• ক্রিকেট

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ: মুশফিক পর্ব।

পোস্টটি ২৬২৬ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

"মোস্ট ডিপেন্ডেবল উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান" বললে যার নামটি চোখের সামনে ভেসে উঠে তিনি হলেন ছোট্টখাট্টো গড়নের, সদা হাস্যজ্জ্বল মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশের সেরা উইকেটরক্ষক মুশি বর্তমান সময়ে ধোনীর পর বিশ্বের ২য় সেরা উইকেটরক্ষক। উইকেটের পিছনে সদাজাগ্রত বীর তিনি। অসাধারণ দক্ষতা ও ক্ষিপ্রতায় উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে ব্যাটসম্যান দের নাজেহাল করতে তার জুড়ি মেলা ভার।

অসম্ভব নম্রতা এবং ভদ্রতার অনন্য দৃষ্টান্ত মুশি ক্রিকেট মাঠে বার বার স্থাপন করেছেন। মুশফিকের ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু সেই ২০০৫ সালে টেস্ট অভিষেকের মধ্য দিয়ে। তবে ওডিয়াইতে পথচলা আরো এক বছর পর থেকে শুরু হয় ছোট্টখাট্টো এই ব্যাটসম্যানের। ৬ আগস্ট ২০০৬ সালে সাকিব ও ফরহাদ রেজার সাথে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে মুশিরও ইন্টারন্যাশনাল ওডিয়াইতে অভিষেক ঘটে।

বর্তমানে মুশফিক বাংলাদেশের ট্যাকনিক্যালি সবচাইতে সেরা প্লেয়ার, এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। ক্রিকেট মাঠে মুশির উপর টিম ম্যানেজমেন্টের সবচেয়ে বেশি আস্থার কারণে তাকে "মোস্ট ডিপেন্ডেবল ব্যাটসম্যানের খেতাব এনে দিয়েছে। অবশ্য মাঠে বার বার মুশি সেটার প্রমাণও রেখেছেন।এবং রেখে চলেছেন ।

সদা হাস্যজ্জল, মিষ্টভাষী মুশফিকের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে পথচলার আগেই অনূর্ধ্ব ১৯ দলের হয়ে খেলার ও সে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ২০০৬ সালে অনূর্ধ্ব ১৯ দলকে নেতৃত্ব দিয়ে বেশ সাফল্যও পেয়েছেন মুশি। আর সেই দলে খেলেছিল বর্তমানে বাংলাদেশ দলের প্রাণ, সাকিব তামিমরা। মাঠে অধিনায়ক মুশির নেতৃত্ব গুণও অসাধারণ। ওডিয়াইতে সফল না হলেও টেস্টে অনেক প্রথমের জন্ম এই মুশফিকের নেতৃত্বেই। অনেক ঐতিহাসিক বিজয় এসেছে তার অসামান্য নেতৃত্ব গুণে।

খেলোয়াড় মুশফিকের তুলনা আসলে সে নিজেই। বাংলাদেশের যারা ভবিষ্যতে ব্যাটসম্যান হওয়ার স্বপ্ন দেখছে তারা মুশফিক কে তাদের আদর্শ মানে। জাতীয় দলের তারকা ব্যাটসম্যান ও দেশের হয়ে ৩ ফর্মেটেই সর্বোচ্চ রানের মালিক তামিম ইকবাল ব্যাটসম্যান মুশফিক সম্পর্কে বলেন, "আমার ছেলেকে যদি আমি ক্রিকেটার বানাই বা সে যদি ক্রিকেটার হতে চায়, তবে আমি তাকে মুশফিকের অনুসরণ করতে বলবো"। এটাই ব্যাটসম্যান মুশি। ডিপেন্ডেবল, ট্যাকনিক্যালি শার্প, অত্যন্ত মেধাবী এবং পরিশ্রমী এক ক্রিকেটারের নাম মুশি।

মুশির পরিশ্রম বা এক্সট্রা হার্ড ওয়ার্ক নিয়ে সবাই ওয়াকিবহাল। দলের সবাই যদি ১ ঘণ্টা অনুশীলন করে তবে মুশফিক করে ২ ঘণ্টা। অনুশীলন শুরুর এক আধঘণ্টা আগেই অনুশীলন মাঠে মুশফিককে পাওয়া যায়, কিংবা যেদিন অনুশীলন থাকে না ঐচ্ছিক অনুশীলন থাকে, সেদিনও মাঠে বা ইনডোরে ঘাম ঝরায় মুশি।

বাংলাদেশ ক্রিকেটে অনেক শুরু বা প্রথমের সাথেই যুক্ত মুশি। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ১ম ডাবল সেঞ্চুরিয়ান মুশি। একই সাথে বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে ও বিশ্বের একমাত্র উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে দুটি ডাবল সেঞ্চুরি করার অনন্য রেকর্ড গড়েছে পঞ্চপাণ্ডবের এই সদস্য।

ওডিয়াইতেও মুশি, তামিম সাকিবের পর ৩য় সর্বোচ্চ রানের মালিক দেশের হয়ে। এখনো পর্যন্ত মুশি, মাশরাফির পর ২য় সর্বোচ্চ ২০৫টি ম্যাচ খেলেছে ওডিয়াইতে। ১৯১ ইনিংসে ব্যাট করে রান করেছে ৫৫৫৮।  গড় ৩৪.৭৪। বেস্ট ১৪৪, যা গত বছর দুবাইতে করেছিল সে। মুশির ওডিয়াই সেঞ্চুরি ৬টি। আর সব গুলো শতকই বড় দলের বিপক্ষে করা। ওডিয়াইতে অর্ধশতক রয়েছে ৩৩টি। ৭৮.১৬ স্ট্রাইক রেট নিয়ে দেশের সেরা স্ট্রাইক রেটও তার দখলে। সুতরাং সে যে কেবল ধরে খেলে না, মেরেও খেলে,এটাই তার প্রমাণ।তামিমের পর সর্বোচ্চ ছক্কাও তার ওডিয়াইতে (৭৭টি)।

নানাবিধ অর্জনের অধিকারী মুশফিকের অর্জনের  ভাণ্ডার পূর্ণ থাকলেও মুশির কিছু অপূর্ণতা রয়ে গেছে যা দর্শক ভক্তদের জন্য পীড়াদায়কই বটে। বিশ্বকাপে সাকিবের পর সর্বোচ্চ রানের মালিক মুশি। ৩১.৮৮ গড়ে মুশির রান ৫১০। ২০০৭ থেকে সব গুলো বিশ্বকাপ খেললেও মুশির বিশ্বকাপে কোনো শতক নেই। অর্ধশতক আছে ৪টি। সর্বোচ্চ রান ৮৯। 

মুশির কাছে ভক্তদের চাওয়া পাওয়া, বিশ্বমঞ্চে সেঞ্চুরি হাকিয়ে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করা। পঞ্চপাণ্ডবের অন্য ব্যাটসম্যান দের আইসিসির কোনো না কোনো ইভেন্টে সেঞ্চুরি থাকলেও মিঃ ডিপেন্ডবল মুশির কোনো ইভেন্টেই শতক নেই। তবে মুশির সামনে বড় সুযোগ, সেই হতাশা ঘোচানোর। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ৯টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে। মুশিও তাই।  ভাল কিছু করার মুশফিকের সক্ষমতা নিয়ে কারো কোনো প্রশ্ন নেই, কারণ ব্যাটসম্যান মুশফিকের তুলনা বাংলাদেশ ক্রিকেটে সে নিজেই। মুশি ডিপেন্ডবলের সাথে সাথে ফিনিশারও বটে। খেলা শেষ করে আসতে তার জুড়ি মেলা ভার। সম্প্রতি ট্রাই নেশন সিরিজে মুশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৫০ ম্যাচে অপরাজিত থাকার বিরল রেকর্ড গড়েছেন। অবশ্য বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ অপরাজিত থাকার রেকর্ড মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের।

ধরে খেলার সাথে মেরে খেলার দিক দিয়ে মুশফিকই বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান। দলের প্রয়োজনে যেমন উইকেট ধরে ব্যাটিং করতে পারেন ঠিক তেমনি প্রয়োজনের তাগিদে মুশির ব্যাট চওড়া হতেও দেখা যায়।

মিষ্টভাষী ,সদাহাস্যজ্জ্বল মুশি নিজের আগের বিশ্বকাপ গুলোকে ছাড়িয়ে যাবে এই বিশ্বকাপে, সেটাই প্রত্যাশা মিঃ ডিপেন্ডবলের কাছে। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি উইকেটের পিছদে সদা সরব মুশিকে তো দেখা যাবেই।

শুভ কামনা মুশির জন্য। ভাল খেলুক মুশি, ভাল খেলুক প্রিয় টিম টাইগার্স। বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন পূরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করুন ৫ ফুট ৩ ইঞ্চির মুশফিকুর রহিম, সেটাই কাম্য। ভালবাসা প্রিয় মুশি।