• ক্রিকেট

স্টোয়নিস মহাকাব্য

পোস্টটি ৬১৩৩ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

মার্কাস স্টোয়নিস নামটা জিজ্ঞাসা করলে গতকালও এদেশের অধিকাংশ ক্রিকেটপ্রেমী তেমন কিছুই বলতে পারতেন না। কেউ বলতেন ২০১৬ আইপিএলে পাঞ্জাবের হয়ে খেলা একজন অস্ট্রেলিয়ান একটু ব্যাট করেন একটু বল। যারা খুব ক্রিকেটের খোজ রাখেন তারাও মাথা চুলকে সর্বোচ্চ বলতেন একজন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার বছর দুই আগে একটি ওয়ানডে আর টি টোয়েন্টি খেলেছিলেন। আসলে তাকে নিয়ে এর বেশি জানার সুযোগও ছিল না, সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেট সাইট ক্রিকইনফোতে তার প্রোফাইলে লেখা মোটে ৭টি লাইন।

 

২০০৮ অনূর্ধ্ব উনিশ বিশ্বকাপে স্টিভ স্মিথ, জেমস ফকনার, ফিল হিউজদের সাথে খেললেও অন্যরা যখন জাতীয় দলে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন তখনও তার ঝুলিতে মোটে ২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। ২০১৫ সালে খেলা একমাত্র ওয়ানডে ম্যাচে করেছিলেন ৪ রান, পান নি কোন উইকেট। আর একমাত্র টি টোয়েন্টিতে করেছিলেন ১০ রান। এরপর দুই বছর আর সুযোগ মেলেনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে দলে থাকলেও সুযোগ মেলেনি। নিয়মিত অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ, ওয়ার্নার, খাজারা বিশ্রামে থাকায় এই সিরিজে একাদশে দেখা গেল তাকে। ম্যাচ শুরুর আগে আরেক ধাক্কা। দায়িত্বপ্রাপ্ত অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েড পিঠের চোটে নামতে পারবেন না। শেষ মুহূর্তে দায়িত্ব পেয়ে টস জিতে নিউজিল্যান্ডকে ব্যাট করতে পাঠালেন অ্যারন ফিঞ্চ। ৫০ ওভারে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ দাঁড়াল ২৮৬ রান। স্টার্ক, হ্যাজেলউড কেউ না সবচেয়ে বেশি উইকেট নিলেন স্টোয়নিস। তার ১০ ওভারে কোন ছক্কাই মারতে পারে নি ব্ল্যাক ক্যাপরা, ৪ মোটে ১টি। টি টোয়েন্টির এই সময়ে ১০ ওভারে ৪৯ রান দিয়ে নিলেন গাপটিল, উইলিয়ামসন আর মুনরোর উইকেট।

 

                                           

 

জবাব দিতে নেমে ৫৪ রানেই নেই ৫ উইকেট, এমন সময় ব্যাট হাতে নামলেন মার্কাস স্টোয়নিস। ১৩ রান পর ফিরলেন আরেক সতীর্থ। সপ্তম উইকেটে অনূর্ধ্ব উনিশ সতীর্থ ফকনারের সাথে গড়লেন ৮১ রানের জুটি। কিন্তু দলীয় ১৪৮ রানে ব্যক্তিগত ২৫ রানে ফিরলেন ফকনার। এরপর ৮ম উইকেটে কামিন্সের সাথে হল ৪৮ রানের জুটি। ১৯৬ রানে ৮ম ব্যাটসম্যান হিসাবে ফিরলেন কামিন্স। আরেক প্রান্তে অবিচল স্টোয়নিস এবার স্টার্ককে নিয়ে যোগ করলেন আরও ৩০ রান। ব্যক্তিগত ৩ রানে স্টার্ক যখন ফিরলেন তখনও জয় দূরের বাতিঘর। শেষ উইকেটে ৪২ বলে দরকার ৫৭ রান। পাড় অস্ট্রেলীয় সমর্থকও তখন জয়ের আশা ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু আশা ছাড়লেন না স্টোয়নিস। শেষ ব্যাটসম্যান আরেক অনূর্ধ্ব উনিশ সতীর্থ হ্যাজেলউড। তবে তার উপর ভরসা পেলেন না স্টোয়নিস। হ্যাজেলউডকে কোন বল খেলার সুযোগ না দিয়ে নিজেই ২৩ বলে তুলে ফেললেন ৫০ রান। ৪৬তম ওভারে চতুর্থ আর পঞ্চম পরপর দুই বলের ঠিকানা হল গ্যালারি। স্কোরকার্ড বলছে ব্ল্যাক ক্যাপদের ছুঁতে প্রয়োজন আর একটি ছক্কা। বল তখনও বাকি ১৯ টি। ১৪৬ রানে অপরাজিত স্টোয়নিসকে ওভারের শেষ বলটি করার আগে অধিনায়কের সাথে দীর্ঘ আলাপ করলেন সাউদি। যখন দৌড় শুরু করলেন সাউদি তখন স্টেডিয়ামে ২৭ হাজার ৯১১ জন দর্শক দেখল এক অভিনব ফিল্ড পজিশন। নন স্ট্রাইক ব্যাটসম্যানের প্রায় গা ঘেঁষে সিলি মিড অনে দাড়িয়ে আছেন উইলিয়ামসন। সাউদির হাত থেকে ইয়র্কার বেরনোর আগেই দৌড় শুরু করলেন হ্যাজেলউড। বল স্টোয়নিসের ব্যাট ছুয়ে সোজা উইলিয়ামসনের হাতে। আন্ডার আর্ম থ্রোতে উইকেট ভেঙে দিলেন তিনি, রান আউট হ্যাজেলউড। জয়ের ৬ রান আগেই ৯ চার আর ১১ ছক্কায় অপরাজিত ১৪৬ রানে শেষ হল স্টোয়নিস মহাকাব্যের।