• প্লেয়ার রেটিং
  • " />

     

    প্লেয়ার রেটিং: ব্রাজিল-বেলজিয়াম

    প্লেয়ার রেটিং: ব্রাজিল-বেলজিয়াম    

    ব্রাজিল

     

    অ্যালিসন ৬/১০

    গোল দুটির কোনোটিতেই কিছুই করার ছিল না তার। তবে নিজের স্বভাবসুলভ খেলাটা দিতে পারেননি আজ। ক্রসগুলো ধরতে ভুল করেছেন বেশ কয়েকবার। লম্বা পাসগুলোও ঠিকঠাক ছাড়তে পারেননি।

    মিরান্ডা ৫.৫/১০

    লুকাকু রীতিমত নাকানিচুবানি খাইয়েছেন তাকে। প্রতি-আক্রমণে হ্যাজার্ড-ডি ব্রুইনদের বিপক্ষেও বেশ বেগ পেতে হয়েছে তাকে। অন্যপ্রান্তে কর্ণারগুলো থেকে অবশ্য হেডে পরাস্ত করেছেন কম্পানিদের। কিন্তু গোলটা আর পাওয়া হয়নি।

    থিয়াগো সিলভা ৬.৫/১০

    আবারও পেছন থেকে ব্রাজিলের রক্ষণভাগকে নেতৃত্ব দিয়েছেন দারুণভাবে। মিরান্ডা-ফ্যাগনাররা লুকাকুদের সাথে পেরে না উঠলেও রক্ষণে সিলভা ছিলেন নির্ভুল। তবে আক্রমণভাগে ম্যাচের ২ মিনিটে গোলের একেবারে সামনে থেকে গোলের সহজ সুযোগটা মিস না করলে অন্যরকমও হতে পারত আজকের ফলাফল।   

    ফ্যাগনার ৪/১০

    ম্যাচের আগে থেকেই হ্যাজার্ডের বিপক্ষে কেমন করবেন তা নিয়ে চলছিল জল্পনা-কল্পনা। ইউরোপের অন্যতম সেরা উইঙ্গারের সামনে তাসের ঘরের মতই ভেঙ্গে পড়েছেন বারবার। আক্রমণেও কিছু করতে পারেননি। লক্ষ্যভ্রষ্ট ক্রসের পসরাই সাজিয়ে বসেছিলেন। আবারও নিজেকে প্রমাণ করতে ব্যর্থ।

    মার্সেলো ৭/১০

    ফিরেই নিজের সেরাটা দিলেন আজ। ব্রাজিলের বাঁ-প্রান্ত দিয়ে বেলজিয়ান রক্ষণে ত্রাস ছড়িয়েছেন অনেকবার। ক্রসগুলোও ছিল মাপা, কিন্তু হেসুস-নেইমাররা কাজে লাগাতে পারেননি। বেলজিয়ামের প্রতি-আক্রমণে ব্রাজিলের সেরা ডিফেন্ডার তিনিই।

    ফার্নান্দিনহো ৪.৫/১০

    কাসেমিরোর অভাবটা একেবারেই পূরণ করতে পারেননি। উলটো শুরুতেই আত্মঘাতী গোল করে দলকে চাপে ফেলে দিয়েছিলেন। মাঝমাঠে ডি ব্রুইন তো দূরে থাক, উইটসেল-ফেলাইনির সামনেও কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি। খুব সম্ভবত ব্রাজিলের হয়ে সবচেয়ে খারাপ খেলেছেন আজ।

    পাউলিনহো ৫/১০

    শুরুর দিকে আলো ছড়িয়েছিলেন, কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে, ততটাই নিষ্প্রভ হয়ে গেছেন। শুরুতে আর দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি সময় গোলের দুটি দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন দু’বারই। ‘ডেস্ট্রয়ার’ রোলটাও ঠিকঠাক পালন করতে পারলেন না।

    কৌতিনহো ৬/১০

    মাঝমাঠ থেকে নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে গেছেন। কিন্তু ‘ট্রেডমার্ক’ শটগুলো করার জায়গা তাকে দেয়নি বেলজিয়াম। এজন্য নিজের সামর্থ্যের বিচারে আজ কিছুটা নীরবই ছিলেন। তবে আগুস্তোর গোলের পাসটা ছিল দুর্দান্ত। নেইমারের সাথে বোঝাপড়ায় ডিবক্সে ঢুকেছিলেন, কিন্তু কম্পানিদের ইস্পাতদৃঢ় রক্ষণের বিপক্ষে জ্বলে উঠতে পারেননি তেমন। শেষদিকে নেইমারের পাস থেকে গোলের দারুণ এক সুযোগ হাতছাড়া করেছেন।

    উইলিয়ান ৫/১০

    ‘প্রেশার কুকার সিচুয়েশন’-এ আবারও নিজেকে প্রমাণ করতে ব্যর্থ। ডানপ্রান্ত থেকে অগণিত উদ্দেশ্য ক্রসে বল হারিয়েছেন, আবার বেলজিয়ান রক্ষণভাগকেও তেমন পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি। তাকে দমিয়ে রাখতে তেমন কোনো বেগই পেতে হয়নি চাডলিকে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই তাকে তুলে নিয়েছিলেন তিতে।

    নেইমার ৫.৫/১০

    দলের প্রয়োজনে আবারও জ্বলে উঠতে ব্যর্থ। ‘ডাইভ’ দেওয়ার অপরাধে হলুদ কার্ড দেখেননি, এটাই তার সৌভাগ্য। খেলার চেয়ে সেই পুরনো ফাউল আদায়ের দিকেই ঝোঁকটা বেশি ছিল তার। শেষদিকে অবশ্য সমতাসূচক গোলটা আসতে পারত তার পা থেকেই। কিন্তু কর্তোয়ার দুর্দান্ত সেভে খালি হাতেই ফিরতে হল তাকে।

    গ্যাব্রিয়েল হেসুস ৩/১০

    ফিরমিনোর বদলে আজ আবারও নেমেছিলেন মূল একাদশে। আবারও হয়েছেন ব্যর্থ। কম্পানি, অ্যাল্ডারউইরেল্ডের প্রেসিংয়ে দাঁড়াতেই পারেননি আজ। প্রথমার্ধে দুইটি দারুণ সুযোগ হাতছাড়া করেছেন। ৬৩ মিনিটে ভার্টনহেনকে নাটমেগ করে অবশ্য একটি পেনাল্টি প্রাপ্যই ছিল তার। রেফারি সাড়া দিলেন না, ব্রাজিলের সংকটময় মুহূর্তে সাড়া দিতে আবারও ব্যর্থ হলেন হেসুসও। 

     

    বদলি  

    রবার্তো ফিরমিনো ৭.৫/১০

    আজ যেন আবারও প্রমাণ করলেন, কেন হেসুসের চেয়ে মূল একাদশে নামার সুযোগটা তার বেশি প্রাপ্য। নামার পর থেকেই নেইমার-কৌতিনহোদের সাথে বোঝাপড়া, প্রেসিং দিয়ে বেলজিয়ান রক্ষণভাগকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। ৬৮ মিনিটে তার জোরাল শটটা একটুর জন্য বাইরে দিয়ে না গেলে ফলাফলটা অন্যরকমও হতে পারত। নিজে গোল পাননি, কিন্তু ম্যাচে ব্রাজিলের সেরা খেলোয়াড়দের মধ্যে অন্যতম তিনিই।

    ডগলাস কস্তা ৮/১০

    ফিরমিনোর মতই নিজের সামর্থ্যের জানানটা দিলেন আবারও। ডানপ্রান্তে ভার্টনহেনকে নাচিয়েছেন রীতিমত। ক্রসগুলোও ছিল দারুণ, আবার নিচে নেমে সাহায্য করেছেন রক্ষণেও। তার নামার পর থেকেই ব্রাজিলের আক্রমণভাগে যেন নতুন প্রাণেরই সঞ্চার হয়েছিল। গতি আর ড্রিবলিং জাদুতে গোলের কাছাকাছি গিয়েছেন বার দুয়েক, কিন্তু শেষমেশ ফিরতে হল হতাশ হয়েই।

    রেনাটো আগুস্তো ৭.৫/১০

    বদলি হিসেবে নেমেই গোল করে দলকে ম্যাচে ফিরিয়েছিলেন। পাউলিনহোর বদলে নেমে মাঝমাঠে হ্যাজার্ড-ডি ব্রুইনদের আটকেছেন দারুণভাবে। কৌতিনহোর পাস থেকে দলকে সমতায় ফেরার দারুণ এক সুযোগ হাতছাড়া করেছিলেন। তবে নামার পর থেকে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে গেছেন হার না মানা যোদ্ধার মতই।

     

     

     

    বেলজিয়াম

     

    থিবো কোর্তোয়া ৯/১০

    অসাধারণ। দুর্দান্ত। অপ্রতিরোধ্য। শেষদিকে নেইমারের শটটা অবিশ্বাস্যভাবে না ফেরালে অতিরিক্ত সময়ে গড়াত খেলা। শুধু ঐ এক সেভ নয়; মার্সেলো, কৌতিনহো, পাউলিনহোদের চারটি দূরপাল্লার শট ফিরিয়েছেন দক্ষহাতে। ক্রসনির্ভর ব্রাজিলের ক্রসগুলো লাইন থেকে এসে নিয়ন্ত্রণে এনেছেন নির্ভুলভাবে। বিশ্বকাপের সেরা গোলরক্ষকের পুরষ্কারটার জন্য এক জোর দাবিই জানিয়ে রাখলেন।

    টবি অ্যাল্ডারউইরেল্ড ৭.৫/১০

    আক্রমণভাগের সতীর্থদের বীরত্বে কিছুটা নিরবেই কাজটা করে গেছেন। আবারও ছিলেন নির্ভুল এবং অসাধারণ। হেসুস-নেইমারকে আটকানোর দায়িত্বে কম্পানিকে দিয়েছেন যোগ্য সঙ্গ। হেডে ক্লিয়ারেন্সগুলো ছিল নির্ভুল। ম্যাচে ‘এরিয়েল ডুয়েল’ জিতেছেন সবগুলো।

    ভিনসেন্ট কোম্পানি ৮/১০

    আর্মব্যান্ড ছাড়াও অধিনায়ক হওয়া যায়- আবারও প্রমাণ করলেন কথাটি। রক্ষণে পুরো দলকে বেঁধেছিলেন এক সূতোয়। আর সেই ইস্পাতদৃঢ় বন্ধনের সামনে বারবার খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে নেইমারদের। তবে ভাগ্যও কিছুটা সুপ্রসন্ন ছিল বলতেই হয়। নাহলে হেসুসকে করা ফাউলে পেনাল্টি পেতে পারত ব্রাজিল। দু’প্রান্তেই কর্ণার থেকে হেডে বল পেয়েছেন বেশিরভাগ সময়। ইনজুরি থেকে ফিরলেও সেই পুরনো ধারটা হারাননি এখনও।

    ইয়ান ভেট্রোনহেন ৭.৫/১০

    বাকি দুই সতীর্থের তুলনায় কিছুটা নিষ্প্রভ ছিলেন। তবে বেলজিয়ান রক্ষণের বাঁ-প্রান্তটা প্রায় একাই সামলেছেন। ফাউল করেছেন কয়েকবার, তবে কার্ড দেখেননি। লম্বা পাসগুলো ছিল অসাধারণ। চকিত কিছু পাসে প্রতি আক্রমণে পাস জুগিয়েছেন বেশ কয়েকবার।

    থমাস মুনিয়ের ৭/১০

    নেইমারের বিপক্ষে কিছুটা নড়বড়ে মনে হয়েছে। তবে ওভারল্যাপ করে উইঙ্গার হিসেবে লুকাকুদের সাহায্য করেছেন যথেষ্ট। নেইমারকে ডিবক্সে দু’বার ফেলে দিয়েছিলেন, কপাল খারাপ হলে হয়ত ব্রাজিলকে পেনাল্টিও উপহার দিতে পারতেন। ট্যাকলিং ছিল দুর্দান্ত।

    কেভিন ডি ব্রুইন ৯/১০

    হ্যাজার্ডের সাথে ব্রাজিলের রক্ষণভাগকে তটস্থ রাখার কাজটা করেছেন অসামান্য দক্ষতায়। প্রত্যেক প্রতি আক্রমণেই গতি আর ভিশন দিয়ে গোলের সুযোগ তৈরিতে সাহায্য করেছেন। আর প্রথমার্ধেই আগুনে এক শটে ব্যবধান করেছেন দ্বিগুণ। এছাড়াও নিচে নেমে ফেলাইনিদেরও সাহায্য করেছেন। তার সাথে পেরে উঠেনি ব্রাজিলের কেউই। পুরোটা ম্যাচই ছড়ি ঘুরিয়েছেন।

    অ্যাক্সেল উইটসেল ৭/১০

    ট্যাকলগুলো কাজে দেয়নি ঠিকঠাক। মাঝামাঠে বল হারিয়েছেন বেশ কয়েকবার। তবে প্রেসিং দিয়ে শাপমোচন করেছেন অনেকটাই। লম্বা পাসে বল হারিয়েছেন মোট ৮বার। শেষদিকে বল ধরে রাখার চেয়ে আক্রমণ গড়তেই ঝোঁকটা বেশি ছিল তার। যার কারণে শেষদিকে বেলজিয়ামের পা থেকে বল কেড়ে নিতে তেমন অসুবিধা হয়নি ব্রাজিলের।

    নাসের চাডলি ৭/১০

    লেফট ফুলব্যাক রোলে কখনও খেলেছেন কিনা সন্দেহ। তবে উইঙ্গার হওয়ায় বারবার রক্ষণ ফাঁকা রেখে উপরে উঠে যাচ্ছিলেন। কস্তা-উইলিয়ানরাও সে সুবাদে আক্রমণ গড়ছিলেন ডানপ্রান্ত দিয়েই। তবে আক্রমণভাগে ছিলেন দারুণ। গতির কারণে হ্যাজার্ডদের সাথে প্রতি আক্রমণেও দেখা গেছে অনেকবার। আত্মঘাতী গোলের আগে পাওয়া কর্ণারটাও এসেছিল তার পাস থেকেই।

    মারুয়ান ফেলাইনি ৭.৫/১০

    মূল একাদশে তার নাম দেখে নাক সিঁটকেছিলেন অনেকেই। কিন্তু ফেলাইনি আজ প্রমাণ করলেন, কেন বেলজিয়ামের অন্যতম সেরা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার তিনি। শক্তিমত্তায় তার সাথে পেরে উঠেননি পাউলিনহোরা। আবার মাঝমাঠ থেকে হ্যাজার্ডদেরও পাস বাড়িয়েছিলেন কয়েকবার। কর্ণার থেকে প্রথম হেডে বল পেয়েছেন অধিকাংশ সময়।

    এডেন হ্যাজার্ড ৯.৫/১০

    ডি ব্রুইনের সাথে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হওয়ার জোর প্রতিদ্বন্দ্বীতা তার। পুরোটা ম্যাচ ফ্যাগনারকে নাচিয়েছেন, বল নিয়ে ভেতরে ঢুকে বোকা বানিয়েছেন ফার্নান্দিনহোদেরও। তাকে ফাউল করেই হলুদ কার্ড দেখেছেন ব্রাজিলের তরুণ রাইটব্যাক। শেষদিকে বল পায়ে রেখে সময় নষ্ট করার ‘ডার্ক আর্টস’-এও পাবেন লেটার মার্কস। খুব সম্ভবত বেলজিয়ামের সোনালী প্রজন্মের সবচেয়ে বড় ম্যাচে জ্বলে উঠলেন সবচেয়ে উজ্বল তারা-ই।

    রোমেলু লুকাকু ৮/১০

    ‘বিগ ম্যাচে পারফর্ম করতে পারেন না’- এই দুয়োর বিপক্ষে কড়া এক জবাবই দিলেন তিনি। প্রতি আক্রমণে ঠিক কতটা দুর্দান্ত ছিলেন, তা আসলেই বলার অপেক্ষা রাখে না। লম্বা পাসগুলো দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণে এনে বল ধরে রাখার কাজটাও করেছেন দারুণভাবে। হ্যাজার্ড, ডি ব্রুইনদের সাথে সেরা খেলোয়াড়ের বিচারে থাকবেন লুকাকু নিজেও।

     

    বদলি

    ইয়ুরি তিয়েলেম্যানস  

    ৮৭ মিনিটে নেমেছিলেন। খেলায় তেমন প্রভাব ফেলতে পারেননি।

    থমাস ভার্মাইলেন ৬/১০

    শেষ ৭ মিনিটে তেমন কিছুই করতে হয়নি। মার্সেলোর ক্রসে ফিরমিনোকে হেড করা থেকে বঞ্চিত করেছেন দু;বার। তবে অন্তিম মুহূর্তে নেইমারের শটে তাকে প্রেস করেননি ঠিকমত।