• ক্রিকেট

যে সৌরভ ছড়িয়ে গেলো মুগ্ধতায়

পোস্টটি ৬৪৪৪ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

সান্দাকান তাঁর ওভারটি যখন শুরু করছেন, তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন নন স্ট্রাইকিং এন্ডে, ৯৩ রানে। একটু কি অধৈর্য হয়ে পড়ছিলেন? প্রথম বলে সিংগেল নিয়ে মুশফিকুর রহিম তাঁকে স্ট্রাইক দিলেন, পরের বলটি ঠেলে দিলেও রান আসেনি। এরপরের বলটি স্ট্যাম্প সোজা আসছিলো, তিনি ডাউন দ্যা উইকেটে এসে চালিয়ে দিলেন বোলারের মাথার উপর দিয়ে। যেদিকে চেয়েছিলেন সেদিক দিয়ে যায়নি, সামান্য টাইমিং স্লিপ হলেও ক্ষতি হয়নি কোন। চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিলো না সান্দাকানের। পরের বলটি ছিলো অফস্ট্যাম্পের অনেকটা বাইরে। তাঁর উপর আবার টার্ন নিয়ে চলে যাচ্ছিলো বেশ একটু বাইরে দিয়ে। মমিনুলের যেন তর সইছিলো না জবাবটা দিতে। ডাউন দ্যা উইকেটে এসে সেটিকেও চালিয়ে দিয়েছেন এক্সট্রা কাভার বাউন্ডারি দিয়ে।


১০০।


উদযাপনটা হলো দেখার মতো। বল যখন সীমানার দিকে, রানিং বিটুইন দ্যা উইকেটে রহিমকে পার হবার সময় একবার মুষ্টির ধাক্কাও দিলেন রহিমের কাঁধে। ইচ্ছাকৃত, বা অনিচ্ছাকৃত হোক, তখনই যেন ছিটে বের হচ্ছিলো কিছু প্রতিজ্ঞা। কিছু জেদ। এরপর হেলমেট খুলে খুব বেশি আগ্রাসন নিয়ে যে কিছু করেছেন, তা নয়। একবার এক হাতে ব্যাট আরেক হাতে হেলমেট উচু করলেন অভিনন্দনের জবাবে, পরক্ষনই নিজের পায়ে ব্যাট দিয়ে আঘাত করলেন আলতো। খুব আনন্দের রেশ তখন নেই তাঁর মুখে। শুধু দৃঢ়প্রতিজ্ঞা, করে দেখানোর জেদ, সেই জেদে বিজয়ী বীর। রহিমকে জড়িয়ে ধরলেন এরপর। ফিরে আসার সময় সেই একই অভিব্যক্তি। একবার জার্সির হাতা দিয়ে চোখ মুছলেন। ঘাম? নাকি জয়ের উপলক্ষে জমে উঠা সামান্য অশ্রু?

Untitled


এভাবে জবাব দেওয়ায় আপনাকে অভিনন্দন, মমিনুল হক সৌরভ। ব্যাট যেদিক পানে উঠিয়েছিলেন, সেদিকেই তো বসে ছিলেন আপনাকে অপাংক্তেয় করে দেওয়া মাঝবয়সী লোকটা, যিনি এখন প্রতিপক্ষ শিবিরে? তাঁর বিপক্ষেই এভাবে দেখিয়ে দেওয়ায় আপনাকে গ্ল্যাডিয়েটরের সম্মান তো দেওয়াই যায়!


তাঁর শুরুটা ছিলো নায়কের মতই। ডেব্যু ইনিংসেই পঞ্চাশোর্ধ রান, চতুর্থ টেস্টেই পেয়ে গিয়েছিলেন এখন পর্যন্ত ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ১৮১ রানের ঝলমলে ইনিংস, তাও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। একই মাঠে। রান করতে কার্পন্য ছিলো না কখনোই। কিন্তু “শর্ট বলে দূর্বলতা”, “স্পিনের বিপক্ষে খেলতে পারে না” ইত্যাদি অভিযোগে বারবার অভিযুক্ত হয়েছেন টেস্টে ৪৮ ছুঁইছুঁই গড় রাখা মমিনুল, মাঝে বাদও দেওয়া হলো ১০০ তম টেস্টের দল থেকে। অপাংক্তেয় করে দেওয়া হয়েছিলো ওয়ানডে দল থেকে। অথচ আজকের সেঞ্চুরিটা এলো সেই ওয়ানডে স্টাইলে খেলেই। যিনি তাঁকে অভিযুক্ত করতেন শর্ট বলে, স্পিনের বিপক্ষে দূর্বলতার অভিযোগে, তাঁর পেসারদের সামলেই, হেরাথ – সান্দাকান – পেরেরাকে সামলেই তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের ৫ম সেঞ্চুরি।

mominul_17

নায়কের মতো শুরু করেও বারবার অভিযুক্ত হতে হতে তাঁর আত্মবিশ্বাসটুকুও যেন পৌছে গিয়েছিলো তলানিতে। যার কাছে তাঁর ভুলক্রুটি শুধরানোর কথা, তিনি যখন তাঁকে দূরে ঠেলে বলে দেন ‘তোমাকে দিয়ে হচ্ছে না’ বা ‘তুমি পারো না’, হতাশ হওয়াটাই স্বাভাবিক। হতাশার ছায়ারেখা যেন স্থায়ী দাগ ফেলে যাচ্ছিলো তাঁর মুখচ্ছবিতে। আজ সেই মমিনুলই কত নির্ভার! আজ সেই মমিনুলই খেলেছেন কত নির্ভার, নিঁখুত একটি ইনিংস!


অভিনন্দন আবারো, মমিনুল হক সৌরভ। ধন্যবাদ আপনাকে। ব্যাট হাতে অপরাজিত ১৭৫ রানের ইনিংসটি শুরু করবেন আবার আগামীকাল, আবারো দেখতে চাই সেই জেদমাখা, প্রতিজ্ঞাবদ্ধ উদযাপনের পুনরাবৃত্তি। আপনার ব্যাটের একেকটি ঝলক হোক প্রতিপক্ষ শিবিরে থাকা একজনের প্রতিটি অবজ্ঞা, অবহেলার, তাচ্ছিল্যের উত্তর।


অপেক্ষায় রইলাম।