• ফুটবল

এবার কি পারবে লিভারপুল?

পোস্টটি ৫৭২৭ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

এবারও কি হবে নাকি সপ্নভঙ্গের ইতিহাস রচিত হবে আরো একবার?

বলছিলাম লিভারপুলের কথা। প্রিমিয়ার লীগের খুব কাছে গিয়েও বারবার ব্যর্থ মনোরথে ফিরতে হচ্ছে মার্সিসাইডের এই ফুটবল ক্লাবটিকে। ২০০৮-০৯ মৌসুমে ফ্রেড্রিকো মাচেদা’র গোল আর আন্দ্রে আরশাভিনের ৪ গোল লিভারপুলের লীগ শিরোপার স্বপ্নকে আরো দীর্ঘায়িত করে।২০১৩-১৪ মৌসুমে জেরার্ডের স্লিপ, ক্রিস্টাল প্যালেসের সাথে ড্র ছিটকে ফেলে দেয় লিভারপুলকে শিরোপা দৌড় থেকে।

এবার কি পারবে লিভারপুল ২০১৮-১৯ মৌসুমে ১৯ তম লীগ শিরোপা ঘরে তুলতে? পারবে কি প্রিমিয়ার লীগ নামকরণ হওয়ার পর থেকে তা না জেতার অপবাদ ঘোচাতে? তা সময়ই বলে দিবে –

লিভারপুল গত মৌসুমে লীগে ৪ নম্বরে শেষ করলেও সারা ফুটবল বিশ্বের নজর কেড়েছিল উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে উঠে। হেভি মেটাল ফুটবল দিয়ে সামনে যেই প্রতিপক্ষই এসেছিল তাদেরই দুমড়ে মুচড়ে সামনে এগিয়ে গিয়েছিল ক্লপের শিষ্যরা। কিন্তু রিয়ালের সামনে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। দুর্বল বেঞ্চ, রামোস কর্তৃক সালাহ্‌র ইঞ্জুরি আর ফাইনাল খেলার অনভিজ্ঞতায় ভুগিয়েছে ক্লপের লিভারপুলকে।

ট্রান্সফার মার্কেট দলবদলঃ

এবার লীগ শিরোপার জন্য বেশ আগেভাগেই দল গুছিয়েছে মার্সিসাইডের এই ক্লাবটি। লাইপজিগ থেকে নাবি কেইটাকে আগের সিজনেই কিনে রেখেছিল লিভারপুল। ট্রান্সফার উইন্ডো খোলার সাথে সাথেই মোনাকো থেকে ফ্যাবিনহোকে হঠাৎ করেই কিনে নিয়ে ফুটবল বিশ্বকে এক আগাম বার্তা দিয়ে দেয় লিভারপুল। কৌটিনিয়োর সরাসরি রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে নাবিল ফেকির ছিল ক্লপের প্রথম পছন্দ। ফ্রেঞ্চ ক্লাব অলিম্পিক লিও এর সাথে ট্রান্সফার ফি এগ্রি করার পরেও নাবিল ফেকিরের হাঁটু সমস্যার কারনে শেষতক এই ট্রান্সফারটি আলোর মুখ দেখেনি। শোনা যাচ্ছে ক্লপ ফেকিরের জন্য আবার লিও’র কাছে যাবে জানুয়ারি মাসে। স্টোক থেকে জেরদান শাকিরি কিনে মানে আর সালাহ্‌র জন্য একটা দারুন ব্যাকআপ ই জোগাড় করলেন ক্লপ। সবচেয়ে বড় চমক অপেক্ষা করছিল আরো। একাডেমি গোলকিপার ড্যানি ওয়ার্ডকে নাম্বার ওয়ান গোলকিপার হিসেবে ঘোষনা দেয়ার ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় রোমা থেকে ব্রাজিলিয়ান গোলকিপার এলিসন বেকার কে দলে ভেড়ান ক্লপ যা এলিসন কে করে দেয় ওয়ার্ল্ডের সবচাইতে দামী গোলকিপার (যদিও কিছুদিন পর চেলসি কেপাকে সেই আসনে বসিয়ে দেয়)। বহুদিন পর লিভারপুল দল পেল কোন জাতীয় দলের প্রথম গোলকিপারকে।keita140818a

স্বপ্ন এবং বাস্তবতাঃ

মানে, সালাহ এবং ফিরমিনো কে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেই পারে লিভারপুল। সেই সাথে যোগ দিয়েছেন কেইটা, ফ্যাবিনহো, ভ্যান ডাইক এবং এলিসন বেকার। যাদুবাস্তবার এক স্বপ্নের ইউসিএল এর পাশাপাশি লীগে ম্যানসিটি কে টক্কর দেয়ার মতো টিমই গড়েছেন ইউর্গেন ক্লপ। গত ৫-৬ সিজনের মধ্যে এই প্রথম কোন ট্রান্সফার উইন্ডোতে (সামার) দলের বড় কোন প্লেয়ার যাচ্ছে না কোন ক্লাবে।alisson-croppd_1a67y8a3s0tbr1h4w5air7wkdw

মিডফিল্ড এবং পরাজয়ঃ

লিভারপুল দলের অন্যতম প্রধান দুর্বলতা ছিল মিডফিল্ড। জিনি ওয়াইনাল্ড্যাম, জেমস মিলনার, এম্রে চান, জর্ডান হেন্ডারসন নিয়ে গড়া মিডফিল্ডে আর যাই থাকুক ক্রিয়েটিভিটি একেবারেই ছিল না। মিডফিল্ড থেকে গোলখরা ছিল চোখে পড়ার মতো। সবার মধ্যেই একটা কমন ব্যাপার ছিল – এটাকে না যাওয়া। এবার এই মিডফিল্ডে নাবি কেইটার অন্তর্ভুক্তি দলকে নতুন এক ডাইমেনশান দিল। জাভিয়ের মাশচেরানো’র পর আর কোন ডিএম খেলেনি লিভারপুলের হয়ে। কাউন্টার এটাকিং টিমের বিপক্ষে অনেক সময়ই চূড়ান্ত ভোগান্তিতে পড়তে হত লিভারপুলকে। এবার ফ্যাবিনহোকে কিনে সেই ফাকা জায়গাও ভরাট করে দিলেন ক্লপ।

রক্ষনভাগ এবং ক্রন্দনঃ

একেকটা অ্যাটাক, একেকটা গোল। এমন সমীকরণই ছিল লিভারপুলের বিপক্ষে খেলা দলগুলোর। প্রতিটা কর্নার ছিল লিভারপুলের জন্য আত্মঘাতী। দুর্বল গোলকিপার, অপেক্ষাকৃত দুর্বল ডিফেন্স নিয়ে লিভারপুলের প্রতি ম্যাচেই সংশয় ছিল গোল খাবার। এবার অবশ্য সেই চিন্তা হতে কিছুটা হলেও রক্ষা পেতে পারে তারা। ভার্জিল ভ্যান ডাইক সেই ক্ষততে মলমের মতো কাজ করছেন। তাকে কেনার পর লিভারপুল এখন পর্যন্ত ফেব্রুয়ারী হতে এনফিল্ডে কোন গোল হজম করেনি। এর থেকে খুব সহজেই অনুমেয় কেন ক্লপ ভার্জিলের জন্য তিনমাস অপেক্ষা করেছিল! সাথে আছেন ক্রোয়েশিয়ার হয়ে ফাইনাল খেলা দেয়ান লভ্রেন। ব্যাক আপ হিসেবে আছেন মাটিপ, জো গোমেজ এবং একাডেমী ডিফেন্ডার নাথানিয়েল ফিলিপ্স। ফুলব্যাক হিসেবে আছেন একাডেমী প্লেয়ার ট্রেন্ট আলেক্সান্দার আরনোল্ড এবং হাল থেকে উড়ে এসে দারুন ফর্মে থাকা এন্ডি রবার্টসন। তাদের ব্যাকআপ হিসেবে আছেন যথাক্রমে নাথানিয়েল ক্লাইন এবং আল্বার্তো মরেনো। নতুন গোলকিপার এলিসন বেকারের বদলি হিসেবে থাকছেন সিমন মিনিওলে। যদি বড় কোন অঘটন না ঘটে তবে এই রক্ষনভাগের উপর ভরসা করাই যায়!virgil-van-dijk-8196102706

অ্যাটাক এবং স্বপ্নকল্পঃ

মানে সালাহ ফিরমিনো। এই ভয়ংকর ট্রায়ো লিভারপুলকে নিয়ে গিয়েছিল চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে। মানে সালাহ ফিরমিনো। এই ভয়ংকর ট্রায়ো মেতে উঠেছিল নারকীয় এক গোল উৎসবে। রোমা, পোর্তো, ওয়েস্ট হ্যাম, হাডার্সফিল্ড, ম্যান সিটি, আর্সেনাল কেউ বাদ যায়নি সেই তালিকা থেকে। এবার তাদের সাথে যোগ দিচ্ছেন নতুন করে নিজেকে খুজে পাওয়া ড্যানিয়েল স্টারিজ, ‘সুইস মেসি’ জেরদান শাকিরি। এই তিনজনের ব্যাকআপ হিসেবে আরো থাকছেন চেলসি থেকে কেনা ডমিনিক সোলানকি। হেভি মেটাল ফুটবল, ওয়ান টাচ ফুটবল, গতিময় ফুটবল সব কিছুরই পসরা সাজিয়ে বসেন এই ত্রয়ী। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া অসাধারণ। তারা জানেন কে কোথায় আছেন। সালাহ এবং ফিরমিনো নতুন কন্ট্র্যাক্ট সাইন করেছেন কিছুদিন আগেই। সাদিও মানেও পিছিয়ে নেই। নতুন কন্ট্র্যাক্টে খুব শীঘ্রই তাকে সাইন করতে দেখা যাবে। সাদিও মানেকে ফুটবলের সবচাইতে প্রেস্টিজিয়াস জার্সি ১০ নম্বর দিয়ে লিভারপুল বুঝিয়ে দিয়েছে সে দলের জন্য কতোটা গুরুত্বপূর্ণ। গত সিজনে গোলের পর গোল করেও ক্ষান্ত না হওয়া এই ত্রয়ী এবারো চাইবেন সব ভেঙ্গেচুরে ফেলতে। এবারই চাইবেন পেপ গার্দিওলার সিটিকে হারিয়ে ১৯ নম্বর শিরোপা ঘরে তুলতে।DawyqhgXkAIBmgM

পরিশিষ্ট

DQZq4loUIAEsmDq২৮ বছর ধরে লীগ না জেতার কষ্টকে বুকে জড়িয়ে আবারো লিভারপুল সমর্থকরা বসবে তাদের প্রিয় দলকে শিরোপা ঘরে তোলার স্বপ্ন বুনতে বুনতে। এ স্বপ্নের শেষ নেই। এ স্বপ্নের লাগাম নেই। কোন রাত নেই। কোন দিন নেই। এ স্বপ্নই বাঁচিয়ে রেখেছে লিভারপুলের কোটি কোটি ভক্তকে। এবারই হয়তো ক্লপ হাসবেন। এবারই হয়তো সালাহ্‌’র কাঁধে হাত রেখে মানে বলবেন, আমরা পেরেছি। এবারই হয়তো হেন্ডারসন শিরোপা তুলবেন ঘরে। এবারই হয়তো ভিআইপি বক্সে বসে ৮ নম্বর জার্সি পড়া কেইটার দিকে তাকিয়ে চোখের পানি লুকোবেন স্টিভেন জেরার্ড। এবারই হয়তো... এবারই