'কিলার কামিন্স'-এর খুনে ব্যাটিংয়ে স্তব্ধ মুম্বাই
কলকাতা-মুম্বাই, পুনে (টস-কলকাতা/ফিল্ডিং)
মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স- ১৬১/৪, ২০ ওভার (সূর্যকুমার ৫২, তিলক ৩৮*, পোলার্ড ২২*, কামিন্স ২/৪৯, উমেশ ১/২৫, বরুন ১/৩২)
কলকাতা নাইট রাইডার্স- ১৬২/৫, ১৬ ওভার (কামিন্স ৫৬*, ভেঙ্কটেশ ৫০*, বিলিংস ১৭, মু. আশ্বিন ২/২৫, মিলস ২/৩৮, স্যামস ১/৫০)
ফলাফল: কলকাতা ৫ উইকেটে জয়ী
বল হাতে ২ উইকেট নিলেও শেষ ওভারে কাইরন পোলার্ডের কাছে বেধড়ক মার খেয়ে গুনেছিলেন ২৩ রান। এই রানটুকুই শেষমেশ দলকে ডোবায় নাকি সেই চিন্তায় হয়ত এরপরের সময়টুকু ড্রেসিং রুমে বসে নখ কামড়ে পার করেছিলেন প্যাট্রিক কামিন্স। রানতাড়ায় রানের ধারা ঠিক থাকলেও নিয়মিত উইকেট হারানোয় তাকে ঠিকই উইকেটে আসতে হল। সেই সাথে আবার আছে আরেকটি উইকেট হারালেই ম্যাচের মোড় ঘুরে যাওয়ার ভয়। এদিনই আসরে প্রথমবার নামা কামিন্স হয়ত মনস্থির করেছিলেন সুদে-আসলে ব্যাট হাতে ওই শেষ ওভারের জবাব দিবেন; সেই লক্ষ্যে তিনি বেছে নিলেন স্বদেশী পেসার ড্যানিয়েল স্যামসকে। শেষ ৩০ বলে যখন ৩৫ রান দরকার; স্যামসের আইপিএল ক্যারিয়ার সঙ্কটের মুখে ফেলে দিয়ে ওই ১৬তম ওভারেই ম্যাচ শেষ করলেন কামিন্স! কামিন্সের সেই রেকর্ড গড়া ইনিংসে তাই মুম্বাই দেখল টানা তৃতীয় হারের মুখ।
কামিন্সের কচুকাটা অধ্যায়ে সঙ্গী ভেঙ্কটেশ
পিচের গতি ও বাউন্স ব্যবহার করে টিমাল মিলস ও এই ড্যানিয়েল স্যামসই নিয়মিত উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। লেগ স্পিনার মুরুগান আশ্বিনের ওপর চড়াও হতে গিয়েও নিতিশ রানা ও স্যাম বিলিংস তাকে উইকেট দিয়ে এসেছিলেন। মিলসের বাউন্সে পরাস্ত হয়ে শেষ যখন এরপর আন্দ্রে রাসেল ফেরেন তখনও প্রয়োজন ৪৭ বলে ৬১ রান। নিয়মিত উইকেট হারানোর পরেও রানের চাকা সচল ছিল ভেঙ্কটেশ আইয়ারের জন্যই। কামিন্স এসেই মিলসকে চার-ছয় মারার পরে জাসপ্রিত বুমরাহর বলে সিঙ্গেল নিয়ে ৪১ বলে নিজের ফিফটি পূর্ণ করেন ভেঙ্কটেশ। এরপরেই শুরু হয় কামিন্স-শো। বুমরাহকে চার-ছয় মারার পর স্যামসকে বলে কয়ে মাঠছাড়া করতে থাকেন। ১২ বলে তার রান যখন ৪৪ তখনই বাউন্ডারিতে সূর্যকুমার যাদব ঝাঁপিয়ে পড়ে নেন দুর্দান্ত ক্যাচ; তবে কোমরের ওপরের নো বলে সেবার এককভাবে রেকর্ড করা হল না কামিন্সের। পরের বলেই চার মেরে অবশ্য আইপিএলের ইতিহাসে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ডে লোকেশ রাহুলের সাথে ভাগ বসান। পরের বলে ছয় মেরে তো ম্যাচই শেষ করে দেন। এক ওভারে ৩৫ রান তুলে স্যামসকেও ডোবান লজ্জার রেকর্ডে-আইপিএলে এক ওভারে কোনও বিদেশি বোলারের এক ওভারে দেওয়া সর্বোচ্চ রান ও যেকোনো বোলারের জন্য তৃতীয় সর্বোচ্চ রান।
সূর্যকুমার-তিলকের দারুণ জুটি
এর আগে অবশ্য মুম্বাইয়ের জন্য ১৫০ রান ছোঁয়াই মনে হচ্ছিল আকাশকুসুম চিন্তাভাবনা। কামিন্সের শিকার হয়ে ঈশান কিষান যখন ফেরেন, ১১ ওভার শেষে মুম্বাইয়ের স্কোরবোর্ড তখন বলছে: ৫৫/৩। সেখান থেকে রানের চাকা সচল করে ইনিংস মেরামতের কাজ করছিলেন সূর্যকুমার, সাথে যোগ্য সঙ্গী হিসেবে ছিলেন তরুণ তিলক ভার্মা। দুজনে তবুও ১৫ ওভার শেষে মুম্বাইয়ের সংগ্রহ নিয়ে যেতে পেরেছিলেন ৮৫ রানে। এরপরেই দুজনে গিয়ার পাল্টান; বরুন চক্রবর্তীর এক ওভারে দুজনে মিলে নেন ১৭ রান। কামিন্সের করা শেষ ওভারের প্রথম বলে ফেরার আগে আসরে প্রথমবারের মত নেমেই সূর্যকুমার খেলেন ৩৬ বলে ৫২ রানের দারুণ ইনিংস। এরপরেই ব্যাটের কানায় লেগে দুটো ছয় পাওয়ার পাশাপাশি আরও এক ছয় মেরে কামিন্সের ৫ বলেই ২২ রান নিয়েছিলেন পোলার্ড। সাথে ২৭ বলে ৩৮* রানে অপরাজিত থাকা তিলকের ইনিংসে মুম্বাই যেই সংগ্রহ পেয়েছিল তাতে তাড়া তখন হয়ত জয়ের স্বপ্নই দেখতে শুরু করেছিলেন। কে ভেবেছিল এই কামিন্সই তাদের সেই স্বপ্ন নিয়ে রীতিমত ছিনিমিনি খেলে তাদের বোলারদের পাড়ার বোলার বানিয়ে ছাড়বেন!