• ফুটবল

যাকে ছাড়া ফুটবল অসম্ভব!

পোস্টটি ৩৪২০ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

ফুটবল খেলাটি এত সুন্দর,আকর্ষণীয় আর মজাদার হতোনা, যদি কিছু ফুটবল লেজেন্ডের জন্ম হতোনা। তারা আজকে ফুটবলকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। তারা অদম্য, দুর্বার, তারা ফুটবলের সত্যিকারের সৈনিক। তাদেরই একজন জন জ্বক স্টেইন, যাকে ছাড়া ফুটবল অসম্পুর্ন!

এই স্কটিশ কিংবদন্তির জন্ম ১৯২২ এর ৫ অক্টোবর। ব্ল্যান্টায়ার ভিক্টোরিয়া ও আলবিয়ন রোভার্স ক্লাবে খেলার সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিশাপ ‘রিজার্ভড অকুপেশানের’ নামে তাঁকে কাজ করতে হয় কয়লা খনিতে। ১৯৫০ সালে পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে তিনি যোগ দেন ওয়েলসের স্লানেস্লি টাউনে। তবে সেখানে এক মৌসুম খেলেই মোহমুক্তি হয় স্টেইনের। তিনি চলে আসেন স্কটল্যান্ডে।

১২০০ পাউন্ডে রিজার্ভ খেলোয়াড় হিসেবে তাঁকে কিনে নেয় সেল্টিক। কিন্তু অন্যান্য খেলোয়ারদের ইনজুরির কারণে মাঠে নামার সুযোগ পেয়ে যান তিনি। একসময় অধিনায়কের বাহুবন্ধনীও চলে আসে তাঁর হাতে। তাঁর নেতৃত্বেই ১৯৫৩-৫৪ মৌসুমে লিগ-কাপের ডাবল জিতে সেল্টিক। কিন্তু ইনজুরির জন্য খেলাটাকে বেশিদিন টেনে নিয়ে যেতে পারেননি। ১৯৫৭ সালের ২৯ জানুয়ারী তিনি অবসর নেন। অবসরের পরই সেল্টিকের রিজার্ভ টিমের দায়িত্ব নেন স্টেইন। কিন্তু এমন ক্ষুরধার মস্তিষ্কের সাথে কেবল রিজার্ভ টিম কোনভাবেই যায় না। ডানফারম্লিনের ম্যানেজার হয়ে এটারই প্রমাণ দেন স্টেইন।

21

তার অধীনে ১৯৬১ তে স্কটিশ কাপ জেতার সাথে সাথে ইউরোপিয়ান ফুটবলেও সাফল্য পায় ডানফারম্লিন। সেখান থেকে তিনি যোগ দেন অবনমন অঞ্চলের দল হাইবারনিয়ানে। স্টেইনের জাদুতে চিত্র পাল্টে যায় দলের। দশ বছরের মধ্যে প্রথম শিরোপা জিতে হাইবারনিয়ান। এরপর প্রীতি ম্যাচের জন্য শক্তিশালী রিয়াল মাদ্রিদকে আমন্ত্রণ জানান স্টেইন। ২-০ গোলে জিতে কোচের আস্থার প্রতিদান দেয় খেলোয়াররা।

এবার ফেরার পালা নিজ ভুবনে, ১৯৬৫ সালে ম্যানেজার হিসেবে সেল্টিকে ফিরে আসেন স্টেইন। সেল্টিকে ১৩ বছরের ম্যানেজারিয়াল ক্যারিয়ারে জিতেন ২৫টি ট্রফি। স্কটিশ লিগ চ্যাম্পিয়ন্সশিপ জিতেন মোট ১০টি, এর মধ্যে আছে ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৪ পর্যন্ত জেতা টানা ৯টি লিগ। এছাড়াও জিতেন ৮টি স্কটিশ কাপ, ৬টি লিগ কাপ ও সেল্টিকের একমাত্র ইউরোপিয়ান কাপ (বর্তমানে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ)। ১৯৬৭ সালের লিসবনের ফাইনালে ইন্টার মিলানকে সেল্টিক হারালে স্টেইন প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ব্রিটিশ দল নিয়ে ইউরোপিয়ান কাপ জেতার গৌরব অর্জন করেন। সেল্টিকের ওই দলকে বলা হত ‘লিসবন লায়ন্স’।

stein

এত এত সাফল্যের পরও ক্লাব কর্তৃপক্ষ তাকে ম্যানেজারের ভূমিকা থেকে সরিয়ে ক্লাবের পুল কোম্পানির ম্যানেজমেন্টে নিয়োগ দিতে চাইলে একরকম অভিমান নিয়েই সেল্টিক থেকে বের হয়ে আসেন স্টেইন। এরপর লিডস ইউনাইটেডের ম্যানেজার হয়ে অল্প কিছুদিন কাজ করার পর ৫৬ তম জন্মদিনে স্কটল্যান্ডের জাতীয় দলে ম্যানেজার হিসেবে যোগ দেন স্টেইন।

১৯৮২ বিশ্বকাপে তার অধীনেই মূল পর্বে খেলে স্কটল্যান্ড। ১৯৮৫ এর ১০ সেপ্টেম্বর কার্ডিফে ওয়েলসের সাথে বিশ্বকাপের কোয়ালিফায়িং ম্যাচে ১-১ এ ড্র করে প্লে-অফ খেলা নিশ্চিত করে স্কটল্যান্ড। কিন্তু ম্যাচের শেষেই হার্ট এটাকে আক্রান্ত হন স্টেইন। একটু পরেই স্টেডিয়ামের মেডিকেল রুমে মাত্র ৬২ বছর বয়সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এই কিংবদন্তি। গুরুর মৃত্যু বিশাল প্রভাব ফেলে সহকারীর উপর এই সহকারীই ‘৮৬র বিশ্বকাপের বাকিটা পথ ম্যানেজারের ভূমিকায় স্কটল্যান্ডকে নেতৃত্ব দেন, সহকারীর নাম স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন ।

এলেক্স ফার্গুসনের সাথে বিগ জ্বক

স্টেইন যে কোন মাপের ম্যানেজার ছিলেন তা বোঝা যায় ফার্গুসনের এই কথায়,

“বিগ জকের সহকারী হিসেবে বাকি জীবন পার করতে পারলে আমি খুশি হতাম।”

মৃত্যুর পর ‘স্কটিশ স্পোর্টস হল অফ ফেম’ ও ‘স্কটিশ ফুটবল হল অফ ফেম’ এ যোগ হয় স্টেইনের নাম। ২০০২ এ তিনি সমর্থকদের ভোটে সেল্টিকের সর্বকালের সেরা ম্যানেজার নির্বাচিত হন। শুধু সেল্টিক না, ২০০৩ সালে সানডে হেরাল্ডের পোলে সর্বকালের সেরা স্কটিশ ম্যানেজারও হন স্টেইন। সেল্টিক পার্কের বাইরে ইউরোপিয়ান কাপের শিরোপা হাতে দাঁড়িয়ে থাকা স্টেইনের ব্রোঞ্জ মূর্তির নিচে লেখা তাঁর এক বিখ্যাত বানী ,

“সমর্থকদের ছাড়া ফুটবল কিছুই না।”

a_celtic_scarf_is_wrapped_around_the_staue_of_celtic_legend_jock_724357

বিগ জক, আপনাকেও ছাড়া ফুটবল সম্পূর্ণ না, ধন্যবাদ সবকিছুর জন্য।

© আহমদ আতিকুজ্জামান ।