• ক্রিকেট

ম্যাচ পূর্ববর্তী ভাবনা: বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় টি ২০

পোস্টটি ৩৬৫২ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

সিরিজ শুরুর আগে তানভীর হায়দার নিয়ে বেশ আশাবাদ প্রকাশ করছিলাম। স্বীকার করতে লজ্জা নেই, আমার স্পেকুলেশন মারাত্মক রকম ভুল ছিল। প্র্যাকটিস ম্যাচেও তার ফ্লাইট দেয়ার টেন্ডেনসি ভালো লেগেছিলো। ওয়ানডে তে তার শর্ট পিচের ফুলঝুরি দেখে মনেই হয় নি এই বোলারের বলে কেউ আউট হতে পারে। অনেককাল  আগে, নাজিমউদ্দিনরে নিয়ে কৌতুক প্রচলিত ছিল যে সে নাকি টিভিতে খেলা দেখালে ভালো খেলতে পারে না। তানভীরের কি সেই রকম কিছু আছে? জোকিং এপার্ট, তানভীরকে সাদামাটা বোলার মনে হইছে। জাতিয় দলে নামানোর  আগে একটা খেলোয়াড়কে আরো ভালো করে যাচাই করার দরকার মনে করি। প্রসঙ্গক্রমে আমিনুল ইসলাম ভোলার কথা মনে পড়লো। ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেলার সুবাদে তাকে জাতীয় দলে সুযোগ দেয়া হয়। আমার নিজের নামের সাথে মিল থাকায় আর ঘরোয়া খেলায় তার উইকেট প্রাপ্তির খবরে বেশ রোমাঞ্চিত ছিলাম। কেনিয়ার সাথে ডেব্যুতে প্রথম বা দ্বিতীয় ওভারে সে উইকেটও পেয়ে যায়। কিন্তু তারপরের গল্পটা 'ভোলা'র জন্য ভুলে যাওয়ার মতই ছিল। তার বোলিং ফিগার ছিলো ৫ ওভারে ৬ এর উপরে ইকোনমি রেট এবং সেই এক উইকেট। বোলিং ফিগারের চেয়েও বড় কথা, সেই ম্যাচে স্টিভ টিকলো এমন রাজকীয় ভাবে তার বোলিং শাসন করেছিল যে অধিনায়ক তাকে আর বোলিংয়ে ফেরাতে সাহস পান নি। ভোলার ক্যারিয়ারও ৫ ওভারেই শেষ হয়ে গেছে। আশা করি তানভীর হায়দারের ক্যারিয়ারের দুই ম্যাচের ১১ ওভারে থেমে যাবে না। বরং পারফর্ম করেই সে ফেরার চেষ্টা করবে।
======

হাতুরে পাপন দর্শক সব কিছু নিয়ে খেলোয়াড়েরা মনে হয় বিভ্রান্ত। দলের মধ্যে জেতার যে স্পিরিট সেটা ওয়ানডেতে সেইভাবে দেখিনি। আগের টি ২০ তে বোলিংয়ের সময় তবু কিছুটা দেখা গেছে। তবে আমাদের শক্তির জায়গা যে পেস বোলিং সেখানে আমাদের অবস্থা বেশ খারাপ। ম্যাশের মাঝে ভালো করবার তাড়না আছে কিন্তু শরীর মনে হয় বিদ্রোহ করতেছে একটু একটু। অথচ সেই ই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কনসিসটেন্ট। মুস্তাফিজকে আমি আলাদা কাতারে রাখছি। কিন্তু সমস্যা হলো মুস্তাফিজ বেশি ইফেক্টিভ হবে তখনই যখন বাকিরা রানের লাগাম ধরে রাখতে পারবে। প্রথমে তাসকিন পরে রুবেল দুজনেই ইনকনসিসটেন্ট এ ব্যাপারে। বিপি এলের শেষে শহীদ শফিউলের অন্তত একজন ইনজুরিতে না পরলে ভালো হত। তাহলে রুবেল তাসকিনকে চাপে থাকতে হতো জায়গা নিয়ে। আর এই চাপ পারফরম্যান্স বের করে আনে। সাকিব এখন পর্যন্ত বোলিংয়ে ধারাবাহিক।  পঞ্চম বোলারের ব্যাপারে দলের পরিকল্পনা পরিস্কার থাকা দরকার। দুই বা তিনজনকে দিয়ে সহজেই করানো যেতে পারে ব্যাপারটা। মোসাদ্দেককে বেশ ভালো লেগেছে বোলিংয়ে। নাসিরের অনুপস্থিতি সে পোষাতে পারছে। নাসিরের ব্যাপারে মানুষের যেরকম আহাজারি আমার সেরকম নাই। তবে আমার মতে নাসির আসলে মূলত কমপ্লিট প্যাকেজ। তাকে ব্যাটসম্যান হিসাবে বিবেচনা করলে ভুল হবে। ব্যাটসম্যান নাসির আলাদাভাবে দলে গুরুত্ব রাখে না (যতই আমরা তাকে ফিনশার ইত্যাদি বলি), তবে নাসিরের মূল ইউটিলিটি তার বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং তার দুর্ধর্ষ ফিল্ডিং। 
====
বোলিংটা তাও হয়তো খারাপের ভালো বলে চালিয়ে দেয়া যায়। আপাতত ব্যাটিংয়ের দৈন্য দশা ভাবনার বিষয়। ব্যাপারটা কি বিরুদ্ধ কনডিশন নাকি মানসিক সমস্যা সেটা বলা মুশকিল। তবে সত্যি কথা হলো আমাদের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান এখনো সেভাবে হয় নাই যে মিডল অর্ডারে নির্ভরযোগ্যতা দিতে পারে। এক রিয়াদ আর তামিমে বেশি নির্ভরতা রাখতে হচ্ছে। সাকিবের ব্যাপারে আমাদের মাথায় রাখতে হবে সে অলরাউন্ডার এবং অন্যতম মূল স্ট্রাইক বোলার। তাই সে সবসময় ডেলিভার করবে এমন ভাবা হয়তো ভুল। আমার মনে হচ্ছে আমাদের ব্যাটসম্যানরা তাড়াহুড়া করছে। আর আরেকটা কথা সবাই বলার পরেও কেন আমাদের প্লেয়াররা বুঝে না সেটা আমার বোধগম্য না।  সেটা হলো টি ২০ মানে বলে বলে চার ছক্কা নয় বরং ডট বলের সংখ্যা কমিয়ে আনা। এক দুই রান করে ইনিংস বড় করাটা যত দ্রুত আমাদের ব্যাটসম্যানরা বুঝে ততই ভালো।
====
শুভাগতকে নিয়ে কোচের যুক্তি সেই লেভেলের। সে নাকি শেষ টি টোয়েন্টি সিরিজে ভালো করেছে। এক কোহলির উইকেট তাকে যদি দিনের পর দিন জায়গা দেয় দলে সেটা হাস্যকর। কোচকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে মিথুনও তো শেষ সিরিজে ছিলেন এবং তেমন কোন ব্যর্থতা ছাড়াই (মিথুনকে নিয়ে সব ট্রলের পরেও বলবো তার চেয়ে শুভাগত বা অন্য কেউও এমন কিছু করেনি) বাদ পরেছেন। শুধু তাই নয়, বিপিএলেও মিথুনের পারফরম্যান্স বেশ ভালো ছিলো। তাহলে সব কিছুর শেষে আসলে শুভাগতকে নিয়ে কোচের যুক্তি ধোপে টিকে না যেহেতু দুই প্লেয়ারের ব্যাপারে ট্রিটমেন্ট দুই রকম। আমি হাতুড়ের ব্যাখ্যা সামনে শুনলে নির্ঘাত জিজ্ঞেস করতাম, শুভাগত তো আপনার সেই পাওয়ার হিটার যে ভারতের সাথে শেষ বলে ব্যাটে বল লাগাতে পারে নি?
=====
মিরাজকে নিয়ে ম্যানেজমেন্টের ভাবনা আমার কাছে পরিস্কার না। আট ব্যাটসম্যান নিয়ে খেললে মিরাজ একটা চমৎকার অপশন হতে পারে। আমি ব্যাক্তিগতভাবে মনে করি সৌম্য আর ইমরুলকে একসাথে দলে রাখার দরকার নেই। তার জায়গায় মিরাজ আসলে বাড়তি বোলিং অপশন যোগ হয়। সাব্বিরকে প্রতি ম্যাচেই কনফিডেন্ট মনে হয়েছে। জাস্ট একটা বড় ইনিংস সব বদলে দিবে। এই ছেলেটার মাঝে এক্স ফ্যাক্টর আছে। তামিমের থেকে একটা বড় ইনিংসও ডিউ আছে।
====
ফিঙ্গার ক্রসড ফর সেকেন্ড ম্যাচ। টি ২০ আমার কাছে ফান ক্রিকেট। তবে খেলোয়াড়দের মাঝে আত্মনিবেদন না দেখলে খেলা দেখতে বসে নিজেকে প্রতারিত মনে হয়।

শুভকামনা মাশরাফি বাহিনীর জন্য।