• ক্রিকেট

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ: সাব্বির পর্ব।

পোস্টটি ৩৬৯৬ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

সাব্বির রহমান রুম্মন। বাংলাদেশ জাতীয় দলের হার্ড হিটার ব্যাটসম্যান। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের ১৫ সদস্যের স্কোয়াডের অন্যতম সদস্য সাব্বির।

ক্রিকেট মাঠের পারফর্মেন্স নিয়ে যতটা না আলোচনায় থাকেন সাব্বির তারচেয়ে বেশি মাঠের বাহিরের সংবাদ দিয়ে আলোচনায় থাকেন ডান হাতি এই হার্ড হিটার। নারীঘটিত কেলেঙ্কারি, স্টেডিয়ামে দর্শক পিটানো সহ নানান অপবাদে সমালোচিত এক ক্রিকেটারের নাম সাব্বির রুম্মন। এসব কর্মকাণ্ড তাকে ব্যাডবয় খেতাব এনে দিয়েছে। যা মোটেও একজন পরিশীলিত ক্রিকেটার থেকে কাম্য নয়। তার ক্রিকেট মাঠের বাহিরের কর্মকাণ্ড তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারেও বিরূপ প্রভাব ফেলেছা, এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। ক্রিকেট মাঠে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ক্রিকেটার সাব্বির রুম্মন কে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ৬ মাসের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকেও নিষিদ্ধ করেন এটা যে কোনো ক্রিকেটারের জন্যই হানিকর। 

তবে ক্রিকেটার সাব্বিরের ক্যারিয়ারের শুরুটা ছিল স্বপ্নের মতো। ২১ নভেম্বর ২০১৪ সালে বাংলাদেশে সফরকারী জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ৫ম ওডিয়াইতে অভিষেক ঘটে ব্যাটসম্যান সাব্বির রুম্মনের। নাসির হোসেনের স্থলাভিষিক্ত সাব্বিরের জন্য সেইদিনটি ছিল আরো স্পেশাল, কারণ সেদিন ছিল তার ২৩তম জন্মদিন। নিজের জন্মদিনে অভিষিক্ত ম্যাচটা স্মরণীয় করে রাখলেন সাব্বির। মাত্র ২৫ বলে ৪৪ রানের হার না মানা এক ইনিংস খেলেন ডেভুটার্ন সাব্বির রুম্মন। তার এই ইনিংসে ছিল ৩টি করে চার ও ছক্কার মার। এই ইনিংস খেলে সাব্বির জানান দিয়েছিলেন হার্ড হিটিং ব্যাট করতে তিনি কতটা পারদর্শী। যদিও সেটা পরবর্তী তে কন্টিনিউ করতে পারেননি সাব্বির।

রাজশাহীর ছেলে সাব্বিরের উঠে আসা কিন্তু রক্ষণশীল পরিবার থেকে। তবে ব্যাটিংয়ে সাব্বির মোটেও রক্ষণাত্মক নয় বরং পুরোদম্ভর আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেই তিনি জাতীয় দলের হয়ে নিয়মিত ক্রিকেট খেলেছেন। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করলেও সাব্বিরের ক্যারিয়ার কিন্তু ততটা সমৃদ্ধ হতে পারেনি। তার পারফর্মেন্স গ্রাফটাও ছিল নিম্নমুখী। এখন পর্যন্ত ৬১ টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন সাব্বির। ৫৪ ইনিংসে ব্যাট করে ২৫.৯৪ গড়ে সাব্বিরের রান সর্বসাকুল্যে ১২১৯। শতক রয়েছে একটি আর অর্ধশতক আছে ওডিয়াইতে ৫টি। তার এই ক্যারিয়ার স্টেট আধুনিক যুগের ক্রিকেটারের সাথে মোটেও মানানসই নয়। তবে এবছর দারুণ ছন্দে আছেন সাব্বির। তার ক্যারিয়ার বেস্ট ও একমাত্র শতক যে এবছরই করেছেন। নিউজিল্যান্ড এর মাটিতে বাংলাদেশ যখন ব্যর্থতার অতল গহ্বরে নিমজ্জিত, তখন সাব্বির ওডিয়াইতে তার বেস্ট ইনিংস টি খেলে নতুন করে আলোচনায় আসেন। ১১০ বলে ১০২ রানের ইনিংসটিতে ছিল ১২টি চারের মার ও ২টি বিশাল ছক্কার মার। এরপর চলতি বছরে ঘরোয়া ক্রিকেটেও দারুণ পারফর্মেন্স করে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলের সারথি হয়েছেন ব্যাডবয় সাব্বির রুম্মন।

সাব্বিরের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন নাই, প্রশ্ন হচ্ছে তার ধারাবাহিতা নিয়ে। তার ব্যাটে পাওয়ার হিটিং নানান শট আছে। আর সে এসব শট খেলতে পারদর্শীও বটে। তবে তার ঘাটতি বোধহয় মনস্তাত্ত্বিক জায়গায়। তার পারফর্মেন্স সে প্রতিম্যাচে ধরে রাখতে পারেনা। তবে এবছরে তার ফর্ম তাকে বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে দিয়েছে। সাব্বিরের বিশ্বকাপ যাত্রা কিন্তু ২০১৫ সালেই শুরু হয়েছে। ২০১৫ বিশ্বকাপে সাব্বিরের বিশ্বকাপ অভিষেক হয়। ৬ ম্যাচ খেলে সাব্বিরের পারফর্মেন্স ছিল অ্যাভারেজ। ৬ ম্যাচে ব্যাট করে ৩৬.৪০ গড়ে সাব্বির রান করেছেন ১৮২। আর এই রান করতে গিয়ে সাব্বির মোট বল ফেস করেছেন ১৮৫টি তার স্ট্রাইক রেট ৯৮.৩৭। মোট চার মেরেছেন ১৮টি আর ছক্কা ৫টি। বিশ্বকাপে তার বড় কোনো ইনিংস নাই। একমাত্র ফিফটিটি করেছিলেন শ্রীলংকার সাথে মেলবোর্নে। ৫৩ রানেই ইনিংসটিই তার বিশ্বকাপ সেরা ইনিংস। 

বিশ্বকাপ হল নিজেকে প্রমাণের সর্বোচ্চ মঞ্চ। বিশ্বকাপের আসরে নিজের দেশের প্রতিনিধি হওয়া প্রতিটি খেলোয়াড়ের জন্যই স্বপ্নের। দেশের হয়ে সেরা পারফর্ম করে আন্তর্জাতিক ভাবে খ্যাতি অর্জন করার সেরা মঞ্চ হল বিশ্বকাপ।  প্রতিটি দলই আলাদা প্রস্তুতি নিয়ে যেমন খেলতে যায়, ঠিক তেমনি প্রত্যেক প্লেয়ারেরই বিশ্বকাপের জন্য থাকে আলাদা প্রস্তুতি, ভিন্ন ভিন্ন পরিকল্পনা ।

২৭ বছর বয়সের সাব্বিরের জন্যও বিশ্বকাপ হতে পারে সেরা মঞ্চ নিজেকে ব্যাডবয় তকমা থেকে বের করে আনার। খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসার, নিজেকে প্রমাণ করার, নিজের পারফর্মেন্স কে ছাড়িয়ে যাওয়ার এটাই হতে পারে সাব্বিরের সেরা সুযোগ।

ডান হাতে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের সাথে সাব্বিরের স্পিনটাও কিন্তু কার্যকরী হতে পারে বিশ্বকাপে। আর ইংল্যান্ড এর মাটিতে সাব্বিরের ব্যাটিংয়ে ভাল করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।  কারণ সাব্বির পেস বল ভাল খেলেন। আর এবারের বিশ্বকাপটা হচ্ছেও পেস বোলিং কন্ডিশনে। 

বিশ্বকাপে নিজের সেরা খেলাটা খেলুক সাব্বির। পারফর্মেন্স ধারাটা কন্টিনিউ করুক সেটাই প্রত্যাশা । অতীত ভুলে ভবিষ্যৎ কে উজ্জ্বল করতে হলে সাব্বিরের ভাল করার বিকল্প নেই। সাব্বিরের জন্য শুভ কামনা। শুভ কামনা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য।