• ফুটবল

মিশরের নায়ক মোহাম্মদ সালাহ।

পোস্টটি ৯১৩৩ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

মিশরের নায়ক এখন সালাহ, মোহাম্মদ সালাহ। মিশর ফুটবল দলের তারকা খেলয়াড় ও পরিচিত মুখ। জাতীয় দলে ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলেন সালাহ। ক্লাব ফুটবলে খেলেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের দল লিভারপুলের হয়ে। লিভারপুলের হয় এই আসরে বেশ ভালোই খেলছে সালাহ। প্রিমিয়ার লীগ ১৭/১৮ সেশনে এখন পর্যন্ত ৪ গোল ও ১ এসিস্ট। লিভারপুলের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লীগের লাস্ট ম্যাচে ও জোড়া গোল করেছেন সালাহ মারিবোর এগেইন্সট। 

সারা ইজিপ্ট জুড়ে এখন মোহাম্মদ সালাহর জয়ধব্বনি। কেননা এই সালাহই ইজিপ্ট কে ২০১৮ রাশিয়া ফুটবল বিশ্বকাপের জন্য কোয়ালিফাইড করেছেন। ২৮ বছর পর ইজিপ্ট আবার ফুটবল বিশ্বকাপের জন্য কোয়ালিফাইড হয়েছে। এখন পর্যন্ত মিশর ওয়ার্ল্ডকাপ ফুটবল আসরের মাত্র ৩ টি আসরের জন্য কোয়ালিফাইড হয়েছে। ১৯৩৪ সালে ফিফা ফুটবল ওয়ার্ল্ডকাপের ২য় আসরে মিশর কোয়ালিফাইড হয়। তার বহু বছর পর ১৯৯০ তে আবার কোয়ালিফাইড হয় এবং সর্বশেষভাবে ইজিপ্ট ২৮ বছর পর ২০১৮ বিশ্বকাপের জন্য কোয়ালিফাইড হলো। 

মিশরের কোয়ালিফিকশনে বলতে গেলে সবচেয়ে বেশী অবদান সালাহরই।  ইজিপ্টের হয়ে কোয়ালিফিকেশন ম্যাচগুলোতে সালাহ এর গোল সংখ্যা সর্বাধিক। তাই এখন সারা ইজিপ্ট জুড়ে কেবল মোহাম্মদ সালাহর জয়গান। এই মোহাম্মদ সালাহ ইজিপ্ট অনুর্ধ-২০ এর হয়েও ফুটবল বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেন ২০১১ সালে এবং ২০১২ তে সামার অলিম্পিকে। ২০১২ তে সালাহ সিএএফ মোস্ট প্রমিসিং আফ্রিকান প্লেয়ার নির্বাচিত হন। তখন তিনি খেলতেন বাসেল এর হয়ে এবং বাসেলের হয়ে সুইস সুপার লীগ ও জিতেন সালাহ।  এরপর ২০১৪ তে যোগ দেন ইংলিশ ক্লাব চেলসিতে। কিন্তু চেলসির হয়ে ১৩ ম্যাচে মাঠে নেমে লোনে পাঠানো হয় সিরি-এ ক্লাব ফিওরেন্তিনাতে। এরপর আবার লোনে যোগ দেন একই লীগের ক্লাব এস রোমাতে এই স্পীডস্টার। রোমার হয়ে দুই মৌসুমে প্রায় ৬৫ ম্যাচ খেলেন তিনি এবং বেশ সাড়া জাগান রোমার হয়ে। পরবর্তীতে ২০১৭-১৮ মৌসুমের আগে ট্রান্সফার উইন্ডোতে মোহাম্মদ সালাহ কে দলে ভেড়ান লিভারপুল। £৩৬.৯ এর বিনিময়ে লিভারপুলে যোগ দেন সালাহ। 

ইজিপ্টের প্লেয়ারদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত মুখ হলো সালাহ।  কোয়ালিফায়ার ম্যাচে ইজিপ্টের ৭ গোলের মধ্যে ৫ টিই করেছেন সালাহ। এই ৮ অক্টোবর কঙ্গোর মুখোমুখি হয় সালাহর ইজিপ্ট। এই ম্যাচে জিতলেই বিশ্বকাপ খেলতে পারবে সালাহ।  ৬৩ মিনিটে সালাহর প্রথম গোলে ১-০ তে এগিয়ে যায় ইজিপ্ট। কিন্তু ৮৬ মিনিটের মাথায় গোল শোধ করে দেয় কঙ্গো। স্টেডিয়ামে ইজিপ্ট সমর্থকেরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সালাহ নিজেই হতাশ হয়ে মাঠেই শুয়ে পড়েন এবং নিজের হতাশা প্রকাশ করতে থাকেন। খেলা চলছিলো। ৯০ মিনিট হওয়ার সাথে সাথে ৫ মিনিট এক্সট্রা সময় দেন রেফারী। এক্সট্রা সময়ের তখন ২ মিনিট চলছিলো। ইজিপ্ট এর একজন খেলোয়াড় বল নিয়ে কঙ্গোর ডিবক্সে এবং তাকে ফাউল করে বসলো কঙ্গোর এক ডিফেন্ডার। সাথে সাথে রেফারির বাঁশি এবং আনন্দে ভেঙ্গে পড়লো গোটা স্টেডিয়াম। ইজিপ্ট টিমের বেঞ্চে যারা বসেছিল তারা পর্যন্ত খুশিতে মাঠে ঢুকে পড়লো কারণ পেনাল্টি পেয়েছে ইজিপ্ট। ইজিপ্টের হয়ে পেনাল্টি নিবেন টিমের ম্যান প্লেয়ার সালাহ। হাতে বল নিয়ে সালাহ বিড় বিড় করে কি যেন পড়লেন এবং বলটা মাথায় ঠেকালেন। এরপর বলটা নির্দিষ্ট জায়গায় রাখলেন। শট নিবেল সালাহ। পুরো স্টেডিয়ামে রুদ্ধশ্বাস নিরবতা। গোল করতে পারলেই বিশ্বকাপে ইজিপ্ট। পুরো মিশরীয় জাতির প্রত্যাশার ভার তখন সালাহর কাঁধে।

এবং গোওওওওওওল।  সালাহ পেনাল্টি থেকে গোল দিয়ে ইজিপ্ট কে জেতালেন এবং বিশ্বকাপে তুললেন ইজিপ্ট কে।  সাথে সাথে সালাহর দৌড়।  সালাহর পেছনে তার পুরো টীম। তারা সালাহকে কাঁধে তুলে নিলো। স্টেডিয়াম ভর্তি মানুষ উল্লাসে ফেটে পড়লো। ইজিপ্টের প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত স্পিচ দিলো এবং তিনি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানালেন সালাহকে। ইজিপশিয়ান সাবেক এক ফুটবলা হাজেম ইমাম টুইটারে লিখলেন - "May God make you happy salah just as you made the Egyptians happy." সারা ইজিপ্টের মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে এল এবং ফায়ার ওয়ার্ক সহ নানাভাবে তারা তাদের বিজয় উদযাপন করলো। সারা ইজিপ্ট এর দেওয়ালে দেওয়ালে এখন সালাহর দেওয়ালচিত্র এবং সবার পড়নে সালাহর জার্সি। কারণ সালাহই যে এখন তাদের হিরো। সালাহর গোলে ২৮ বছর পর আবার বিশ্বকাপে মিশর। মিশরবাসীর প্রত্যাশা সালাহ একইভাবে ভালো পারফর্ম এর মাধ্যমে ইজিপ্ট কে ভালো অবস্থানে নিয়ে যাবে বিশ্বকাপে। 

আহা! বাংলাদেশের ও যদি এরকম একজন সালাহ থাকতো যার কাঁধে ভর করে বাংলাদেশ ফুটবলের পরিবর্তন হতো।