• ক্রিকেট

সেই আঁধার পেরিয়ে...

পোস্টটি ৬৩৬০ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।
সবুজের একজোড়া জুতা লাগবে। স্পাইক জরুরী না, ডিপার্টমেন্টের এসব খেলায় স্পাইক লাগেও না। সঙ্গে গেলাম, এলিফ্যান্ট রোডে। আমার নিজের প্রায় সবকিছুই আমার বন্ধু কিনে দেয়, তবে অন্তত দোকান চিনি- এই ভরসায় নিয়ে গেলাম। সবুজের পছন্দ হলো না, অথবা বাজেট টাজেট মিলিয়ে ব্যাটে বলে হলো না। পরে জাভেদ ভাইয়ের সঙ্গে গিয়ে একজোড়া জুতা কিনেছিল। সেটা কবেকার ঘটনা? ফার্স্ট ইয়ার অথবা সেকেন্ড ইয়ার। সেই ফার্স্ট ইয়ারেই মনে হয় শেষ ডিপার্টমেন্টের ক্রিকেট ম্যাচ দেখেছিলাম। এই মৌসুমে ফুটবল দেখলাম সবগুলো ম্যাচ ধরে, অথচ ক্রিকেটে আজকের আগে যাওয়াই হলো না!
 
 
সৌরভ একটা বাদ দিয়ে সব ম্যাচ দেখেছে। আমি প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ দেখতে গিয়েছি ফতুল্লায়, বিকেএসপিতে। অথচ একফোঁটা শিশিরবিন্দুর দেখার মতো করে যাওয়া হয়নি ভার্সিটির খেলার মাঠেই! আজকের ফাইনাল সে আক্ষেপটা বাড়িয়ে দিয়েছে নিশ্চিতভাবেই!
 
 
যখন গেলাম, তখনও দ্বিতীয় ইনিংসের ওভার পাঁচেক শেষ। তন্ময় দাদার লেগস্পিনটা পর্যন্ত দেখতে পেলাম না! ফুয়াদ ভাই, নাজমুল ভাই, স্বপ্নীল ভাইয়েরা আমাকে বিদ্রুপ করেন, শুধু আজ গিয়েছি বলে। সবুজ ঠিকই আমার পাশে এসে বসে। হাবভাবে অবশ্য বোঝার উপায় নেই, সবুজ একাদশে আছে কিনা! পায়ে সেই জুতাজোড়া। বেশ ভাল সার্ভিস দিয়েছে, বলতেই হবে। কৃষ্ণ ওদিকে ‘হকারি’ করছে। সে কী কী পারে, ক্রিকেট, ফুটবল, ওয়াটারপুল (এই নামে কোনও খেলা আছে কিনা, সেটা দাদাই ভাল বলতে পারবে!) ইত্যাদি ইত্যাদি। কৃষ্ণ ইদানিং গুলিস্তানের দিকে বেশী যাতায়াত করছে মনে হয়।
 
 
মাঠে ইয়া বড় ঘাস, এমনকি নেই সাইটস্ক্রিনও। সাইটস্ক্রিন ছাড়া কিভাবে খেলা হয়, সেটা নিয়ে বিস্ময়টা বেশীক্ষণ ধরে রাখার উপায় নেই। সিয়ামের ব্যাটিং যে ততোক্ষণে জাপটে ধরেছে মনোযোগকে। শহীদুল্লাহ হলের বাস্কেটবল গ্রাউন্ডে সিয়ামের ব্যাটিং দেখে চলতি রাস্তায় থমকে দাঁড়িয়েছিলাম। তাঁর ব্যাটিং এমনই।
 
 
মাঠের বাইরে চিৎকার চলছে। চলছে মাঠের বাইরে থেকেই স্লেজিং। রবিন ভাই নেতৃত্বে, তাঁর স্লোগানে চিপা ব্যাপারটা আছে বলে সেটাকে বেশী আপন মনে হচ্ছে তখন। স্ট্যাটস ডিপার্টমেন্টের হয়ে দুজন শিক্ষক খেলেছেন, এটা তখন জানতোই বা কজন! এর মাঝেই উইকেটকিপার কী যেন বলে বসলো সিয়ামকে। হাতাহাতির পর্যায়ে যাওয়ার আগেই ঠেকানো হলো তা, কৃষ্ণ মাঠে গিয়ে নাকি ‘হুমকি’ও দিয়ে এলো। তবে খেলায় ছেদ পড়লে যা হয়, হলোও তাই। সিয়াম বোল্ড হলো। এর আগে বিশ ওভার কিপিং করেছে, লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং-ও করেছে। ক্লান্তি আসাটা স্বাভাবিক! তাঁর ফিফটি হয়েছে, খেলায় এতো মনোযোগ, বাইরে থেকে অনেকবার বলার পরও তাঁর কাছে তথ্যটা পৌঁছানো গেল না!
 
 
আলীফ এর মাঝে আমাকে সীমানাদড়ির পাশে নিয়ে গিয়ে বসিয়েছে, সেখান থেকেই নাকি খেলা দেখতে হবে। কেন, সেটার কোনো জবাব নাই! আমি অবশ্য এক ওভার পরে ঠিকই চলে এসেছি আবার পেছনের দিকে। নাজমুল ভাই ক্যামেরা হাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন, ভরসা তখন ফুয়াদ ভাই, রনি আর সৌরভই। হাতে অনেক উইকেট, রুপম ভাই শুধু মারছেন না, সিংগেল নেয়ার মুডেও আছেন এদিন!
 
 
আরেকটা উইকেট গেলে কৃষ্ণ নামবে। সবুজ; কৃষ্ণ যাকে শাকিলুর বলে ডাকে, কৃষ্ণকে ওপাশে ডেকে নিয়ে গেছে। কী কী যেন বোঝাচ্ছে, হয়তো মাথা ঠান্ডা রাখতে বলছে। সবুজ-কৃষ্ণ, আমাদের সেই বিখ্যাত জুটি! ফুটবলে, কিংবা ক্রিকেটেও! কৃষ্ণ আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছে, আজকের ফাইনাল সে জিতবেই!
 
 
তবুও, আস্কিং রেটটা যদি নাগালের বাইরে চলে যায়? দুই ওভারে যদি একটু বেশীই রান লাগে? সেই আশঙ্কাগুলোও দূর হয়ে যেতে সময় লাগলো না। রুপম ভাই বাউন্ডারি মেরে সব আশঙ্কা ওই দূরে পাঠিয়ে দিলেন! থার্ডম্যানের একটা সিংগেলেই হয়ে গেল ফাইনাল জেতা! অথচ স্ট্যাটস নাকি ভেবেছিল, দুই ‘স্বাস্থ্যবান’ ব্যাটসম্যানকে আউট করলেই ম্যাচ তাঁদের! সেই ‘স্বাস্থ্যবান’ ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে যে ‘কম স্বাস্থ্যবান’রাও কম যান না, সেটা যদি তাঁরা জানতো!
 
 
ফুটবলের মতো করেই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে উল্লাস করছিল সবাই, ছুটে যেতে চেয়েও যাওয়া হলো না আর! কে জানে, অর্ধেক ম্যাচ দেখার আড়ষ্টতা কিনা!
 
 
এই ডিপার্টমেন্টটা এপিইসিই থেকে ইইই হয়ে গেছে, ক্রিকেটে ট্রফিটা জেতে নাই কখনও। সেটা জিতে গেল আজ। ফুটবলে কতো কাছে গিয়েও থাকতে হয়েছিল রানার্স-আপ হয়ে, এবার ফাইনালে প্রতিপক্ষ তো পাত্তাই পেলো না! সেদিনের মতো এদিনও
ছবি তোলার হিড়িক পড়ে গেল, সবাই কতো হাসিখুশী! ক্রিকেটাররা ওদিকে ফটোসেশনে ব্যস্ত, সৌরভ, রনি আর আমি এদিকে দাঁড়িয়ে-বসে। সেই সন্ধ্যাতেও ছিলাম, স্তব্ধ হয়ে। আজ নাকি সৌরভের একটা অনুভূতিশূন্যতা এসে গেছে, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ব্যাপারটা তখনও সয়ে যায়নি মনে হয়!
 
 
মিশুক ভাই খেলোয়াড় হয়ে ট্রফি জিততে পারলেন না সেদিন ফুটবলে, আজ দর্শক হয়েই ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন!
 
 
সবুজের জন্য অপেক্ষা করে আছি, কৃষ্ণর জন্য অপেক্ষা করে আছি। ভেঙ্গে পড়া সবুজকে স্বান্তনা দিয়েছিলাম সেদিন, আজ চ্যাম্পিয়ন সবুজকে অভিনন্দন জানাবো!
 
‘ফুটবলের দুঃখটা এবার ভুলছিস না, সবুজ?’
‘ঐ দুঃখ কি ভোলা যায়?’
 
হয়তো যায় না। তবে সেদিনের সেই আঁধারের সাথে তো এই দুপুরের কড়া রোদটাও মনে রাখা যায়, সবুজ!
 
 
ছবি- নাজমুল ইসলাম