• অন্যান্য

অ্যারোগেন্স ইজ দ্যা নিউ সেক্সি

পোস্টটি ২৬৯৬ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

Aldooooooooo

 

২৩ মে, ২০১৫। রাত এগারটা কি সাড়ে এগারটা। লাস ভেগাসের গ্র্যান্ড গার্ডেন অ্যারেনা থেকে খানিক দূরেই যাত্রী নামিয়ে ট্যাক্সি নিয়ে বসেছিলেন টনি ম্যাকগ্রেগর। এমন সময় সেই গ্র্যান্ড গার্ডেন থেকে বেরিয়ে আসা তিন তরুণ উঠে পড়লেন তার ট্যাক্সিতে। ট্যাক্সি চালানোর একসময় শুনতে পেলেন যাত্রীরা আজকের ইউএফসি ১৮৭ নিয়ে কথা বলছে। নির্ধারিত জায়গায় নামিয়ে দিয়ে তাদের জিজ্ঞেস করলেন টনি, ‘আপনারা ইউএফসি দেখেন? কনোর ম্যাকগ্রেগর নামটা মনে রাখবেন। আমার ছেলে। ওর বাম মুষ্টির দামই মিলিয়ন ডলার’। শুনে তিনজনই চাপা হাসিতে মেতে উঠলো। ভাবলো, রাতের বেলা তাদের সাথে মশকরা করছে এই ট্যাক্সিচালক। যদি তারা জানতো আর সাত মাস পর ইউএফসি ১৯৪-এ কি ঘটতে যাচ্ছে...

 

১৯৮৮ সালে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন শহরের দক্ষিণ প্রান্তের মোটামুটি গ্রাম্য এলাকা ক্রামলিনে জন্মগ্রহণ করেন কনোর ম্যাকগ্রেগর। মাত্র ১২ বছর বয়সেই ক্রামলিন বক্সিং ক্লাবে ডিন ব্র্যায়ান ও জেমি কাভানাহ-এর অধীনে বক্সিং শেখা শুরু করেন তিনি। ২০০৭ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে মিক্সড মার্শাল আর্টসে অভিষেক হলেও সেটি অ্যামাচার লেভেলের ছিল। ২০০৮ সালেই মূলত প্রফেশনাল লেভেলে অভিষেক হয় তার। এভাবে দু’বছর চলার পর ২০১১ তে টানা ১৪ ম্যাচ জেতার রেকর্ড গড়েন তিনি, এর মধ্যে একটি ম্যাচ জিতেছিলেন মাত্র চার সেকেন্ডে!

 

কনোর ম্যাকগ্রেগর শক্তির চেয়ে কৌশলে বিশ্বাসী একজন মুষ্টিযোদ্ধা। অক্টাগনে নেমেই হাতপা ছোড়াছোড়ি না করে কৌশলে সময় নিয়ে জায়গামত আঘাত বসাতে একেবারে পাকা তিনি। তার সবচেয়ে বড় শক্তি হল ‘লেফট হুক’। এটই দিয়েই তার অধিকাংশ প্রতিপক্ষকে হার মানিয়েছেন তিনি।


সৌভাগ্যবশত, ২০১৩ এর ফেব্রুয়ারিতে ডাবলিনের ট্রিনিটি কলেজের এক অনুষ্ঠানে ডাবলিন যান ইউএফসি প্রেসিডেন্ট ডানা ওয়াইট। সেখানে কনোর সম্পর্কে জেনে কৌতূহলী ডানা কনোরের সাথে দেখা করেন এবং তাকে ইউএফসি চুক্তি অফার করেন। মার্কাস ব্রিমেজের বিপক্ষে এপ্রিল মাসে ইউএফসিতে অভিষিক্ত হন তিনি। মাত্র ৬৭ সেকেন্ডে ম্যাচটি জিতে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে।ম্যাচের পর ম্যাচ জিততে থাকা ম্যাকগ্রেগর ইউএফসি ফাইট নাইট ৫৯-এ মুখোমুখি হন ডেনিস সিল্ভারের বিপক্ষে। এই ম্যাচটি জিতেই অক্টাগনের উপর দিয়ে লাফিয়ে দর্শকসারিতে থাকা ১২ বছর ধরে অপরাজিত লাইটওয়েট চ্যাম্পিয়ন হোসে আলদোর সাথে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় করেন তিনি। এখান থেকেই শুরু হয় কনোরের বিশ্ববিখ্যাত হওয়ার মহাকাব্য।

 

ইউএফসি ১৮৯ তে হোসে আলদোর সাথে ম্যাচ নির্ধারিত হলেও ইঞ্জুরির দরুণ পিছু হটতে হয় আলদোকে। তার পরবর্তীতে কনোরের প্রতিপক্ষ হন চ্যাড মেন্দেজ। ম্যাচটি হয় অন্তর্বর্তীকালীন ফেদারওয়েট টাইটেলের জন্য। বারবার হারের দ্বারপ্রান্তে গিয়েও ম্যাচ শেষ হওয়ার মাত্র তিন সেকেন্ড আগে জয় তুলে নেন রক্তাক্ত কনোর ম্যাকগ্রেগর। এর ফলে আলদো ইঞ্জুরি থেকে ফিরে আসার পর তার সাথে ফেদারওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য ম্যাচ নির্ধারিত করে ইউএফসি।

 

ইউএফসি ১৯৪ এর মেইন ইভেন্ট এই ম্যাচটিকে অনেকেই ইউএফসির ইতিহাসে সর্বকালের সবচেয়ে উত্তেজনাকর ম্যাচ বলে অভিহিত করেন। ম্যাচের বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই ‘মাইন্ড গেম’ শুরু হয়ে যায় দুইজনের মধ্যে। কনোর ম্যাকগ্রেগরকে যারা চিনে, তারা সবাইই জানে তার সাথে বাকযুদ্ধে যাওয়া আর বাঘের খাঁচায় ঢোকা প্রায় একই জিনিস কারণ কোনোটাতেই প্রতিপক্ষের জয় সম্ভব নয়। আলদোও পারেননি বাকযুদ্ধ জিততে। অবশেষে আলদো সব হিসাব নিকাশ অক্টাগনেই বরাবর করা হবে বলে সাফ জানিয়ে দেন। বার বছর ধরে অপরাজিত চ্যাম্পিয়নের এমন রক্তশীতল বাণীও কনোরকে বিচলিত করতে পারেনি।

 

অবশেষে আসলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ১২ ডিসেম্বর, ২০১৫ তে লাস ভেগাসের সেই গ্র্যান্ড গার্ডেন অ্যারেনাতে, যার বাইরেই কনোরের বাবা টনি নিজের ছেলের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, সেখানেই মাত্র তের সেকেন্ডে, জ্বী হ্যাঁ, মাত্র তের সেকেন্ডে ১২ বছর ধরে অপরাজিত চ্যাম্পিয়নকে হারিয়ে ফেদারওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপ নিজের করে নেন কনোর ম্যাকগ্রেগর আর জায়গা করে নেন ইউএফসির ইতিহাসে।

 

ফেদারওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে ফেদারওয়েট থেকে লাইটওয়েটে সুইচ করেন কনোর। ওজন বাড়ান বিশ পাউন্ড। এক ধাক্কায় ১৪৫ পাউন্ড থেকে হয়ে যান ১৬৫ পাউন্ডের এক গ্ল্যাডিয়েটর। চলতি বছর মার্চের ৫ তারিখে লাইটওয়েট চ্যাম্পিয়ন রাফায়েল দস আঞ্জোসের সাথে ম্যাচ পড়লেও ম্যাচের দুই সপ্তাহ আগে পায়ের পাতা ফ্র্যাকচার্ড হয় দস আঞ্জোসের। ফলে আবারো প্রতিপক্ষ বদল হয় ম্যাকগ্রেগরের। মাত্র ১১ দিনের নোটিশে ম্যাচটির জন্য রাজি হন দস আঞ্জোসের স্বদেশী নেট দিয়াজ।  ইউএফসি ১৯৬-এ হয় ম্যাচটি। প্রথম রাউন্ডে দিয়াজকে রক্তাক্ত করে দিলেও দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে কিছুটা ক্লান্ত মনে হতে থাকে ম্যাকগ্রেগরকে। অবশেষে তৃতীয় রাউন্ডে ম্যাকগ্রেগরকে শ্বাসরোধ করা এক সাবমিশনে হারান নেট দিয়াজ। অবশ্য এই ম্যাচের কয়দিন পরেই ইউএফসি প্রেসিডেন্ট ডানা ওয়াইট ঘোষণা দেন এই বছরের জুলাইয়ে ইউএফসি ২০০ তে পুনরায় হবে ম্যাকগ্রেগর বনাম দিয়াজ।

 

দিয়াজের কাছে হারের মূল কারণ হিসেবে অনেকেই ম্যাকগ্রেগরের অতি অহংকারী স্বভাবকে দায়ী করেন। কিন্তু ম্যাকগ্রেগর একজনই। শুধুমাত্র তার পক্ষেই মনে হয় ১২ বছরের অপরাজিত এক চ্যাম্পিয়নকে প্রথম রাউন্ডে হারিয়ে দেওয়ায়র কথা ২-৩ মাস ধরে বলে আসার পর তা করে দেখানো মানায়। এখানেই তার মাহাত্ম্য। এখানেই অন্যদের চেয়েও অনেক বেশি আলাদা তিনি। এজন্যই তিনি কনোর ম্যাকগ্রেগর। অবসরের পর কিংবদন্তীদের কাতারে পড়বেন কিনা, তা ঢের পরের হিসাব। কিন্তু মার্শাল আর্টস ও ইউএফসি সমর্থকদের মনে তিনি যে এক এবং অনন্য কনোর ম্যাকগ্রেগর হয়েই থাকবেন, তা বলাই যায়।