• ক্রিকেট

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ: সৌম্য পর্ব।

পোস্টটি ১৯১২ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

বিশ্বকাপ কড়া নাড়ছে দুয়ারে। বিশ্বকাপ ৩০ মে থেকে শুরু হলেও বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন শুরু হবে২ জুন থেকে। বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশের সেরা একাদশ বিবেচনায় নিলে অবশ্যই দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবালের সঙ্গী হবেন সৌম্য সরকার, তা নির্দ্বিধায় বলাই যায়। সৌম্য সরকার, সাতক্ষীরায় জন্ম এই ওপেনারের। জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ওডিয়াইতে সৌম্যের অভিষেক হয় ১ ডিসেম্বর ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের সাথে। অভিষিক্ত ম্যাচে তার ব্যাট না হাসলেও ফিউচার তামিমের সঙ্গী হিসেবে সৌম্যের আবির্ভাবের আভাস পাওয়া গেছিল ঠিকই। অভিষেক ম্যাচে ১৮ বলে ৪ বাউন্ডারি তে সৌম্য করেছিলেন ২০ রান। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ দলেও চমক হয়ে যায়গা পেয়ে যান সৌম্য। যায়গা পেলেও একাদশে তার খেলা প্রায় অসম্ভই ছিল। আর এই অসম্ভব কে সম্ভব করে দেয় ওপেনার এনামুল হক বিজয়ের ইনজুরি। সৌম্য পেয়ে যান খেলার নিশ্চয়তা একাদশে। ৩ নাম্বার পজিশনে ব্যাট করলেও বিশ্বকাপে সৌম্যর ব্যাট কিন্তু হাসেনি তেমন ভাবে। বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে সৌম্য ২৯.১৭ গড়ে রান করেছে ১৭৫। ফিফটি একটি। তবে বিশ্বকাপের পরেই সৌম্য ঝলক দেখতে শুরু করেছে ক্রিকেট বিশ্ব। ২২ এপ্রিল ২০১৫, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩য় ওডিয়াইতে সৌম্যর রুদ্রমূর্তি ধারণ করতে দেখলো ক্রিকেট প্রেমীরা। ১১০ বলে ১২৭* রানের ঝকঝকে এক অপরাজিত ইনিংস খেললো সৌম্য। ইনিংসে ছিল ১৩টি চার ও ৬টি বিশাল ছক্কার মার। আক্রমণাত্মক এক ওপেনারের আত্মপ্রকাশ দেখতে পেল ক্রিকেট বিশ্ব। পাকিস্তানের সাথে খেলার ধারাবাহিতা বজায় ছিল সে বছরের পরবর্তী সিরিজ গুলোতে। বিশেষ করে সাউথ আফ্রিকা সিরিজে দারুণ পারফর্ম করেছে সৌম্য দা ব্রিলিয়ান্ট সরকার। দারুণ সব ক্রিকেটীয় শটে দর্শকদের মাতিয়ে রাখার দারুণ সক্ষমতা রয়েছে তার মধ্যে। পেরিস্কোপ নামক সুদৃশ্য এক ক্রিকেটীয় শটের জন্য দারুণ খ্যাতি লাভ করেন সৌম্য সরকার।

শুরুর সেই সৌম্যকে আবার হারিয়ে ফেলে ক্রিকেট ভক্তরা। হঠাৎ সৌম্যের ব্যাট থেকে রান উধাও হয়ে যায়। প্রতি ম্যাচেই ফ্লপ হতে থাকে সৌম্যের ব্যাট। একটা পর্যায়ে দল থেকেও বাদ পড়ে যায় সৌম্য সরকার। কিন্তু না, সৌম্য তো বাদ পড়তে আসে নি, সে এসেছে তার আক্রমণাত্মক ব্যাটিং দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করতে। সে জন্যই সৌম্যের ফর্মে ফেরাটা ছিল অতীব জরুরী ছিল। ক্যারিয়ায়ের প্রথম শতক পেয়েছিল সে মাত্র ১০ম ম্যাচে এসেই। এরপর আর কোনো শতক পাচ্ছিল না সৌম্য সরকার। অবশেষে সেই খরা কাটে সৌম্যের। গত বছর চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের সাথে দারুণ শতক দিয়ে সেই চিরচেনা সৌম্যের আবির্ভাব ঘটে আবারো, সেই ভয়ংকর রূপেই। ২য় শতক পেতে সৌম্য কে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ২৫টি ম্যাচ। ক্যারিয়ারের ৩৫ তম ম্যাচে এসে সৌম্য তার ২য় ওডিয়াই শতকের দেখা পায়। কিছুদিন আগেই সৌম্য বিশ্বকাপ দলে তার থাকার যৌক্তিকতা প্রমাণ করে প্রিমিয়ার লিগে দারুণ ডাবল সেঞ্চুরি করে। সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ ছন্দে থাকা সৌম্যকে নিয়ে তাই দারুণ আশাবাদী বাংলাদেশের হাজারো ক্রিকেট প্রেমী। আয়ারল্যান্ডে সম্প্রতি শেষ হওয়া ত্রিদেশীয় সিরিজে সৌম্য দেখিয়েছেন তার অসাধারণ ব্যাটিং শৈলী। বামহাতি এই ওপেনার ৩ ম্যাচে খেলতে নেমে প্রতি ম্যাচেই করেছে ফিফটি। খেলেছে অসাধারণ ক্রিকেট। দেখিয়েছে, তার ব্যাট হাসলে বাংলাদেশও হাসে। ক্রিকেট ক্যারিয়ারে পারফর্মেন্স উঠানামা করলেও সাম্প্রতিক সময়ে নিজের সেরা ছন্দে আছে সৌম্য সরকার। তামিম ইকবাল কে ছাড়িয়ে সে-ই এখন দেশের ব্যাটসম্যান দের মধ্যে ওডিয়াইতে সেরা গড়ের অধিকারী। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনো পর্যন্ত ৪৪ ম্যাচে খেলার সুযোগ হয়েছে সৌম্যর। এর মধ্যে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছে সে ৪৩ ইনিংসে। ৩৬.৬৭ গড়ে ১৪৬৭ রান করেছে সৌম্য। স্ট্রাইক রেটও দারুণ, ৯৯.৯৩। বেস্ট ১২৭ রান। ক্যারিয়ারে এখনো অবধি দুটি সেঞ্চুরি ও ১০টি ফিফটি করা সৌম্যের ব্যাট হাসলে, বাংলাদেশ যে বিশ্বকাপে দারুণ করবে ব্যাটিংয়ে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সৌম্যের ১ম বিশ্বকাপ আসর সাদামাটা কাটলেও এবার তার ফর্মে থাকা স্বপ্ন দেখাচ্ছে সৌম্য ভক্তদের। সেই সাথে বাংলাদেশী ক্রিকেট প্রেমীরাও, বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশের দারুণ কিছু করার স্বপ্ন দেখছে। সৌম্যের ব্যাপারে জাতীয় দলের হেডকোচ বলেন, "বিশ্বকাপে আরো ধারালো হবে সৌম্যের ব্যাট"। কোচের কথাই সত্যি হোক, সৌম্যের ব্যাটে হাসুক বাংলাদেশও তেমনটাই প্রত্যাশা। বিশ্বকাপে সৌম্য ছাড়িতে যাক নিজেকে, দেশের হয়ে খেলুক সেরা ইনিংস। বিশ্ব মঞ্চে নিজেকে প্রমাণ করে হোক সেরা ওপেনার সেটাই চাওয়া পাওয়া ভক্তদের। অনেক অনেক শুভ কামনা সৌম্য সরকারের জন্য। শুভ কামনা বাংলাদেশ।