• ফুটবল

ইউরো ফ্যান্টাসির কাটাছেঁড়া এবং কিছু করণীয়

পোস্টটি ২৮৫৪ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

 

[বিঃদ্রঃ নয়্যার, রামোস, পগবা, রোনালদোদের তো সবাইই চিনি, কিন্তু কয়জনই বেরিশা, পাজদান, ডচকাল, জুবাদের চিনি? যেহেতু ফ্যান্টাসিতে শুধু তারকাদের দিয়ে দল বানাতে যাওয়া যেমন ব্যর্থতা মাত্র, তাই এই ব্লগটিতে রাঘব বোয়ালদের চেয়ে বেশি আলোকপাত করা হয়েছে সেসব ‘ক্ষুদে’ তারকাদের, যারা আপনার ব্যালেন্স থেকে খুব কম কেটে নিয়ে আপনাকে এনে দিতে পারে পয়েন্টের বহর]

 

১০০ মিলিয়ন ইউরো, ১৫ জন খেলোয়াড়ের স্কোয়াড, অতঃপর লিগ জয়েন করা, নিজেদের মধ্যে লিগ খোলা, ম্যাচের আগে করা ট্রান্সফারে লালে লাল হয়ে যাওয়া বা পয়েন্টের লালবাতি জ্বলে যাওয়া। ফ্যান্টাসি ফুটবলের একেবারেই বেসিক অর্থ এটাই। খেলাটা যতটাই সহজ মনে হোক, আসলে তা ততটাই জটিল এবং বুদ্ধির এক খেলা। শুধু তারকা দিয়ে দল বানাতে গেলে যেমন শেষে একেবারেই অচেনা কয়েকজনকে নিতে গিয়ে দলের যেমন বারটা বেজে যাবে, ঠিক তেমনি বুঝে শুনে, খেলোয়াড়ের ফর্ম যাচাই করে তারকা ও তুলনামূলক অখ্যাতদের নিয়ে বানানো এক দল আপনাকে এনে দিতে সাফল্য। প্রতিবারের মত এবারো ইউরো-২০১৬ ফ্যান্টাসি নিয়ে ফ্যান্টাসি খেলোয়াড়দের মাঝে বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা। রোনালদো, বেইলের মত তারকা নাকি লাফেরটি, ফ্লেচারের মত তুলনামূলক অপরিচিতরা? কাদের নেবেন দলে? কারা বদলে দিতে পারবে পাশার দান? আসুন জেনে নেওয়া যাক ইউরো-২০১৬ ফ্যান্টাসির আদ্যপান্ত।

 

ফ্যান্টাসি ফুটবলের অন্যতম ভুল ধারণা হল, অ্যাটাকিং খেলোয়াড়দের নিয়ে দল সাজানোর প্রবণতা। ফ্যান্টাসিতে ডিফেন্সের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ফ্যান্টাসির দলে দু’জন গোলরক্ষক রাখা লাগে। সেক্ষেত্রে আপনি চাইলে একজন দামী ও একজন ‘বাজেট’ গোলরক্ষক রাখতে পারেন। নয়্যার, বুফন, ক্যাসিয়াস,ডি গেয়াদের পাশাপাশি দলে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন প্যান্টিলিমন(রোমানিয়া), বেরিশা(আলবেনিয়া), র‍্যান্ডলফ(রিপাবলিক অফ আয়ারল্যান্ড) যাদের প্রত্যেকের দামই মাত্র ৪.৫ মিলিয়ন ইউরো। এরচেয়ে আর আধা মিলিয়ন তথা ৫ মিলিয়নে দলে ভেড়াতে পারবেন কোয়ালিফায়ারের অন্যতম সেরা চার কীপার আকিনফেভ(রাশিয়া), সুবাসিচ(ক্রোয়েশিয়া), আলমের(অস্ট্রিয়া), প্যাট্রিসিও(পর্তুগাল), হেনেসি(ওয়েলস) কে।

 

এবার আসি ডিফেন্ডার নিয়ে। দলের ডিফেন্স, ডিফেন্সিভ মিডে যারা অপেক্ষাকৃত কমদামী খেলোয়াড় রেখে অ্যাটাকে তারকাঠাসা দল বানাতে চান, তাদের জন্য এই অংশটি বেশ কাজে দিবে বলে আশা রাখি। যাই হোক, দলে ৫ জন ডিফেন্ডার নিতে হয়। রামোস, বোয়াটেং, বনুচ্চি, কিয়েল্লিনি, আলবা, পিকে, হুয়ানফ্রান, বারজাগলি, অল্ডারওয়েরেল্ড, রিকার্ডো রড্রিগেজ, সানিয়া, কসিয়েলনিদের মত তারকা ডিফেন্ডারদের পাশাপাশি দলে রাখতে পারেন ফন্টে, সেড্রিক, রাফায়েল গুরেরো (পর্তুগাল ত্রয়ী), দেনায়ের(বেলজিয়াম), পাজদান(পোল্যান্ড), কাডলেচ(চেক প্রজাতন্ত্র), এলসিড(আলবেনিয়া), দুরিচা(স্লোভাকিয়া); এঁদের প্রত্যেকের দাম ৪.৫ মিলিয়ন ইউরো। বাজেট ডিফেন্ডারদের মধ্যে আরো আছেন জোনাস হেক্টর(জার্মানী), কাদেরাবেক(চেক প্রজাতন্ত্র), উইলিয়ামস(ওয়েলস), ইগ্নাশেভিচ(রাশিয়া), লিচস্টাইনার(সুইজারল্যান্ড), দারমিয়ান(ইতালি), পিযচেক(পোল্যান্ড), পেপে(পর্তুগাল) যাদের প্রত্যেকের দাম ৫.৫ মিলিয়ন ইউরো। ফর্ম ও মূল একাদশে  নিশ্চিত ভাবে জায়গা পাওয়া এই ডিফেন্ডারেরা ক্লিনশীটের পাশাপাশি গোল করে আপনাকে এনে দিতে পারে মূল্যবান কিছু পয়েন্ট।

 

পগবা, ডি ব্রুইন, হ্যাজার্ড, মার্শিয়াল, তুরান, পায়েট, ক্রুস, ওজিল, আলি, মৌতিনহো, সিলভা, কোকে, মদ্রিচ, রাকিটিচ। ইউরোতে খেলবেন এমন তারকা মিডফিল্ডারদের কয়েকজনের নাম বললাম মাত্র। লেখার সময়ই কল্পনা করতে পারছি, স্রেফ এই কয়জনের নাম শুনেই ফ্যান্টাসি খেলোয়াড়দের কারো কারো মনে হচ্ছে, ‘আয় হায়! কাউকেই তো নিলাম না! এখন উপায়??’ ইউরোতে এত এত তারকা মিডফিল্ডার গেলেও আপনি দলে ভেড়াতে পারবেন মাত্র পাঁচ জনকে। পাঁচজনই একদম বিশ্বমানের জনপ্রিয় মিডফিল্ডার নিতে গেলে দেখা যাবে তখন দল বানানোর শুরুতে খায়েশ করা রোনালদো, বেইল, ইব্রা, লেওয়ানডস্কি, গ্রিয়েজম্যানদের কাউকেই নিতে পারছেন না। আশাহত হওয়ার কারণ নেই। ইউরোতে এই তারকাদের আছেন অনেক ‘বার্গেন’ মিডফিল্ডারও, যাদের দলে ভিড়িয়ে আপনি যেমন তাদের থেকে পয়েন্ট পাওয়ার মত পারফরম্যান্স পাবেন, ঠিক তেমনি তাদের দাম কম হওয়ায় আপনার তারকা ফরওয়ার্ড নেওয়ার আশায়ও গুড়েবালি হবে না। একেবারেই কমে, মাত্র ৫ মিলিয়ন ইউরোতে আপনি দলে ভেড়াতে পারবেন পর্তুগীজ তারকা আন্দ্রে গোমেজ ও তুরষ্কের মেহমেত টোপালকে। ৫.৫ থেকে ৬.৫ মিলিয়নে দলে পেতে পারেন জেমাইলি, এরকিন, আলি, ব্রোজোভিচ, নাইঙ্গোলান, দারিদা, ইউনুস মালি, জুনু্যোভিচ, ওজিয়াকুপ, কুচকা, ক্রিচোউইয়াক, ভেইস, শিরোকভ, শাটভ, দুরমাজদের মত মিডফিল্ডারদের, যারা ইউরো কোয়ালিফায়ারে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ রেখে এসেছেন। আরেকটু খরুচে হলে ৭ থেকে ৯ মিলিয়নের মধ্যে পাবেন শাকা, কনোপ্লিয়াঙ্কা, চালহানগলু, পেরিসিচ, মাতুইদি, সিগার্ডসন, ডচকাল, ইনান, ক্রুস, র‍্যামসি,  মদ্রিচ, রাকিটিচ, হামসিকদের।

 

এখন আসি ফ্যান্টাসি খেলোয়াড়দের সর্ববহুল প্রতীক্ষিত ফরওয়ার্ড নির্বাচন নিয়ে। স্বাভাবিকভাবেই রোনালদো, ইব্রাহিমোভিচ, মুলার, গ্রিয়েজম্যান, বেইল, লেওয়ানডস্কিদের প্রতি আকর্ষণটা বেশি থাকবে। কিন্তু এঁদের মধ্য থেকে তিনজনকে নিতে গেলে ডিফেন্স ও মিডের খেলোয়াড়ের কোয়ালিটি পড়ে যাবে, তা বলা বাহুল্য। তাই বাজেট গোলস্কোরিং ফরওয়ার্ডদের চাহিদাটা বাজেট ডিফেন্ডার ও মিডফিল্ডারদের চেয়ে কিছুটা হলেও বেশি। বাজেট ফরওয়ার্ডদের মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার দলে নেওয়া তিনজন হলেন রাশিয়েন আর্টেম জুবা(৮ মিলিয়ন), অস্ট্রিয়ার মার্ক ইয়াঙ্কো ও পোল্যান্ডের আর্কাদিউজ মিলিক (উভয়েই ৭.৫ মিলিয়ন ইউরো)। মাত্র ৭ মিলিয়নে দল ভেড়াতে পারবেন লেস্টার রূপকথার মূলনায়ক জেমি ভার্ডিকে; অবশ্য রয় হজসন তার ‘পেকিং অর্ডারে’ হ্যারি কেইনের(৮.৫ মিলিয়ন) আগে তাকে রাখার চান্স খুবই কম।  এছাড়াও আছেন সুইজারল্যান্ডের সেফেরোভিচ ও এমবোলো (যথক্রমে ৬.৫ ও ৬ মিলিয়ন)। ৯ মিলিয়ন পর্যন্ত খরচ করতে ইচ্ছুক হলে দলে ভেড়াতে পারবেন লুকাকু, জিরুদ, মোরাতা, পেল্লে, শাকিরি, গোমেজ, ইলমাজ, ইয়ারমোলেঙ্কো, বেন্টেকে, কোয়ারেজমাদের মত তারকাদের।

 

যত যা-ই হউক, ফ্যান্টাসি ফুটবলও আসল ফুটবলের মতই মাঠের পারফরম্যান্সের ওপরই নির্ভর করে। তাই দলে তারকার সংখ্যা বেশি না থাকলেও যেমন হা-পিত্যেশ করার কারণ নেই, তেমনি দলে কিছু তারকা ঢুকিয়ে বাকি পজিশনে গড়পড়তা খেলোয়াড় নিয়ে ভাল কিছু করার সম্ভাবনাও খুবই কম। তাই দল নির্বাচনের এই দাবা খেলায় যতটা সম্ভব গবেষণা করে, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খেলোয়াড় নেওয়াই শ্রেয়।