• ক্রিকেট

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ: সাইফুদ্দীন ও রাহী পর্ব।

পোস্টটি ২১২৯ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

বিশ্বকাপে নিজের দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা প্রতিটি খেলোয়াড়েরই স্বপ্ন থাকে। বিশ্বকাপ হচ্ছে বিশ্ব পরিমণ্ডলে নিজেকে প্রমাণ করার সর্বোচ্চ মঞ্চ। নিজেকে জাহির করার সেরা সুযোগ। সকলের সেই সুযোগ হয় না, আবার সেরা সুযোগটাকে কাজেও লাগাতে পারে না সঠিক ভাবে সবাই। যারা পারে তারা সফলতার শিখরে আরোহণ করে। নিজ দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনতে বিশ্ব মঞ্চে নিজের যেমন ভাল করা আবশ্যক, ঠিক তেমনি দলের জন্য, দেশের জন্য খেলাটা সবার আগে অপরিহার্য। কারণ, দিনশেষে দলের পারফর্মেন্সটাই মূখ্য বিশ্ব কাপের মতো মেঘা আসরে।

FB_IMG_1558415425480মোহাম্মদ সাইফুদ্দীন। বয়সে তরুণ ফেনী জেলার বাংলাদেশ দলের একমাত্র প্রতিনিধি।। মাত্র ২২ বছর বয়সের সাইফুদ্দীনের ক্রিকেট ক্যারিয়ার খুব বেশি দীর্ঘ নয়। আবার এখন পর্যন্ত তার ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট ক্যারিয়ার খুব যে সাফল্যমণ্ডিত সেটাও বলার উপায় নেই। বামহাতি এই ব্যাটসম্যান এখনো অবধি ১৩টি আন্তর্জাতিক একদিনের ম্যাচ খেলেছেন। ৭ ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে ২৯.১৭ গড়ে ১৭৫ রান করেছে সাইফুদ্দিন। সর্বোচ্চ ৫০। এটিই একমাত্র ফিফটি তার ওডিয়াই ক্যারিয়ারে। সমান ১৩ ম্যাচে বোলিং করে সাইফুদ্দীনের শিকার ১১ উইকেট। বেস্ট ৪৫ রানে ৩ উইকেট। ইকনোমি ৫.২৩

ওডিয়াইতে তার এই ক্যারিয়ার স্টেট দেখে তাকে বিচার করার সুযোগ নেই। বাম হাতে ব্যাটিংয়ের সাথে সে ডান হাতে মিডিয়াম ফাস্ট বোলিং করে। দলে ব্যাটে বলে উভয় ক্ষেত্রেই অবদান রাখার সক্ষমতা রয়েছে তার। মূলত লোয়ার অর্ডারে সে বড় শট খেলতে পারে, সে জন্যই তাকে বিশেষ করে দলে অন্তর্ভুক্ত করা। ইংল্যান্ড এর পেসিং কন্ডিশনে বোলিংয়েও ভাল করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে সাইফুদ্দীনের। জাতীয় দলের হয়ে তার ক্যারিয়ার ততটা সমৃদ্ধ না হলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে যথেষ্ট সাফল্য পেয়েছে সাইফুদ্দীন সাম্প্রতিক সময়ে। বিগত  ২টি বিপিএলের আসরেও সে দারুণ পারফর্ম করেছে। মূলত বিপিএল পারফরমেন্স দিয়েই জাতীয় দলে অভিষেক হয় সাইফুদ্দীনের। কুমিল্লার হয়ে এক আসরে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলারও ছিল সে।

বয়স কম, স্বপ্ন অনেকদূর। সাফল্য ছিনিয়ে আনার তুমুল ইচ্ছা। সাইফুদ্দীনের সামনে লম্বা একটি ক্যারিয়ার উকি দিচ্ছে। সাফল্য হাতছানি দিয়ে ডাকছে। তবে সাফল্য পেতে হলে অবশ্যই হাত বাড়াতে হবে, সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে হবে সুযোগের। সাইফুদ্দীনের মধ্যে প্রতিভা রয়েছে, একজন ভাল পেস বোলিং অলরাউন্ডার হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে তার মধ্যে। টিম ম্যানেজমেন্ট একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার এর ঘাটতি পূরণ করতেই সাইফুদ্দীন কে দলে নিয়েছে। সাইফুদ্দিন সে সুযোগ কিভাবে কাজে লাগাবে সেটার পরিকল্পনা তাকেই করতে হবে। বিশ্বকাপ হচ্ছে এমন মঞ্চ যেখানে সফলতা পেলে ক্যারিয়ারকে সমৃদ্ধ করার সুযোগ তৈরি হয়ে যায়। জাতীয় থেকে আন্তর্জাতিক তারকা বনে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়ে বিশ্বকাপেই। শুভ কামনা সাইফুদ্দীনের জন্য। ভাল খেলে নিজের এবং দলের জন্য সাফল্য বয়ে আনুক সেটাই প্রত্যাশা করছি।

 

 

FB_IMG_1558415292956আবু জায়েদ রাহি। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলের চমকই বলা যায়। কেননা যখন স্কোয়াডে রাহি কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তখনো ওডিয়াইতে অভিষেকই হয়নি ২৫ বছর বয়সী ডান হাতি এই মিডিয়াম পেসারের। তবে ওডিয়াইতে অভিষেক না হলেও জাতীয় দলের হয়ে এর আগেই টেস্ট খেলে ফেলেছিলেন রাহি। ৫ টেস্টের ৭ ইনিংসে বল করে ১১ উইকেটও শিকার করেছেন রাহি। বেস্ট ৩৮ রানে ৩ উইকেট। 

কিন্তু টেস্ট আর ওডিয়াই তো এক না, তার উপর ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদার আসরে কোনো ম্যাচ না খেলেই অভিষিক্ত হিসেবে বিশ্বকাপ দলের সদস্য হওয়া, এটা রাহির জন্য ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় পাওয়াও বলা যায়। প্রত্যেক প্লেয়ারেরই স্বপ্ন থাকে দেশের হয়ে বিশ্বকাপ খেলা। আর রাহির তো কোনো ম্যাচ না খেলেই সরাসরি বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা হয়ে যেত, যদি না ট্রাইনেশন সিরিজে দলে সুযোগ পেত।  সম্প্রতি আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজে সুযোগ পান আবু জায়েদ রাহী। কিন্তু না, অভিষেক ম্যাচের পারফর্মেন্স মোটেও সন্তোষজনক ছিল না তার। রাহির জন্যে সুখকর ছিল উইন্ডিজের বিরুদ্ধে অভিষেক ম্যাচটি। উইকেট শূন্য ছিল সে, অভিষিক্ত ওডিয়াইতে। তবে আয়ারল্যান্ড এর সাথে পরের ম্যাচে সুযোগ পেয়ে নিজের বিশ্বকাপ দলে থাকার যৌক্তিকতা প্রমাণ করেন আবু জায়েদ রাহী। ৫৮ রানের খরচে তুলে নেন ৫টি উইকেট। ক্যারিয়ারের মাত্র ২য় ম্যাচেই এসে পেয়ে যান প্রথম ফাইভ উইকেট হল। ম্যান অফ দ্য ম্যাচও হোন রাহী।

ঘরোয়া ক্রিকেটে রাহীর পারফর্মেন্স বিবেচনায় তাকে বিশ্বকাপের মতো আসরে সুযোগ দেয় নির্বাচক প্যানেল। মূলত তার বলে এক্সট্রা সুইং আছে যা ইংল্যান্ড এর মতো পেস বোলিং কন্ডিশনে দারুণ কার্যকরী। এই সুবিধা পাওয়ার জন্যই তাকে স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত করা। রাহী বিপিএলেও দারুণ বোলিং করেছে গত কয়েকটি আসরে। কিন্তু বিপিএল বা ঘরোয়া আসরের সাফল্য দিয়ে তো নিজেকে বিবেচননা করলে হবে না। বিশ্বকাপ হচ্ছে এমন মঞ্চ যেখানে প্রতিটি প্লেয়ারই নিজেকে প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগে থাকে। সুতরাং প্রতিযোগিতা হয় তুমুল। আর এই তুমুল প্রতিযোগিতায় যে টিকে যায় তার বন্দনাই হয় বিশ্বজুড়ে।  

বড় মঞ্চ, সুযোগ এসেছে নিজেকে প্রমাণ করার। সেরাদের কাতারে নিয়ে যাওয়ার। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাহী ভাল করুক বিশ্বকাপে। সুযোগ পেলে প্রতিটি ম্যাচেই দেশের জন্য, নিজের জন্য সাফল্য বয়ে নিয়ে আসুক, সেটাই প্রত্যাশা হাজারো ক্রিকেট প্রেমীর।

 

সাইফুদ্দীন এবং আবু জায়েদ রাহী দুই জনই এবার প্রথম বিশ্বকাপ খেলবে। দুজনই পেসার। দুজনেরই একটা নির্দিষ্ট লক্ষ রয়েছে, আর সেটা হল বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করা। শুভ কামনা সাইফুদ্দীন ও রাহীর জন্য। শুভ কামনা বাংলাদেশ। স্বপ্ন বাস্তবতায় রূপান্তরিত হোক।