• ক্রিকেট

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ: রুবেল পর্ব।

পোস্টটি ২২৯৮ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসর বিশ্বকাপ। প্রতিটি প্লেয়ারই নিজ দেশের হয়ে বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন দেখে। বিশ্ব মঞ্চে নিজের সামর্থ্য জাহির করতে সকলেরই মনে সুপ্ত বাসনা কাজ করে। বিশ্বকাপে ভাল খেললে ক্যারিয়ার যে সমৃদ্ধ হয় তা না বললেও চলে। বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে আরো একবার ডাক পেয়েছেন পেসার রুবেল হোসেন।

দেশের হয়ে এর আগে রুবেলের দুইটি বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এবার তৃতীয় বিশ্বকাপ মাতাতে প্রস্তুত ২৯ বছর বয়সী বাগেরহাটের এই সূর্য সন্তান। দেশের হয়ে বিশ্বকাপ খেলার চাইতে আর বড় সম্মান কিবা হতে পারে একজন প্লেয়ারের জন্য? রুবেলের সামনে সুযোগ এসেছে আবারো ২০১৫ সালের পুনরাবৃত্তি করার। ঠিক পুনরাবৃত্তি না, বরং ২০১৫ বিশ্বকাপের পারফর্মেন্স কে ছাড়িয়ে যাওয়ার।

ডান হাতি মিডিয়াম পেসার রুবেলের ওডিয়াইতে পথচলা ১১  জানুয়ারি ২০০৯ সাল থেকে। শ্রীলংকার সাথে অভিষেক ম্যাচেই বাজিমাত রুবেল হোসেনের। মাত্র ৫.৩ ওভার বল করে ৩৩ রান দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করে বাগেরহাটের এই সূর্য সন্তান। বলাবাহুল্য সেই ম্যাচটি জিতে যায় টিম টাইগার্স।

হাটি হাটি পা পা করে রুবেল তার ক্যারিয়ারের ১০ম বছরে উপনীত হয়ে দেশের অন্যতম অভিজ্ঞ পেসারে পরিণত হয়েছে। অভিজ্ঞতায় ও উইকেটের দিক দিয়ে বর্তমানে মাশরাফির পর রুবেলই সেরা পেসার বাংলাদেশের। তার বোলিংয়ে যেমন পেস আছে, ঠিক তেমনি আছে ভেরিয়েশনও। ইনসুইং ও ইয়র্কার রুবেলের অন্যতম অস্ত্র বোলিংয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যান দের নাস্তানাবুদ করতে।

১০ বছরের ক্যারিয়ারে রুবেল ইতোমধ্যেই খেলে ফেলেছে ৯৭টি আন্তর্জাতিক একদিনের ম্যাচ। ৯৫ ইনিংসে বল করে রুবেলের শিকার ১২৩ উইকেট। বেস্ট ২৬ রান দিয়ে ৬ উইকেট।  ইকনোমি ৫.৬৩। রুবেলের ক্যারিয়ারে অন্যতম সফলতার দিন ২৯ অক্টোবর ২০১৩ তারিখের দিনটি।নিউজিল্যান্ড এর সাথে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচটিতেই যে রুবেল তৃতীয় বাংলাদেশি বোলার হিসেবে হ্যাট্ট্রিক করার অনন্য গৌরব অর্জন করেন। ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম, কোরি অ্যান্ডারসন ও জিমি নিশাম কে পর পর ৩ বলে আউট করেই রুবেল রেকর্ডের পাতায় স্থান করে নেন। ঐ ম্যাচে বাংলাদেশ ১৫ রানে জয়ী হয় এবং নিউজিল্যান্ড কে ঘরের মাঠে বাংলা ওয়াশের তিতো স্বাদ উপহার দেয়।

 ২০১১ সালে ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত হওয়া বিশ্বকাপে আহামরি কিছু করতে না পারলেও ২০১৫ সালে রুবেলের সেই ক্যারিশমাটিক বোলিংয়ের পরিপ্রেক্ষিতেই ইংল্যান্ড কে হারিয়ে প্রথম বারের মতো কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে টিম টাইগার্স।  ইংল্যান্ড এর বিপক্ষে মহা গুরুত্বপূর্ণ সেই ম্যাচে ইংল্যান্ড যখন প্রায় জয়ের বন্দরে পৌছে যাচ্ছিল তখন ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হোন রুবেল। স্বপ্নিল দুই ডেলিভারি তে ইংল্যান্ডের দুই ব্যাটসম্যান কে বোল্ড করে বাংলাদেশ কে স্বপ্নের কোয়ার্টার ফাইনালে নিয়ে যেতে অগ্রগামী ছিলেন রুবেল। ইংল্যান্ড বধের সূচনা পাট করেছিলেন মাহমুদুল্লাহ আর সমাপ্তি টেনে ছিল রুবেল হোসেন।

২০১৫ বিশ্বকাপে রুবেলের খেলতে যাওয়াটাই ছিল হুমকির মূখে। নারী কেলেঙ্কারির দায়ে রুবেল বিশ্বকাপের আগ মুহূর্তে জেলও খেটেছিল। আর সেই রুবেলই বিশ্বকাপে জ্বলে উঠেছিল আপন শক্তিতে। ৮ উইকেট শিকার করে বাংলাদেশের ২য় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার ছিল রুবেলই। ( সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করা তাসকিন এবারের বিশ্বকাপ দলে নেই, ভক্তরা নিশ্চয় তাকে খুব মিস করছে এবং বিশ্বকাপে খুব বেশি মিস করবে। তবে রিজার্ভ প্লেয়ার হিসেবে রাখা হয়েছে তাসকিন আহমেদ কে, কোনো বোলার ইনজুরিতে পড়লে তাসকিনের দলে ঢুকার সুযোগ তৈরি হবে তখন। তবে ক্রিকেট প্রেমীরা নিশ্চয় চাইবে না কোনো প্লেয়ার বিশ্বকাপে ইনজুরি তে পড়ুক। তাসকিন নিজেও নিশ্চয় তেমনটা চাইবে না। তরুন তাসকিনের এই বিশ্বকাপ না খেলা হলেও যে বিশ্বকাপ খেলা আর হবে না, তা কিন্তু না। তার সামনে বিস্তৃত ক্যারিয়ার পড়ে রয়েছে। ভাল খেলে আগামী বিশ্বকাপে আবারো বাংলাদেশ কে রিপ্রেজেন্ট করবে সেটাই চাওয়া থাকবে তাসকিনের কাছে)

রুবেলের বোলিংয়ে যেমন গতি আছে ঠিক তেমনি আছে ভেরিয়েশনও। আর এটাই বোলার রুবেলের প্লাস পয়েন্ট।  গতির ঝড় তুলে ব্যাটসম্যানদের তুলোধোনা করতে যেমন সে সিদ্ধহস্ত ঠিক তেমনি স্লোয়ার, ইয়র্কার দিয়েও ব্যাটসম্যানদের নাজেহাল করতে সমান পারদর্শী রুবেল হোসেন। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে রুবেলের নতুন আবিষ্কার "বাটার ফ্লাই" নামক নতুন এক ডেলিভারি। বিশকাপে এই অস্ত্র প্রয়োগ করেও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে প্রস্তত রুবেল।

মাশরাফি ইনজুরির কারণে তার সেই আগের মাশরাফি কে হারিয়ে ফেলেছে। গতির ঝড় নয় বরং মাশরাফির মূল অস্ত্র এখন নিখুঁত লাইন লেন্থে বোলিং করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা। ম্যাশ, শাহাদাত হোসেনরা না থাকায় বাংলাদেশ দলে পিউর বা স্বীকৃত পেস বোলার এখন রুবেলই। ১৪০+ কিলোমিটার গতিতে বল ছুড়তে পারলেও রুবেলেত অ্যাভারেজ থাকে ১৩০-১৩৫ কিলোমিটার গতির বল। কিন্তু বাংলাদেশ দলেত অন্যান্য ফাস্ট বোলারদের গতি অ্যাভারেজ ১৩০ এর নিচেই। তাই ইংল্যান্ড এর মতো কন্ডিশনে রুবেলের বোলিং দারুণ ইফেক্ট ফেলবে।

গত বিশ্বকাপের ধারাবাহিতা বজায় রেখে এই বিশ্বকাপে আরো ভাল খেলবে রুবেল সেটাই প্রত্যাশা রুবেলের কাছে। তার জাদুকরী বোলিং পারফর্মেন্স দিয়ে বিশ্বজয়ের পথ সুগম করবে সেটাই ১৭ কোটি বাংলাদেশির চাওয়া পাওয়া । রুবেলের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা। পারফর্মেন্স দিয়ে ছাড়িয়ে যাবে আগের বিশ্বকাপকেও এবং বাংলাদেশের বিশ্ব জয়ের নেপথ্য নায়ক হবে সেটাই কামনা করি। শুভ কামনা টিম টাইগার্সের জন্যেও। ভাল খেলুক টিম টাইগার্স।