• ফুটবল

বিশ্বকাপ ফুটবলের আদ্যপান্ত...

পোস্টটি ১১৪০৪ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।
ফুটবল বিশ্বকাপ শুরু হলেই বিশ্বজুড়ে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, স্পেন,ইংল্যান্ড, ইতালি, ফ্রান্সের ভক্তরা অধীর প্রতীক্ষায় গুনে প্রতিটি প্রহর।কেমন খেলবে তাদের প্রিয় দল, চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে কিনা- এরকম হাজারো রকমের আগ্রহ উদ্দিপনা। সেই উদ্দিপনা শতভাগ উপভোগ করার জন্যে 'ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ' নিয়ে এই পোস্ট।
 
ফিফা বিশ্বকাপ একটি আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতা যেখানে ফিফার সহযোগী দেশগুলোর পুরুষ জাতীয় ফুটবল দল অংশ নেয়। ফিফা বিশ্ব ফুটবল নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা। ফরাসি : FIFA বা Fédération Internationale de Football Association এবং ইংরেজিতে FIFA World Cup । এটি ফুটবল বিশ্বকাপ , সকার বিশ্বকাপ , অথবা শুধু বিশ্বকাপ নামেও পরিচিত। ১৯৩০ সালে এই প্রতিযোগিতা  শুরু হয় এবং এখন পর্যন্ত চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মাঝে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৪২ ও ১৯৪৬ সালে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়নি।
প্রতিযোগিতাটি দুটি ভাগে বিভক্ত, বাছাই পর্ব ও চুড়ান্ত পর্ব ( মূল বিশ্বকাপ )। চুড়ান্ত পর্যায়ে কোন দল খেলবে তা নির্বাচনের জন্য অংশগ্রহনকারী দলগুলোকে বাছাই পর্বে অংশ নিতে হয়। বর্তমানে মূল বিশ্বকাপের আগের তিন বছর ধরে প্রতিযোগিতার বাছাই পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
 
প্রতিযোগিতার বর্তমান ধরন অনুযায়ী ৩২টি জাতীয় দল চুড়ান্ত পর্বে অংশ নেয়। আয়োজক দেশে প্রায় একমাস ধরে এই চূড়ান্ত পর্বের প্রতিযোগিতা চলে। দর্শক সংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বকাপ মূল পর্ব বিশ্বের বৃহত্তম অনুষ্ঠান। ফিফার হিসেব অনুযায়ী ২০০৬ সালের বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা দেখেছেন প্রায় ৭১৫.১ মিলিয়ন দর্শক। এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ২০টি আসরে কেবল ৮টি জাতীয় দল বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছে। ৫ বার বিশ্বকাপ জিতে ব্রাজিল হচ্ছে বিশ্বকাপের সফলতম দল। বর্তমান শিরোপাধারী জার্মানি ও ইতালি ৪টি শিরোপা নিয়ে যৌথভাবে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। অন্যান্যদের মধ্যে উরুগুয়ে (প্রথম বিশ্বকাপ জয়ী ) ও আর্জেন্টিনা দু’বার করে এবং ইংল্যান্ড, ফ্রান্স এবং স্পেন একবার করে শিরোপা জিতেছে। সর্বশেষ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্রাজিলে , ২০১৪ সালের ১২ জুন থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত। এই বিশ্বকাপে জার্মানি আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে পরাজিত করে শিরোপা জিতে নিয়েছে।
 
প্রথম দিকের বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা আয়োজনের মূল সমস্যা ছিল আন্তমহাদেশীয় যাতায়াত ও যুদ্ধঘটিত সমস্যা। কয়েকটি দক্ষিণ আমেরিকান দল ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ সালের বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতার জন্য ইউরোপে যেতে আগ্রহী থাকলেও কেবল ব্রাজিলই এই দুটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পেরেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারনে ১৯৪২ ও ১৯৪৬ সালে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিতই হয়নি।১৯৫০ সালের বিশ্বকাপে প্রথম কোন ব্রিটিশ দল অংশ নেয়। এই ব্রিটিশ দলগুলো ১৯২০ সাল থেকে ফিফাকে বয়কট করে আসছিল। এর একটি কারণ ছিল তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের সাথে যেসব দেশের যুদ্ধ হয়েছিল তাদের সাথে না খেলার মানসিকতা এবং অন্য কারনটি ছিল ফুটবলে বিদেশী কর্তৃত্বের বিপক্ষে প্রতিবাদ। তবে তারা ১৯৪৬ সালে ফিফার আমন্ত্রণে সাড়া দেয়। এই বিশ্বকাপে ১৯৩০ সালের বিশ্বকাপজয়ী উরুগুয়েকে আবার প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে দেখা যায়, যারা পূর্ববর্তী দুটি বিশ্বকাপ বয়কট করেছিল। ১৯৫০ সালে উরুগুয়ে আবার বিশ্বকাপ জিতে নেয়।
 
১৯৩৪ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ১৬টি দল মূল পর্বে অংশ নিত। তবে ১৯৩৮ সালে জার্মানি অস্ট্রিয়াকে দখল করায় প্রতিযোগিতায় ১৫টি দল অংশ নেয়। ১৯৫০ সালে ভারত , স্কটল্যান্ড ও তুরস্ক নাম প্রত্যাহার করায় এই বিশ্বকাপে ১৩টি দল অংশগ্রহণ করে। অধিকাংশ দলই ছিল ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আগত, অল্প কিছু দল খেলেছে উত্তর আমেরিকা , আফ্রিকা , এশিয়া ও ওশেনিয়া থেকে। এসব দল খুব সজেই ইউরোপীয় ও দক্ষিণ আমেরিকান দলগুলোর কাছে হেরে যেত।
 
১৯৮২ সাল পর্যন্ত ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকা বাদে কেবল যে দলটি প্রথম পর্বের বাধা অতিক্রম করতে পেরেছে তারা হচ্ছেঃ যুক্তরাষ্ট্র ,১৯৩০ বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনাল; কিউবা , ১৯৩৮ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল ; উত্তর কোরিয়া , ১৯৬৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার- ফাইনাল; এবং মেক্সিকো, ১৯৭০ বিশ্বকাপের কোয়ার্টা ফাইনাল। ১৯৮২ বিশ্বকাপে দলের সংখ্যা বৃদ্ধি করে ২৪ করা হয়। এরপর ১৯৯৮ সাল থেকে দলের সংখ্যা ৩২ এ উন্নীত করা হয়। এতে করে আফ্রিকা, এশিয়া ও উত্তর আমেরিকা থেকে আরো বেশি দল অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। এক্ষেত্রে ওশেনিয়া মহাদেশ ব্যতিক্রম কেননা এখান থেকে কোন দল বিশ্বকাপে সুযোগ পায়নি।সাম্পতিক বছরগুলোতে এসব এলাকার দলগুলো তুলনামূলক ভাবে বেশি সফলতা পেয়েছে। এসব এলাকার বিশ্বকাপের নক-আউট পর্যায়ে উত্তীর্ণ দলগুলো হলঃ
 
মেক্সিকো, ১৯৮৬ সালে কোয়ার্টার ফাইনাল এবং ১৯৯৪, ১৯৯৮ , ২০০২ ও ২০০৬ সালে নকআউট পর্যায়; মরক্কো, ১৯৮৬ সালে নকআউট পর্যায়; ক্যামেরুন, ১৯৯০ সালের কোয়ার্টার-ফাইনালিস্ট; কোস্টারিকা, ১৯৯০ সালে নকআউট পর্যায়; নাইজেরিয়া , ১৯৯৪ ও ১৯৯৮ সালে নকআউট পর্যায়; সৌদি আরব, ১৯৯৪ সালে নকআউট পর্যায়; যুক্তরাষ্ট্র, ১৯৯৪ সালে নকআউট ও ২০০২ সালে কোয়ার্টার-ফাইনাল; দক্ষিণ কোরিয়া , ২০০২ সালে চতুর্থ স্থান; সেনেগাল , ২০০২ সালে কোয়ার্টার-ফাইনাল; জাপান ,২০০২ সালে নকআউট পর্যায়; এবং অস্ট্রেলিয়া ও ঘানা, উভয়ে ২০০৬ সালে নকআউট পর্যায়।
তবে, ইউরোপীয়ান ও দক্ষিণ আমেরিকা দলগুলো এখনও অন্যান্য দলের ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছে। এর জলন্ত উদাহরন হচ্ছে ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালের আটটি দলই ছিল ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকার।২০০৬ ফিফা বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার জন্য ১৯৮টি দল প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছে এবং ২০১০ ফিফা বিশ্বকাপের জন্য রেকর্ড ২০৪টি দল প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছে।
 
একনজরে ফিফা বিশ্বকাপ ঃ
 
★  সংস্থাপিত হয় : ১৯৩০ সালে।
★  দলের সংখ্যা : ৩২ (চূড়ান্ত পর্ব) ।
★  বাছাইপর্ব খেলুড়ে দল : ২০৪ (২০১৪ সালের বাছাইপর্বে)।
★  বর্তমান চ্যাম্পিয়ন : জার্মানি (৪র্থ শিরোপা)
★  সর্বাধিক সফল দল : ব্রাজিল (৫ম শিরোপা)
★  এখন পর্যন্ত অনুষ্টিত বিশ্বকাপ সমুহ :
১৯৩০, ১৯৩৪, ১৯৩৮, ১৯৫০, ১৯৫৪, ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৭০, ১৯৭৪, ১৯৭৮, ১৯৮২, ১৯৮৬, ১৯৯০, ১৯৯৪, ১৯৯৮, ২০০২, ২০০৬, ২০১০, ২০১৪।
 
★বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতাঃ
 
১৯৩৪ সালের দ্বিতীয় বিশ্বকাপে থেকে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা সীমিত রাখতে যোগ্যতা নিরূপনী প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ছয়টি মহাদেশীয় এলাকার (আফ্রিকা, এশিয়া, উত্তর ও মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান, দক্ষিণ আমেরিকা, ওশেনিয়া, ইউরোপ) কনফেডারেশন এটির ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত। প্রতিটি বিশ্বকাপে ফিফা ঠিক করে কোন মহাদেশ থেকে কতটি দল অংশ নেবে।সাধারণত কনফেডারেশনভুক্ত দলের শক্তি ও দক্ষতার উপর নির্ভর করেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে এখানে কনফেডারেশন সমূহের লবিং ও কাজ করে।
 
সাধারণত চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার তিন বছর আগেই যোগ্যতা নিরূপনী প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে। এটি প্রায় দু’বছর ধরে চলে। বিভিন্ন কনফেডারেশনভেদে প্রতিযোগিতার রকম বিভিন্ন হতে পারে। সাধারণত একটি বা দুটি স্থান আন্তমহাদেশীয় দলের মধ্যে প্লে অফের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। উদাহরণস্বরুপঃ ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে ওশেনিয়া অঞ্চলের বিজয়ী ও দক্ষিণ আমেরিকার পঞ্চম স্থানের দল দুটি বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়ার জন্য প্লে অফ খেলেছিল। ১৯৩৮ বিশ্বকাপ থেকে স্বাগতিকরা চূড়ান্ত পর্বে সরাসরি অংশ নিচ্ছে। আগে বিগত বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন দলটির পরবর্তী বিশ্বকাপে অংশ নিতে বাছাই পর্ব খেলতে হত না। কিন্তু ২০০৬ সাল থেকে বিগত চ্যাম্পিয়ন দলটিকেও বাছাই পর্ব টপকে চূড়ান্ত পর্বে খেলতে হচ্ছে।
 
★ বিশ্বকাপের মূল আসরঃ
 
বর্তমানে ৩২টি জাতীয় দল একমাস ব্যাপী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। এই প্রতিযোগিতা দু'ধাপে বিভক্ত -
-গ্রুপ পর্যায় এবং -নক-আউট পর্যায়।
 
গ্রুপ পর্যায়ে দলগুলোকে প্রতি দলে চারটি করে আটটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। বিশ্বকাপের মূলপর্বের ছয়মাস আগে কোন গ্রুপে কে থাকবে তা নির্ধারন করা হয়। ফিফা রেংকিং অনুযায়ী শীর্ষ আটটি দলকে (স্বাগতিক দল-সহ) আটটি ভিন্ন গ্রুপে রাখা হয়। প্রতি গ্রুপের বাকি তিনটি দলের স্থান বিভিন্ন এলাকার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট করা হয়। পরে ঐ এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন দলের মধ্যে লটারি করে চূড়ান্ত গ্রুপ নির্ধারণ করা হয়। ১৯৯৮ থেকে একই গ্রুপে যেন দু’টির বেশি ইউরোপীয় দল বা অন্য কনফেডারেশনের একটির বেশি দল না থাকে সে জন্য নিয়ম বেঁধে দেয়া হয়েছে।
প্রতি গ্রুপে রাউন্ড-রবিন পদ্ধতিতে একটি দল বাকী তিনটি দলের সাথে তিনটি খেলা খেলে। গ্রুপের তিনটি খেলার পর শীর্ষ দু’টি দল পরের ধাপে উত্তীর্ণ হয়। গ্রুপের মধ্যে দলের অবস্থান নির্ণয়ের জন্য পয়েন্ট ব্যবস্থা গৃহীত হয়। ১৯৯৪ সাল থেকে একটি দলের জয়ের জন্য তিন পয়েন্ট ও ড্রয়ের জন্য এক পয়েন্ট দেয়া হচ্ছে। এর আগে প্রতি খেলায় জয়ে জন্য দুই পয়েন্ট ছিল। যদি দুটি দলের পয়েন্ট সমান হয়ে যায় তাহলে প্রথমে গোল ব্যবধান, এরপর গোল সংখ্যা, এরপর দু'টি দলের খেলার ফলাফলের উপর নির্ভর করে অবস্থান নির্ণয় করা হয়। এতেও যদি অবস্থান না নির্ণয় করা যায় তাহলে লটারির মাধ্যমে অবস্থান নির্ণয় করা হয়।
 
নকআউট পর্যায়ে কেউ হারলেই প্রতিযোগিতা থেকে বাদ হয়ে যায়। এতে দু'টি দল এক-লেগের খেলা খেলে। নির্ধারিত নব্বুই মিনিটে খেলা না শেষ হলে ‘’’অতিরিক্ত সময়’’’ ও ‘’’পেনল্টি শুটআউট’’’ এর মাধ্যমে খেলার জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়। এই নিয়ম গ্রুপ পর্যায়ের পর দ্বিতীয় পর্যায় থেকেই চালু হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে এক গ্রুপের বিজয়ী অন্য গ্রুপের রানার্স- আপের সাথে খেলে থাকে। এরপর কোয়ার্টার- ফাইনাল, সেমি-ফাইনাল, তৃতীয় স্থান নির্ধারনী ও ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন বিশ্বকাপে প্রতিযোগিতার যে ধরন ব্যবহৃত হয়েছে তার একটি তালিকা নিচে দেয়া হয়েছেঃ
 
১৯৩০: গ্রুপ পর্যায়, এরপর পর্যায় যাতে ৪টি দল অংশ নেয় (গ্রুপ বিজয়ী; কোন তৃতীয় স্থান নির্ধারণী খেলা অনুষ্ঠিত হয়নি)।
১৯৩৪–১৯৩৮: নকআউট প্রতিযোগিতা; কেবল এই বিশ্বকাপেই গ্রুপ পর্যায় ছিল না।
১৯৫০: প্রথম গ্রুপ পর্যায়, এরপর আরেকটি গ্রুপ পর্যায় যাতে ৪টি দল অংশ নেয়। (গ্রুপ বিজয়ী); কেবল এই বিশ্বকাপেই কোন অফিসিয়াল ফাইনাল খেলা ছিল না।
১৯৫৪–১৯৭০: গ্রুপ পর্যায়, এরপর নকআউট পর্যায় যাতে ৮টি দল অংশ নেয়। (গ্রুপ বিজয়ী ও রানার্স-আপ )।
১৯৭৪–১৯৭৮: প্রথম গ্রুপ পর্যায়, এরপর আরেকটি গ্রুপ পর্যায় যাতে দুটি গ্রুপে ৮টি দল অংশ নেয়। (প্রথম গ্রুপের বিজয়ী ও রানার্স-আপ), এরপর ফাইনাল (দ্বিতীয় গ্রুপ পর্যায়ের বিজয়ী ফাইনালে খেলে; দ্বিতীয় গ্রুপ পর্যায়ে রানার্স-আপ দল দু'টি তৃতীয় স্থান নির্ধারণী খেলা খেলে)।
১৯৮২: প্রথম গ্রুপ পর্যায়, এরপর দ্বিতীয় গ্রুপ পর্যায় যাতে ১২টি দল অংশ নেয় (প্রথম পর্যায়ের বিজয়ী ও রানার্স-আপ), এরপর নকআউট পর্যায় যাতে ৪টি দল অংশ নেয় (দ্বিতীয় পর্যায়ের বিজয়ী)।
১৯৮৬–১৯৯৪: গ্রুপ পর্যায়, এরপর নকআউট পর্যায় যাতে ১৬টি দল অংশ নেয় (গ্রুপ বিজয়ী, রানার্স-আপ ও চারটি শ্রেষ্ঠ তৃতীয়-স্থানের দল)।
১৯৯৮–বর্তমান: গ্রুপ পর্যায়, এরপর নকআউট পর্যায় যাতে ১৬টি দল অংশ নেয় (গ্রুপ বিজয়ী ও রানার্স-আপ)।
 
★ বিশ্বকাপ সংগঠন এবং গণমাধ্যমঃ
 
১৯৫৪ সালে বিশ্বকাপ প্রথম টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়। বর্তমানে এটি টেলিভিশনে সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান। এমনকি অলিম্পিক গেমসের চেয়েও বেশি মানুষ বিশ্বকাপ দেখে থাকে। ২০০২ বিশ্বকাপের সবগুলো ম্যাচের সর্বমোট দর্শকসংখ্যা ছিল প্রায় ২৮.৮ বিলিয়ন।
১.১ বিলিয়ন মানুষ সরাসরি এ বিশ্বকাপের ফাইনাল দেখেছেন যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ছয় ভাগের এক ভাগ। ২০০৬ বিশ্বকাপের ড্র, যা বিশ্বকাপে বিভিন্ন দলের গ্রুপ নির্ধারন করে, তা দেখেছেন প্রায় ৩০০ মিলিয়ন দর্শক।
 
১৯৬৬ সাল থেকে প্রতি বিশ্বকাপের একটি নিজস্ব মাস্কট বা প্রতীক আছে। বিশ্বকাপ উইলি প্রথম বিশ্বকাপ মাস্কট, যা ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপে ব্যবহৃত হয়েছে। ২০০৬ বিশ্বকাপের মাস্কট হচ্ছে গোলিও , একটি সিংহ , এবং পিলি, একটি ফুটবল ।
 
★ বিশ্বকাপের ট্রফিঃ
 
১৯৩০ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত বিজয়ী দলকে জুলে রিমে ট্রফি প্রদান করা হত। জনসাধারণের কাছে এটি শুধু বিশ্বকাপ বা Coupe du Monde নামেই বেশি পরিচিত ছিল, তবে ১৯৪৬ সালে প্রথম বিশ্বকাপ আয়োজনকারী ফিফা প্রেসিডেন্ট জুলে রিমে র নামে এটির নামকরণ করা হয়। ১৯৭০ সালে ব্রাজিল তৃতীয় বারের মত বিশ্বকাপ জিতলে তাদেরকে স্থায়ীভাবে ট্রফিটি দেয়া হয়। ১৯৮৩ সালে ট্রফিটি চুরি হয়ে যায় এবং পরে আর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা যায় চোর ট্রফিটিকে গলিয়ে ফেলেছে। ১৯৭০ সালের পর আরেকটি নতুন ট্রফির যা ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি নামে পরিচিত, নকশা প্রণয়ন করা হয়। সাতটি মহাদেশ থেকে আগত বিশেষজ্ঞগণ ফিফাকে ৫৩টি মডেল প্রদর্শন করেন। শেষপর্যন্ত ইতালিয় নকশাকার সিলভিও গাজ্জানিগা র (Silvio Gazzaniga ) তৈরীকৃত নমুনা বিশ্বকাপ ট্রফি হিসেবে গৃহীত হয়। এ নতুন ট্রফিটির উচ্চতা ৩৬ সেন্টিমিটার, ১৮-ক্যারট সোনা দিয়ে তৈরি ও ওজন ৬,১৭৫ গ্রাম। এর ভিত্তি দু’স্তরের মূল্যবান ম্যালাকাইট দিয়ে তৈরী। ভিত্তির নিচের দিকে ১৯৭৪ থেকে আজ পর্যন্ত সকল বিশ্বকাপজয়ীর নাম গ্রথিত করা আছে। গাজ্জানিগা এ ট্রফির বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেনঃ
 
"The lines spring out from the base, rising in spirals, stretching out to receive the world. From the remarkable dynamic tensions of the compact body of the sculpture rise the figures of two athletes at the stirring moment of victory."
 
এই নতুন ট্রফি বিজয়ী দেশকে স্থায়ীভাবে আর দেয়া হয় না, তা তারা যতবারই জিতুক না কেন। বিশ্বকাপজয়ীদল পরবর্তী বিশকাপ পর্যন্ত ট্রফিটি তাদের কাছে রাখতে পারে। এরপর তাদেরকে সোনার প্রলেপ দেয়া নকল বিশ্বকাপ দেয়া হয়। আর্জেন্টিনা, জার্মানি (পশ্চিম জার্মানি হিসেবে), ইতালি ও ব্রাজিল প্রত্যেকে দ্বিতীয় ট্রফিটি দু’বার করে জিতেছে, ফ্রান্স কেবল একবার এটি জিতেছে। ২০৩৮ সালে এটির ভিত্তিতে নতুন বিজয়ী দলের নাম লেখার মত আর জায়গা থাকবে না। তখন এ ট্রফিটি হয়তো বাদ দেয়া হবে।
 
 
বাকিটুকু পড়ুন 'বিশ্বকাপ ফুটবলের আদ্যপান্ত পর্ব-২' তে...।
 
 
 © আহমদ আতিকুজ্জামান