• আইসিসি মেয়েদের বিশ্বকাপ
  • " />

     

    স্টার্ক-হিলি যেভাবে হয়ে উঠলেন ক্রিকেটের 'পাওয়ার কাপল'

    স্টার্ক-হিলি যেভাবে হয়ে উঠলেন ক্রিকেটের 'পাওয়ার কাপল'    

    আনিয়া শ্রাবসোলের গুড লেংথ ডেলিভারিটা আলতো হাতে ডিপ পয়েন্টের দিকে পাঠিয়ে  চিৎকার ছুটন্ত এলিসা হিলির। আনন্দের চিৎকার। এমন উল্লাসে মাতোয়ারা হওয়া তো তাকেই মানায়; ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপের ফাইনালে সেই শটেই যে সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন হিলি। হিলির এই উচ্ছ্বাসে নতুন মাত্রা যোগ হয় গ্যালারিতে তার স্বামী মিচেল স্টার্কের উপস্থিতিতে। বাকি দর্শকদের সাথে দাঁড়িয়ে করতালিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনিও। সেই দৃশ্যটাই জিতে নিয়েছে কোটি হৃদয়। 

    শুধু সেঞ্চুরিতেই থামেননি হিলি, খেলেছেন ১৭০ রানের ইনিংস; যা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সব ধরনের ফাইনালে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ। আর নিজের জীবনসঙ্গীর এই অনন্য অর্জন পাকিস্তান থেকে ক্রাইস্টচার্চে ছুটে গিয়ে দেখেছেন স্টার্ক। হিলির অনবদ্য এই ইনিংসে ভর করে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে সপ্তম বিশ্বকাপ জিতেছে অস্ট্রেলিয়ার মেয়েরা। 

    এক ঘরে দুই বিশ্বকাপ

    ক্রাইস্টচার্চের সেই ফাইনালের পর সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে মিচেল স্টার্ক ও এলিসা হিলির দুটো ছবি পোস্ট করেছে আইসিসি। একটি ২০১৫ পুরুষ বিশ্বকাপের ফাইনালের। যেবার নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল অজিরা। বিশ্বজয়ের পঞ্চম স্মারক নিয়ে ড্রেসিংরুমে উদযাপনে ব্যস্ত ছিলেন স্টার্ক। আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে এমসিজির ড্রেসিংরুমে হাজির হন হিলি। 

    বিশ্বকাপ হাতে নিয়ে প্রেমিকা (তখনো বিয়ে হয়নি তাদের) ও অস্ট্রেলিয়া নারী দলের উইকেটকিপার ব্যাটার হিলির সাথে ছবি তোলেন স্টার্ক। অন্য ছবিটি এবারের নারী বিশ্বকাপের। হিলির হাতে বিশ্বকাপ শিরোপা। আর পাশে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন তার স্বামী স্টার্ক। দুজনই চ্যাম্পিয়ন। 

    মিলের শেষ নেই এই দুই চ্যাম্পিয়নের। ২০১৫ বিশ্বকাপে ৮ ম্যাচে ২২ উইকেট নিয়ে স্টার্ক হয়েছিলেন ম্যাচসেরা। অজিদের বিশ্বকাপ জেতাতে বাঁহাতি এই পেসারের ছিল অগ্রণী ভূমিকা। এবারের নারী বিশ্বকাপের সেরা ক্রিকেটার হয়েছেন হিলি। ৯ ম্যাচে করেছেন ৫০৯ রান। তার চওড়া ব্যাটের রানবন্যায় ভেসেই অস্ট্রেলিয়া সপ্তমবারের মতো মেয়েদের বিশ্বকাপে সেরা হয়েছে। দুজন বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন ২০১৬ সালের ১৫ এপ্রিল। বছর ছয়েক আগে পাতা সেই সংসারের ঘরেই এখন আছে দুটি বিশ্বকাপ।  


    তুমি যেখানে আমি সেখানে

    দুনিয়ার দুই প্রান্তে দুজন, অথচ ব্যাট করেছেন একইসাথে, একই দেশের বিপক্ষে। এতখানি পড়ে অবাক লাগতেই পারে, অনুসন্ধানী মনে প্রশ্নও জাগতে পারে, ‘এমন আবার হয় নাকি’? হয়েছে। স্টার্ক-হিলি জুটির কল্যাণে মঞ্চস্থ হওয়া বিরল এই দৃশ্যের নেপথ্যের গল্পটাও পড়ুন।

    ২৪ বছর পর পাকিস্তান সফরে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট ছিল রাওয়ালপিন্ডিতে। সেই টেস্টের পঞ্চমদিনের সকালের সেশনে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ব্যাট করছিলেন মিচেল স্টার্ক। ঠিক একই সময় পাকিস্তানের বিপক্ষে নারী বিশ্বকাপের ম্যাচে ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন তার স্ত্রী এলিসা হিলি। ক্রিকেট ইতিহাসে এমন নজির আগে দেখা যায়নি। 

    রাওয়ালপিন্ডিতে ড্র হওয়া সেই টেস্টে অজিদের একমাত্র ইনিংসে স্টার্ক আউট হয়েছিলেন ১২ রান করে। দুই ইনিংস মিলিয়েও পাননি কোনো উইকেট। তবে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে হিলি ঠিকই ছড়ি ঘুরিয়েছেন ব্যাট হাতে। ৭৯ বলে ৭২ রানের ইনিংস খেলে হয়েছেন ম্যাচ সেরা। 

     

    যেভাবে হলো #stealy 

    স্টার্ক-হিলি দুজনের প্রথম দেখা ৯ বছর বয়সে, সিডনির নর্দান ডিস্ট্রিক্ট জুনিয়র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের ম্যাচে। একে অপরের বিপক্ষে খেলেছিলেন সেদিন। তবে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে উঁঠতে সময় লাগেনি। কারণ বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে দুজনই ছিলেন উইকেটকিপার। দুজন একই একাডেমিতে একসাথে খেলেছেন ছয় বছর। 

    সেই একাডেমির অনূর্ধ্ব-১১ দলের দায়িত্বে ছিলেন স্টার্কের বাবা পল। সেই সূত্রে স্টার্ক-হিলি দুজনকেই আলাদা করে যত্ন নিয়েছেন তিনি। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে ছয় বছর পরে স্টার্ক গ্লাভস ছেড়ে বল হাতে তুলে নিলেও হিলি থেকে গেছেন উইকেটের পেছনেই। 

    ১৫ বছর বয়সে আলাদা হয়েছিল স্টার্ক-হিলির পথ। দুজনই নিজেকে তৈরি করতে থাকেন জাতীয় দলের জন্য। তবে দুজনে বোঝাপড়া দারুণ থাকায় সম্পর্কে চিড় ধরেনি। সময়-সুযোগ মিলিয়ে ক্রিকেটের ব্যস্ত সূচির ফাঁকে দেখা করতেন দুজন। অবশ্য মাঠের ক্রিকেটটাও বাদ থাকেনি। দুজনই পরস্পরের টেস্ট অভিষেক দেখেছেন গ্যালারিতে বসে। 

    দীর্ঘদিন প্রেম করার পর ২০১৬ সালে গাঁটছড়া বাঁধেন দুজন। জীবনের সেই অসামান্য মুহূর্তে ক্যামেরাবন্দি হয়ে সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়েছিলেন দুজনই। ক্যাপশনে দেখা গিয়েছিল নতুন এক হ্যাশট্যাগ। #stealy। 

    Starc নামের প্রথম দুই আদ্যক্ষর ও Healy নামের শেষাংশ নিয়ে জন্ম এই হ্যাশট্যাগের। দুজনের সম্পর্কের পূর্ণতা দারুণ ফুটিয়ে তুলেছিল যেটি। 

      

    ‘পাওয়ার কাপল’

    অস্ট্রেলিয়ার  ক্রিকেটের ‘পাওয়ার কাপল’ বলা হয় স্টার্ক-হিলি জুটিকে। মাঠের অর্জনে্র পাশাপাশি মাঠের বাইরে একের প্রতি অন্যের সম্মান আর শ্রদ্ধা যে ভাবনার মূল রসদ। ক্রিকেটের মানুষ দুজনই, কিন্তু ঘরে ক্রিকেট নিয়ে তাদের কথা হয় না বললেই চলে। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটের খোঁজ খবর দুজন একসাথে ভালোই রাখতেন। 

    গার্ডিয়ানকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে হিলি জানিয়েছিলেন বেশ ইন্টারেস্টিং একটা তথ্য। নেট প্র্যাকটিসে স্টার্কের বল খেলতেন তিনি। বিশেষ করে স্টার্কের ইনজুরি থেকে পূনর্বাসনের সময়টায় ব্যাট-প্যাড নিয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে যেতেন হিলি। যদিও কাজটা তার বিশেষ পছন্দের ছিল না। কে চাইবে, ১৪০+ প্রতি কি.মি/ঘন্টার একেকটা ডেলিভারির বিপক্ষে বারবার ব্যাট করতে?  

    স্বামী বিশ্বের দ্রুততম বোলারদের একজন। নিজে অস্ট্রেলিয়া নারী দলের অন্যতম ব্যাটিং ভরসা। দুইয়ে মিলে ‘পাওয়ার কাপল’ বটে!