এলবিডব্লুর সাতকাহন
লেগ বিফোর উইকেট (এলবিডব্লু) - ক্রিকেটে এই আউট নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। আজ যেমন তাইজুল আর শফিউলের দুইটি আউট নিয়ে কথা হচ্ছে বিস্তর। ফুটবলে যেমন অফসাইড, ক্রিকেটেও তেমন এলবিডব্লুর নিয়মটা বেশ গোলমেলে। এমনকি ডিআরএসের এই যুগে হক আই, স্নিকোর মতো প্রযুক্তি দিয়েও অনেকসময় এলবিডব্লুর সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশয় থেকে যায়। তবে ক্রিকেটে কিন্তু এলবিডব্লুর নিয়মগুলো বেশ ভালোভাবে বলে দেওয়া হয়েছে। এক নজরে সেসব দেখে ফেলা যাক ..
এলবিডব্লুর সিদ্ধান্ত দেওয়ার সময় মাথায় প্রথমেই যে ব্যাপারটা রাখতে হবে, বলটা স্টাম্পে লাগবে তো? এটাই আম্পায়ারের আঙুল তোলার প্রথম অনুষঙ্গ। তবে কথার পিঠে এরপরও কথা থাকে, আরও কিছু ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতেই হবে..
১) প্রথমেই দেখতে হবে ডেলিভারিটি বৈধ কিনা। নো বল হলে আউট হবে না ।
২) বলটি কোথায় পিচ করেছে, এরপর দেখতে হবে সেটি।
এই ছবি দেখুন, এখানে বলটা লেগ স্টাম্পের বাইরে (ডানহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য) পিচ করেছে। সেরকম হলে বল স্টাম্পে লাগলেও আউট হবে না। আর বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য হয়ে যাবে উলটো, তখন ডানহাতির লেগ স্টাম্পকে তার অফস্টাম্প বিবেচনা করতে হবে। প্রশ্ন উঠতেই পারে, লেগ স্টাম্পের বাইরে পিচ করলে আউট হবে না কেন? একটু মাথা খাটালেই উত্তরটা পেয়ে যাবেন। লেগ স্টাম্পের বাইরে পিচ করে আউট করা গেলে সব বোলারই রাউন্ড দ্য উইকেটে এসে ব্যাটসম্যানের পা লক্ষ্য করেই বল করতেন। সেক্ষেত্রে স্পিনাররা সবচেয়ে বেশি হয়তো লাভবান হতেন।
৩ ) প্যাডে লাগার আগে যদি বল কোনোভাবে ব্যাটে লাগে তাহলে কখনোই আউট হবে না । তবে প্যাডে লেগে ব্যাটে লাগলে এই নিয়ম খাটবে না।
৪) বল ব্যাটসম্যানের প্যাডে লাগার সময় "ইমপ্যাক্ট" (বল যখন প্যাডে বা বল-গ্লাভস ছাড়া শরীরের অন্য কোনো অংশে আঘাত করে, তখন প্যাডের বা শরীরের সেই অংশের অবস্থান) যদি অফস্টাম্পের বাইরে হয় তাহলে স্টাম্পে লাগলেও আম্পায়ার আউট দেবেন না।
৫) যদি ব্যাটসম্যান কোনো শট না খেলেন, তাহলে আম্পায়াররা চাইলে 'ইমপ্যাক্ট' অফ স্টাম্পের বাইরে হলেও আউট দিতে পারেন। তবে আসলে স্ট্রোক খেলেছেন কি খেলেননি, সেটি মাঠের আম্পায়ারের বিবেচনার ওপরেই নির্ভরশীল । আজ শফিউলের ক্ষেত্রে ঠিক এটাই হয়েছে। বলটা অফ স্টাম্পের বাইরে প্যাডে লেগেছিল। এখানে আম্পায়ার মনে করেছেন, শফিউল কোনো শট খেলার চেষ্টা করেননি। সেক্ষেত্রে বল স্টাম্পে লাগলেই নিয়মানুযায়ী তিনি আউট দিতে পারেন।
৬) বলের উচ্চতার দিকেও অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। বাউন্সি পিচে বল একরকম আচরণ করে আর মন্থর পিচে অন্যরকম। বল প্যাডে লাগার পর স্টাম্পের ওপরে যেত কিনা সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ...
৭) বলের টার্ন বোঝাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্পিনারদের ক্ষেত্রে বলটা কতটুকু টার্ন করল সেটা অনেক সময় হক আই দিয়ে বোঝাটাও কঠিন হয়ে পড়ে।
৮) আম্পায়ারকে বিভ্রান্ত করার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে উইকেটের একটু সামনে এগিয়ে আসা। সেক্ষেত্রে বলটা আসলেই স্টাম্পে লাগত কিনা সেটা নিয়ে দুইবার ভাবতে হবে। একই কারণে পেছনের প্যাডে ও ব্যাকফুটে লাগলে এলবিডব্লু দেওয়া যত সহজ, সামনের প্যাডে ও ফ্রন্টফুটে লাগলে ততটা নয়।
এলবিডব্লু নিয়ে অনেক রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা হচ্ছে, সামনে আরো হবে। আগের নিয়মে "আম্পায়ার'স কলে" আম্পায়ার আউট না দিলে ব্যাটসম্যানকে আউট করার জন্য বল অন্তত অফ ও লেগ স্টাম্পের মাঝামাঝি কোথাও লাগতে হতো। আর আম্পায়ার আউট দিলে বল যদি স্টাম্প বা বেলের ছোঁয়াও লাগে, তাহলেও সিদ্ধান্তটা কার্যকরী থাকবে। তবে নতুন নিয়মে রিভিউতে একটু পরিবর্তন এসেছে। এখন তিন স্টাম্পের মধ্যে লাগলেই আম্পায়ার আউট না দিলেও থার্ড আম্পায়ার সিদ্ধান্তটা পরিবর্তন করতে পারবেন। আজ তাইজুলের ক্ষেত্রে ঠিক এই ব্যাপারটাই ঘটেছে। যে কারণে মুমিনুলকে আম্পায়ার আউট না দিলেও পরে থার্ড আম্পায়ার সেই সিদ্ধান্ত নাকচ করে দিয়েছেন।
সূত্রঃ বিবিসি, এমসিসি রুলবুক।