• ক্রিকেট

দুর্জয় থেকে মুশফিক: সতেরো বছরের পথচলা ... ... ...

পোস্টটি ৬৯২৭ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

শততম টেস্টের প্রাক্কালে আবেগ বাস্তবতা মিলিয়ে আনন্দের অনুভূতি থাকবার কথা ছিল। সৌরভের সাথে নেমে দুর্জয়ের টসের কয়েন ছুড়ে ফেলায় যে অধ্যায়ের শুরু হয়েছিল, আজকে তার অসমাপ্ত শত পূরণের আনন্দ থাকার কথা ছিলো। বায়োস্কোপের মত করেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের বিজ্ঞাপনী দৃশ্যগুলোই আমাদের মনে ভাসতে পারত। প্রায় প্রথম শ্রেণীর অভিজ্ঞতা ছাড়া একদম আনাড়ি একটা দলের স্বপ্নের মতই শুরু হয়েছিলো। পাহাড়সম চাপে থাকা হাবিবুলের হাতে যার শুরু হয়ে বুলবুলের দাঁতে দাঁত কামরে পরে থাকায় যার পূর্ণতা পায়। তারপরে খন্ড দৃশ্যের মতই থাকতে পারতো নিউজিল্যান্ডে মাশরাফির আগুন ঝরানো বোলিং, জাভেদ ওমরের আদ্যন্ত অক্লান্ত ব্যাটিং। ধুমকেতুর মতই বিশ্ব রেকর্ড গড়ে আগমন ঘোষণা করা আশরাফুলের আক্ষেপের গল্পের শুরুতে থাকত সম্ভাবনা। হাবিবুলের ক্রমাগত ফিফটি, মাঝে পাইলটের বিপদে হাল ধরার আঁধার কাটিয়ে মুলতানে পাকিস্তানকে কাঁপিয়ে দেয়ার গর্ব আর দুঃখ থাকত। চোরা লতিফের বিপরীতে মহানুভব রফিকের জন্য আমরা গর্বিত হতাম।

ফ্রেমের এক কোণায় এক টিনেজারের বলে কয়ে বল হাতে প্রথম টেস্ট জেতানোর রূপকথা থাকত। সেই সাথে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের 'সস্তা' উইকেটের মূল্য বুঝিয়ে দেয়া ফতুল্লা। এই গর্বের ঝলক গুলোর মাঝেই অন্ধকার ছিলো। সেই অন্ধকারকে তীব্র করে 'আইসিএল' কাপিয়ে দিলে, ধ্বংসস্তুপের মাঝ থেকে ফিনিক্সের রূপকথা নিয়ে উঠত মুশফিক মেহরাবের ব্যাটিং আর অবশ্যই একজন সাকিবের মঞ্চ কাঁপিয়ে আগমণের। পরের গল্পটার পুরোধা জুড়েই শুধু সাকিব আল হাসান। নিয়মিত অধিনায়ককে হারিয়ে হঠাৎ অধিনায়ক বনে গিয়ে দ্বিতীয় সারির ওয়েস্ট ইন্ডিজকে শাসন করে একাই সিরিজ জিতিয়ে তিনি শুরু করবেন নিজের ঔজ্জল্য ছড়ানোর।

মাঝে থাকত ব্রিটিশদের চোখে চোখ রেখে তামিমের ঔদ্ধত্য, কখনো শাহাদাতের চমক জাগানো বোলিং, আর মাঝে মাঝে অভিষেকে চমক জাগিয়ে হারিয়ে যাওয়া স্পিনাররা। এরই মাঝে নিজেদের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হারবার কান্না থাকবে, তবে তারও পরে নতুনের কেতনে পুরো দল হয়ে গড়ে উঠার স্বপ্ন জাগবে অভিষেকের এক যুগ পরে। একা দলকে বয়ে আনা সাকিব আল হাসান সঙ্গী হিসাবে পাবেন ধারাবাহিক মুশফিক তামিমদের। দিন শেষে যখন পেসার খুঁজে হন্যে হবো, আসবে মুস্তাফিজ তাসকিনরা। ধূমকেতুর মত এক কিশোর এসে কুলিন ব্রিটিশদের ধসিয়ে দিলে দল হিসাবে বাংলাদেশের প্রতিক্ষায় সবাই আশায় বুক বাঁধবে। সতের বছরের কিশোর যখন শতক করে নতুন গার্ড নিতে যাবে তার মাঝে সে হবে আত্মবিধ্বংসী। তারপরে? তারপরে আবার উৎস মুখে ফেরা সেই গল্পের।

সতের বছর আগে দুর্জয় যখন টস করতে নামেন, অধিনায়ক হিসাবে তিনি যোগ্যতম ছিলেন কিনা সে প্রশ্ন ছিলো। প্রশ্ন ছিলো আগের দশক ধরে সেরা ব্যাটসম্যান বিবেচিত হওয়া নান্নুর দল থেকে বাদ পরা। আর প্রথমে মূল একাদশে না থেকেও মিডিয়ার চাপেই তো দলে ঢুকেছিলেন এই যাত্রার প্রথম দিশারী হাবিবুল। সতেরো বছর পরের গল্পেও নান্নু হাবিবুল দুর্জয়রা থাকেন। তবে প্রশাসনিক জায়গায় থেকেও এবারো তারা আগেরমতই দর্শক। দলের খেলোয়াড় নিয়ে অখেলোয়াড়দের স্বেচ্ছাচারিতা, দল নির্বাচন দিয়ে অপেশাদারিত্ব সেই ২০০০ সালকেই মনে করিয়ে দিবে।

শততম টেস্টে মুশফিক যখন টস করতে নামবেন, সেই প্রথমের মতই মাঠের খেলার চেয়ে মাঠের বাইরের গল্প বেশি আলোচিত। এই অপেশাদারিত্বের অবসান না হলে, পাড়ার বখে যাওয়া সতের বছরের কিশোরের মতই বাংলাদেশের ক্রিকেট পথ হারাবে। আশঙ্কা মনে রেখেও শুভকামনা। সতেরো বছরে শতক হাকানো কিশোরকে (অবশ্যই আশরাফুল না) অভিনন্দন।

শুভ হোক পথচলা।