• ক্রিকেট

পথ ভোলা পথিকদের গল্প

পোস্টটি ২৫০০ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

অভিষেক টেস্টে শত রান ব্যাটসম্যানের স্বপ্নের চেয়ে বেশি সেখানে দ্বিশত তো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। এমন কল্পনা বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছে টিপ ফস্টার, লরেন্স রো, ব্রেন্ডন কুরুপ্পু, ম্যাথু সিনক্লেয়ার আর জ্যাক রুডলফকে। ১৩৯ বছরের টেস্ট ইতিহাসে এরা ছাড়া অভিষেকে দ্বিশতক করেন নি কেউ। কিন্তু এদের কারো ক্যারিয়ার ৫০ টেস্টের মাইলফলক ছোঁয় নি। শুরুর আর শেষের অদ্ভুত এক মিলে জড়িয়ে আছেন এরা। স্বপ্নের শুরুর পর পথ হারানো এই ৫ ব্যাটসম্যানের গল্প বলব আজ।

টিপ ফস্টার

একমাত্র খেলোয়াড় যিনি ইংল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট ও ফুটবল দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অমিত প্রতিভাবান হয়েও টেস্ট খেলছেন মাত্র ৮টি। এই স্বল্পায়ু ক্যারিয়ারেই গড়েছেন দুটি রেকর্ড যা আজ পর্যন্ত ১১৩ বছরেও অক্ষত। অভিষেক টেস্টে সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে করেন ২৮৭, যা একজন অভিষিক্তের সর্বোচ্চ স্কোর। পাশাপাশি একজন ইংরেজের অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সবচেয়ে বড় ইনিংস এটি। তবে এরপর আর কোন টেস্ট সেঞ্চুরি করতে পারেন নি ফস্টার। ডায়াবেটিসে ভুগে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে ১৯১৪ সালে মারা যান এই ডানহাতি।

লরেন্স রো

১৯৭২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিউজিল্যান্ড টেস্টে অভিষেক হল এক ডানহাতি জ্যামাইকানের। প্রথম ইনিংসে করলেন ২১৪ আর দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ১০০। দুর্দান্ত এই শুরুর পর প্রতিশ্রুতিশীল এই ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার থমকে গেল ৩০ টেস্ট আর ১১ ওয়ানডেতেই। বিরল রোগ ঘাসের প্রতি এলার্জি আর দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়াই তাঁর অকাল অবসরের কারণ। এই অল্প সময়ে তিনি করেছিলেন আরও ৫ টি সেঞ্চুরি, যার মধ্যে রয়েছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করা ৩০২ রানের একটি ইনিংস।

ব্রেন্ডন কুরুপ্পু

অভিষেকে দ্বিশতক করা তৃতীয় খেলোয়াড় ব্রেন্ডন কুরুপ্পু। শ্রীলঙ্কান এই উইকেট রক্ষক ওপেনার অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে করেন অপরাজিত ২০১ রান। ওয়ানডেতে মারকুটে ব্যাটিঙের খ্যাতি থাকলেও টেস্টে করা তাঁর একমাত্র দ্বিশতকটি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এখনও সবচেয়ে ধীরগতির ইনিংস। এই রান করতে তিনি সময় নেন ৭৭৭ মিনিট। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই ম্যাচটির পর কুরুপ্পু আর মাত্র তিনটি টেস্ট খেলার সুযোগ পান। এই সময়ে তিনি আর কোন ইনিংসে শত বা অর্ধশত রান করতে পারেন নি।

ম্যাথু সিনক্লেয়ার

নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে লরেন্স রোয়ের গড়া কীর্তি ১৯৯৯ সালে ফিরিয়ে দেন ম্যাথু সিনক্লেয়ার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে একমাত্র ইনিংসে করেন ২১৪ রান। পরের গ্রীষ্মে পাকিস্তানের বিপক্ষে করেন আরেক দ্বিশতক। অপরাজিত ২০৪ রানের ইনিংসটির পর থেকে পথ হারাতে থাকে তাঁর ক্যারিয়ার। ২০১০ সালে শেষ টেস্ট খেলার আগে দলে যাওয়া আসার মধ্যে থাকা সিনক্লেয়ার খেলেছেন মাত্র ৩৩টি টেস্ট। ৩২.০৫ গড়ে করেছেন মাত্র ১৬৩৫ রান।

জ্যাক রুডলফ

অভিষেকে দ্বিশত করা পঞ্চম ও শেষ ক্রিকেটার দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক রুডলফ। ২০০৩ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের একমাত্র ইনিংসে তিনি করেন অপরাজিত ২২২ রান। এই ইনিংস খেলার পথে বোটা ডিপেনারের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট ইতিহাসের প্রথম চারশ রানের জুটি গড়েন এই বাঁহাতি। তৃতীয় উইকেটে অপরাজিত সর্বাধিক রানের জুটির এই রেকর্ড এখনও ভাঙতে পারেন নি কেউ। টেস্টে পরে আরও ৫টি শতরান করলেও ৪৮ টেস্টে মাত্র ২৬২২ রানের ক্যারিয়ার জ্যাক রুডলফের নামের পাশে বড়ই বেমানান। ২০১৫ সালেই দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ত্যাগ করে কাউন্টিতে চলে যাওয়ায় এই পরিসংখ্যান পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক মারভান আতাপাত্তু যিনি প্রথম তিন টেস্টে করেছিলেন ১ রান, দ্বিতীয় রানটি করার জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ৬ বছর, তিনিই ক্যারিয়ার শেষ করেছেন ১৬টি শতরান দিয়ে যার ৬টি দ্বিশত। বিপরীতে এমনসব রেকর্ডময় শুরুর পরও, এদের শেষটা একেবারেই মলিন। এসব পরিণতি আমাদের একটা কথাই মনে করিয়ে দেয় সব ভালো তাঁর শেষ ভালো যার।