• বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজ ২০২২
  • " />

     

    মিরপুরে ঘুরে দাঁড়ানোর অবিশ্বাস্য এক দিন, সৌজন্য: অদম্য মুশফিক, অনবদ্য লিটন

    মিরপুরে ঘুরে দাঁড়ানোর অবিশ্বাস্য এক দিন, সৌজন্য: অদম্য মুশফিক, অনবদ্য লিটন    

    ২য় টেস্ট, মিরপুর (টস- শ্রীলঙ্কা/ ব্যাটিং)
    বাংলাদেশ-২৭৭/৫ , ৮৫ ওভার (লিটন ১৩৫*, মুশফিক ১১৫*,  রাজিথা ৩/৪৩, আসিথা ২/৮০)
    ১ম দিন, স্টাম্পস

     

    প্রথম দিন শেষে শক্তিশালী অবস্থানে বাংলাদেশ - সকালের সেশন শেষে এই কথাটা বলা যাবে তা বোধহয় ভাবেননি কোনও চরম আশাবাদীও। পাশার দান উল্টে দিয়ে মুশফিকুর রহিম-লিটন দাস জুটি করে দেখলেন সেটাই।

    দুটি সেশন এই জুটি পার করেছেন, তবে সেই দুই সেশনের খেলার ধরণে স্বাভাবিকভাবেই ছিল তারতম্য। দুই পেসার কাসুন রাজিথা ও আসিথা ফার্নান্দোর তোপে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ সাতসকালেই জেরবার। দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল হাসান জয় রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে যাওয়ার পরে মুমিনুল হক ও নাজমুল হাসান শান্তও ফিরেছেন দ্রুতই। আর সাকিব আল হাসান তো উইকেটে পা রাখার পরেই ধরলেন প্যাভিলিয়নের পথ, গোল্ডেন ডাকের শিকার হয়ে। ২৪ রানে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে তখন চোখ রাঙাচ্ছে আরও একটি ব্যাটিং বিপর্যয়।

    সেই বিপর্যয় এড়াতেই মাটি গেড়ে বসলেন মুশফিক ও লিটন। দলীয় ৬৬ রান পূর্ণ করে দুজন গেলেন লাঞ্চ বিরতিতে। তবে কাজ যে তখনও ঢের বাকি! লাঞ্চের পর যথারীতি শুরু করলেন দুজন, নিবিড় মনোযোগে মোকাবেলা করে গেলেন একের পর এক বল। এক প্রান্তে লিটন যেমন খেলে গেলেন স্বভাবজাত প্রানবন্ত এক ইনিংস, অন্য প্রান্তে মুশফিক তেমনি বোলারদের ক্লান্ত করে তুললেন দৃঢ়চেতা ব্যাটিংয়ে। চা-বিরতির আগে দুজনেই ফিফটি পূর্ণ করে দলকে নিয়ে যান ১৫৩ রানে; ২৫ রানের আগেই ৫ উইকেট হারানোর পর ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম জুটি হিসেবে ষষ্ঠ উইকেটে শতরানের জুটি পূর্ণ করে।

    চা-বিরতির পর লিটনকে মনে হচ্ছিল একেবারেই অপ্রতিরোধ্য। মুশফিকের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি এলবিডব্লিউর আবেদন করেছিলেন লঙ্কানরা, রিভিউ নিয়েও হয়েছেন ব্যর্থ। তবে লিটন যেন ছিলেন অন্য মাত্রায়; ইনিংস মেরামতের চাপ যেন তার কাছে নস্যি। লিটন তখন রানের নেশায় মত্ত। মুশফিকও তার সঙ্গীর আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে খেলে গেলেন আপন ছন্দে।

    লিটনকে এর আগে বহুবার সেঞ্চুরি ফাঁকি দিয়ে গেলেও এদিন আর সেরকম হলো না। ১৪৯ বলে লিটন পূর্ণ করলেন তার ৩য় টেস্ট সেঞ্চুরি। লঙ্কানদের বেহাল দশার সুযোগ নিয়ে, নিজের মাটি কামড়ে পড়ে থাকা ইনিংসের ফসল তুলতে ভুল করেননি মুশফিকও। সমালোচকরা চট্টগ্রাম সেঞ্চুরির পর সরব থাকার সুযোগ পেলেও অসামান্য এক সেঞ্চুরিতে তাদের মুখে হয়তো কুলুপ এঁটে দিলেন মুশফিক। ২১৮ বলে পূর্ণ করা ৯ম টেস্ট সেঞ্চুরির মত এমন দুর্গম পরিস্থিতির মাঝেও দলকে চালকের আসনে বসানো সেঞ্চুরি হয়তো সাদা পোশাকে মুশফিকের নেই বললেও ভুল বলা হবে না। টেস্ট ইতিহাসে ৬ষ্ঠ উইকেটে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের (২৫৩*)  জুটি গড়ে  মুশফিক, লিটন বাংলাদেশকে তাই দিনশেষে নিয়ে গেলেন এমন এক অবস্থানে, যেখানে দিনের প্রথম সেশন শেষে হয়তো শ্রীলংকাকেই কল্পনা করে বসেছিলেন বেশিরভাগই।