• ফুটবল

থমাস মুনিয়ের - একজন ডাকপিয়নের প্রফেশনাল ফুটবলার হয়ে উঠার গল্প!

পোস্টটি ৩৬৬০ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

"একজন পোস্টম্যান সারাদিনে কতটা পরিশ্রম করে, তা আপনি জানেন কি?? একজন পোস্টম্যান আপনার কল্পনার চেয়ে অনেক বেশি পরিশ্রমী। পরেরবার যকগন একজন পোস্টম্যান আপনার বাড়ির কাছে চিঠি নিয়ে আসবেন, আপনি প্লিজ দরজাটা খুলে তাকে হাসিমুখে বরন করে নিন, চাইলে আপনি তাকে এক কাপ চা'ও প্রস্তাব দিতে পারেন। কেনোনা, একজন পোস্টম্যান কে সারাটাদিন কি পরিমাণ কস্ট এবং পরিশ্রমে কাটাতে হয় তা আপনি ভাবতেও পারবেন না।

আচ্ছা, আমি একজন ফুটবলার হয়ে কেনো পোস্টম্যান সম্পর্কে বলছি?? কারণটা শুনবেন?? বেলজিয়াম জাতীয় দলে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করার আগে আমি একজন পোস্টম্যান ছিলাম! হ্যা, এটাই সত্যি, এইতো বছরখানিক আগেও এখনকার আমি 'ফুটবলার থমাস মুনিয়ের' একজন 'পোস্টম্যান থমাস মুনিয়ের' ছিলাম!

যখন আমার ১৮ বছর বয়স এবং সবে ফুটবল শুরু করেছি, তখন আমি ডাক সার্ভিসের চাকরি নিয়েছিলাম।রোজ ভোর পাঁচটায় জেগে উঠতাম এবং যাত্রা শুরু করতাম। বেলজিয়ামে এই পেশা খুব সুবিধাজনক নয়। আপনি যদি লন্ডন বা নিউ ইয়র্কের পোস্টম্যান হোন, তাহলে তা আপনার জন্যে আনন্দের কাজ হতে পারে, কেনোনা সেখানে সমস্ত এপার্টমেন্টগুলো একে অপরের কাছাকাছি। সেখানে বাসা থেকে বাসায় চিঠি পৌছানো খুবই সুবিধার। কিন্তু আমার কাজ ছিলো বেলজিয়ামের একটি ছোট্ট গ্রামে, যেখানে ঘরগুলো সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে, একটি থেকে অপরটির দুরত্ব অনেক।

ক্লান্ত হয়ে পড়তাম, বাড়িতে এসে পুরো বিকেল ঘুমিয়ে কাটাতাম। দুই মাস জীবিকার তাগিদে আমি এই কাজ করি, এরপর 'সেইন্ট-গোবেন অটোওভার' নামম একটি বড় অটোমোবাইল কারখানায় কাজ নিই। এইতো সেদিন, অর্থাৎ ২০১০ সালের কথা এসব। অথচ এখন আট বছর পরে, আমি বিশ্বকাপে আমার দেশের হয়ে খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছি! কি অদ্ভুত, না??

আপনার মনে হতে পারে, আমার এ গল্প হলিউড থেকে নেয়া। মাঝে মাঝে আমি আশ্চর্য হই, আপনারাও ভেবে আশ্চর্য হতে পারে। আমার জীবন এতটাই অদ্ভুত যে, আমিও নিজেকে মাঝে মাঝে বিশ্বাস করাই যে হ্যা এটা আমারই গল্প, থমাস মুনিয়েরের গল্প।

আমার বাবা একজন অপেশাদার ফুটবলার ছিলেন। আমার ছোটকাল থেকেই তিনি আমাকে একজন পেশাদার ফুটবলার হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। ফুটবলার হিসেবে তার অনেক স্বপ্ন ছিলো, যে স্বপ্ন গুলো তিনি আমাকে দিয়ে পুরণ করতে চেয়েছিলেন। আমি, মা আর আমার বোন প্রায়ই বাবার খেলা দেখতে যেতাম। আমার পুরো পরিবার ফুটবল পছন্দ করতো, এমনকি আমার দাদা-দাদি'ও।

আমার জন্ম সেইন্ট ওডে। এখানে স্কুলে যাওয়া যেত, ফুটবল খেলা যেত এবং জিমন্যাস্টিকস করা যেতো। আমি ফুটবল খেলে আনন্দ পেতাম, নিছক আনন্দ। কিন্তু বাবার চাওয়া ছিলো আরো বেশি। তিনি সবসময় আমার সাথে ট্রেনিংয়ে যেতেন এবং আমাকে আরো ভালো করার জন্য জোর দিতেন। যদি আমি খেলতে যেতে না চাইতাম, তাহলে তিনি আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিতেন।

আমার বয়স যখন ১২ বছর, আমার জীবনে ঝড় নেমে আসে। আমার বাবা মা আলাদা হয়ে যায়। যদিও এটি হউয়ারই ছিলো। আমার বাবা অনেক রাগী এবিং জেদি মানুষ ছিলেন। যা আমার মা'র পক্ষে মেনে নেওয়া কস্ট সাধ্য ছিলো। ডিভোর্সের পরে আমি ও আমার বোন ছিলাম আমার মায়ের সাথে। আমাদের লালনপালন করা আমার মা' জন্য কঠিন ছিলো, খুব কঠিন। তিনি অনেক পরিশ্রম করতেন। তিনি ভোর ৬ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত নার্স হিসেবে কাজ করতেন, এরপর অন্যের বাড়িঘর পরিষ্কার করতেন অতিরিক্ত আয়ের আশায়, ফিরতেন রাত ৯ টার দিকে, এরপর আবার একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করার জন্য চলে যেতেন। আমার মা সবসময় ধন্যবাদ প্রাপ্য, কেনোনা এত পরিশ্রম কেবল আমাদের জন্যেই ছিল। আমার মা সবসময় ধন্যবাদ প্রাপ্য, কেনোনা তিনি চাইতেন আমাদের ফ্রিজ ভরা খাবার রাখতে, আমাদের ভালো কাপড়চোপড় পড়াতে।

আমার বয়স যখন ১৩ বছর, তখন আমি বেলজিয়ামের স্ট্যান্ডার্ড লীগের একটি বড় ক্লাবের একাডেমিতে সুযোগ পাই। কিন্তু সেখানে কিছু সমস্যা ছিলো,একাডেমিটা ছিলো আমাদের গ্রাম থেকে দূরে। সেসময় বাধ্য হয়ে একাডেমির কাছাকাছি একটি বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম। প্রথমে খারাপ লেগেছিলো, বাড়িকে মিস করতাম। ধীরে ধীরে অনেক বন্ধু পেয়ে যাই, অনেক সুন্দর সময় কাটতে থাকে। প্রতিরাতে আমি তখন স্বপ্ন দেখতাম, সম্ভবত আমি বেলজিয়াম প্রথম বিভাগ ফুটবল খেলার পথেই আছি।

আমার বয়স যখন ১৫ বছর, একদিন আমার তখনকার কোচ আমাকে এবং আমার মাকে উনার অফিসে ডাকলেন। তিনি যা বললেন, সে সম্পর্কে আমার কোন ধারণাই ছিলোনা। "আমরা থমাসকে ছেড়ে দিচ্ছি।" আমি প্রচণ্ড কস্ট পেয়েছিলাম, যেনো সবকিছু হারাতে বসেছলাম।

আমার মনে আছে, আমি আর মা একে অপরের দিকে কিছুক্ষণের জন্য নিরব তাকিয়েছিলাম। নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে কোচের দিকে ফিরে তাকিয়ে বলেছিলাম, 'আচ্ছা, ঠিকাছে! এখানেই শেষ তাহলে??'

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এই ঘটনাটি আমার জন্যে কোন বিপর্যয় ছিলোনা। কারণ, কেবল ফুটবলই আমার জীবনে একমাত্র আনন্দ ছিলনা। 'নিয়মিত স্কুলে যাবো, ঘুড়বো, সিনেমা দেখতে যাবো, জীবনকে উপভোগ করব।'

বাবা মা'কে বলেছিলাম, ভালোই হয়েছে ওরা আমাকে ছেড়ে দিয়েছে, ফুটবলে আমার আর আবেগ নেই,আমার স্বপ্ন মারা গেছে। ভেবে দেখুন, আমার বাবার কেমন অনুভূতি হয়েছিলো তখন?? আমরা ফুটবল সম্পর্কে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আমি ভালো থাকলেও, বাবা ছিলেননা। কেনোনা, ফুটবল ছিল তার জীবন। তিনি খুব হতাশ হয়েছিলেন। তিনি আমায় দিয়ে তার স্বপ্নগুলো পুরণ করতে চেয়েছিলেন। এই ঘটনায় তাই আমার স্বপ্ন ধ্বংস হওয়ার সাথে তার স্বপ্নগুলোউ ধ্বংস হয়ে গেছে।


আমি ভেবেছিলাম আমার মা আমাকে বুঝবে। কিন্তু না! তিনি আমার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলেন। 'ফুটবল তোমার জীবন, তোমাকে খেলতেই হবে।' সেসময় তিনি ভিরটন নামের ছোট্ট একটি ক্লাবের কোচকে ডেকে এনে বলেছিলেন - 'আমার ছেলে স্ট্যান্ডার্ড লীগে ছিল, দুর্ভাগ্যবশত তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, সে কি নিজেকে প্রমাণের জন্য আপনার ক্লাবে যেতে পারে?? আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, সে খুব ভালো।'

তিনি আমার মধ্যে এমন কিছু দেখেছিলেন, যা আমি ছিলাম না। প্রতি রবিবার, যখন আমরা আমার বাবার খেলা দেখতে যেতাম, তখন আমি প্রায়ই বলে কিক মারতাম। এটা আমার জন্যে সাধারণ এবং খুব স্বাভাবিক ছিলো। কিন্তু মা সেখানে অন্য কিছু খুঁজে নিয়েছিল।আমার মা আমাকে সবার চেয়ে ভাল জানেন ও বুঝেন। আমি ভিরটনের যুব দলের হয়ে একটি ট্রায়াল ম্যাচ খেলেছিলাম। আমরা ১৫-৩ গোলে জিতেছিলাম, যার ১০টি গোল আমি একাই করেছিলাম। খেলা শেষে কোচ আমায় বলেছিল - তুমি কত নাম্বার জার্সি চাও??

এই ঘটনাটি যে আমাদের জীবন পরিবর্তন করে দিবে, এমনটা মনে হয়নি। কারণ, ভিরটন ছিলো তৃতীয় বিভাগের দল, আর তাদের সিনিয়র খেলোড়ারদের মাসিক বেতন ছিল ৪০০ ইউরো। অন্য সবকিছু বাদ দিয়ে কেবল স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করার জন্যও এটি যথেষ্ট ছিল না।

ভাবছিলাম, যদি আমার মা ফোন কলটি না করে কোচকে আমার খেলা না দেখাতো!? আমার জীবনের গতিপথ সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়ে যেতে পারত!

স্ট্যান্ডার্ড লীগ থেকে আমাকে ছেড়ে দেওয়ার পর আমার বাবা ফুটবল সম্পর্কে আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন; এও বলেছিলেন তিনি ভিরটনে আমার খেলা দেখতে আসবেন না। কিন্তু এক রাতে, যখন আমি ভিরটনে আমার প্রথম সিনিয়র ম্যাচ খেলছিলাম, আমি গ্যালারিতে তাকিয়েছিলাম এবং একটি কোণায় তাকিয়ে দেখলাম - বাবা বসে আছে, হ্যা আমার অভিমানী রাগী বাবা বসে আমার খেলা দেখেছিলেন।

 

এটি একটি অদ্ভুত সময়কাল ছিল; কারণ, যখন আমি মাধ্যমিক পড়া শেষ করি, আমার কোন গতিপথ ছিলোনা। না আমি ফুটবলার হউয়ার সুযোগ সুবিধা পাওয়ার মত পর্যাপ্ত টাকা জোগাড় করতে পারছিলাম, না আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার মতো কোন সময় হাতে ছিলো। অনিচ্ছাসত্ত্বেও আমি একজন পোস্টম্যান হিসেবে চার মাস কাজ করেছি, এর পরে অটোমোবাইল কোম্পানি তে কাজ করছি। আমাকে ভোর ৫ টায় জাগতে হত, সকালের নাস্তা করে কাজের জন্য আধাঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে যেতে হত। কারখানাটি এত বড় ছিল যে, একদিক থেকে অন্য দিকে যেতে গাড়ির প্রয়োজন ছিলো। কিছু কফি খেয়ে ভোর ৬ টায় আমার কাজ শুরু করতে হত। আমার কাজের স্পট উইন্ডশীল্ড অ্যাসেম্বলি বিভাগে ছিল। আমি প্রতিদিন দুপুর ২ টা পর্যন্ত এসব কাজ করতাম। এরপর ট্রেনিংয়ে যেতাম। আমার কারখানার সহকর্মীদের কখনও ভোলা সম্ভব না, তারা আমার ভালো বন্ধু ছিলো। তারা ফুটবল ফ্যান'ও ছিলো বটে।

আমি স্ট্রাইকার হিসেবে খেলতে শুরু করি এবং অবিশ্বাস্য সব গোল করতে শুরু করি। কখনও বাম পায়ে, কখনও ডান পায়ে, আবার হেডে; যার কোনোটা ১০ মিটার দূর থেকে, আবার কোনোটা ৫০ মিটার দূর থেকে। আমি খুশিতে আত্মহারা ছিলাম। আমি নিজেও বুঝছিলাম না, কি হচ্ছে। আমার গোলের কিছু ভিডিও ইউটিউব এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। বেলজিয়ামের মানুষজন এই গোলগুলো নিয়ে মাতামাতি শুরু করে দেয়। 'থার্ড ডিভিশনের একটা ছেলে এমন গোল করছে!'

তারা জানতোনা, এই ছেলেটি একটি গাড়ির কারখানায় কাজ করতো। আপনারা কি জানেন যে, আমি কিভাবে সেই অসাধারণ গোলগুলো করতে পেরেছি?? কারণ, আমি স্বাধীনভাবে খেলার অনুভূতি পেয়েছিলাম, আমার কোন বাধ্যবাধকতা ছিল না। সাইড লাইন থেকে আর কেউ এটা বলার জন্য ছিল না যে, 'তোমাকে এটা করতেই হবে, অন্যথায় তুমি সফল হতে পারবে না'। আমি খেলতাম আনন্দের জন্য, আমি খেলতাম আবেগ দিয়ে, আমি খেলতাম ফুটবলের প্রতি ভালবাসার দিয়ে।


এরপরে হঠাৎ করেই কিছু বড় ক্লাব আমার জন্যে আগ্রহী হয়ে ওঠে। আমার দাম প্রায় ১০০,০০০ ইউরো ছিল, যা তাদের জন্য কোন ব্যাপারই ছিল না। তাই তারা ১৯ বছর বয়সী এক ছেলেকে এই দামে কিনে ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত ছিলো।

আমি কখনোই ভুলব না সেদিনের কথা যখন আমার এজেন্ট আমাকে ডেকে বলেছিল, 'ক্লাব ব্রুগা আপনাকে চায়'।

বেলজিয়ামের শীর্ষ ক্লাব আমাকে চায়, আমি সত্যিই এটা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না!

আমি তাকে জিজ্ঞেস করতেই থাকি - এটা কি সত্যি?? তুমি কি নিশ্চিত??

আমি ছিলাম কজন পোস্টম্যান, একজন কারখানা কর্মী, তৃতীয় বিভাগের একজন খেলোয়াড়। কিন্তু যে সুযোগ আমি পেয়েছিলাম, তা প্রতি মিলিয়নে হয়তো কেবল একজন পায়!

আমি এখন আমার মা'র কস্টের কিছু প্রতিদান দিতে পারব!

আমার বাবা সবাইকে ফোনে জানাতে লাগলো - 'আমার ছেলে পেরেছে! আমার ছেলে ক্লাব ব্রুগাতে খেলবে!'

আরেকটি বড় মুহূর্ত ছিল যখন আমি আমার দাদাকে খবরটি দিতে গিয়েছিলাম। ক্লাব ব্রুগা তাঁর দল ছিল! তিনি তার সারা জীবন ক্লাব ব্রুগাকে সমর্থন করেছেন!

"দাদু, বলো তো কোন ক্লাব আমাকে এখন সাইন করাতে চাচ্ছে!?" তিনি একটি মুহূর্তের জন্য দ্বিধা করেননি বলতে, "ক্লাব ব্রুগা??" আমি বললাম, "হ্যাঁ, ক্লাব ব্রুগা!"

ক্লাব ব্রুগায় খেলার সুযোগ পাওয়ার পর থেকে আমি কখনো শুরুর একাদশ থেকে বাদ পড়িনি। প্রথম দু বছর আমি স্ট্রাইকার হিসেবে খেলতাম, এবং এরপর তারা আমাকে রাইটব্যাক হিসেবে খেলায়।

২০১৩ সাল, আমি জাতীয় দলে প্রথম ডাক পেয়েছিলাম!বেলজিয়ামে আমার অভিষেক স্মরণীয় ছিলো! আমার মনে পড়ে, আমার মা আমাকে বলেছিল যে, গ্রামের সবাই তাঁকে ডেকে বলছিল, "অহ, থমাস টিভিতে! সে বেলজিয়ামের জন্য খেলছে! এটা অবিশ্বাস্য!"

ইউরো ২০১৬-এর জন্য স্কোয়াড টেলিভিশনে লাইভ ঘোষনা করা হচ্ছিলো। আমি এবং আমার পরিবার এটি দেখছিলাম এবং বিয়ার ও শ্যাম্পেনের সাথে প্রস্তুত ছিলাম। তারপর সেই স্বর্গীয় অনুভূতি সম্পন্ন শব্দগুলো শোনা গেলো!

"থমাস মুনিয়ের সিলেক্টেড"

ডিসেম্বর ২০১৫ সালে, আমার ছেলে জন্মগ্রহণ করে। এটা আমার জীবনে একটি নতুন শুরু ছিল। পরম সেরা অনুভূতি ছিলো। ডিসেম্বর মাসে আমার ছেলে এসেছিল, তারপর আমি ক্লাব ব্রুগার হয়ে লীগ শিরোপা জিতে নেই।

এরপর আমি পিএসজি তে সাইন করি।

আমার সন্তান প্যারিসের লোগো দেখলেই বলে উঠে, এটা বাবার। হয়তো বছরের দুয়েকের মাঝে সে বলতে শিখবে, আমার বাবা একজন ফুটবল খেলোয়াড়। আমি কিভাবে ফুটবলার হলাম, আশা করি সে তা কখনোই জানতে চাইবেনা!


আমি কোথায় ছিলাম! এখন কোথায় আছি! পোস্টম্যান কিংবা গাড়ির কারখানায় কাজ করা থেকে এখন নেইমারের সাথে ফুটবল খেলা!

জীবন মাঝে মাঝে কল্পনার চাইতেও অনেক বেশি সুন্দর হয়!"


- থমাস মুনিয়ের; প্যারিস সেইন্ট জার্মেই & বেলজিয়াম!


['দ্যা প্লেয়ার্স ট্রিবিউন' থেকে অনূদিত]