• ফুটবল

আমার প্রথম প্রেম

পোস্টটি ১০৩১৯ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

 

        শিরোনাম দেখে অনেকেই হয়ত ভাববেন খেলার সাইটে প্রেমকাহিনী কেন? আর আমার পরিচিত জনরা দেখলে বলবেন এই ছেলে প্রেমও করে নাকি! উত্তরটা হ্যা। প্রেমে পড়েছি একটা গোল্লা বলের আর তার পিছনে ছুটে চলা গুটিকয়েক নীল-সাদা বসনের মানুষের। বিরক্তিকর লম্বা খাঁজুরে আলাপ করব। আশা করি ধৈর্য ধরে সবাই পড়বেন।

       সময়টা ২০০২। ভাড়া বাসায় থাকতাম। আশেপাশের বাসার বন্ধুদের কাছ থেকে প্রথম শুনলাম ফুটবল বিশ্বকাপ নামের এক বিশাল আয়োজনের কথা। টেলিভিশন চ্যানেল বলতে তখন বুঝি বিটিভি। সাদা-কাল সেই টিভিতে প্রথম ফুটবলের সাথে আমার পরিচয়। মেন্টরের ভূমিকায় অবতীর্ণ আমার আব্বা। যিনি কিনা আবার জাদুকর ম্যারাডোনার ভক্ত। তবে সেবার কেন যেন সেনেগাল নামে এগারটা কালা পাহাড়কে মনে ধরে গেল। হেনরি জিদান দের নিয়ে গড়া আক্রমণ ভাগ সেনেগালের সাথে গোলই করতে পারল না। আর সেনেগালও চমক দেখিয়ে উঠে যায় কোয়ার্টারে। এর মধ্যে শেষ ষোলতে হারিয়ে আসে সুইডেনকে।

_48049083_senfrastill

       পরের বিশ্বকাপ আসতে আসতে দেশী ফুটবল দেখে মোটামুটি বিশেষজ্ঞ বনে বসে ছিলাম। সেবার শুনলাম নতুন ম্যারাডোনার আগমনের কথা। লিওনেল মেসি নামের সেই ছোট্ট জাদুকরের জাদু দেখলাম সার্বিয়া ম্যাচে। একটু আগ্রহ জন্মাল দলটার প্রতি। কিন্তু তখনও এর মোহে পড়িনি। কেননা টাক মাথার এক বুড়ো যে তার পায়ের ভেল্কি দেখাতে এসেছিলেন। জিদানের অসাধারণ ড্রিবলের ছন্দে কাফু-কাকা-রোনালদো-রোনালদিনহোর ব্রাজিল কুপোকাত। আর্জেন্টিনা জার্মানির কাছে হেরে বিদায় নিলে পুরো সমর্থন ফ্রান্সএর দিকে চলে যায়। খুব খারাপ লেগেছিল জিজু যখন লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। সেবারই প্রথম বুঝতে পারি ফুটবলের মায়ায় পড়তে যাচ্ছি আমি।images

     এর পর ইউরোপিয়ান ফুটবলের কল্যাণে মেসি রোনালদোর(ক্রিশ্চিয়ানো) সাথে ভালভাবে পরিচয় ঘটে। কোয়ালিফাইং রাউন্ড আর ফ্রেন্ডলি ম্যাচ দেখে আস্তে আস্তে ভালবাসা জন্মায় নীল-সাদার উপর। সেনেগাল-ফ্রান্স অনেকটা স্কুলজীবনের ক্রাশের মত ছিল আমার জন্য। ক্ষণিকের ভাললাগা। ২০১০ বিশ্বকাপে এসে বুঝতে পারলাম আর্জেন্টিনার সাথে সম্পর্কটা আজীবন বোধহয় টিকে যাবে। ওইবার বাজে খেলে জার্মানির সাথে ৪ গোলে হেরে বিদায় নিল আর্জেন্টিনা। আর আশায় বুক বেধে বসলাম আরও চার বছরের অপেক্ষার জন্য।

     ১৪ বিশ্বকাপ আসতে আসতে মেসির বার্সার হয়ে অতিমানবীয় খেলা দেখা হয়ে গেছে। সাথে ইতালিতে হিগুয়েন, ইংল্যান্ডে আগুয়েরো,স্পেনে মারিয়া দের খেলা দেখে আশা করেছিলাম এবার কিছু একটা হবে। দুর্দান্ত খেলে ফাইনালে উঠলেও আর্জেন্টাইন দের মারাকানা ট্রাজেডিতে আরও একবার বুক ভাঙল। দেশের হয়ে একটা ট্রফি জেতার অপেক্ষা দীর্ঘায়িত হল টানা দুই কোপায় চিলির কাছে হেরে। একবার তো মেসি অবসরই নিয়ে ফেলল। তখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলা আর দেখব না ফুটবল। কিন্তু পারলাম না। আর্জেন্টিনার খেলা আসতেই আবার রিমোট হাতে বসে গেলাম টিভির সামনে।images(1) 

     আর্জেন্টিনা সাপোর্ট করে কি পাই? অনেকেই জিজ্ঞেস করেন। একটা ট্রফি তো জিতে না। আমি হাসি। কিছু বলি না। বলে তো আর বোঝানো যাবে না। এটা আবেগ। প্রেমে পড়লে প্রিয়তমাকে দেখে যেমন অনুভূতি হয় অনেকটা তেমন। কেন ভালবাসি তাকে জানি না। একটা কথা জানি ট্রফি দিয়ে সাপোর্ট হতে পারে ভালবাসা না। আবারও আশা নিয়ে বসব খেলা দেখতে। হয়ত আবারও আশা ভঙ্গ হবে। অপেক্ষা বাড়বে। কিন্তু দলটাকে ভালবেসেই যাব। দলটা যে আমার প্রথম প্রেম। তাকে তো আর ভোলা যায় না!