ইংল্যান্ডের সঙ্গে স্বপ্নের সেমিফাইনালে বাংলাদেশ
সংক্ষিপ্ত স্কোর
অস্ট্রেলিয়া ২৭৭/৯, ৫০ ওভার ( হেড ৭১*, ফিঞ্চ ৬৮, স্মিথ ৫৬, উড ৪/৩৩, রশিদ ৪/৪১)
ইংল্যান্ড ২৪০/৪, ৪০.২ ওভার (স্টোকস ১০২*, মরগান ৮৭, হ্যাজলউড ২/৫০)
ফলঃ ইংল্যান্ড ডিএলএস পদ্ধতিতে ৪০ রানে জয়ী
৩৩ রানে নেই ৪ উইকেট। বাংলাদেশ সেখান থেকে বেরিয়ে আসলো কী অসাধারণ ক্ষীপ্রতায়! বাংলাদেশের কাজ করে রেখেছিল বাংলাদেশ, কিউইদের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে বিদায় করে। আজ ইংল্যান্ডের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচে তাই ছিল বাংলাদেশও! ইংল্যান্ডের প্রেক্ষিতে মোটামুটি সহজ ২৭৮ রানের লক্ষ্যে ৩৫ রানেই নেই ৩ উইকেট! যেন গতকালকের ‘দেঁজা ভুঁ’। বার্মিংহামের আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামলো তখনোই। সেই বৃষ্টি, যা সুযোগ এনে দিয়েছিল বাংলাদেশকে, সেই বৃষ্টি যা হয়তো গতকাল সাহস জুগিয়েছিল সাকিব-মাহমুদউল্লাহকে! বৃষ্টি থামলো। নামলো যেন নতুন ইংল্যান্ড! মরগান-স্টোকসে যেন ফিরে এলেন সাকিব-মাহমুদউল্লাহ! ১৫৯ রানের জুটি ইংল্যান্ডকে নিয়ে গেল নিরাপদ অবস্থানে, আজকের ম্যাচে। মরগান সেঞ্চুরি করতে পারলেন না, পারলেন স্টোকস। থাকলেন বাটলারও। আবার বৃষ্টির হানা। ডিএলএস পদ্ধতিতে তখন অনেক এগিয়ে ইংল্যান্ড। খেলা শুরু হতে পারলো না, জিতলো ইংল্যান্ড। চির-প্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়ে ইংলিশরা হয়তো উল্লাসে মাতলো ড্রেসিংরুমে। কিন্তু গোটা বাংলাদেশ যে উল্লাসে চিৎকার করে উঠলো, সেটা ধারণ করবে কে!
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। ২০১৭। বাংলাদেশের পরবর্তী চ্যালেঞ্জঃ সেমিফাইনাল।
স্টোকসের সেঞ্চুরি
ইংল্যান্ড ২৪০/৪, ৪০.২ ওভার
কাট করে চার। কাভার দিয়ে এই বাউন্ডারিতেই হয়ে গেল স্টোকসের ৩য় ওয়ানডে সেঞ্চুরি। যখন নেমেছিলেন ৩৫ রানে ৩ উইকেট ছিল না ইংল্যান্ডের। আর তার সেঞ্চুরির পরই যখন বৃষ্টি নামলো, ডিএলএস পদ্ধতিতে ইংল্যান্ড অনেক এগিয়ে! বাংলাদেশ সমর্থকরা চাইলেই স্টোকস-সংক্রান্ত অতীত ভুলে যেতে পারেন! এই সেঞ্চুরি যে পথ দেখাচ্ছে বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের প্রথম সেমিফাইনালের!
রান-আউটে ভাঙ্গলো জুটি
ইংল্যান্ড ১৯৫/৪, ৩২ ওভার
এই জুটি ভাঙ্গার যেন উপায় ছিল একটাই। হলো সেটাই, রান-আউট। স্টোকসের চিপ করা শট গেল মিড-উইকেটে, মরগান দেখছিলেন বল। স্টোকস নিতে গেলেন সিঙ্গেল, মরগান যাচ্ছেন না দেখে থেমে গেলন। কিন্তু মরগান যেন বেছে নিলেন স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ, জ্যাম্পার সরাসরি থ্রো স্ট্রাইক-প্রান্তে ভেঙ্গে দিল স্ট্যাম্প। থেমে গেল অসাধারণ এক ইনিংস, ৮১ বলে ৮৭ করে বিদায় নিলেন ইংলিশ অধিনায়ক।
রেকর্ড জুটি
১৯৮৩ সালে অ্যালান ল্যাম্ব ও ডেরেক ল্যান্ডাল ৪র্থ উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে গড়েছিলেন ১৩৯ রানের জুটি। মরগান-স্টোকসের জুটি পেছনে ফেললো তা, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ইংল্যান্ডের এখন ৪র্থ উইকেটে এটিই সর্বোচ্চ রানের জুটি, ১৫২*।
মরগান-স্টোকসের ১০০ জুটি
ইংল্যান্ড ১৪৪/৩, ২৩ ওভার
৩৫ রানে তৃতীয় উইকেট গিয়েছিল, মরগান-স্টোকসের জুটি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ইংল্যান্ডকে। দুজনের জুটি ছাড়িয়েছে ১০০।
ফিফটি মরগানেরও
ইংল্যান্ড ১২৪/৩, ১৯ ওভার
জ্যাম্পার বলে সিঙ্গেল নিয়ে ফিফটি হয়ে গেল মরগানেরও। ক্যারিয়ারের ৩৪তম এটি, অস্ট্রেলিয়ার সাথে ১১তম।
স্টোকসের ফিফটি
ইংল্যান্ড ১২১/৩, ১৮ ওভার
স্টার্ককে পুল। মিড-উইকেটের ওপর দিয়ে ছয়। স্টোকসের ক্যারিয়ারের দশম ফিফটি, এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে প্রথম। মরগানের সাথে জুটি এখন ৮৬ রানের, ইংলিশ অধিনায়ক নিজেও আছেন ফিফটির কাছে। ২০ ওভারে ডিএলএস এর প্রয়োজনী স্কোর ১১২, ৩ উইকেটে।
থেমেছে বৃষ্টি। সরানো হচ্ছে কাভার। মাঠের পাশে অস্ট্রেলিয়ানদের জটলা। ৩৫ রানের ভেতর নেই ৩ উইকেট, ইংল্যান্ডের এই জুটিকে করতে হবে দারুণ কিছু। আর অস্ট্রেলিয়ার আশা তাদের জমতে না দেয়া।
রুট গেলেন, এলো বৃষ্টি
ইংল্যান্ড ৩৫/৩, ৬ ওভার
গেলেন রুটও। সেই হ্যাজলউডেরই সিম-আপ ডেলিভারি, রুটের রক্ষণটা হলো না জুতসই। হলো এজ, ওয়েড নিলেন সহজ ক্যাচ। বৃষ্টি নেমেছিল আগেই, রুট যাওয়ার পর এলেন স্টোকস, বন্ধ হয়ে গেল খেলা। ম্যাচে ফল আনতে হলে কমপক্ষে ২০ ওভার খেলা হতে হবে।
হ্যাজলউডে বিদায় হেলসের
ইংল্যান্ড ৬/২, ১.২ ওভার
এবার হেলস! হ্যাজলউডের সিম-আপ ডেলিভারি, অফস্ট্যাম্প বরাবর, ডিফেন্ড করতে গিয়ে শুধু এজই হলো হেলসের। দুই ওপেনারই ফিরলেন ইংল্যান্ডের, দ্বিতীয় ওভারের মাঝেই। অসাধারণ শুরু অস্ট্রেলিয়ার। রুটকে সঙ্গ দিতে এসেছেন মরগান।
আরেকবার ব্যর্থ রয়
ইংল্যান্ড ৫/১, ১ ওভার
আত্মবিশ্বাসী হয়েই রিভিউ নিয়েছিলেন জ্যাসন রয়। স্টার্কের ব্যাক অব আ লেংথের বলটা সরাসরি রয়ের প্যাডে আঘাত করেছিল, আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা দিয়েছিলেন আউট। বল-ট্র্যাকিং রয়কে হতাশই করলো। প্রথম বলেই চার মারার পর আরেকবার ব্যর্থ রয়, অস্ট্রেলিয়ার আদর্শ শুরু।
অস্ট্রেলিয়া ২৭৭/৯, ৫০ ওভার ( হেড ৭১*, ফিঞ্চ ৬৮, স্মিথ ৫৬, উড ৪/৩৩, রশিদ ৪/৪১)
শেষ ২ ওভারে ১৯, অস্ট্রেলিয়া যেতে পারলো ২৭৭ পর্যন্ত। অথচ শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত, ওয়ার্নার ফিরলেও ফিঞ্চ-স্মিথের জুটি অস্ট্রেলিয়াকে দেখাচ্ছিল বড় স্কোরের স্বপ্ন। ফিঞ্চকে সঠিক সময়ে আউট করেছেন যেন স্টোকস, আর স্মিথের গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটা নিয়েছেন উড। উড নিয়েছেন ৪টা, ৩৩ রানে। ইংল্যান্ডের হয়ে তার সেরা বোলিং ফিগার। উডের মতোই ছিলেন রশিদও। অস্ট্রেলিয়ার মিডল ও লেট মিডল অর্ডার ধ্বসিয়ে দিয়েছেন তিনি, নিয়েছেন ৪১ রানে ৪টা।
শেষ ১০ ওভারে হয়েছে ৫৭ রান, ইংলিশ বোলিং বৈচিত্রের প্রমাণ মিললো আরেকবার।
রশিদের চার
অস্ট্রেলিয়া ২৫৪/৯, ৪৬.৪ ওভার
আবার রশিদ! তারই বল, তারই ক্যাচ! কামিন্স না সামনে গেলেন, না গেলেন পেছনে। ফরোয়ার্ড ডিফেন্সিভের মতো শট, উঠে গেল সেটাই। রশিদের কাছে লোপ্পা ক্যাচ। বোলিং শেষ করলেন ৪ উইকেট নিয়ে, প্রথম ম্যাচে বসে থাকা রশিদ দেখালেন তাকে দলে নেয়ার যৌক্তিকতা!
রহস্যের নাম রশিদ
অস্ট্রেলিয়া ২৪৮/৭, ৪৪.৫ ওভার
গুগলি করেই যাচ্ছিলেন রশিদ। ওয়েড বুঝলেন না কিছুই, সুইপ করবেন না ফ্লিক করবেন, ধন্দ্বে পড়ে গেলেন যেন! মাঝামাঝি কিছু একটা খেললেন, ক্যাচের অনুশীলন করলেন শুধু রশিদ নিজেই। ওয়েডের পর স্টার্ক যেন আরও এক কাঠি সরেস। তিনি পেলেন ফুলটস, বলে ঘূর্ণি ছিল একটু, সেটা সুইপ করতে তারও হয়ে গেল টপ এজ! এবার স্লিপ থেকে সরে গিয়ে অনুশীলন করলেন রুট। স্লগ ওভারে উল্টো চাপে পড়ে গেল অস্ট্রেলিয়া!
রয়ের নৈপুণ্যে ম্যাক্সওয়েলের বিদায়
অস্ট্রেলিয়া ২৪২/৫, ৪৩ ওভার
আহা, জ্যাসন রয়! ফিল্ডার নয়, যেন সার্কাসে ভারসাম্য রেখে হাঁটার অনুশীলন করলেন। ম্যাক্সওয়েলের শট ডিপ মিড-উইকেটে লাফিয়ে ধরলেন, ভার সামলে নিলেন, বাউন্ডারী সীমানার ওপাশে যাওয়ার আগে ছুড়ে দিলেন বল, আবার ঢুকলেন ভেতরে, পূর্ণ করলেন ক্যাচ! যেন কতো সহজ! উডের শর্ট বলে পুল করেছিলেন ম্যাক্সওয়েল। সফট সিগন্যাল ছিল আউট, টিভি আম্পায়ার এস রভি বেশ কয়েকবার দেখার পর রায় দিলেন আউটের পক্ষেই। এক বল আগেই কাভারে ম্যাক্সওয়েলের ক্যাচ ছেড়েছিলেন প্লাঙ্কেট, দ্বিতীয় জীবনে রান করতে পারলেন না কোনো!
উডের জালে অস্ট্রেলিয়ার ‘রাঘব-বোয়াল’!
অস্ট্রেলিয়া ১৮১/৪, ৩৩ ওভার
বিশাল, বিশাল উইকেট! মার্ক উড! স্টিভেন স্মিথ ড্রাইভ করতে গেলেন ফুললেংথের বল, টাইমিং ছুটে গেল। মিড-অনে ক্যাচ, অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় ব্যাটসম্যান আউট হলেন ৩০ গজের সীমানায়। ৭৬ বলে ৫৬ করেছেন স্মিথ।
স্মিথের ফিফটি
অস্ট্রেলিয়া ১৭৮/৩, ৩১.১ ওভার
প্লাঙ্কেটকে চার মেরেই ফিফটি হলো স্মিথের। গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসটা কতো বড় করতে পারেন, অনেক কিছু নির্ভর করছে তার ওপরই। ১৭তম ওয়ানডে ফিফটি, ইংল্যান্ডের সঙ্গে ৩য়।
রশিদের সাফল্য
অস্ট্রেলিয়া ১৬৩/৩, ২৮ ওভার
শুরুটা ভালই করেছিলেন হেনরিকস। শুরুটা ভাল হয়েছিল রশিদেরও। সাফল্য পেলেন রশিদ, ফিরতে হলো হেনরিকসও। আবার লেংথ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি ব্যাটসম্যান, ফুল-লেংথের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে এবার ক্যাচ দিয়েছেন মিড-অনে। হতাশ হেনরিকস, এপাশে হতাশ স্মিথও!
স্টোকসেই ফিরলেন ফিঞ্চ
অস্ট্রেলিয়া ১৩৬/২, ২৪ ওভার
থামলো ঝড়। ফিঞ্চের শট হয়ে গেল মিসটাইমিং, স্টোকসের ঘূর্ণি সিমের বল, ফিঞ্চ ঠিক বলের নীচে যেতে পারলেন না, কাভারে মরগান ক্যাচ নিলেন ঠিকঠাকই। গুরুত্বপূর্ণ ব্রেকথ্রু ইংল্যান্ডের।
ফিঞ্চের ফিফটি
অস্ট্রেলিয়া ৯৩/১, ১৬ ওভার
মিডউইকেটে সিঙ্গেল, ফিফটি হয়ে গেল ফিঞ্চের। ক্যারিয়ারের ১৬তম, ইংল্যান্ডের সঙ্গে তৃতীয়। স্মিথের সঙ্গে জুটিও হয়ে গেছে ৫০। অস্ট্রেলিয়া এগুচ্ছে বড় সংগ্রহের ভিত্তি গড়ার দিকেই।
উডে ব্রেকথ্রু ইংল্যান্ডের
অস্ট্রেলিয়া ৫৬/১, ১০ ওভার
‘হিট দ্য ডেক হার্ড’, এসব উইকেটে পেসারদের মূল মন্ত্র। মার্ক করলেন সেটাই, সামান্য মুভমেন্ট এরপর, ওয়ার্নারের ব্যাট ছুঁয়ে গেল বল। বাটলারের সহজ ক্যাচ। ইংল্যান্ডের প্রথম ব্রেকথ্রু।
কাল ম্যাচশেষে দুই দলকেই শুভকামনা জানিয়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। দেখে নিতে পারেন, সাকিব-মাহমুদউল্লাহর জুটিতে কিভাবে অসম্ভব সম্ভব করেছে বাংলাদেশ।
ম্যাচ ইংল্যান্ডের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার। তবে তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশও। ইংল্যান্ড এ ম্যাচে জিতলেই সেমিফাইনালে তাদের সঙ্গী হবে বাংলাদেশও। আর সেমিফাইনালে যেতে এ ম্যাচে জয়ের কোনো বিকল্প নেই অজিদের।
বার্মিংহামে আজও আছে বৃষ্টির সম্ভাবনা। ধূসর আকাশ।
টস
টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়েছেন ইংলিশ অধিনায়ক ওইন মরগান। আগের ম্যাচ থেকে পরিবর্তন আসেনি কোনো দলেই।
ইংল্যান্ড একাদশ
রয়, হেলস, রুট, মরগান, বাটলার, স্টোকস, মইন, রশিদ, প্লাঙ্কেট, উড, বল।
অস্ট্রেলিয়া একাদশ
ফিঞ্চ, ওয়ার্নার, স্মিথ, ম্যাক্সওয়েল, হেড, ওয়েড, হেনরিকস, জ্যাম্পা, স্টার্ক, হ্যাজলউড, কামিন্স।