চেনা সুযোগ, চেনা আফসোস!
গলের ব্যাটিং রাজ্যে বোলাররা কাজটা করেছিলেন নিজেদের সামর্থ্যমতোই। একটু ধীর হয়ে এসেছে গলের উইকেট, বল ঘুরতেও শুরু করেছে। তৃতীয় দিন এসে যা হওয়া খুবই স্বাভাবিক। সবকিছু মাথায় রেখেও ভালো একটা সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। শ্রীলঙ্কার কাছাকাছি অথবা তার চেয়েও বড় কোনো স্কোর গড়ার। সুযোগটা বাংলাদেশ নিতে পারেনি। নিজেদের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসার মানসিকতার দন্ড গুনে বৃষ্টিবিঘ্নিত তৃতীয় দিনশেষেও তাই বাংলাদেশের কাঁধে শ্রীলঙ্কার ১৮২ রানের লিডের বোঝা!
সুযোগ ছিল সৌম্যর। পরের টেস্টের আগেই স্কোয়াডের সঙ্গে যোগ দিবেন ইমরুল কায়েস, নিজের অবস্থানটা ধরে রাখতে একটা বড় ইনিংসের বিকল্প ছিল না তাঁর। ইনিংসের শুরুতেই লঙ্কানরা একটা জীবন উপহার দিলেন সৌম্যকে। ফিফটি করলেন, ৬৬ রানে দিন শেষ করলেন। নতুন দিন, নতুন আশা। সৌম্যর আরেকটা সুযোগ। সুরাঙ্গা লাকমালের লেগস্ট্যাম্পের ওপর নিরীহ শর্ট বল। সৌম্যর বেশ কয়েকটা সুযোগ, এ বলকে খেলার। অথচ সৌম্য নিরীহ বলটাকেই বানিয়ে ফেললেন আত্মঘাতী! দিনের ভালো একটা শুরু দরকার ছিল খুব, সৌম্য শুরুটা এনে দিতে ব্যর্থ হলেন! ভুলটা স্বীকার করে নিচ্ছেন, ‘পেস বলে আজকের দিনে ওইটা প্রথম বল ছিল। ওইভাবে খেলা উচিৎ হয়নি। না খেললে আমার জন্য ভালো হতো। দলের জন্য আরও ভালো হতো।’
দলের ভালো হয়নি। সৌম্যর পর নামা সাকিবও করতে পারেননি ভালো কিছু। লেগ-স্ট্যাম্প দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাট লাগিয়ে নিজের সর্বনাশ করেছেন। সৌম্য আউটটাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলতে চান। তাতে কি সাকিবের ‘দায়’ কমে! দায় কি কমে মাহমুদউল্লাহরও? কুমারার অ্যাঙ্গেলটাই বুঝলেন না। নড়লো না পা, ব্যাট পেলো না বলের নাগাল!
বলের নাগাল পেয়েছিলেন লিটন দাস। নিজেই জায়গা বানিয়ে খেলতে গেলেন। তবে পা যেন বদ্ধ হয়ে থাকলো। আক্রমণ করতে গিয়ে বোকা বনে গেলেন, স্লিপে দিতে হলো ক্যাচ। নিয়ন্ত্রণহীন শটে শেষ হলো লিটনের ফিরে আসার ইনিংস। মিরাজকে নিয়ে এরপর মুশফিকের মরিয়া চেষ্টা। মিরাজ সেখানে সঙ্গ দিলেন ভালোই। পেরেরাকে রক্ষণাত্মকভাবে খেলতে গিয়ে পা এলবিডাব্লিউর ফাঁদে। সৌম্যর মতে, মিরাজ বা শুভাশীষরা দলের ব্যাটিং পরিকল্পনায় ছিলেন না। কথা ছিল, শেষ করে আসবেন ‘ব্যাটসম্যান’রাই। সারাদিন ব্যাটিং করবে বাংলাদেশ, কোচের কথামতো শ্রীলঙ্কার সমান বা বেশী স্কোর হবে। হলো না। যেমন হয়নি ওয়েলিংটনে। হায়দরাবাদে।
‘ম্যাচ জেতার জন্য, সামর্থ্যের ১২০-১৫০ শতাংশ দেয়া লাগবে। ম্যাচ নিজেদের দিকে যতো তাড়াতাড়ি আনা যায়, চেষ্টা থাকবে সেটার।’
কিন্তু সৌম্যদের তো সুযোগ ছিল ৯০-১০০ শতাংশ দিয়েই ম্যাচে টিকে থাকার! সৌম্যদের দিকেই তো ঝুঁকতে ধরেছিল গল টেস্ট! শ্রীলঙ্কা নিয়ন্ত্রিত বোলিং করলো ঠিকই, তবে ‘পরিকল্পনা’ কাজে লাগানো গেলে তো সে বোলিংয়ের ওপরই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারতো বাংলাদেশের ব্যাটিং!
তা হয়নি। গল টেস্টের নিয়ন্ত্রণ এখন শ্রীলঙ্কার হাতেই। বাংলাদেশ তাই আফসোসে পুড়ছে। এমন আফসোসে পোড়াটা এবারই প্রথম নয়।
প্রশ্ন হলো, এ আফসোসের কি শেষ নেই কোনও!