• ইংল্যান্ড-পাকিস্তান
  • " />

     

    'দ্য টুকটুক ম্যান'

    'দ্য টুকটুক ম্যান'    

    আগের ওভারেই একটা চার হয়েছে থার্ডম্যান দিয়ে। ৭৭ দরকার ছিল, এখন ৭৩। এরপর আমিরের ওভার, এই ওভারেও একটা চার। ক্রিস ওকস আর স্টিভেন ফিন, দু'জন কি তবে এজবাস্টনের শেন ওয়ার্ন আর ব্রেট লির মতো কিছু করে বসবেন? ওয়ার্ন সে ম্যাচে যে বলে আউট করেছিলেন অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসকে, তেমন এক বলেই তো ইয়াসির শাহ বোল্ড করেছেন গ্যারি ব্যালান্সকে! ওকস-ফিনে যদি গড়ে ওঠে প্রতিরোধ! মিসবাহ-উল-হকের মনে এই আশঙ্কা খেলা করেছিল কি? করতেই পারে।

    ইয়াসির শাহ পরের ওভার করতে এলেন। থার্ডম্যান আর ডিপ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টের মাঝামাঝিতে একজন, ডিপ পয়েন্টে একজন। নিরাপত্তা আছে ডিপ ফাইন লেগে, লং-অনে, ডিপ মিডউইকেটে। লং অফে। আক্রমণের লেশমাত্রও খুঁজে পাবেন না, ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায়। অবশ্য শর্ট লেগ আছে, সাথে একটা স্লিপও। কিন্তু দরকার যে মাত্র দুইটা উইকেট, যে বোলার ৯ উইকেট পেয়েছেন, তাঁর জন্য আরেকটু আক্রমণাত্মক কি হতে পারেন না অধিনায়ক! ধারাভাষ্যে মাইক আথারটন এমন প্রশ্ন তুলছেন তখন।

    ওকস দ্বিতীয় বলটা ডিপ পয়েন্টে খেলেছেন, ফিনকে স্ট্রাইক দিবেন না বলে সিঙ্গেল নেননি। পরের বলে দারুণ একটা স্কয়ার ড্রাইভ, কিন্তু মিসবাহর নিরাপত্তা বুহ্যে আটকে গেল তা। ওকস রান নিলেন না আবারও। পরের বল, একটু ফ্লাইট, অফস্ট্যাম্পের বাইরে। আগের দুই বলের কথা ভেবেই ওকস খেলতে গেলেন শক্ত হাতে। ড্রাইভ করতে গেলেন, চার অথবা নিদেনপক্ষে দুই রান যদি হয়! হলো ‘এজ’, বুকের ওপর ভাল একটা ক্যাচ নিলেন ইউনুস। ইয়াসির দৌড়াতে গিয়ে একসময় পিছলে পড়ে গেলেন, পাকিস্তান দলের উল্লাসের পরের ছবিতে দেখা মিলবে সীমিত এক হাসির। মিসবাহ-উল-হকের। সেই আশঙ্কা ততক্ষণে দূর হয়ে যাওয়ার কথা, মিসবাহর চোখে মুখে তখন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের স্বস্তি! ধারাভাষ্যে আথারটন তখন মিসবাহর সমালোচনা ভুলে ইয়াসির-স্তুতিতে ব্যস্ত! মিসবাহর অবশ্য প্রশংসা দরকার হয়না খুব একটা!

    ****

    হাঁটু গেড়ে বসা, দুইহাতে ঠেকিয়ে রেখেছেন ব্যাটটা। ওপাশে উল্লাসে মত্ত গোটা ভারতীয় দল। ডাগআউটে জিওফ লসনের অবিশ্বাসের হাসি, পাশে বসা উমর গুল বুঝে উঠতে পারছেন না, অভিব্যক্তিটা কী হওয়া উচিৎ তাঁর। যে ম্যাচে অনেক আগেই ছিটকে যাওয়ার কথা পাকিস্তানের, সেই ম্যাচই জিতিয়ে দিয়েছিলেন প্রায় মিসবাহ। সেই ম্যাচই হারিয়ে দিলেন যেন নিজ হাতেই। বিশ্ব ক্রিকেটের খোলনলচে পালটে দেয়া এক ছবি। মিসবাহ যেখানে ধূসর প্রায়। জোহানেসবার্গ, ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়াম। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল, ২০০৭।

    অথচ মিসবাহর সেদিন ওই ম্যাচে খেলার কথা নয়, স্কোয়াডেই যে এসেছিলেন একটু বিচিত্রভাবে। তরুণ অধিনায়ক শোয়েব মালিকের ঠিক পছন্দ ছিল না মোহাম্মদ ইউসুফকে, ৩৩ বছরের মিসবাহ সুযোগ পেয়েছিলেন সে কারণেই। এ বয়সে তো ক্যারিয়ার সায়াহ্ন পাকিস্তানীদের, মিসবাহ সেখানে শুরু করলেন নতুন করে! এমন তো হওয়ার কথা নয়! মিসবাহর তো আসলে ক্রিকেটারই হওয়ার কথা নয়।

    পাঞ্জাবের মিয়ানওয়ালিতে জন্মেছিলেন, পেশাদার ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন সেখানে দেখতেন না কেউ। টেপ-টেনিস ক্রিকেটে চষে বেড়াচ্ছেন সবাই, তবে খেলছেন খেলার জন্যই, প্যাশনের জন্যই। সেই রুক্ষ ভূমি থেকে জাতীয় দলের কোনো ক্রিকেটার তো দূরের কথা, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারই তো আসে কালেভদ্রে! তবে রক্তে ছিল খেলা। মা ছিলেন তারকা অ্যাথলেট, বাবা ফিল্ড হকি খেলোয়াড়। সেই বাবা উৎসাহ দেবেন কী, শুরুতেই বলে রেখেছিলেন, ‘আমার সব ক্লাসমেটই প্রায় ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার। আর আমি স্কুলটিচার, শুধুমাত্র খেলে বেড়াতাম বলেই!’ মেয়েদের শিক্ষা পাকিস্তানের সে অঞ্চলেও তেমন ‘প্রচলিত’ নয়, তবে প্রাইমারী স্কুলের প্রিন্সিমাল মা চাইতেন, পড়ালেখা করুক ছেলেমেয়ে সবাই। মিসবাহর দুই বোন, একজন পদার্থবিদ্যায় স্নাতকত্তোর, আরেকজন ডাক্তার। মিসবাহ তাঁদের তুলনায় ছিলেন কিছুটা ‘অকর্মণ্য’ই!

     

    এত কাছে তবু এতদূর...

     

    ****

    মিসবাহ হতে পারতেন ফুটবলার। হতে পারতেন হকি খেলোয়াড়। তবে তাঁর বেড়ে ওঠাটা ছিল ক্রিকেটের সঙ্গে। কৈশোরবেলায় তিনি দেখেছেন পাকিস্তান ক্রিকেটের সব রোমাঞ্চ। ১১ বছর বয়সে দেখলেন জাভেদ মিঁয়াদাদের সেই ছয়, ১৭ বছর বয়সে পাকিস্তান হলো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। দাদা কিংবা নিজেদের বাসার বারান্দাটা তাই মিসবাহর কাছে হয়ে উঠলো ক্রিকেটের বিশ্বমঞ্চ। কল্পনায় প্রতিপক্ষ হয়ে এলো আন্তর্জাতিক বোলাররা। সেই বারান্দাগুলোতেই মিসবাহর ক্রিকেটের হাতে খড়ি, সেই বারান্দাগুলোর কোনো একটিতেই ক্রিকেট-স্বপ্নের মৃত্যুটাও ঘটে গিয়েছিল প্রায়! বাবার মৃত্যু মিসবাহকে স্বভাবতই নাড়া দিয়ে গেল। কিন্তু মা হাল ধরলেন, মিসবাহর স্বপ্নকে লালন করে যাওয়ার অনুপ্রেরণাও দিতে লাগলেন তখন থেকেই।

    টেপ টেনিস ক্রিকেটের তারকা ছিলেন রীতিমতো। খেলতে যেতেন সেই সুদূরে, ফিরতে ফিরতে কখনও নাকি রাত ভোর হয়েও যেতো। ট্রেনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমানোর কায়দাও নাকি তখন রপ্ত করেছিলেন। কিন্তু কখনও চলন্ত ট্রেন থেকে ছিটকে যাননি কেন, সেটা ভেবেই বিস্ময় লাগে তাঁর।

    যখন এমবিএ করছেন, তখন পর্যন্ত খেলে গেছেন টেপ টেনিসের ক্রিকেট। সাধারণত এমন হয়, টেপ টেনিস তৈরী করে ফাস্ট বোলার, আর এমন ব্যাটসম্যান, যাঁরা মারতে পারেন প্রচন্ড। মিসবাহ একটু ব্যতিক্রমই ছিলেন। তিনি সেখানেও খেলতেন সোজা ব্যাটে! সবাই খেলা দেখে বলতো, একদিন তিনি পাকিস্তানের হয়ে খেলবেন। মিসবাহ হেসেই উড়িয়ে দিতেন, ‘টেপ বলের ক্রিকেট দিয়ে কেউ জাতীয় দলে সুযোগ পায় নাকি!’ নয়টা-পাঁচটার চাকুরীকেই ভবিতব্য মেনেছিলেন মিসবাহ। একটা টেক্সটাইল মিলে চাকরীর সুযোগ পেয়েছিলেন, ছয়মাসের চুক্তিও হয়েছিল। তবে ততোদিনে দ্বিতীয় গ্রেডের ক্রিকেট শুরু করেছেন, প্রথম কয়েক ম্যাচেই কয়েকটা সেঞ্চুরিও করেছিলেন। মিসবাহ একবার সুযোগ নিতে চাইলেন, ক্রিকেটেই!

    ****

    প্রথমে প্রথম গ্রেডের ক্রিকেট, তারপর কায়েদ-এ-আজম ট্রফি। চার বছরের মাথায় ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে ধারাবাহিক রান সংগ্রাহক হয়ে গেলেন মিসবাহ। তারপর চিরায়ত এক পাকিস্তানী ক্যারিয়ার। দলে ডাক পাওয়া, বাদ পড়া, আবার ফেরা। ২০০১ সালে টেস্ট অভিষেক, দুই বছরের মাথায় বাদ। ২০০৭ সালে ৩০ মাসের জন্য ফেরা, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালের স্মৃতিটাও ওই সময়েরই। ২০০৯-১০ সালের অস্ট্রেলিয়ার বিভীষিকাময় সফরের পর আবার বাদ! ভেবেছিলেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুযোগ পাবেন সেবার। পেলেন না। ক্রিকেটটাই বাদ দিতে চেয়েছিলেন। প্রথমবারের মতো নয় অবশ্য। বাবার মৃত্যুর পর বাদ দিতে চেয়েছিলেন, এমবিএ পড়ার সময় চেয়েছিলেন, ২০০০-০১ সেশনে চেয়েছিলেন, চেয়েছিলেন ২০০৬ সালেও!

    মিসবাহ ক্রিকেটটা বাদ দিতে পারেননি এখনও। ৪২ বছর বয়সেও খেলে যাচ্ছেন। চলতি ইংল্যান্ড সফরের শেষে মিসবাহই হবেন ইতিহাসের সবচেয়ে বয়স্ক টেস্ট অধিনায়ক। অবশ্য অধিনায়ক হিসেবে সেঞ্চুরি করা সবচেয়ে বয়স্ক ক্রিকেটার হয়ে গেছেন ইতোমধ্যেই! হয়েছেন পাকিস্তানের সবচেয়ে সফল অধিনায়কও। মিসবাহ বয়সকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে যাচ্ছেন, প্রতিদিন!
     

    স্রোতের বিপরীতে চলা....
     

    ****

    টুক। বলটা লাগলো ব্যাটে। টুক। ব্যাটটা লাগলো এবার, পিচে। দুইয়ে মিলে টুকটুক। মিসবাহর ডাকনাম। মানে সমালোচকদের দেয়া নাম আর কী!

    পাঞ্জাবেই জন্ম নেয়া আরেক অধিনায়ক ছিল পাকিস্তানের। ইমরান খান। অথচ দুজনের পার্থক্য কতো! মিসবাহ ঘরোয়া ক্রিকেটেই বিশ্বাসী সবসময়। সেখানেই পারফর্ম করে আসতে হবে ক্রিকেটারদের। ইমরান বিশ্বাস করতেন তরুণের মেধায়, তা অপরীক্ষিত হলেও! মিসবাহ শান্ত, চুপচাপ থাকতে পছন্দ করেন। আক্রমণের ধাঁচটাও তো আলাদা! ঠিক আক্রমণাত্মক নয়, তবে পরিকল্পনামাফিক। লর্ডস টেস্টে ক্রিস ওকসের ওই উইকেটটার মতো।

    ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় টেন স্পোর্টস তাঁদের অনুষ্ঠানে ডেকেছিল মিসবাহকে। শুধু প্রার্থনার জন্য বিরতি নিতেন মিসবাহ, তা বাদে দেখতেন প্রতিটা বল। তবে সেই বিরতি থেকে এসেও জানতে চাইতেন বিস্তারিত, কে বল করেছে, কে কোন শট খেলেছে। এমনকি ৭ম ওভারে থাকতেও তিনি বলে দিতে পারতেন, ১৫তম ওভার কে করবে, সেটা নেদারল্যান্ডসের কোনো ম্যাচ হলেও! মিসবাহর সাথে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা মজা করতেন, মিসবাহর আসলে জুয়াড়ি হওয়া উচিৎ ছিল!

    মিসবাহর এই দূরদর্শীতার পেছনে একটা খেলার হাত আছে। ফিটনেসের পেছনে যেমন ফুটবল আর হকির অবদান, পরিকল্পনায় অবদান ‘স্নুকার’-এর। একসময় জেলা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন, খেলাটা বাদও দিয়েছিলেন এরপরই। স্নুকারে প্রত্যেকটা স্ট্রাইকের দুইটা করে ফল আসতে পারে। সতর্ক থাকা বা শান্ত থাকার পুরস্কার মেলে এখানে, যেখানে গাণিতিক সুযোগের দাম অনেক! মিসবাহর মাথায় এখনও এই খেলা চলে ক্রিকেট মাঠেও! ওহ হ্যাঁ, কিউ যখন বলে আঘাত করে, একবার টুক শব্দ হয়, বল পকেটে পড়লে হয় আরেকটা! টুকটুক!

    যে টুকটুকের অবদান স্বীকার করে চলেছে পাকিস্তান ক্রিকেট, যে টুকটুকে মজছে বিশ্ব ক্রিকেট!

     

    টুক....টুক....!

     

    ****

    ১৯৯৪ সালে ফয়সালাবাদে একটা ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলেন। প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ দেখার অভিজ্ঞতা মিসবাহর। মিসবাহ সেদিন একটা ধাক্কাই খেয়েছিলেন। ‘যারা ম্যাচটা দেখতে এসেছিলেন, কী বলবো তাঁদের কথা! কেউ ক্রিকেটে আগ্রহী ছিল না। বোতল ছোঁড়াছুঁড়িতে ব্যস্ত ছিল সবাই। আমি সেদিনই বুঝেছি, ৯০ শতাংশ মানুষই স্টেডিয়ামে আসে শুধু গালি দেয়ার জন্য। মানে, ক্রিকেটটা আসলে কে বোঝে এখানে? তারা কেউ খেলা দেখতে যায় না, মজা নিতে যায়। তবে এই মজা ইংল্যান্ডের মতো নয় আবার। তারা বেশ সচেতন। আসলে সবকিছুই আপনার প্রেক্ষাপটের ওপর নির্ভর করে। সচেতন সমাজে মজা নেয়া মানে অন্যকে নিয়ে মজা করা নয়। অনেকেই এখানে ক্রিকেট উপভোগ করে, কিন্তু অন্যরা স্রেফ মজা নেয়, অন্যকে কষ্ট দিয়ে! আসলে সবকিছুই আপনার শিক্ষার ওপরে গিয়ে ঠেকবে।’

    ‘শিক্ষা পাওয়া, বা এমন একটা পরিবেশ থেকে উঠে আসা যেখানে আপনাকে যুক্তি দিয়ে কাজ করতে হবে, তবে আপনি অবশ্যই যুক্তি খুঁজবেন। সবই তো যুক্তি। ব্যাটিং হলেও তাই। সবকিছুরই এমন আছে, যদি ‘ক’ বা ‘খ’ না হয়, তবে ‘গ’ ঘটবে। যদি আপনি এভাবে চিন্তা না করেন, তাহলে আপনি শুধু নিজের মেধার ওপর নির্ভর করছেন। বলকে বিচার করে খেলছেন না। আমি অবশ্যই একটা সমস্যাকে আলাদাভাবে দেখবো, যার শিক্ষা নেই, সে আলাদাভাবে দেখবে!’

    যে শিক্ষার কারণে মিসবাহ একসময় ক্রিকেট ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন, সেই মিসবাহই সেই শিক্ষাকে কাজে লাগাচ্ছেন, সেই ক্রিকেটেই!

     

    দুই 'বুড়ো'...

    ****

    ‘আমাকে মিসবাহর সাথে তুলনা করবেন না। আমার রেকর্ড আলাদা, আমি ক্রিকেট খেলছি অনেকদিন ধরে। আমার খেলার স্টাইল আলাদা, এমনকি আমি তার থেকে চার বছরের ছোটও!’ ইউনুস খানের কথাটা অনেকেই নিয়েছিলেন ভিন্নভাবে। ইউনুসের কথা বলার ধরণই এমন, আমের সঙ্গে যে আপেলের তুলনা চলে না, তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন সেটাই। কিন্তু রেকর্ড-টেকর্ড মিলিয়ে কথাটা ছড়াবে নানাভাবে, হলোও তাই। মিসবাহ শুনলেন। হাসলেন শুধু। তিনি তো জানেন ইউনুস কেমন! তিনি তো জানেন, তাঁর দলে ইউনুসের প্রয়োজনীয়তা কতখানি! দুজনের মিলিত বয়স প্রায় ৮০, দুজনের কাঁধেই তো পাকিস্তানের ভার! ১৪টা সেঞ্চুরি জুটি আছে তাঁদের, ইতিহাসে এর চেয়ে সফল জুটি আছে আর মাত্র পাঁচটা! লর্ডস টেস্টে পাকিস্তানের উদযাপনেও নেতৃত্ব দিলেন ইউনুস, দ্বিতীয় সারিতে দাঁড়িয়ে মিসবাহ যেন হয়ে গেলেন সাধারণ এক সৈনিক! পাকিস্তান যেবার ২০১০ সালে লর্ডসে খেলেছিল, একটা ঝড় এসেছিল। ভেসে যেতে ধরেছিল পাকিস্তানের ক্রিকেট, প্রথমবারের মতো নয় অবশ্য। তবে ধাক্কাটা ছিল বড়, হাল ধরেছিলেন মিসবাহ। সেদিনের খলনায়ক মোহাম্মদ আমিরকেও আজ পাকিস্তান দলে স্বাগত জানানো হচ্ছে, মিসবাহর হাত কি নেই এতে! যে দলে প্রায় প্রত্যেকেরই থাকে ভিন্ন ভিন্ন মত, সেই দলকেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি!

    আবেগ অনুভূতি যেখানে প্রকাশ করেন না সবসময়। বোলার উল্টো কাজ করলে একটা কাষ্ঠ হাসি দেন, কখনও নিজের মাথায় হাত দেন। উইকেটের উদযাপন করেন হাত মুষ্ঠি করে।

    টুকটুক চলে এর মাঝেই। ব্যাটিংয়ে। তারপর আসে বড় বড় সব শট। খেলা চলে ঢিমেতালে, তাঁর অধিনায়কত্ব আলোচনা সমালোচনার রসদ জোগায়। তিনি অপেক্ষা করে থাকেন। ফল পাওয়ার জন্য। তাঁর মাথায় যে হিসাব কষেছেন, তা মেলানোর।

    মিলে যায়। মিসবাহ সন্তুষ্ট হন। মিলে না। মিসবাহ পরের পরিকল্পনায় যান, অথবা অপেক্ষা করেন পরের ম্যাচের জন্য।

    যেমন অপেক্ষা করে ছিলেন এতদিন। লর্ডসে খেলার জন্য। সেঞ্চুরির জন্য। জয়ের জন্য।

    পাকিস্তানের ক্রিকেট মিসবাহকে কিভাবে মনে রাখবে, সেই দায় তাঁদের। হতে পারে সেই মিসবাহ, যিনি তাঁদেরকে একটা পোক্ত টেস্ট দল উপহার দিয়েছিলেন! হতে পারে, সেই ২০০৭ সালের একরাশ হতাশা উপহার দেয়া মিসবাহই!

    তবে বিশ্ব ক্রিকেটে মিসবাহকে স্মরণ করা হবে বোধহয় সেই ক্রিকেটার হিসেবেই, যিনি পাকিস্তান ক্রিকেটের চিরায়ত রোমাঞ্চে এনেছিলেন নতুন এক স্বাদ। অপেক্ষার, পরিকল্পনার, আর তা বাস্তবায়নের।

     

    তথ্যসূত্রঃ 
    ইএসপিএন ক্রিকইনফো
    দ্য টেলিগ্রাফ