• ক্রিকেট

বিশ্বকাপ ক্রিকেটঃ রেকর্ড বিচিত্রা।

পোস্টটি ১৩৮৪৯ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আসর, বিশ্বকাপ শুরু হয়ে গেছে। ক্রিকেটের মহাযজ্ঞ এবার হচ্ছে ক্রিকেটের আতুরঘর ইংল্যান্ডে। ক্রিকেট মহা উৎসবের ১২ তম আসর হচ্ছে এবারের বিশ্বকাপ আসরটি। ১০টি দল ৪৮টি ম্যাচে নিজেরদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে জানপ্রাণ দিয়ে ময়দানি লড়াইয়ে মেতে উঠবে। বিশ্বকাপের পূর্বের ১১টি আসরে হয়েছে নানান রেকর্ড, আর সেগুলো নিয়েই এবারের লেখাটি সাজানো হয়েছে।

ক্রিকেট পরিসংখ্যানের খেলা। এর পরতে পরতে রেকর্ড আর রেকর্ড। আর ক্রিকেট ম্যাচে রেকর্ড হয় ভাঙ্গার জন্যই। প্রতি ম্যাচে কত না নতুন রেকর্ডের সম্মুখীন হচ্ছে বিশ্ব! আর বিশ্বকাপের মতো আসরে কোনো রেকর্ড হলে তা রেকর্ড কারীর জন্য কতোই না সম্মানের! 

♦সবচেয়ে বেশিবার বিশ্বকাপ খেলার কৃতিত্ব ক্রিকেট বিশ্বের দুই লিজেন্ড, পাকিস্তানের জাভেদ মিয়াদাদ ও ভারতের কিংবদন্তী ক্রিকেটার শচীন টেন্ডলকারের। দুজনই ক্যারিয়ারে ৬টি করে বিশ্বকাপ খেলেছেন।

♦ ক্রিকেট ইতিহাসের সব ফরমেট মিলিয়ে সর্বোচ্চ রানের মালিক ভারতের ক্রিকেট লিজেন্ড শচীন টেন্ডলকার যে বিশ্বকাপেরও সর্বোচ্চ রানের মালিক হবে তা না বলে দিলেও চলে। ৬ টি বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে টেন্ডুল্কার ৪৫টি ম্যাচ খেলেছেন। ৫৬.৯৫ গড়ে রান করেছেন ২২৭৮ রান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রিকি পন্টিংয়ের রান তার চেয়ে ৫২৫ রান কম। পন্টিং ৪৬ ম্যাচে ১৭৫৩ রান করেছে।

♦বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের মালিক শচীন, বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিরও অধিকারী।  বিশ্বকাপ আসরে তার সেঞ্চুরির সংখ্যা ৬টি।

♦ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ হাফ সেঞ্চুরি করার রেকর্ডটও এই ব্যাটিং লিজেন্ডের দখলেই। ১৫টি অর্ধশতক রয়েছে বিশ্বমঞ্চে তার। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লিজেন্ড জ্যাক ক্যালিস। ৯টি হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে বিশ্বকাপে এই প্রোটিয়া অলরাউন্ডারের।

♦১ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের মালিকও লিটল মাস্টার শচীনের দখলে। ২০০৩ বিশ্বকাপে মাত্র ১১ ইনিংসে ৬১.১৮ গড়ে ৬৭৩ রান করেছিলেন শচীন রমেশ টেন্ডুল্কার। সেবার ভারত রানার্সআপ হয়েছিল ক্রিকেটের বিশ্ব আসরে।

♦ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ চার ও ছয়ের প্রসঙ্গ আসলে এখানেও নাম আসবে শচীন দ্য লিজেন্ড টেন্ডুলকারের। বিশ্বকাপ আসরে সর্বোচ্চ বাউন্ডারি মারার রেকর্ডটি যে তারই দখলে। ৬টি বিশ্বকাপে ৪৫টি ম্যাচ খেলে শচীন ২৪১টি চার মেরেছেন।   বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ছক্কা মারার রেকর্ডটি আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের লিজেন্ড, বর্তমানে ক্রিকেট বিশ্বের টি টুয়েন্টির রাজা ক্রিস গেইলের দখলে। অবশ্য সে প্রোটিয়া গ্রেট, ডি ভিলিয়ার্সের সাথে যুগ্ম ভাবে সর্বোচ্চ ছক্কা মারার রেকর্ডটি তে স্থান করে নিয়েছে। দুজনই বিশ্বকাপে ৩৭টি করে ছক্কা হাকিয়েছে। ডি ভিলিয়ার্স ক্রিকেট থেকে বিদায় জানালেও ক্রিস্টোফার হেইনরি গেইল এখনো ক্রিকেট খেলে যাচ্ছেন স্ব মহিমায়। এবারের বিশ্বকাপে উইন্ডিজ দলের অন্যতম সদস্য যে ডি ভিলিয়ার্স কে ছাড়িয়ে যাবেন তা নিঃসন্দেহে বলাই যায়।

♦বিশ্বকাপে বাউন্ডারি থেকে সবচেয়ে বেশি রান করার রেকর্ডটও "মিঃ ক্রিকেট" শচীন টেন্টুলকারের দখলে। ২৪১ টি চার ও ২৭টি ছক্কা থেকে টেন্ডুল্কার ১১২৬ রান করেছে বিশ্বকাপে।

♦ এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কা হাকানোর রেকর্ডটি গেইলের দখলে। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের সাথে ডাবল সেঞ্চুরি করার পথে এই দানবীয় ব্যাটসম্যান মোট ১৫টি ছকা হাকিয়েছিলেন।

♦এক ইনিংসে সর্বাধিক চার মারার রেকর্ডটি কিউই ওপেনার মার্টিন গাপটিলের দখলে। উইন্ডিজের বিরুদ্ধে ডাবল সেঞ্চুরি করার পথে সে ২৫টি চার মেরেছে।

♦বিশ্বকাপেই ইতিহাসে দ্রুততম ফিফটি করার রেকর্ডটিও নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যান দেরই দখলে। কিউই ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সাথে মাত্র ১৮ বলে ফিফটি করে বিশ্বকাপে দ্রুততম অর্ধশতক করার গৌরব অর্জন করেছিলেন।

♦বিশ্বকাপে দ্রুততম সেঞ্চুরি টি হয়েছে ২০১১ বিশ্বকাপে। আইরিশ হার্ড হিটার ব্যাটসম্যান,  কেভিন ও ব্রায়েন মাত্র ৫০ বলে সেঞ্চুরি করে বিশ্বকাপে দ্রুততম সেঞ্চুরি করার রেকর্ড গড়েন। তার রেকর্ডটি এখনো অক্ষুণ্ণ রয়েছে।

♦ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গড় প্রোটিয়া লিজেন্ড এবি ডি ভিলিয়ার্সের দখলে। ডি ভিলিয়ার্স মাত্র ২৩ টি ম্যাচ খেলেছে বিশ্বকাপে। আর তাতেই সে ৬৩.৫২ গড়ে ১২০৭ রান করেছে। হঠাৎ অবসর না নিলে এবারের বিশ্বকাপে আরো এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল "মিস্টার 360 ডিগ্রীর"।

♦বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান নিউজিল্যান্ড এর মার্টিন গাপটিলের দখলে। ২০১৫ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ২৩৭* রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন এই কিউই ব্যাটসম্যান। মাত্র ১৬৩ বলের ইনিংসে ছিল ২৪টি চার ও ১১টি বিশাল ছক্কার মার। তার স্ট্রাইক রেট ছিল ১৪৫.৩৯। অসাধারণ এই রেকর্ডটিও হয়তো ভেঙ্গে যাবে নিকট অতীতেই।

♦বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বাধিক উইকেট শিকারি বোলার অজি গ্রেট, গ্ল্যান ম্যাকেগ্রার দখলে। ৩৯ ম্যাচে ৭১টি উইকেট শিকার করেছে এই লিজেন্ডারি ফাস্ট বোলার। 

♦বিশ্বকাপের সেরা বোলিং ফিগারও গ্লেন ম্যাকাগ্রার দখলে। ১৫ রানে ৭ উইকেট শিকার তার সেরা বোলিং ফিগার। বিশ্বকাপে ব্যাটসম্যানদের সাথে যত রেকর্ড আছে তার বেশিরভাগের সাথে যেমন শচীন টেন্ডুলকারের নাম জড়িত ঠিক তেমনি বোলিংয়ের বেশির ভাগ রেকর্ডের সাথেই এই অজি কিংবদন্তীর নাম জড়িত।

♦ এক বিশ্বকাপে সর্বাধিক উইকেট শিকারি বোলারও গ্লেন ম্যাকাগ্রা। ২০০৭ সালে মাত্র ১১ ইনিংসে বল করে তার শিকার ২৬ উইকেট।  বিশ্বকাপে সেরা ইকনোমি বোলারও ম্যাকাগ্রা।

♦বিশ্বকাপের ১ম হ্যাট্রিক করার গৌরব অর্জন করেছিলেন ভারতের চেতন শর্মা। গত বিশ্বকাপে সর্বশেষ হ্যাট্রিকটি করেন প্রোটিয়া স্পিনার জেপি ডুমিনি। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে ৯টি হ্যাট্রিক হয়েছে।

♦ বিশ্বকাপের ইতিহাসে একমাত্র বোলার হিসেবে দুই বিশ্বকাপে, দুটি হ্যাট্রিক করার বিরল কৃতিত্ব শ্রীলংকান ফাস্ট বোলার মালিঙ্গার। বিশ্বকাপের ৯ হ্যাট্রিকের দুটিই তার দখলে।

♦ বিশ্বকাপে এক ওভারে ধারাবাহিক ভাবে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়া বোলারও মালিঙ্গাই। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ আসরে, সাউথ আফ্রিকার সাথে মালিঙ্গা এক ওভারে পর পর ৪ বলে ৪ ব্যাটসম্যান কে আউট করে বিরল রেকর্ড গড়েন। এর আগে ২০০৩ সালে আরেক শ্রীলংকান বোলার চান্দিমা ভাস বাংলাদেশের বিপক্ষে ৫ বলে হ্যাট্রিক সহ ৪ উইকেট শিকার করেছিলেন।

♦বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গতির বলটি করেছিলেন পাকিস্তানি লিজেন্ড ফাস্ট বোলার, শোয়েব আখতার। ২০০৭ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সাথে ১৬১.৩ কি.মি/ঘন্টা গতিতে বল করে ক্রিকেট ইতিহাসে ১ম বারের মতো ১০০ মাইল গতিতে বল করার বিরল নজির গড়েন তিনি।

♦বিশ্বকাপের ইতিহাসে উইকেট কিপিংয়ে সেরা, শ্রীলংকান লিজেন্ড সাঙ্গাকারা। বিশ্ব আসরে ৩৭ ম্যাচের ৩৬ ইনিংসে কুমার সাঙ্গাকারার ডিসমিসাল ৫৪টি। এর মধ্যে ক্যাচ ৪১ ও স্ট্যাম্পিং ১৩টি।

♦বিশ্বকাপে সর্বাধিক ক্যাচ ধরা ফিল্ডারটি অস্ট্রেলিয়ান লিজেন্ড রিকি পন্টিংয়ের। সাবেক অজি কাপ্তান ৪৬টি ম্যাচ খেলে ২৪টি ক্যাচ ধরে সর্বাধিক ক্যাচ ধরার রেকর্ডটি নিজের করে রেখেছেন।

♦বিশ্বকাপে সর্বাধিক রান শচীন টেন্ডুলকার করলেও সর্বাধিক ম্যাচ খেলার কৃতিত্ব কিন্তু অজি ব্যাটসম্যান ও ২বারের চ্যাম্পিয়ন কাপ্তান, রিকি পন্টিংয়ের দখলে। বিশ্বকাপে রিকি পন্টিং ৪৬টি ম্যাচ খেলে সর্বাধিক ম্যাচ খেলার রেকর্ডটি তারই দখলে রেখেছে। শচীন খেলেছে ৪৫ টি ম্যাচ।

♦বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেরা ক্যাপ্টেন নিয়ে আলোচনা করলে সবার আগে রিকি পন্টিংয়ের নামই আসবে। অস্ট্রলিয়ার হয়ে ৩টি বিশ্বকাপ জিতা এই অজি ব্যাটসম্যান অজিদের বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দিয়েছেন ৩টি বিশ্বকাপে, যার মধ্যে দুটিতে অপরাজিত চ্যাম্পিয়নও করেছেন দলকে। বিশ্বকাপে অধিনায়ক হিসেবে সর্বাধিক ম্যাচ জয়ের কৃতিত্ব রিকি পন্টিংয়ের। ২৯ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া কে নেতৃত্ব দিয়ে জিতিয়েছেন ২৬টি ম্যাচে।

ব্যক্তিগত রেকর্ড থেকে সরে এবার কিছু দলীয় অর্জনের দিকে চোখ বুলানো যাক।

♦বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ অস্ট্রেলিয়ার দখলে। ২০১৫ বিশ্বকাপে আফগানিস্তান এর সাথে তারা ৬ উইকেট হারিয়ে ৪১৭ রান করে ৫০ ওভার ব্যাটিং করে।

♦বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বনিম্ন রান কানাডা করেছে শ্রীলংকার সাথে ২০০৩ সালে। ১৮.৪ ওভারে মাত্র ৩৬ রানেই গুটিয়ে যায় কানাডা। সর্বনিম্ন রানের তালিকায় বাংলাদেশও আছে, ২০১১ সালে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ উইন্ডিজের সাথে মাত্র ৫৮ রানেই গুটিয়ে যায়।

♦রানের দিক থেকে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় জয়টি পায় অস্ট্রেলিয়া। ২০১৫ সালে তারা আফগানিস্তান কে ২৭৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে এই কীর্তি অর্জন করে।

♦উইকেটের দিক দিয়ে বড় জয়টি ভারতের দখলে। ১৯৭৫ সালে ই.আফ্রিকাকে ১০ উইকেটে হারায় ভারত, এবং বল বাকী ছিল ১৮১টি। এটিই এখনো অবধি উইকেটের দিক থেকে বড় জয় বিশ্বকাপ আসরে।

♦বল বাকী থাকার দিক থেকে বড় জয়টি অবশ্য ইংল্যান্ডের দখলে। তারা কানাডার দেওয়া ৪৬ রানের টার্গেট কে টপকে যায় ৮ উইকেট হারিয়ে, ২৭৭ বল বাকি থাকতেই।

♦বিশ্বকাপের ইতিহাসে রানের দিন থেকে সর্বনিম্ন রানের জয়টি অস্ট্রেলিয়ার। ১৯৮৭ বিশ্বকাপে ভারতকে দেওয়া ২৭১ রানের টার্গেট টি ভারত ২৭০ রান তুলেই থেমে যায়। আর অজিরা পায় ১ রানের জয়।

♦ সর্বনিম্ন ১ উইকেটের জয়টি উইন্ডিজের। ১৯৭৫ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের দেওয়া ২৫৭ রানের টার্গেটটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ উইকেট বাকী থাকতেই পূরণ করে নেয়।

♦বলের দিক থেকে সর্বনিম্ন জয়টি ০ বল হাতে রেখে জয়। ১৯৮৭ বিশ্বকাপে উইন্ডিজেত দেওয়া ২১৭ রানের টার্গেট পাকিস্তান ০ বল হাতে রেখে জিতে যায়।

♦বিশ্বকাপে ইতিহাসে সর্বাধিক অতিরিক্ত রান দেওয়া দল হল পাকিস্তান ক্রিকেট টিম। স্কটল্যান্ডের সাথে  ৫০ ওভার বোলিং করে পাকিস্তানি বোলাররা ৫৯টি অতিরিক্ত রান দিয়ে লজ্জার রেকর্ড গড়ে।

♦বিশ্বকাপে একটানা হারার রেকর্ড জিম্বাবুয়ের। জিম্বাবুয়ে টানা ১৮টি ম্যাচ হারার পর আবারো জয় পায় বিশ্বকাপে। অথচ তাদের বিশ্বকাপ যাত্রা ছিল স্বপ্নের মতো। ১৯৮৭ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া কে হারিয়ে তারা তাদের বিশ্বকাপ অভিষেক করে। কিন্তু অভিষেক ম্যাচে জয়ের পর দীর্ঘ ১৮ ম্যাচে আর কোনো জয়ই পায়নি তারা।

♦বিশ্বকাপে সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড সাবেক দুই বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের দখলে। মাত্র ৪ ম্যাচ খেলে এবং সব গুলোতে অপরাজিত থেকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। তবে এরপর আরো দুটি দেশ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। ১৯৯৬ সালে ৯ ম্যাচে অপরাজিত থেকে উপমহাদেশীয় দেশ, শ্রীলংকা অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় বিশ্বকাপে। এরপর অস্ট্রেলিয়া ২০০৩ ও ২০০৭ বিশ্বকাপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অনন্য গৌরব অর্জন করে।

♦বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সে অভিষেক হয় নেদারল্যান্ডের নোলান ক্লার্কের। ১৯৯৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি যখন সে খেলতে নামে তখম তার বয়স ৪২ বছর ২৫৭ দিন। সে ওয়ানডে ক্রিকেটেও বেশি বয়সে অভিষেক হওয়া প্লেয়ার।

♦বেশি বয়সে বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার রেকর্ডটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অধিনায়ক তৌকির আহমেদের। ২০১৫ বিশ্বকাপে উইন্ডিজের সাথে নেতৃত্ব দেওয়ার সময় তার বয়স ছিল ৪৩ বছর ৬০ দিন।

♦বুড়ো বয়সে বিশ্বকাপ জিতানো অধিনায়ক আবার বিশ্বকাপের সেরা অধিনায়কদের একজন। তিনি পাকিস্তানি লিজেন্ড, ইমরান খান। ১৯৯২ সালে পাকিস্তানকে বিশ্বকাপ জেতানোর সময় তার বয়স ছিল ৩৯ বছর ৫ মাস ২০ দিন।

♦বুড়ো বয়সে বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়ক ইমরান খান হলেও, বুড়ো বয়সে বিশ্বকাপ জিতা দলের সদস্য কিন্তু উইন্ডিজের রোহান কানাইয়ের দখলে। ইমরান খান থেকে ৫দিন বেশি বয়সে সে বিশ্বকাপ জিতেছে। বিশ্বকাপ জেতানো উইন্ডিজ দলের সদস্য ছিল সে।

♦বিশ্বকাপে বুড়ো বয়সে সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যান আবার সবারই পরিচিত। তিনি শ্রীলংকান গ্রেট ব্যাটসম্যান, তিলকারত্নে দিলশান।২০১৫ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের সাথে সেঞ্চুরি করার সময় তার বয়স ছিল ৩৮ বছর ৪ মাস ২৮ দিন।

♦বিশ্বকাপে বেশি বছরে ৫ উইকেট নেওয়া বোলারটি আবার আনকোরাই বলা চলে। তিনি হলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের শওকত দকানওয়ালা। নেদারল্যান্ডের সাথে তিনি যখন ৫ উইকেট নেন (বোলিং ফিগার ২৯/৫) তখন তার বয়স ছিল ৩৯ বছর ৪০ দিন।

♦কম বয়সে বিশ্বকাপ অভিষেক হওয়া ব্যাটসম্যানটি হল কানাডার নিতিশ কুমার। দেশের হয়ে ২০১১ বিশ্বকাপ খেলার সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর ২৮৩ দিন। কম বয়সে বিশ্বকাপে অভিষেকের তালিকায় বাংলাদেশি প্লেয়ার তালহা যোবায়েরের নামটিও আছে। ২০০৩ সালে বিশ্বকাপে অভিষেকের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর ৭০ দিন।

♦কম বয়সে বিশ্বকাপ জেতা দলের সদস্য হওয়ার রেকর্ডটি অবশ্য অনেক পুরানো। পাকিস্তানের আকিব জাভেদের দখলে এই রেকর্ডটি। ১৯৯২ সালে পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য আকিবে জাভেদের বয়স ছিল মাত্র ১৯ বছর।

♦কম বয়সে বিশ্বকাপে অধিনায়কত্ব করার রেকর্ডটি জিম্বাবুয়ের সাবেক অধিনায়ক প্রসপর উতসেয়ার। ২০০৭ বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়েকে নেতৃত্ব দেওয়ার সময় তার বয়স ছিল মাত্র ২১ বছর ১১ মাস ১৭ দিন।

♦কম বয়সে বিশ্বকাপ জিতানো অধিনায়ক ভারতের লিজেন্ডারি অলরাউন্ডার ও ভারতকে প্রথম বিশ্বসেরা করার মহানায়ক, কপিল দেবের দখলে। ১৯৮৩ সালে ভারত কে বিশ্বকাপ জিতানোর সময়ে তার বয়স ছিল মাত্র ২৪ বছর ৫ মাস ১৯ দিন।

♦বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে হতভাগা খেলোয়াড় ইংল্যান্ডের লিজেন্ড ক্রিকেটার গ্রাহাম গুচ। ইংল্যান্ডের এই কিংবদন্তী ক্রিকেটার ৩টি বিশ্বকাপের ফাইনালে গিয়েও না জিততে পারা একমাত্র হতভাগা প্লেয়ার। এর মধ্যে ১৯৯২ বিশ্বকাপে অধিনায়ক হিসেবেও ফাইনাল খেলেছিল, আর হেরেছিল পাকিস্তানের কাছে। এর আগে ১৯৮৭ বিশ্বকাপে তিনি ইংল্যান্ড দলের হয়ে খেলেছিলেন বিশ্বকাপ ফাইনাল, সেবার টুর্নানেন্টের সর্বোচ্চ রান করা ব্যাটসম্যানও ছিলেন তিনি। ইংল্যান্ডের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার কাছে সেবার ফাইনালে হেরে যায় তার দল। ১৯৭৯ বিশ্বকাপেও ইংল্যান্ড এর হয়ে বিশ্বকাপ খেলেছিল পোড়া কপালের অধিকারী এই ইংলিশ লিজেন্ড ক্রিকেটার। তাকেই বলা হয় বিশ্বকাপের সবচেয়ে দুর্ভাগা প্লেয়ার। 

 

ইংল্যান্ড - আফ্রিকা ম্যাচ দিয়েই ক্রিকেট মহোৎসব শুরু হয়ে গেছে। এই বিশ্বকাপেও নতুন অনেক রেকর্ড হবে। পুরানা রেকর্ড ভেঙ্গে যাবে। এটাই ক্রিকেটের বিশেষত্ব। ইতোমধ্যে ১২তম আসরের প্রথম ম্যাচে দারুণ এক রেকর্ডের সাক্ষী হয়েছে ঐতিহাসিক "দ্য ওভাল" ক্রিকেট গ্রাউন্ড। গত ১১ আসরে যা হয়নি তা-ই হল এবারের আসরে। সাউথ আফ্রিকার অধিনায়ক ডু প্লেসিস ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ইনিংসের প্রথম ওভার করতে বল তুলে দেন স্পিনার ইমরান তাহিরের হাতে। যা বিগত কোনো বিশ্বকপেই দেখা যায় নি। আর ইমরান তাহিরও এমন নজিরকে আরো স্মরণীয় করে রাখলেন রেকর্ড গড়ে। স্পিনার হিসেবে ইনিংসের প্রথম ওভারে বল করতে এসে ২য় বলেই উইকেট শিকার করে দারুণ রেকর্ড অর্জন করেছেন এই প্রোটিয়া স্পিনার। 

বিশ্বকাপের এই আসরেও অনেক চমকপ্রদ রেকর্ড হবে। রেকর্ড ভাঙ্গবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি যেটা আলোচনা হচ্ছে সেটা হল ওয়ানডে ক্রিকেটে স্কোর বোর্ডে ৫০০ রান তোলার মাইলস্টোন ছোঁয়া।  হয়তো হয়েও যাবে। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে ৪০০+ রান অনেক গুলো দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। তাই এই বিশ্বকাপে প্রথম বারের মতো ৫০০ রান হলে সেটা বিশ্বকাপের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হবে তা বলাই যায়।

অনেক গুলো রেকর্ড নিয়ে লিখলাম। তথ্যগত ভুলের কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে লেখার ক্ষেত্রে কিছু ভুল থাকতে পারে। বিশ্বকাপ নিয়ে আরো অসংখ্য রেকর্ড রয়েছে, যা লিখে শেষ করা যাবে না। আজ এই পর্যন্তই।

(তথ্য সংগ্রহেঃ ক্রিকইনফো, ক্রিকবাজ, প্রথম আলো, বাংলাদেশ প্রতিদিন, বিডিনিউজ, উইকিপিডিয়া) 

© facebook.com/thisisRUR