• ফুটবল

বদলে যাওয়ার গল্প

পোস্টটি ১৯৪১ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

3461

ধরুন, কোনো সাম্রাজ্যে একজন রাজা আছেন। জৌলুশ, ঐতিহ্যের কোনো অভাব নেই তার। এমন সময় তাকে চ্যালেঞ্জ করলো সেই সাম্রাজ্যেরই একজন, যাকে রাজার তুলনায় মোটামুটি নস্যিই বলা চলে। বলাই বাহুল্য, রাজাকে হটিয়ে সাম্রাজ্য নিজের করে নিতে রীতিমত যুদ্ধ করতে হবে তাকে। নর্থ লন্ডনের ফুটবলীয় সাম্রাজ্যের সিংহাসন দখলের কাহিনীটাও অনেকটা এরকমই। একদিকে আছে আর্সেনাল, শিরোপা এবং ইতিহাসে যাদের জুড়ি মেলা ভার। ইংল্যান্ডের অন্যতম সফল দলটির ছায়া থেকে বের হওয়া কোন দলের জন্যই সহজ হবার কথা না আর টটেনহামের মত লম্বা সময় ধরে শিরোপাখরায় ভোগা দলের জন্য তো তা আরো কঠিন। কিন্তু কোনো সাম্রাজ্যই যেমন অনন্তকাল টিকে না, ঠিক তেমনি টেকেনি আর্সেনালের সাম্রাজ্যও। উত্থান হয়েছে নর্থ লন্ডনের অপর পরাশক্তির। বদলে গিয়েছে টটেনহাম। কিন্তু এই পরিবর্তন একদিনে হয় নি। লেগেছে অনেক বছর। কিন্তু আর্সেনাল, চেলসির মত শীর্ষ দলগুলোর কাতারে আনার পেছনে চেয়ারম্যান ডেনিয়েল লেভির পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল তিনজনের; হুয়ানদে রামোস, হ্যারি রেডন্যাপ ও মরিসিও পচেত্তিনোর; নিঃসন্দেহে ‘স্পার্স’-এর ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তিন ম্যানেজার। গল্পটা তাদের নিয়েই।

 

আগে একবার স্পার্সের ম্যানেজার হওয়ার সু্যোগ ফিরিয়ে দিলেও ’০৭ সালে স্পার্স তাদের তৎকালীন ম্যানেজার মার্টিন ইয়লকে বরখাস্ত করার খবর শুনেই সেভিয়া থেকে পদত্যাগ করে স্পার্সের ম্যানেজার হন হুয়ানদে রামোস। বারবাতভ, কিন, বোয়াটেং, বেন্ট, ও’হারা, বেইলদের নিয়ে গড়ে তোলেন পজেশন ফুটবল এবং দ্রুত কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর এক দল। দীর্ঘদিন ইংল্যান্ডের গোলবার সামলানো রবিনসন এবং মাইকেল ডসন, চিম্বন্ডা, কাবুলের মত ডিফেন্ডারদের নিয়ে শক্ত এক ডিফেন্স গড়ে তোলেন তিনি। জিনাস, তারাবটদের মত পজেশন ফুটবলে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করা মিডফিল্ডারদের তিনি খেলিয়েছেন সেন্ট্রাল মিডে। তারা অ্যাটাক ও ডিফেন্সের মধ্যে যোগসাজশ রেখে ডিফেন্সের যেমন উন্নতি করেছিলেন, তেমনি ফাইনাল থার্ডে বোয়াটেং, কিন, বারবাতভদের জন্য যোগানও দিয়েছেন অনেক। 

 

মূলত ডসন, কাবুলের মধ্যকার ভাল কম্বিনেশন, জিনাস ও তারাবটের মত তরুণদের দায়িত্বশীল পারফরম্যান্স ও খেলার টেম্পো কন্ট্রোল, বেল ও লেননের মত গতিশীল উইঙ্গার, সামনে দু’জন বিধ্বংসী ফরওয়ার্ড এবং সর্বোপরি রামোসের সঠিক দিকনির্দেশনায় বেশ ভাল মতই আগাচ্ছিল।

 

৪-৪-২ এর মত অধিক ব্যবহৃত ফরমেশনের তিনি মূলত ব্যবহার করেছিলেন ‘ডায়মন্ড’ সংস্করণটি যেখানে তিনি জিনাসকে খেলাতেন ডিফেন্সের ঠিক সামনে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে। তারাবট থাকতেন কিন ও বারবাতভের ঠিক পেছনে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে। আর উইঙ্গে থাকতেন বেল ও লেনন। মজার ব্যাপার হল, বেল প্রথমে লেফট-ব্যাক ছিলেন। কিন্তু তার অ্যাটাকিং ক্ষমতা আর ডিফেন্স ফাঁকা রেখে উপরে উঠে যাওয়ার প্রবণতার কারণে তাকে উইঙ্গে খেলানোর সিদ্ধান্ত নেন রামোস। বল পজেশনে না থাকার সময় সামনে শুধু বারবাতভকে রেখে বাকি দল একত্রে ডিফেন্ড করতো। একত্রে অ্যাটাক ও ডিফেন্স করা ছিল রামোসের দর্শন। পুরো মৌসুমে মূল একাদশের কেউ কোনো মারাত্মক ইনজুরিতে না পড়ায় প্রায় অপরিবর্তীত দল নিয়েই পুরো মৌসুম খেলার সৌভাগ্য হয় তাদের যেটা আমরা এবার লেস্টার সিটির কাছ থেকে দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু তার স্পার্স দলটি মূলত নজর কাড়ে তাদের শক্তপোক্ত ডিফেন্সের জন্য।

 

লিগে ১১তম হয়ে মৌসুম শেষ করলেও রামোসের নেতৃত্বে সুন্দর এবং গোছানো ফুটবল খেলা স্পার্সের সবচেয়ে বড় সাফল্য আসে লিগ কাপে। চিরপ্রতিদ্বন্দী আর্সেনালকে সেমিফাইনালে ৬-২ অ্যাগ্রিগেটে হারিয়ে ফাইনালে চেলসির মুখোমুখি হয় স্পার্স। সেখানে পিছিয়ে পড়েও রামোসের মাস্টারমাইন্ড ট্যাকটিকসের সাহায্যে চেলসিকে হারিয়ে ১০ বছর পর কোনো শিরোপার স্বাদ পায় স্পার্স। রামোসই স্পার্সের মধ্যে শিরোপা জেতার মত খেলার আর সেধরণের মানসিকতা ধারণের বীজ বপণ করেছিলেন। স্বপ্নের মত প্রথম মৌসুম কাটালেও সব হিসাব বদলে যায় পরের মৌসুমেই। ৮ ম্যাচে মাত্র ২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানিতে থাকায় বরখাস্তই হতে হয় রামোসকে। বিগত ১ যুগে সবচেয়ে ভাল ফুটবল খেলা স্পার্সের হঠাৎ অধঃপতনের পর তাদেরকে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে বা আগের চেয়ে ভাল অবস্থানে নিয়ে যাবার দায়িত্ব পড়ে হ্যারি রেডন্যাপের কাঁধে।

 

ফুটবলে আসলে ম্যানেজারের ট্যাকটিকাল চিন্তা-ভাবনা থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হল তিনি তার প্লেয়ারদেরকে কতটা অনুপ্রেরিত করতে পারেন। ফুটবল ইতিহাসে এমন অনেক ম্যানেজার ছিলেন ও আছেন যারা নিজ দলকে অনুপ্রারিত করে অপ্রত্যাশিত কিছু অর্জন করেছেন। ০২-০৩ মৌসুমে রেডন্যাপের অনুপ্রেরণার জোরেই পোর্টসমাউথ প্রিমিয়ার লিগে প্রমোশন লাভ করে। স্পার্স জানতো, তাদের নতুন ম্যানেজার ট্যাকটিকালি বিশ্বমানের না হলেও দলকে অনুপ্রারিত করার দিক দিয়ে তার চেয়ে দক্ষ খুব কমই আছে। রেডন্যাপের আরেকটি বড় গুণ ছিল তার স্কাউটিং ক্ষমতা। নাম না শোনা এমন বেশ কিছু খেলোয়াড়কে কিনে এবং খেলিয়ে তাদেরকে জনপ্রিয় হতে সাহায্য করেছেন তিনি। এমনই একজন হলেন হালের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার লুকা মদ্রিচ। টটেনহামে এসেই ডায়নামো জাগ্রেব থেকে কিনে নেন মদ্রিচকে। বেশ কিছুদিন ধরে স্কাউট করার সময় বুঝতে পেরেছিলেন, মদ্রিচকে কেন্দ্র করে দলকে খেলালে স্পার্সের খেলায় তিনি ভিন্নমাত্রা যোগ করতে পারবেন। রেডন্যাপ এমন একজন স্ট্রাইকার চেয়েছিলেন যে সেটপিস গুলো কাজে লাগাতে পারবে আর ডিফেন্স না করলেও বল শিল্ড করে পজেশন ধরে রাখতে পারবে। এজন্য তিনি দলে ভেড়ান পাভ্লিউচেঙ্কো, ক্রাউচের মত দীর্ঘদেহী ও শক্তিশালী দুই ফরওয়ার্ডকে। তরুণ এই দলটিতে অভিজ্ঞতার ছোঁয়া আনতে রবিনসনের জায়গায় তিনি খেলিয়েছিলেন কুদিচিনি, গোমেজ, ফ্রিডেলের মত অভিজ্ঞ কীপারদের।

 

এখন কথা হল, রামোস আর রেডন্যাপের দল দুটোর মধ্যে মূল পার্থক্য বলতে গেলে এই কয়জনই। তাহলে দুই দলের খেলার ধরণ আর ফলাফলে আকাশ-পাতাল পার্থক্য কেন? উত্তর একটাই, হ্যারি রেডন্যাপ ও তার অনুপ্রেরণা। তার অনুপ্রেরণা ও উৎসাহের ফলে পুরো দলের আত্মবিশ্বাস কয়েকগুণ বেড়ে যায়, যা রামোস সহ বিগত ২৫ বছরে স্পার্সের কোনো ম্যানেজারই করতে পারেননি। স্পার্সের এই ব্যাপারটি অনেকটা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাথে মিলে। আগে আমরা খেলতে নামার আগেই হেরে যেতাম আর এখন প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া হোক আর জিম্বাবুয়ে হোক, আমরা এখন খেলার মাঠে নামি জেতার আত্মবিশ্বাস নিয়ে। স্পার্সের ক্ষেত্রেও বিষয়টা প্রায় একইরকম।

 

রেডন্যাপের অধীনে ৪-৪-২ ডায়মন্ড থেকে সরে এসে ৪-২-৩-১ ফরমেশনে খেলতে থাকে স্পার্স। মদ্রিচকে ‘নাম্বার টেন’ রোলে খেলানো ছিল রেডন্যাপের অন্যতম মাস্টারস্ট্রোক। স্পার্সের পুরো খেলাটাই কন্ট্রোল করতেন তিনি। কিং ও ডসনের দীর্ঘদিন একত্রে খেলা তাদের ডিফেন্সের জন্য একটা প্লাস পয়েন্ট ছিল। ৪-২-৩-১ ফরমেশনে ২ জন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার খেলানোর জন্য রেডন্যাপকে ডিফেন্সিভ ম্যানেজারের খেতাব দিয়েছিলেন অনেকেই যদিও ২ জন স্পার্স কখনোই বাস পার্কিং ফুটবল খেলেনি। পার্কার ও হাডেলস্টনের মত ‘বল প্লেয়ার’ দের জন্য প্রায় সব ম্যাচেই পজেশনে এগিয়ে থাকতো স্পার্স। রেডন্যাপের অধীনেই বহুদিন পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলার সৌভাগ্য হয় স্পার্সের। 

 

মূলত রেডন্যাপের অধীনেই গ্যরেথ বেল তার জাত চেনাতে শুরু করেন। রেডন্যাপের অধীনে মদ্রিচ যেমন ছিলেন সবকিছুর কেন্দ্রে, তেমনি অ্যাটাকের মূল কান্ডারি ছিলেন বেল। রেডন্যাপের স্পার্সের অন্যতম মূল আকর্ষণ ছিল পিছিয়ে পড়ে ম্যাচ জেতা। নিজ শিষ্যদের স্বাচ্ছন্দ্য অনুযায়ী খেলতে দেওয়ার ফলে তার স্পার্স রামোসের সময়কার দলটির চেয়েও ভাল ফুটবল খেলতে থাকে। দল ভাল খেললেও প্রত্যাশিত ফলাফল আসছিল না। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার পরবর্তী দুই মৌসুমে ইউসিএলে কোয়ালিফাই করতে না পারায় এবং আগে মত চমকপ্রদ ফুটবল উপহার দিতে না পারায় ২০১২ তে রেডন্যাপকে চাকরিচ্যুত করেন লেভী। এরপর ভিয়াস-বোয়াস ও শারউড আসলেও তাদের কেউই স্পার্সকে বিশেষ কিছু উপহার দিতে পারেননি। বরখাস্ত হন দু’জনেই। প্রতিনিয়ত ম্যানেজার বরখাস্ত, দলের মূল প্লেয়ারদের বিক্রি করে দেওয়ার ফলে স্পার্সের ফ্যানদের মধ্যে আবারো সেই পুরনো হতাশা ও ভয় ছড়িয়ে পড়ে। তাহলে কি আবারো নর্থ লন্ডনের ‘ছোট ক্লাব’ তকমা নিয়েই থাকতে হবে? তবে এরপর যা হতে যাচ্ছিল, তা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা থাকলে স্পার্স ফ্যানদের মধ্যে এই হতাশার ছিটেফোঁটাও থাকতো না।

 

মাত্র ৩৬ বছর বয়সেই খেলোয়াড়ি জীবনে নিজের দল এস্পানিওলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন মরিসিও পচেত্তিনো। রেলিগেশনে ঘুরপাক খেতে থাকা দলটিকে তিনি ১০ম স্থানে নিয়ে মৌসুম শেষ করেন। এরপর সাউদাম্পটনে তাদের এক মৌসুমের পয়েন্ট ও অবস্থানের রেকর্ড ভাঙার পরই লাইমলাইটে চলে আসেন তিনি। পরবর্তী মৌসুমে টটেনহামের কোচ হন পচেত্তিনো। পচেত্তিনোর ফুটবল দর্শন সহজ, বল পজেশনে থাকার সময় বুদ্ধিদীপ্ত পাসিং এবং ধৈর্যের সাথে খেলা। শুধু পজেশনের রাখার জন্য নয়, পাসগুলো শেষে যেন গোলে পরিণত হয় সেজন্য খেলা। আর বল প্রতিপক্ষের পায়ে থাকার সময় তাদেরকে চাপে রেখে ‘ক্লোজ ডাউন’ করে বল ছিনিয়ে নেওয়া। 

 

পচেত্তিনো চাইতেন তার সব প্লেয়াররা যেন ডিফেন্সে সাহায্য করে, এমনকি স্ট্রাইকাররাও। তার এই দর্শনে যে স্পার্স উদ্বুদ্ধ হয়েছে, তা তাদের পারফরম্যান্স তো বটেই, প্রতি ম্যাচে হ্যারি কেইনকে নিচে নেমে ডিফেন্স করতে দেখেই বোঝা যায়। পচেত্তিনোর অধীনে খেলতে হলে স্কিলফুল হতেই হবে এমন কথা নেই কিন্তু কঠোর পরিশ্রমী হবার কোন বিকল্প নেই। এজন্যই তার দলে এরিক দিয়েরের মত অপরিচিত খেলোয়াড় সুযোগ পায় কিন্তু আদেবায়োরের মত স্ট্রাইকার পায় না। পচেত্তিনোর স্পার্স দলটি গোলকিপার লরিস বাদে একেবারেই তরুণ এবং তাদের ফিটনেস লেভেলও অসাধারণ। পচেত্তিনোর অধীনে সাউদাম্পটনের পর স্পার্সেও অপরিচিত তরুণ প্লেয়ারদের মূল দলে সুযোগ পাওয়ার রীতিমত একটি বিপ্লবই ঘটেছে। দিয়ের, আলি, উইমার, রোজ, কেইনদের কিছুদিন আগেও হাতেগোনা কয়েকজনই চিনতো; তাদেরকে এখন পুরো বিশ্ব চিনে। 

 

রেডন্যাপের মত পচেত্তিনোরও প্রিয় ফরমেশন ৪-২-৩-১। তবে পচেত্তিনো স্কিলের চেয়ে পরিশ্রম, শক্তি ও স্ট্যামিনার দিকে জোর দিতেন বেশি। তিনি ডিফেন্স ও মিডফিল্ডে এমন প্লেয়ার চাইতেন যারা ট্যাকেল করতে পিছপা হয় না। পচেত্তিনো তার সামনের ৪ জনকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন নিজেদের স্বাচ্ছন্দ্যমত খেলতে। এজন্যই কেইন, এরিকসেন, আলি, লামেলাদের মধ্যে কম্বিনেশনটা এত ভাল। 

 

আগেই বলেছি যে, পচেত্তিনোর দলে সবাই একত্রে ডিফেন্ড করে কিন্তু সবাই একত্রে অ্যাটাক করে না। তার মানে এই না যে সেন্টার ব্যাক দু’জন ও ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার তাদের জায়গার আশেপাশেই থাকে। স্পার্সের খেলায় দেখা যায় যে যখন পুরো দল প্রতিপক্ষের হাফে আছে, তখন স্পার্সের সেন্টার ব্যাকরা একেবারে সেন্টার লাইনের আশেপাশে থাকে। এত ‘হাই-লাইন ডিফেন্স’ খেলা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও আসলে এটা ছিল পচেত্তিনোর আইডিয়া যাতে কাউন্টার অ্যাটাকের সম্মুখীন হলে তা ঠেকানো যায়। সেন্ট্রাল মিডের দুইজনের একজনের কাজ হল ডিফেন্সের দিকে খেয়াল রাখা আর আরেকজনের হল ডিফেন্স ও অ্যাটাকের মধ্যে মেলবন্ধন হিসেবে কাজ করা। স্পার্সে এখন এই কাজদুটো করে থাকেন দেম্বেলে ও আলি। আর উইঙ্গে তিনি চান গতিশীল, নিচে নেমে ডিফেন্ড করা এবং ভাল ক্রস করতে পারা প্লেয়ারদের। লামেলা ও সন ঠিক সেরকমই দু’জন যারা এখন এই রোল দুটিতে খেলছেন।

 

পচেত্তিনোর দলের সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট হল তারা এত তরুণ হলেও তাদের ম্যাচিউরিটি লেভেল অসাধারণ। পিছিয়ে পড়েও যে তারা কত ম্যাচ জিতেছে, তার ইয়ত্তা নেই। স্পার্স এখন প্রতিনিয়তই প্রিমিয়ার লিগের বড় দলগুলোকে হারিয়ে দলে দিচ্ছে, তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রিমিয়ার লিগ শিরোপার জন্য লড়ছে। পচেত্তিনোর অনুপ্রেরণা ও দর্শনে অভ্যস্ত হওয়ার ফলে টটেনহাম একেবারেই খোলনচলে বদলে গেছে। রামোস যা শুরু করেছিলেন, তা সম্পূর্ণ করার সঠিক কক্ষপথেই আছেন পচেত্তিনো। এবার অল্পের জন্য প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা হাতছাড়া হলেও, কে জানে, দীর্ঘদিন থাকলে হয়তো তার হাত ধরেই একদিন প্রিমিয়ার লিগ এমনকি চ্যাম্পিয়ন্স লিগও জিতে জেতে পারে স্পার্স।

 

ভবিষ্যতে কি হবে বলা যায় না, তবে টটেনহাম হটস্পার্স যে বদলে গেছে তা নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই।