• ফুটবল

একটি চারমিনার কিছু শুভ্র চুল আর একটি বিশ্বজয়

পোস্টটি ৮২৬২ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

বৃষ্টিটা সবে টপটপ করে পড়া শুরু করেছে । ট্র্যাকস্যুট পরা মধ্যবয়সী ফার্গি তখন চুইংগাম চাবাতে চাবাতে চিন্তা করছিলেন গিগসকে কি আরেকটু উপরে খেলাবো নাকি নিকি বাটকে বলব সেন্টার মিডকে আরেকটু হোল্ড করে থাকতে । এইসব চিন্তা নিয়েই হঠাৎ ডাগ আউটের অপর পাশে চোখ গেল ফার্গির । কি ব্যাপার সাদা চুলের বুড়োটা গেল কই । একটু আগেই না এখানে দেখলাম । আরেকটু পিছনে ফিরে তাকাতে গিয়ে দেখলেন এ কি এই বুড়ো যে  দিব্যি চারমিনার টেনে চলেছে । ঘটনাটিকে ফার্গি তার নিজের রত্নভান্ডারের মত শৈল্পিক উপায়েই ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন তার বই ম্যানেজিং মাই লাইফে  

আমার মনে আছে আমি তুরিনে তাকে দেখেছিলাম পরনে ছিল একটি লেদার কোট আর হাতে ছিল একটি চারমিনার । আমি যখন ট্র্যাকস্যুট পড়া অবস্থায় বৃষ্টিতে ভিজছিলাম সে তখন শান্তভাবে ডাগআউটে বসে ছিল । তার চোখের দিকে তাকানোই আমাকে অনেকখানি বলে দিয়েছিল আপনি এমন একজনের সাথে লেনদেন করছেন যার নিজের এবং তার সাম্রাজ্যের উপর পুর্ন আয়ত্ত আছে । সেই চোখগুলো থেকে মাঝে মাঝে গম্ভীরতার আগুন ঝরত , মাঝে মাঝে সেগুলো সচেতন ভাবে পরিমাপ করত । ওহ হ্যা সেগুলো বাস করত বুদ্ধিমত্তার সাথে । কেউ তাকে হালকা করে নেয়ার মত ভুল করতে পারে না ।

কে এই বুড়ো  এটাই তো মাথায় ঘুরছে তাই না ?

হ্যাঁ এতক্ষণে হয়ত ঠিকই চিন্তা করছেন । সেদিনের সেই বুড়োটা ছিল দ্যা গ্র্যান্ডফাদার অফ ইতালিয়ান ফুটবল  খ্যাত মার্সেলো লিপ্পি।

                                lippi and sir alex

 

আশির দশকের শেষভাগ , ম্যারাডোনা আর মিশেল প্লাতিনির জাদুকরী পায়ের সৌন্দর্যতায় ইতালিয়ান ফুটবল আবার তার চাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছে । মাঠগুলো প্রায়ই দর্শকে ভরে থাকত । কিন্তু ইতালিয়ানরা যে রক্ষণের পূজারি । কোথায় যেন হারিয়ে যেতে শুরু করেছিল সেই শিল্প । কিন্তু সেই চিন্তা করে কে । হাতের সামনে সুস্বাদু খাবার পড়ে থাকলে কি কেউ লবণের চিন্তা করে । কিন্তু ওই যে লবণ ছাড়াও যে তরকারি রান্না হয় না । সেই লবণের মত রক্ষণভাগকে আবার জাগানোর মত গুরু দায়িত্ব নিতেই এগিয়ে এল শুভ্র চুলের এই ভদ্রলোকটি । শুরুটা সাম্পদোরিয়া দিয়ে । তাদের যুব দলের দায়িত্ব নেন লিপ্পি । এরপর ইতালিয়ান ফুটবলের অনেক নিম্নসারির দল ঘুরেছেন । সিয়েনা , পিস্তইস , আটালানটা কোথাও ভিত্তিটা গেঁথে তোলা হয়ে উঠে নি ।

১৯৯৩-৯৪ সিজন । ধুঁকছে ম্যারাডোনা পরবর্তী নাপলি । একদিকে অর্থসংকট অপর দিকে দলের খুবই বাজে পারফর্মেঞ্চ । সিরি আর একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে নাপলি । নাপলি প্রেসিডেন্ট করাডো ফেরলাইনো দলের দায়িত্ব তুলে দিলেন আনকোরা এই ভদ্রলোকটির হাতে । লিপ্পি নিজেও বোধহয় এমনটা আসা করেন নি । নাপলিতে তার কোচিং দর্শনের একটা বিশাল অংশ ছিল দলগত খেলার দিকে মনোযোগ দেয়া । তাই তো একদা বলে ছিলেন

In this day and age you win if you become a team . It doesn’t necessarily mean that you have got to have the best football players in the country. Its possible that the best all together don’t become a team . Its like a mosaic ; you have to put all the pieces together

বলা হয়ে থাকে লিপ্পি এমন ভাবে দলকে দেখতেন যেমন করে ইঞ্জিনিয়াররা গাড়িকে দেখে । প্রত্যেকটা অংশকে মসৃণ হওয়া চাই । ক্যানাভারো , জিওভানি , ক্রিনি , ব্রেস্কনি দের নিয়ে গড়া নাপলি সেবার ষষ্ঠ স্থানে থেকে লিগ শেষ করে । ম্যারাডোনা পরবর্তী নাপলির কথা চিন্তা করলে সেটা যথেষ্ট ভাল অবস্থান । চোখ এড়ায় নি সিরি আর বাকি বাঘা বাঘা দলগুলোর । এসি মিলান থেকে শুরু করে  ইন্টার , জুভেন্টাস সবাই তাকে দলে ভিড়ানোর জন্য উঠে পড়ে লাগে । শেষ পর্যন্ত তুরিনের বুড়িদের হয়েই পরবর্তী অধ্যায় লেখেন । চক্রের শুরুটা হয়েছিল আগেই , নাপলির মাঠে খেলতে গিয়েছিল জুভেন্টাস । ডেল পিয়েরো , বাজ্জিও , কন্তে দের নিয়ে গড়া জুভেন্টাস সিরি আ ডমিন্যান্ট করছে তখন । সেখানে লিপ্পির নাপলি আর এমন কি । কিন্তু সেদিন যে অন্য কিছু দেখাবেন বলে ঠিক করে রেখেছিল এই বুড়ো ভদ্রলোকটি । এক কথায় নাকানি চুবানি খাইয়েছেন সেই জুভেদের সেদিন। কিন্তু গ্যালারিতে বসে হাসছিলেন আরো একজন । লিপ্পির কোচিং দর্শনের ভক্ত হয়ে পড়েন যে জুভেন্টাস প্রেসিডেন্ট ভিতরো । মনে মনে সেই দিনই ঠিক করেন এই ভদ্রলোককে দিয়েই লিখবেন জুভেন্টাসের নতুন ইতিহাস  

                lippi in charge of napoli

 

মাথার উপর জিওভানি ত্রিপাত্তনির মত ইউরোপিয়ান ট্রপিজয়ী কোচের জায়গা নেয়ার চাপ , কোন অংশেই সহজ ছিল না সেই সময়ের দিনগুলি । কিন্তু সেই চাপকে নিজের কাজের পথে বাঁধা হতে দিলেন না ।  তিনি জানতেন তিনি কি করতে চলেছেন এবং তার কাজের ব্যাপারে তার পূর্ণ বিশ্বাস ছিল । জুভেদের হয়ে তার প্রথম সাইনিং ছিল সিরো ফেরেইরা । নাপলি থেকে আসার সময়েই নিয়ে আসেন সিরি আর এই বিখ্যাত স্ট্রাইকারকে ।  ডিফেন্সেভ মিড হিসেবে যোগ করলেন পাউলো সউসা কে । জুভেন্টাসে প্রথম দিকের দিন গুলিতে ৪-৩-৩ ফর্মেশনে খেলাতেন লিপ্পি । তার কোচিং দর্শন ছিল ডিফেন্স কর এবং তোমার অ্যাটাকারকে সময়মত প্রকাশিত হতে দাও। তার স্ট্রাইকারদেরকে ও ডিফেন্সে নেমে দলকে সাহায্য করতে হত । ভিয়েলি তার খেলোয়াড়ি জীবন নিয়ে লেখা বইতে মারসেলো লিপ্পিকে নিয়ে লেখেন সেই সময় আমাদের মানসিক এবং শারীরিক ভাবে প্রচুর পরিশ্রম করতে হত যখন আপনি ফ্রন্ট থ্রি এর একজন হয়েও দলের প্রয়োজনে ডিফেন্স করতে নামবেন তখন আপনাকে সেই জন্য মানসিক আর শারীরিক ভাবে প্রস্তুত হতে হবে । সেই সময়ের জুভেন্টাসে আমাদের প্রায়ই এটা করতে হত । পরিশ্রম ফসল দিবেই একটা কথা আছে তো । সেই ফসল ঘরে আনতে সময় নেন নি লিপ্পি । প্রথম সিজনেই কোচিং ক্যারিয়ারের প্রথম সিরি আ জিতে নিলেন ।

১৯৯৫-৯৬ সিজন । লিপ্পির ডিফেন্সিভ জোনাল মার্কিং তখন ইতালি জুড়ে একটি ফ্যাশনে পরিণত হতে শুরু করেছে ।  নতুন ফ্যাশন মানেই নতুন সূচনালগ্নের আভাস । কিন্তু সেই নতুনত্ব যে তার দলকে বছর না পেরুতেই ক্লাব ফুটবলের কিছু অভিজাত দলের একটিতে পরিণত করবে সেটাই বা কয় জন ভেবেছিল । চোখ বন্ধ করে যদি লিপ্পিকে এখনও দুইটি ঘটনার কথা মনে করতে বলা হয় তার মধ্যে রোমের স্তাদিও অলিম্পিয়াকোর স্মৃতি গুলো একটা হয়েই থাকবে । থাকবে না ই বা কেন  ডর্টমুন্ড , রিয়াল মাদ্রিদের মত টিমকে হারিয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠে আসা যে চার্ট্রিখানি কথা নয় , তাও আবার নিজের দ্বিতীয় সিজনেই । ফাইনালে মুখোমুখি হতে হয় টোটাল ফুটবলকে জাগিয়ে তোলার প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসা লুই ভন গালের আয়াক্সের বিপক্ষে ।  

  • আয়াক্স যদি ফেমিস পেইন্টার হয় তবে আমরাও পাদদেশ থেকে উঠে আসা শক্ত প্রতিপক্ষ

রোমের পথে পাড়ি দেয়ার সময় প্রাক্তন জুভে প্রেসিডেন্ট অ্যাগ্নেলির কথা কতটুকু অনুপ্রাণিত করেছিল সেটা হয়ত আমার জানা নেই কিন্তু সেদিনের ফুটবল প্রদর্শনী অলিপম্পিক স্টেডিয়ামে বসে থাকা প্রতিটা দর্শক যে অনেক দিন মনে রাখবে তাতে কোন সন্দেহ নাই । একদিকে ডিফেন্স ইনটু অফেন্স অপর দিকে গুটি গুটি করে বেঁড়ে উঠা টোটাল ফুটবল ।  

পালে হাওয়া দেয়ার কাজটা প্রথমে জুভেন্টাস ই করে । ম্যাচের মাত্র ১৩ মিনিটের সময়েই ভ্যান ডার সারকে ফাকি দিয়ে বল জালে জড়ান র‍্যাভানেলি । অথচ এর মিনিট খানেক আগেই বল জালে জড়ানোর ভাল সুযোগ পেয়েছিলেন । ডি বোরের করা ভুলটা থেকেই দলকে এগিয়ে নিতে পারতেন কিন্তু সেবার ভ্যান ডার স্যারের কাছে পরাজিত হতে হয় তাকে ।

 ফিরতি উত্তর দিতে বেশি সময় নেয় নি আয়াক্স । প্রথম হাফের ৪১ মিনিটের মাথায় ফ্রাঙ্ক ডি বোরের ফ্রি কিক থেকে গোল করে লিটম্যানেন । এর মাঝে আবার গোললাইন সেভ করে বসে জুভেন্টাস গোলকিপার আন্দ্রেলো পিরেজ্জো । সেকেন্ড হাফে দুই দলই অফেন্সিভ খেলা শুরু করে কিন্তু গোলের দেখা আর কেউ ই পেল না । নির্ধারিত সময়ের খেলা ১-১ এই শেষ হয় ।

এরপর বাকি সময়গুলোতেও ভ্যান ডার স্যার আর পিরেজ্জোর প্রদর্শনীতে কেউ গোল নামক গেরোটা খুলতে পারল না । 

ট্রাইবেকার নামক থ্রিলার পর্বের শুরু । প্রথমেই ডেভিডের করা পেনাল্টি ঠেকিয়ে দেয় পিরেজ্জো । আয়াক্সের হয়ে পরের দুইটি থেকে গোল করে লিটম্যান আর স্কলটেন । আর অপর দিকে প্রথম  তিনটিতেই গোল করে বসে জুভেন্টাস । আবারো হিরোর ভুমিকায় অবতীর্ণ হয় পিরেজ্জো । ডাচ লেফট ব্যাক সিলোর করা চতুর্থ পেনাল্টি ঠেকিয়ে দেয় সে ।

জুভের হয়ে শেষ পেনাল্টি নিতে আসছে জুগোভিচ । এইদিকে ডাগ আউটে বারবার চশমা ঠিক করছেন লিপ্পি । অমরত্বের সন্ধান থেকে যে একপদ দূরে তিনি । চোখ যে একটুখানি ঘোলা দেখতেই পারে ।

জুগভিচের সেই গোলের পর বুড়োটা কি সেদিন আবার নতুন করে স্পন্দন ফিরে পেয়েছিল কিনা কে জানে অন্তত অভিব্যাক্তি গুলো যে তাই বলে ।

১১ বছর পর যে তার হাত ধরেই আবার সেই কাঙ্খিত চ্যাম্পিয়নস ট্রপি ঘরে তুলে ওল্ড লেডিরা ।

এরপর আরও দুইবার সেই আকাঙ্ক্ষিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রপির ফাইনালে গেলেও শিরোপাটা আর ছুঁয়ে দেখা হয় নি । কিন্তু তাতে কি টানা তিনটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল খেলা টিমের দায়িত্বে থেকে যে  নিজেকে  ফুটবল ইতিহাসের ঐ কিছু ধ্রুবতারার একটি করে নিয়েছেন ।

1996 champions league final

 

কি ভাবছেন চ্যাপ্টার শেষ ? না , মূল অংশটাই যে এখনও খুললেন না। সময়টা ২০০৪ এর দিকে । ইউরোর গ্রুপ স্টেজ থেকে বাদ পড়ার ব্যার্থতা মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করলেন জিওভানি ত্রিপাত্তনি । ইতালি যখন নতুন গুরুর সন্ধানে হনহন করে ঘুরছে তখন আবারো ত্রিপাত্তনির স্থলাভিক্ত করা  হল লিপ্পিকে । শুরুটা ভালই করেছিলেন । বিশ্বকাপের জন্য দলকে ভালভাবে প্রস্তুত করছিলেন । কিন্তু প্রকৃতি এত ভাল সহ্য করবে কেন ? বিশ্বকাপের বাকি নেই এক মাস , মাফিয়া চক্রের হাতে আক্রান্ত ইতালিয়ান ফুটবল । জুভেন্টাসের মত দলকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে সিরি আর দ্বিতীয় বিভাগে । লা গেজাত্তা , দি গার্ডিয়ানের মত নিউজপেপার খুল্ললেই ভেসে উঠে ইতালিয়ান ফুটবলের করুণ সেই চিত্র । ইতালির কট্রোর সমর্থকরা ও কেউ যদি রোমের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলত ইতালি আসন্ন বিশ্বকাপ জিতবে লোকে বোধহয় তাকে পাগল ছাড়া কিছু বলত না । বলা হয়ে থাকে রোম যখন পুড়ছিল তখন রোমান সম্রাট নিরো বাঁশি বাজাচ্ছিল । না লিপ্পি সেবার নিরো হতে পারে নি । বরঞ্চ সে আগুনে যাতে নতুন করে কেউ ঝাপ না দেয় সে ব্যাবস্থা করেছিলেন ।  

সেই দাবানলের ছাই ভস্মগুলো সাথে নিয়েই জার্মানির পথে পাড়ি দেয় ইতালি । । অবস্থা এমনই ছিল একদিন বিশ্বকাপের ট্রেনিং সেশন পর্যন্ত বাদ দিয়ে ইতালি  যেতে হয় ক্যানাভারোকে । যাই হোক সেই সব ধাক্কাকে সামলে নিয়ে প্রথম ম্যাচে ঘানাকে ২-০ গোলে হারিয়ে ভালই সূচনা করে ইতালি । পরের ম্যাচে মুখোমুখি হয় ইউএস এর । প্রথমেই ক্রিস্টিয়ান জাকার্ডোর অউন গোলে লিড নেয় ইউএসএ । পরে পিরলোর করা ফ্রি কিক থেকে দলকে সমতায় ফেরায় গিলার্দিনো । ফাইনালের আগে পুরো টুর্নামেন্টে ইতালি শুধুমাত্র এই একটা গোলই কন্সিড করে । গ্রুপ পর্বের আরেক ম্যাচে চেক প্রজাতন্ত্র কে ২-০ গোলে হারিয়ে রাউন্ড অফ সিক্সটিনে পৌঁছে যায় ইতালি ।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রাউন্ড অফ সিক্সটিনের ম্যাচটিকে পুরো টুর্নামেন্টের ঐ একটি সেরা ম্যাচ হিসেবে বিবেচনা করা হয় । দুই দলই সমানে আক্রমণ করে যাচ্ছে কিন্তু কেউ কারো গেরো খুলতে পারছে না । ম্যাচের তখন এক্সট্রা মিনিট চলছে । পেনাল্টি পায় ইতালি । ফাউলটি অদৌ ডি বক্সের ভিতর ছিল কিনা সেটা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে । যাই হোক সেই পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে কাঙ্ক্ষিত জয় এনে দেয় টট্রি

এরপর কোয়ার্টারে ইউক্রেনকে ৩-০ গোলে হারিয়ে পালে একটুখানি হাওয়া বইতে না বইতেই খবর আসল সেমিতে তাদের প্রতিপক্ষ জার্মানি । তাও আবার সিগ্নাল ইদুনা পার্কে যেখানে এর আগে জার্মান দের কোন হার নেই । ম্যাচটির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে লিপ্পি বলেন “ সেদিন ইদুনা পার্কের ৭৫০০০ দর্শকের মধ্যে ৭০০০০ ছিল জার্মানির আর বাকি ৫০০০ ছিল ইতালির । যখনই ইতালিয়ান কেউ সেখানে কথা বলতে শুরু করেছিল তারা তাকে চুপ হয়ে যেতে বলেছিল । “

 জানি না সেদিন লিপ্পি কি বলে তার খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করেছিলেন খেলা দেখে আমার কেবল একটা কথাই মনে হচ্ছিল ডিফেন্স এট ইটস বেস্ট । ডিফেন্স ও যে কতটা সুন্দর হইতে পারে ঐ ম্যাচ দেখেই প্রথম ধারণা আসে । খেলা দেখে কখনও মনেই হয় নাই ইতালি গোল খেতে পারে বলে । ক্যানাভারো তো হয়ে উঠেছিল অতি মাত্রায় ভয়ংকর । যাই হোক সেই যাত্রায় জার্মান বাঁধা পার হয়ে গেল ইতালি ।

ফাইনালে মুখোমুখি সেই চিরচেনা ফ্রান্স , যাদের কারনে জেতা হয়ে উঠে নি ইউরো কাপ । সেদিনের সেই ঐতিহাসিক ফাইনালকে অনেকেই কেবল জিদানের সেই ঢুস কাণ্ডের জন্য মনে রাখে কিন্তু এর বাইরেও যে থাকে ধ্বংসস্তুপের প্রান্ত সীমা থেকে উঠিয়ে এনে বিশ্বকাপের চাদর দিয়ে মুড়িয়ে রাখা এক ইতালির গল্প যার নৈপথ্য থাকে লিপ্পি নামের এক কারিগর ।

বিশ্বজয় করেছেন মাত্র কিন্তু সচেতনতার মাত্রা বিন্দুমাত্র ভাঙ্গে নি । তাইতো খানিকটা মজা করে বলেন “ যখন গ্রসো পেনাল্টি থেকে গোল করে আমি আমাদের বেঞ্চের দিকে তাকাই আর আমার চশমা টাকে খুলে রাখি । এরপরই উদযাপন করতে চলে যাই । সবাই আমাকে জিজ্ঞেস করে কেন আমি সেটা করেছিলাম । আমি তাদেরকে বলি এটা শুধুমাত্র আমার চশমা টাকে বাচিয়ে রাখার জন্য করেছিলাম । এই তো দেখুন এখন সেগুলো মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করা আছে , সেই বিখ্যাত চশমাটি “

final 2006

 

কোচ মাত্রই থাকবে কিছু ব্যার্থতার গল্প , থাকবে হতাশার চাদরে মুইয়ে দেয়া কিছু খারাপ লাগা । লিপ্পি ও সেই সবের উর্ধে ছিলেন না । জুভেন্টাসে থাকতেই হেরেছেন দুটি ব্যাক টু ব্যাক চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল , ইন্টার মিলানের হয়ে নিজের দ্বিতীয় সিজনেই হয়েছেন বরখাস্ত । কিন্তু সেই সবকে ছাপিয়ে গিয়ে ও লিপ্পি হয়ে উঠেছেন জাগরণের কাঠি নিয়ে আসা এক বুড়ো দাদু যে কিনা গল্পের ছলে আগলে রেখেছিলেন একটি শিল্পকে ।

তথ্য ক্রেডিট ঃ

                                              (১) ব্লেচার  রিপোর্ট ম্যাগাজিন

                                              (২) ফোর ফোর টাইমস

                                              (৩) দিস ফুটবল ম্যাগাজিন

                                              (৪) উইকিপিডিয়া

                                             (৫) লা গেজাত্তো স্পোর্ট