• আইসিসি বিশ্বকাপ ২০১৫
  • " />

     

    ব্যাটিং অর্ডার- অল্প কিছু রদবদল?

    ব্যাটিং অর্ডার- অল্প কিছু রদবদল?    

    দলের সাফল্য বলেন, বিতর্ক বা শেষদিনের অপমান, সবকিছু মিলিয়েই আসলে বহুদিনের আলোচনার খোরাক যোগানো এক বিশ্বকাপ পার করলো বাংলাদেশের ক্রিকেট। অন্যান্য বিষয় বাদ দিয়ে শুধু দল ও মাঠের পারফরমেন্সের আলোচনায় এলে হয়তোবা ইতিবাচক দিকই বেরিয়ে আসবে বেশি। বিশেষ করে দলটার মানসিকতায় লক্ষ্যনীয় পরিবর্তনের ব্যাপারটা তো চোখে পড়েছে প্রত্যেকেরই। ক্রিকেট দুনিয়ার স্বনামধন্য অনেক ব্যক্তিত্বের প্রশংসা কুড়িয়েছে টাইগারদের সাহসী মানসিকতা। তবে দলের ভালো সময়ে যেমনটা অতীতেও হয়ে এসেছে এদেশের ক্রিকেটে, ছোটখাটো অসঙ্গতিগুলো চোখ এড়িয়ে যায় ‘থিঙ্ক ট্যাংক’-এর, এমন গুরুত্বপূর্ণ এক মোড়ে দাঁড়িয়ে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি নিশ্চয়ই কোনভাবেই চাইবেন না বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা।

     

     

    স্কোয়াড নির্বাচন নিয়ে কোচের অসন্তুষ্টি, চাপের মুখে ফিল্ডিংয়ে অবনতির মত ব্যাপারগুলো হয়তো দ্রুত সমাধানযোগ্য। তবে এগুলোর চেয়ে কিছুটা বড় দুশ্চিন্তার কারণ হিসেবে দেখা দেওয়া সমস্যাটার বসতি কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটে বহু বছরের। আর তা হল ব্যাটিং-অর্ডার। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, ওয়ানডে অভিষেকের ২৮ বছর পর ৩০০ ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ফেললেও পুরোপুরি থিতু একটা ব্যাটিং অর্ডারের দেখা এখন পর্যন্ত পায়নি বাংলাদেশের ক্রিকেট।

     

    গেল বছরের আগস্টের কথা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ‘অ্যাওয়ে সিরিজ’ চলছিল তখন। বিশ্বকাপ ভাবনা মাথায় রেখে দলের ব্যাটিং অর্ডারে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছিলেন কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। সেই সময়ে আনা পরিবর্তনগুলো কাজে লাগেনি বললে নিঃসন্দেহে অবিচার করা হবে এই মানুষটার উপর। মাহমুদুল্লাহকে চার নম্বর জায়গাটায় আনা হয় ঐ সময়েই, ফলাফল তো দেখাই যাচ্ছে। তবে এরপরও বেশ কিছু সমস্যা রয়ে গেছে টাইগারদের ব্যাটিং অর্ডারে।

     

    উদ্বোধনী জুটি নিয়ে পুরনো সমস্যা রয়েই গেছে। তামিমের সঙ্গী হিসেবে এখন পর্যন্ত পুরোপুরি থিতু হতে পারেননি কেউই। এমনকি তামিমের জায়গা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। যদিও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তামিমের জায়গা নেওয়ার মতো যোগ্য ব্যাটসম্যান আদৌ আছেন কিনা, এটাই একটা বড় প্রশ্ন। তিন ‘ওপেনার’ নিয়ে খেলার মাধ্যমে ‘মিডল অর্ডার’-কে সুরক্ষা প্রদানের কৌশলটাও ঠিক প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। এরপর আছে দলের সেরা দুই ব্যাটসম্যানের পাঁচ ও ছয় নম্বরে নামার ব্যাপারটা।

     

    অল্প কিছুদিনের মধ্যেই পূর্নাঙ্গ সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসছে পাকিস্তান ক্রিকেট দল। ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে সমস্যাগুলো সমাধানের জন্যে খুব বেশি সময় পাচ্ছে না টাইগারদের ‘কোচিং প্যানেল’। এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই সম্ভাব্য সেরা ব্যাটিং লাইন-আপ নিশ্চিত করতে হবে তাদের।

     

    ওয়ানডে দলে ইমরুলের ফর্ম বহুদিন ধরেই ভালো যাচ্ছে না, প্রাক্তন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান শামসুর রহমান ও জুনায়েদ সিদ্দিকিকে এখন ঘরোয়া লীগেও ইনিংস ‘ওপেন’ করতে দেখা যায় না। অপারেশনের পর এনামুলেরও মাঠে নামতে অপেক্ষা করতে হবে আরও বেশ কিছু দিন। তামিমের সঙ্গী হিসেবে সুযোগ দেওয়া যেতে পারে হয়তো জাতীয় লীগে দুরন্ত ফর্মে থাকা (পাঁচটি সেঞ্চুরি) লিটন দাসকে।

     

    অথবা একটু ঝুঁকি নিয়ে সৌম্যকে দিয়ে ‘ওপেন’ করানোর চিন্তাটাও করে দেখতে পারেন কোচ। সেক্ষেত্রে তিন নম্বর জায়গাটায় খেলবেন দলের সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। ‘চার’-এ মাহমুদুল্লাহ ও ‘পাঁচ’-এ সাকিব থাকবেন যথারীতিই। এতে করে ছয় নম্বরে নামতে পারবেন নাসির হোসেন, যিনি সম্প্রতি নিজেকে ফিরে পাবার ব্যাপারটা কিছুটা হলেও প্রমাণ করেছেন। সাব্বির রহমান সাত নম্বরে নিজের জায়গাতেই থাকবেন।

     

    হাথুরুসিংহে নিঃসন্দেহে আরও গভীরভাবে চিন্তা করেছেন ব্যাটিং লাইন-আপ নিয়ে। টুকটাক সমস্যা যে আছে, স্বীকারও করেছেন। এখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কিভাবে তিনি সাজান ব্যাটিং-অর্ডার, আদৌ কোন পরিবর্তন আনেন কিনা, সেটাই দেখার বিষয়।

     

    ছবি-সৌজন্যঃ গেটি ইমেজেস