লুইসে লণ্ডভণ্ড চেন্নাইয়ের ভাগ্যে জুটল আইপিএলে গ্লানিময় 'প্রথম'
চেন্নাই-লক্ষ্ণৌ, মুম্বাই (টস-লক্ষ্ণৌ/ফিল্ডিং)
চেন্নাই সুপার কিংস- ২১০/৭, ২০ ওভার (উথাপ্পা ৫০, দুবে ৪৯, মঈন ৩৫, বিষ্ণোই ২/২৪, আভেশ ২/৩৮, টাই ২/৪০)
লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস- ২১১/৪, ১৯.৩ ওভার (ডি কক ৬১, লুইস ৫৫*, রাহুল ৪০, প্রিটোরিয়াস ২/৩১, ব্রাভো ১/৩৫, দেশপান্ডে ১/৪০)
ফলাফল: লক্ষ্ণৌ ৪ উইকেটে জয়ী
ব্রাবোর্নে রবিন উথাপ্পা-মঈন আলী-শিভাম দুবেদের দারুণ ব্যাটিংয়ে যখন চেন্নাই যৌথভাবে মৌসুমের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড ছুঁলো তখন হারের সম্ভাবনা বোধহয় রবীন্দ্র জাদেজার মনের গহীন কোণেও উঁকি দেয়নি। তবে কল্পনাকে বাস্তবে রুপ দিতে ভুল করেনি লোকেশ রাহুলের দল। অধিনায়ক নিজেই কুইন্টন ডি ককের সাথে জুটি গড়ে পথ দেখানোর পর সেই পথে দৌড়েই অবিস্মরণীয় জয় এনে দিয়েছে এভিন লুইস-আয়ুশ বাদোনি জুটি। সেই সাথে আইপিএল ইতিহাসে প্রথমবারের মত মৌসুমের প্রথম দুই ম্যাচেই হারের লজ্জায় ডুবল চেন্নাই।
উথাপ্পা-মঈনে শুরু, মাঝে দুবে, শেষে ধোনি
গতবারের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহকের এই মৌসুমের শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি; তারই ধারাবাহিকতায় এদিনও শুরুতেই রান আউট হিয়ে ফিরেছেন রুতুরাজ গায়কোয়াড়। তবে সেটা টের পেতে দেননি উথাপ্পা-মঈন জুটি। পাওয়ারপ্লেতে অবশ্য আক্রমণ প্রায় একাই চালিয়েছেন উথাপ্পা; ক্রুনাল পান্ডিয়ার করা পাওয়ারপ্লের এশ ওভারে ২ চার, ১ ছয়ে সেই আক্রমণে যোগ দেন মঈন। পাওয়ারপ্লেতে দুজনে মিলে তুলে ফেলেন ৭৩ রান। রবি বিষ্ণোইয়ের করা অষ্টম ওভারের প্রথম বোলে ২৫ বোলে ফিফটি পূর্ণ করে অবশ্য ওই ওভারেই থামেন উথাপ্পা। তবে উইকেটে এসে রানের চাকা সচল রাখতে দুবে শুরু থেকেই হাত খুলে খেলেতে শুরু করেন। আক্রমণের ধারা বজায় রাখতে গিয়ে আভেশ খানের বলে স্টাম্প খুইয়ে শেষ হয় মঈনের ২২ বলে ৩৫ রানের ইনিংস। অবিচল দুবের ব্যাটে বাউন্ডারির ফুলঝুরিতে ছেঁদ পড়েনি তাতেও। ১৯তম ওভারে গিয়ে আভেশকে মাঠছাড়া করতে গিয়ে ফিফটির দ্বারপ্রান্তে এসে অবশ্য থামেন তিনি। পরের বলেই উইকেটে এসে মহেন্দ্র সিং ধোনি এমন কিছু করলেন যা আইপিএল এর আগে দেখেনি কখনোই, ইনিংস শুরু করলেন ছয় দিয়ে! শেষ দিকে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েও অ্যান্ড্রু টাই তাই লাগাম টেনে ধরতে পারেননি। ধোনির ৬ বলে ১৬* রানের ক্যামিওতে চেন্নাই পেয়েছিল তখন পর্যন্ত মৌসুমের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ।
ব্যাটিং উইকেটে বিষ্ণোইয়ের বিষাক্ত স্পিন
রবি বিষ্ণোইয়ের হাতে যখন বল তুলে দেওয়া হল উইকেটে তখন চলছে উথাপ্পা-মঈনের ধুন্ধুমার চার-ছক্কার মহোৎসব। সেই উৎসবে জল ঢেলে দারুণ এক স্লাইডারে উথাপ্পাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেললেন, ওভারে দিলেন মোটে ৫ রান। বিষ্ণোইয়ের পরের ওভারের প্রথম বলেই চারের দেখা পেলেন মঈন; তাতেই এই মৌসুমে দ্রুততম সময়ে দলীয় ১০০ রান পূর্ণ করে চেন্নাই। তবে ওই গুগ্লিটা মঈন পড়তে পারেননি বলেই ব্যাটের কানায় চুমু খেয়ে বল পারি জমায় বাউন্ডারির পথে; ওই ওভারে আরও দুই বলে মঈন যেন দেখলেন সর্ষে ফুল। নিজের শেষ ওভারে প্রথম বলে বিষ্ণোইয়ের ভাগ্য সহায় না হলেও দ্বিতীয় বলেই আরও একটি স্লাইডারে আম্বাতি রায়ুডুর স্টাম্প উপড়ে ফেলেন তিনি। রানের উৎসবের মাঝেও বিষ্ণোই তাই শেষ করেন ব্যবধান গড়ে দেওয়া এক বোলিং ফিগার নিয়ে: ৪-০-২৪-২।
ডি কক-রাহুলের মেঘ ডেকে আনার পর লুইসের বৃষ্টি
মুকেশ চৌধুরীর প্রথম ওভারে মাত্র ২ রান নিয়ে শুরু করা ডি কক-রাহুল জুটি যে কী করতে চলেছে তা তখনও চেন্নাই ধরতে পারেনি। ধরিয়ে দিতে সময়ও নেননি দুজন; পাওয়ারপ্লেতে দুজনে মিলে তুলে ফেলেন ৫৫ রান। পাওয়ারপ্লের পর ডি কক যেন আরও লাগামছাড়া হয়ে ওঠেন। তবে ইনিংসের ওই প্রথম ওভারের পর ডোয়াইন ব্রাভোর করা ১০ম ওভারে এসে প্রথম বাউন্ডারি ছাড়া ওভার পার করে চেন্নাই। তবে ওই ওভারেই ৩৪ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন ডি কক। ওই ওভারের চাপেই বোধহয় ডোয়েইন প্রিটোরিয়াসের খাটো লেংথের বলে পুল করতে গিয়ে শেষ হয় রাহুলের ২৬ বলে ৪০ রানের ইনিংস। পরের ওভারে মানিশ পান্ডেও ফিরলে চাপে পড়ে যায় লক্ষ্ণৌ এক প্রান্তে প্রিটোরিয়াস চাপ তৈরি করলেও উইকেটে এসেই এভিন লুইস শুরু করেন প্রতি আক্রমণ। নিজের তৈরি করা চাপের ফল অবশ্য প্রিটোরিয়াস নিজের প্রান্তে পান ডি কককে ৪৫ বলে ৬১ রানে থামিয়ে। তবে লক্ষ্ণৌয়ের সামনে তখনও বাকি বহু পথ পাড়ি দেওয়া। দীপক হুডা এসে ৮ বলে ১৩ রানে ফিরে গেলে সমীকরণ হয়ে দাঁড়ায় আরও কঠিন। তবে উইকেটে যে তখনও আছেন ১৯ বলে ৩৯ রান করা লুইস। শেষ দুই ওভারে যখন প্রয়োজন ৩৪ রান তখন লক্ষ্ণৌয়ের ‘বেবি এবি’ নাম পেয়ে যায় বাদোনি এসে খেলেন দারুণ এক ইনিংস। দুবের করা ১৯তম ওভারে দুজনে মিলে ২টি করে চার ও ছয়ে নেন ২৫ রান; দারুণ এক ছয়ে মাত্র ২৩ বলে ফিফটি পেয়ে যান লুইস। ছন্দে থাকা বাদোনি এরপর শেষ ওভারে দারুণ এক ছয় মারার পর তুলির শেষ আঁচড় টানেন এই মৌসুমের সর্বোচ্চ রানতাড়ায়।