• ক্রিকেট

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ: লিটন, মোসাদ্দেক ও মিঠুন পর্ব।

পোস্টটি ১৪৬৫ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

তারুণ্য যেখানে কথা বলে, সফলতা সেখানে উকি দেয়। তারুণ্য যেখানে হাসে, সফলতা সেখানে হাতছানি দেয়। বিশ্বকাপের জন্য ঘোষিত ১৫ সদস্যের বাংলাদেশ দল নবীন প্রবীণের কম্বিনেশনে পারফেক্ট হয়েছে। যেখানে পঞ্চপাণ্ডবের অভিজ্ঞতার সাথে তারুণ্যের উদ্দীপনার মিশেল ঘটেছে দারুণভাবে।

 

FB_IMG_1558416827005লিটন কুমার দাশ। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সমালোচিত আলোচিত এক ক্রিকেটার তিনি। সমালোচনা তার পিছু ছাড়ে না, একেবারে আঠার মত লেগেই থাকে। বাজে ফর্ম আর খারাপ খেলতে থাকার পরেও বার বার সুযোগ পাওয়ায় বার বার সমালোচিত হতে হয় তাকে।

লিটনের ক্রিকেট ক্যারিয়ার খুব বেশি দীর্ঘ নয়। ১৮ জুন ২০১৫ সালে ভারতের বিপক্ষে তার ওডিয়াইতে অভিষেক হয়। অভিষেকের পর ওপেনার হিসেবেই খেলেছে সিংহভাগ ম্যাচ।

২৪ বছর বয়সী লিটন দাশ এখনো অবধি ২৮টি আন্তর্জাতিক ওডিয়াই ম্যাচ খেলে মাত্র ২১.৬৩ গড়ে ৫৮৪ রান করেছে। ক্যারিয়ার বেস্ট ১২১ ভারতের বিপক্ষে। ওডিয়াইতে তার সেঞ্চুরি ১টি ও হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে দুইটি। একজন ওপেনার হিসেবে তার এই ক্যারিয়ার স্টেট মোটেও সন্তোষজনক নয়। তবে সক্ষমতার কথা বললে লিটন কে এগিয়েই রাখতে হবে। তার ব্যাটে দারুণ সব শট রয়েছে। আক্রমণাত্মক মেজাজেই ব্যাটিং করে থাকে লিটন। আর এই অতিমাত্রায় আক্রমণাত্মক নীতিই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায় মাঝেমধ্যে। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে টানা অনেক গুলো ম্যাচে তার কোনো ফিফটিই ছিল না। সেই খরা কাটে গত বছর দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত হওয়া এশিয়া কাপের ফাইনালে। ভারতের অপ্রতিরোধ্য বোলিংয়ের বিপক্ষে দারুণ সব ক্রিকেটীয় শটে নিজের প্রথম পঞ্চাশ প্লাস রান করে লিটন দাশ। আর এই প্রথম ফিফটি কে লিটন তিন অংকের ম্যাজিকাল ইনিংসে রূপ দেয়। ভারতীয় বোলারদের তুলোধোনা করে নিজের প্রথম শতক তুলে অসাধারণ ব্যাটিং শৈলী প্রদর্শন করে লিটন। আম্পায়ের ভুলের দায়ে ১২১ রানে থেমে যায় লিটনের ব্যাটিং ঝড়। আম্পায়ার ভুল সিদ্ধান্ত না দিলে হয়তো আরো বহুদূর যেত তার এই শৈল্পিক ইনিংস টি।

ঐ শতকের পর থেকে লিটনের ব্যাট কখনো হাসছে আবার কখনো কথাই বলছে না,অ্যাভারেজ। লাস্ট ট্রাইনেশন সিরিজে ১ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়ে লিটন আবার দেখালেন তার ম্যাজিক । ৭৬ রাবের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে বিশ্বকাপের জন্য নিজের আগাম প্রস্তুতির কথা জানান দিয়েছেন তিনি। তবে ওপেনিং পজিশনে লিটনের সেরা একাদশে থাকাটা দুষ্করই বটে। কারণ ড্যাশিং ওপেনার তামিমের সঙ্গী হিসেবে সৌম্যর সাম্প্রতিক ফর্ম এক কথায় অসাধারণ।  সৌম্য এই ফর্ম না হারালে অন্য কারোরই ওপেনিংয়ে নামার সুযোগ নেই।

ওপেনিংয়ে সুযোগ না হলে লিটনের মিডল অর্ডার বা লেট মিডল অর্ডারে সুযোগ হতে পারে খেলার। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি লিটনের প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে কিপিং করতে পারা। কোনো কারণে মুশফিক কোনো ম্যাচে খেলতে না পারলে লিটনের একাদশে চান্স পাওয়া নিশ্চিত।  সব মিলিয়ে বেস্ট ইলেভেনে লিটনের থাকাটা কঠিনই বটে। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে, বাংলাদেশ সেরা একাদশ পেয়েই গেছে। তবুও যখনই, যে ম্যাচেই, যেখানেই সুযোগ পাবে, ভাল খেলবে। নিজেকে প্রমাণ করার সেরা মঞ্চ এই বিশ্বকাপ, তাই ভাল খেলার বিকল্প নাই। শুভ কামনা লিটন।

 

 

FB_IMG_1558415614847মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অন্যতম ট্রামকার্ড হতে পারে এই তরুণ ব্যাটিং অলরাউন্ডার। সর্বশেষ ট্রাইনেশন সিরিজের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে তার নায়কোচিত ব্যাটিংয়ের পর নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন ২৩ বছরের এই তরুণ। ২৭ বলে হার না মানা ৫২ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলে মোসাদ্দেক বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বিজয়ের মহানায়ক বনে গেছেন। এমনিতে তার ছোট্ট ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ বলা যাবে না। বরং গড়পড়তা তার ছোট্ট ওডিয়াই ক্যারিয়ার। কিন্তু ত্রিদেশীয় সিরিজে সাকিবের স্থলাভিষিক্ত হয়ে খেলতে নেমে সব আলো নিজের দিকে কেড়ে নিয়েছেন এই তরুণ ব্যাটসম্যান।

২৮ মে ২০১৬ আফগানিস্তান এর সাথে তার অভিষেক হয়। অভিষেকেই আলো ছড়িয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। সেদিন ব্যাট হাতে ৪৫ বলে ৪৫ রানের দারুণ ইনিংস খেলেছেন ডেব্যুটার্ণ সৈকত। বল হাতেও ১০ ওভার বল করে ৩১ রানের খরচায় ২ উইকেট নিয়েছিলেন মোসাদ্দেক। ব্যাটে বলে অলরাউন্ডিং পারফর্মেন্স দিয়ে তার অভিষেক হলেও পরবর্তীতে সেটা ধরে রাখতে পারে নি সে।

২৬টি আন্তর্জাতিক একদিনের ম্যাচ খেলেছে মোসাদ্দেক সৈকত। তার মধ্যে ২২ ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে সে ৩৩.৯২ গড়ে ৪০৭ রান করেছে। ক্যারিয়ারে কোনো সেঞ্চুরি নাই, হাফ সেঞ্চুরি ২টি। বল হাতেও মাঝেমধ্যে অবদান রেখেছে ডান হাতি অফব্রেক বল করা মোসাদ্দেক। ২৪ ইনিংসে বল করে ১১ উইকেট শিকার করেছে সে। বেস্ট ১৩ রানে ৩ উইকেট। 

ব্যাটে বলে দলের হয়ে অবদান রাখার যথেষ্ট ক্যাপাবিলিটি রয়েছে মোসাদ্দেক সৈকতের। জাতীয় দলের মিডল অর্ডারের অন্যতম ভরসার নাম এখন সোসাদ্দেক। মিঠুন বা লিটন কোনো ম্যাচে সুযোগ না পেলে মোসাদ্দেকের বেস্ট একাদশে খেলার চান্স বেড়ে যাবে। এছাড়া কোনো ম্যাচে মেহেদি মিরাজ না খেললে মোসাদ্দেক সৈকতের বেস্ট ইলেভেনে খেলার সম্ভাবনা প্রায় চুড়ান্তই বলা যেতে পারে। ২০১৭ সালে ইংল্যান্ড এর মাটিতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে মোসাদ্দেকের। সে অভিজ্ঞতা আর সাম্প্রতিক ফর্ম বজায় থাকলে মোসাদ্দেক হতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা অস্ত্র, আসন্ন বিশ্বকাপে। শুভ কামনা মোসাদ্দেক।

 

 

FB_IMG_1558415690458মোহাম্মদ মিঠুন আলী। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ তিনি। ২০১৮ সালে এশিয়া কাপে সাকিবের ইনজুরির কারণে তার দলে অন্তর্ভুক্ত স্থায়িত্বতা লাভ করে। এশিয়া কাপে সে পর পর দুই ম্যাচে দুটি ফিফটি করে আদর্শ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হওয়ার প্রমাণও দেয়। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ দলের হয়ে ওডিয়াইতে নিয়মিত মুখ হিসেবে দেখতে পাওয়া যায় মিঠুন আলীকে। কিন্তু বিশ্বকাপ হচ্ছে এমন মঞ্চ যেখানে বাজে খেললে বাদ পড়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। তার উপর মিঠুন যে পজিশনে খেলে (৫ নাম্বার পজিশন) সেখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছে আরো ক'জন ব্যাটসম্যান। সুতরাং ভাল না খেলতে পারলে একাদশে টিকে থাকা অসম্ভবই বটে।

২৮ বছর বয়সী মিঠুন আলীর ক্রিকেট ক্যারিয়ার কিন্তু বেশ লম্বা। বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্মার হলেও মিঠুনের ওডিয়াই অভিষেক হয় বেশ পরে।২০০৮ সালে অনূর্ধ্ব ১৯ দলের হয়ে খেলেছেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটেও দারুণ পারফর্ম করেছেন। কিন্তু জাতীয় দলে খেলার সু্যোগ হয়নি তার। ২০১৪ সালে অভিষেক হলেও মাঝখানে ছিলেন অনুপস্থিত। ২০১৮ সালে এশিয়া কাপে ভাল পারফর্ম করে জাতীয় দলে নিয়মিত হয়েছেন তিনি।

এখনো অবধি ১৮টি ম্যাচের ১৫ ইনিংসে ব্যাট করে মিঠুন আলী রান করেছে ৪২০। তার ওডিয়াই গড় ৩২.৩১। সর্বোচ্চ রান ৬৩। কোনো সেঞ্চুরি না করলেও ওডিয়াইতে সে ৪টি হাফ সেঞ্চুরি করেছে।

ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি কিপিং করতেও পারদর্শী মিঠুন। ঘরোয়া ক্রিকেটে এবং বিপিএলে রংপুরের হয়ে কিপিং করতে দেখা যায় তাকে। মিঠুনের সাফল্য কামনা করছি। বিশ্বকাপ হোক তার জন্য আশীর্বাদপুষ্ঠ।

 

লিটন, মোসাদ্দেক ও মিঠুন তিন জনেরই এবার প্রথম বিশ্বকাপ।  তিন জনের কাররই প্রতি ম্যাচে বেস্ট ইলেভেনে থাকার যথেষ্ট সুযোগ নেই। তবে তিন জনই উদ্যমী, পারফর্ম করতে মরিয়া। তিনজনকেই মিডল অর্ডারে খেলতে প্রতিযোগিতা করতে হবে। তবে সুযোগ যে-ই পাক, সবার আগে দেশের জন্য খেলতে হবে। দেশের জয়ের জন্য নিজের সেরাটা উজার করে দিতে হবে। সাফল্য পেতে হলে অবশ্যই পরিশ্রম আর ত্যাগের বিকল্প নেই। প্রতিভা থাকলেই হয়না, সেটার বিকাশ সাধনেও সচেষ্ট হতে হয়। তাই, বাংলাদেশ দলের হয়ে যে-ই খেলার সুযোগ পাক না কেন, ভাল খেলবে সেটাই কোটি ক্রিকেট প্রেমীর চাওয়া পাওয়া। শুভ কামনা তাদের জন্য। শুভ কামনা বাংলাদেশের জন্য।