• ক্রিকেট

বিশ্বাস ফেরানোর জন্যে ধন্যবাদ বাংলাদেশ

পোস্টটি ৭৬৫৫ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

ধন্যবাদ বাংলাদেশ!হ্যাঁ,আজ টাইগারদের শুধু জয়ের অভিনন্দন নয় ধন্যবাদও দিতে চাই।টি-টোয়েন্টিতে একের পর এক  ক্রমাগত হারের ফলে বাংলাদেশের সমর্থকদের দলের প্রতি বিশ্বাস টলে গিয়েছিল।সর্বশেষ ম্যাচে খেলোয়ারদের শরীরী ভাষা দেখে মনে হচ্ছিল তাঁরাও বোধহয় মেনে নিয়েছেন টি-টোয়েন্টি বাংলাদেশের খেলা নয়।কিন্তু আজ দুর্দান্ত এক জয়ে সব সংশয় মুছে দিয়ে প্রমাণিত হয়ে গেল বাংলাদেশও টি-টোয়েন্টি পারে!

আজ প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কা ২১৪ করে ফেলার পর হয়তো অতি আশাবাদী সমর্থকটিও ভাবেননি আজ বাংলাদেশ জিতবে। পরিসংখ্যানও তাই বলছিল।যে দলটি টি-টোয়েন্টিতে কখনো একশ নব্বইয়ের বেশি রানই করতে পারেনি তারা কিভাবে এত রান করবে!কিন্তু সবসময় যদি পরিসংখ্যানের এসব কাঠখোট্টা হিসেব মিলেই যেত তাহলে তো আর ক্রিকেটকে গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা বলা হত না!

রান তাড়া করতে নেমে প্রথমেই ওপেনিং এ  চমক!তামিম ইকবালের সাথে ইনিংস উদ্বোধনে এলেন লিটন দাস।সংশয় ছিল লিটনকে নিয়ে।বাংলাদেশের শুরুটাও হলো ধীর।কিন্তু জয়ের আশার পালে হাওয়া লাগিয়ে প্রথম ছয় ওভারের পাওয়ার-প্লেতে স্কোরবোর্ডে জমা পড়ল ৭৪ রান।দশ ওভার পুরো হবার আগেই একশ রানের কোটা পেরুলো বাংলাদেশ!শেষ কবে এমন হয়েছিল তা মনে করাই দায়!লিটন দাস তাঁর সামর্থ্যের প্রমাণ রেখে পাঁচ ছক্কায় মাত্র ১৯ বলে ৪৩ রানের এক বিস্ফোরক ইনিংস খেলে দলকে স্বপ্নের মতোই উড়ন্ত সূচনা এনে দিলেন।

বেশিরভাগ সময় লিখতে হয় অমুক ব্যাটসম্যান যোগ্য সঙ্গ দিলেন তামিমকে।আজ তামিমকে নয় বরং তামিমই যোগ্য সঙ্গ দিলেন লিটনকে।ঠান্ডা মাথায় ২৯ বলে ৪৭ রানের এক নীরব ধ্বংসাত্নক ইনিংস খেললেন।তামিম-লিটন সাজঘরে ফিরলেন কাছাকাছি সময়েই।তখনো ধস নামার ভয় ছিল।সৌম্যের ব্যাটে রান এল কিন্তু প্রত্যাশামত ঝড় উঠল না।সৌম্যেও ফিরলেন কিছুক্ষণ পর।মাহমুদুল্লাহও বেশিক্ষণ থাকতে পারলেন না।

আস্কিং রেট গলার ফাঁস হয়ে বসতে চাইছিল ছিল।কিন্তু সেই ফাঁসের চাপ আলগা করে হাল ধরে রাখলেন মুশফিকুর রহিম।সৌম্য গেলেন,মাহমুদুল্লাহ গেলেন,কিছুক্ষন পর এক গা-ছাড়া দৌড়ে রান-আউট হয়ে ফিরলেন সাব্বিরও।শুধু একপ্রান্তে চীনের প্রাচীরের মতো অবিচল দাঁড়িয়ে থাকলেন মুশফিক।সময়ে সময়ে তাঁর ব্যাট হয়ে উঠছিল উত্তাল হারিকেন।আজ তিনি বোধহয় ঝড় ওঠাবেন বলেই ঠিক করে এসেছিলেন।শেষ পর্যন্ত খেলে যাওয়ার এক চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা নিয়েই তিনি নেমেছিলেন।

উনিশতম ওভারের পাঁচ নম্বর বলে ছয় মেরে লক্ষ্য নামিয়ে এনেছিলেন সাত বলে দশের সমীকরণে,শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক নিজের কাছেই রাখলেন।আর ছয় বলে নয় রান লাগে।

তখন বারবার মনে ফিরে ফিরে আসছিল দুই বছর আগে বেঙ্গালুরুতে ভারতের সাথে এক রানে হারের স্মৃতি।সেইবার পারেননি মুশফিক, এবার কি পারবেন?নাকি আবার চাপের মুখে ভেঙে পড়বেন?কিন্তু না।আজ বোধহয় সেই স্মৃতি মুছেই দিতে চেয়েছিলেন মুশফিক।এক বাঊন্ডারিসহ দুই বল বাকি থাকতেই দলকে ভেড়ালেন জয়ের বন্দরে।৩৫ বলে ৭২ রানের এক টর্নেডো ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়ে তবেই মাঠ ছেড়েছেন তিনি।শাপমোচন হলো মুশফিকের আজ।সেইসাথে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে রান তাড়া করে জেতার চতুর্থ সর্বোচ্চ রেকর্ডটিও চলে এল বাংলাদেশের দখলে।

তাঁর ঝড় কতটা ভয়াবহ ছিল তা বোঝাতে দুয়েকটা তথ্যই যথেষ্ট।নিজের ইনিংসের শেষ ১৯ বলে কোন ডট বল খেলেননি মুশফিক।চারটা ছয় ও পাঁচটা চারের এই ইনিংসে ডটবলই ছিল সাকুল্যে চারটি!

আরো একবার ধন্যবাদ বাংলাদেশ।শুধু আজকের এই অবিস্মরণীয় জয়ের জন্যেই নয়,বিশ্বাসটাও ফিরিয়ে আনার জন্যে।