড ‘কিলার’ মিলার। দুজনে মাথায় সমীকরণ সাজিয়ে ইনিংসকে এগিয়ে নিয়ে যান। ১৬তম ওভারে দুজনে মিলে হুডার ওপর চড়াও হয়ে ২ চার, ১ ছয়ে তোলেন ২২ রান; রবি বিশ্নোইয়ের করা পরের ওভারে নেন ১৭ রান। ম্যাচের মোড় ওই দুই ওভারে ঘুরিয়ে দিলেও পরের ওভারে আভেশ খানকে ছয় মারার পরের বলেই ৩০ রানে ফিরে যান মিলার। ম্যাচের কাটা যখন আরও একবার লখনৌয়ের দিকে ঘুরে যাচ্ছিল বলে মনে হচ্ছিল তখনই নিজের মূল্যের প্রতি সুবিচার করে তেওয়াতিয়া বনে গেলেন ‘ফিনিশার’; চামিরাকে মারলেন ২ চার। অবশ্য অভিষিক্ত অভিনব মনোহর যা করলেন অভিষেকেই এরকম ঠান্ডা মাথায় ম্যাচ শেষ করার নিদর্শন খুব বেশি দেখা যায় না। শেষ ওভারে ১১ রান প্রয়োজন হলে আভেশ খানকে দুই চার মেরে লখনৌর কফিনে পেরেক ঠুকে। তবে ২৪ বলে ৪০* রানের দারুণ ইনিংস খেলা তেওয়াতিয়ার ব্যাট থেকেই যে ম্যাচজয়ী চারটা এলো তা তো তার দুর্দান্ত রানতাড়ার ক্ষমতারি পরিচায়ক বটে।