• ক্রিকেট

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ: মিরাজ পর্ব।

পোস্টটি ২৪৭১ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

মেহেদি হাসান মিরাজ। তরুণ অলরাউন্ডার। বিশ্ব ক্রিকেটের অনন্য সম্পদ বলা যায় তাকে। একজন পরিপূর্ণ এবং পরিপক্ব ক্রিকেটারের যতগুলো গুণ থাকা আবশ্যক তার প্রায় সবগুলোই বিদ্যমান এই তরুণ তুর্কির মধ্যে।বয়স মাত্র ২২ ছুঁইছুঁই, আর এরই মধ্যে নিজের নামের পাশে যুক্ত করে ফেলেছেন কত্তশত অর্জন।

খুলনার এক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা মিরাজ কিশোর বয়স থেকেই দেখিয়েছেন প্রতিভার ঝলক। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব ১৯ দলের হয়ে দারুণ সময় পার করার পর জাতীয় দলে অভিষেক হয় ১৯ বছরের মেহেদী মিরাজের। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে নিজের জাত চিনিয়েছেন মিরাজ। বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিয়ে নিজে খেলেছেন দারুণ ক্রিকেট।  ব্যাটে বলে পারফর্ম করে হয়েছেন অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের সেরা প্লেয়ার। তার পরই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন মিরাজ। বিশ্বকাপে তার পারফর্মেন্স এর পর সবাই ধরেই নিয়েছিল ওডিয়াইতে তার অভিষেক হবে, কিন্তু না, তার জাতীয় দলে অভিষেক হল টেস্টে। ঘরের মাঠে সেই বছরই প্রতাপশালী ইংল্যান্ড এর সাথে মিরাজের অভিষেক হয়। ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজটি ছিল মিরাজের জন্য সর্বাধিক স্মরণীয়।  অভিষেক সিরিজেই ১৯ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরা মিরাজ পুরো বিশ্ব ক্রিকেটে হুলুস্থুল ফেলে দেয়। এর পর আর পিছনে পরে থাকতে হয়নি। বাংলাদেশ দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছেন মিরাজ। নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়।

 

মেহেদি মিরাযের ওডিয়াই ক্যারিয়ার টেস্টের মতো ততটা আলো ঝলমলে নয়। এখন পর্যন্ত ওডিয়াইতে ২৮ ম্যাচ খেলেছেন মিরাজ। ১৬ ইনিংসে ব্যাট করে ২৯১ রান করেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ফিফটি তার ১টি। ডান হাতি অফব্রেক বোলার মিরাজের ওডিয়াই বোলিং স্টেটও টেস্টের মিরাজসুলভ নয়। ২৮ ম্যাচের ২৭ ইনিংসে বল করে নিয়েছেন ২৯ উইকেট। বেস্ট ২৯ রানে ৪ উইকেট। তবে তার ইকনোমি বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে বেস্ট। ৪.৩৮ ইকনোমি নিয়ে তিনি বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে কৃপণ বোলার। আর এটাই বোলার মিরাজের প্লাস পয়েন্ট। 

এখন জাতীয় দলে মিরাজের ভূমিকা শুধু বোলার হলেও সে কিন্তু তা মোটেও নয়। সে সাকিব আল হাসানের মতো জেনুইন অলরাউন্ডার হিসেবেই খেলতেন জাতীয় দলে অভিষেক হওয়ার পূর্বে। বোলার মিরাজের ব্যাট করার যে যথেষ্ট সামর্থ্য আছে তা সে বহুবার প্রমাণ করেছে। ২০১৮ সালে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে টিম ম্যানেজমেন্ট যখন ৮-৯ নাম্বারে ব্যাট করা মেহেদি হাসান মিরাজ কে ওপেনিংয়ে নামিয়ে  দিছিল, তখন বিশ্ব ক্রিকেট অবাকই হয়েছিল। তবে প্রথমবারের মতো ওপেনিংয়ে তাও আবার এশিয়া কাপের ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টে খেলতে নেমে মিরাজ দেখিয়েছিলেন তার ব্যাটিং ক্যারিশমা। লিটন দাশের সাথে ১২০+ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দিয়েছিলেন। সেখানে তার অবদান ছিল ৩০+ রান। অথচ ঐ টুর্নামেন্টে আগের একটা ম্যাচেও বাংলাদেশ ৫০ ঊর্ধ্ব রানের পার্টনারশিপও করতে পারেনি ওপেনিংয়ে।

বর্তমানে মিরাজ কে পুরোপুরি বোলার তকমা দিয়ে ৮-৯ নাম্বারে ব্যাটিং করানো হয়, যা মোটেও ঠিক হচ্ছে না। কারণ সে টপ বা মিডল অর্ডারে খেলার মতো ব্যাটসম্যান।  সে তো হার্ড হিটার ব্যাটসম্যান না, যে ঐ পজিশনে ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিং করে নজর কাড়বে। মিডল অর্ডারে ব্যাট করলে যোগ্য সাথী পেলে সে যে দারুণ ব্যাট করে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু এটাও বাস্তবতা যে বর্তমান বাংলাদেশ দলে টপ বা মিডল অর্ডারে মিরাজ কে ছেড়ে দেওয়ার মতো যায়গা খালি নেই। তবে মিরাজের বয়স মাত্র ২১। অফুরন্ত সময় এখনো তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে, অদূর ভবিষ্যতে সে-ই যে বাংলাদেশের টপ অর্ডারের সেরা ব্যাটসম্যান হবে সেটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। তখন হয়তো জেনুইন অলরাউন্ডার হিসেবেই খেলতে দেখবো মিরাজ কে। মনে রাখতে হবে, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিবও কিন্তু ক্যারিয়ারের শুরুতে ১ম দুই বছর শুধুই ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছেন, ২০০৮ সাল থেকে তিনি একজন অলরাউন্ডার হিসেবে খেলা শুরু করেন। তারপরের গল্পটা তো শুধুই সাফল্যের নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডারের।

বোলার মিরাজ ওডিয়াইতে এখনো তার সেরা সাফল্য পায়নি। রান আটকানোর দিক দিয়ে সে সেরা হলেও উইকেট টেকার বোলার এখনও সে হয়ে উঠতে পারেনি। ওডিয়াইরের বোলার মিরাজ আর টেস্টের বোলার মিরাজের মধ্যে বিশাল ফারাক।টেস্টে মাত্র ১৯ ম্যাচেই মিরাজের উইকেট যেখানে ৮৬টি সেখানে ওডিয়াইতে ২৮ ম্যাচে মাত্র ২৯টি উইকেট মিরাজের।

উইকেট সংখ্যা কম হলেও দারুণ কার্যকরী বোলার সে বাংলাদেশ দলের। তার ইকনোমিক বোলিং অন্য বোলারদের উইকেট পেতে যথেষ্ট সহায়তা করে। 

বোলিং ব্যাটিং, যেখানেই সুযোগ পায়, সেখানেই দারুণ কিছু করার প্রবণতা ক্রিকেটার মিরাজের মধ্যে। অসাধারণ ক্রিকেট মস্তিষ্ক তার। দলের জন্য নিজের সেরাটা উজাড় করে দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মেহেদি হাসান মিরাজ।

ক্রিকেট মাঠে অসম্ভব পরিশ্রমী সে, ফিল্ডিংয়েও বাংলাদেশের অন্যতম সেরা একজন ফিল্ডার মিরাজ। আসলে এত কম বয়সেই সে এতসব কীর্তি অর্জন করেছে যা বলে শেষ করা যাবে না। আর দলের জন্য, দেশের জন্য সে নিবেদিত প্রাণ। দলে তার অবদান সত্যিই প্রশংসার দাবীদার।

এবার প্রথমবারের মতো ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেলতে গেছেন এই তরুণ ক্রিকেটার। বিশ্বমঞ্চে নিজেকে প্রমাণ করার, নিজের পারফর্ম দিয়ে বিশ্বের বাঘা বাঘা ক্রিকেটার কে ছাড়িয়ে যাওয়ার উপযুক্ত সময় এবং সুযোগ মিরাজের জন্য। ইংল্যান্ড এর কন্ডিশন যদিও স্পিন সহায়ক নয় তবুও নিজের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং দিয়ে অসম্ভব ভাল করুক, দলের জয়ে অবদান রাখুক মিরাজ, এটাই প্রত্যাশা।  ব্যাটিংয়েও দলের প্রয়োজনে সেরা ইনিংস না হোক কার্যকরী ইনিংস খেলুক, আর বিশ্বজয়ের স্বপ্নকে সত্যিতে রূপান্তর করুক সেটাই ১৮ কোটি ক্রিকেট প্রেমী বাংলাদেশিদের চাওয়া পাওয়া।

শুভ কামনা মিরাজ। শুভ কামনা বাংলাদেশ, ভাল খেল, কর বিশ্বজয়।।